পুরাণ (ভারতীয় শাস্ত্র)

হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ আখ্যানমূলক ধর্মগ্রন্থ-সমুচ্চয়

পুরাণ (সংস্কৃত: पुराण purāṇa, "প্রাচীনযুগীয়") হিন্দু, বৌদ্ধজৈন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ আখ্যানমূলক ধর্মগ্রন্থ-সমুচ্চয়। পুরাণে সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, রাজন্যবর্গ, যোদ্ধৃবর্গ, ঋষি ও উপদেবতাগণের বংশবৃত্তান্ত এবং হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, দর্শন ও ভূগোলতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।[১] পুরাণে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো দেবতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং তাতে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রাবল্যও লক্ষিত হয়। এই গ্রন্থগুলি প্রধানত আখ্যায়িকার আকারে রচিত, যা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

অষ্টমাতৃকা-সহ দেবী অম্বিকা (দুর্গা) রক্তবীজ দৈত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত; দেবীমাহাত্ম্যম্, মার্কণ্ডেয় পুরাণের পুথিচিত্র

লোকমতে, মহাভারত-রচয়িতা ব্যাসদেব পুরাণসমূহের সংকলক।[২] যদিও পুরাণের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পাঠগুলি গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খ্রিস্টীয় তৃতীয়-পঞ্চম শতাব্দী) সমসাময়িক। এর অধিকাংশ উপাদানই ঐতিহাসিক বা অন্যান্য সূত্রাণুযায়ী এই সময়কাল ও তার পরবর্তী শতাব্দীগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরাণগ্রন্থগুলি ভারতের নানা স্থানে রচিত হয়েছিল। পুরাণের সামগ্রিক পাঠে কিছু সাধারণ ধারণা লক্ষিত হয়; কিন্তু একটি পুরাণের উপর অপর আরেকটি পুরাণের প্রভাব অন্বেষণ দুঃসাধ্য। তাই সাধারণভাবে এগুলিকে সমসাময়িক বলেই ধরে নেওয়া হয়।.[৩]

লিখিত পাঠ্যগুলির রচনাতারিখ পুরাণের প্রকৃত রচনাতারিখ নয়। কারণ একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে পূর্ববর্তী এক সহস্রাব্দ কাল ধরে এই কাহিনিগুলি মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়ে আসে। এবং পরবর্তীকালে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এগুলির আকার ও রূপ পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।[৪]

কাশীর মহারাজা ডক্টর বিভূতি নারায়ণ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে অল ইন্ডিয়া কাশীরাজ ট্রাস্ট গঠিত হলে পুরাণ নিয়ে সুসংহত গবেষণার কাজ শুরু হয়। এই সংস্থা থেকে পুরাণের সমালোচনামূলক সংস্করণ এবং পুরাণম্ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।[৫]

উৎস

ভাগবত পুরাণে বর্ণিত বরাহ অবতারের চিত্র

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে রচিত ছান্দোগ্য উপনিষদে (৭।১।২) পুরাণের একটি প্রাচীন উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদ পুরাণকে "পঞ্চম বেদ" নামে অভিহিত করে,[৬] (ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদম্)। এতে প্রাচীন যুগে পুরাণের ধর্মীয় গুরুত্বের কথা জানা যায়। সম্ভবত সেই যুগে পুরাণ মৌখিকভাবে প্রচারিত হত। অথর্ববেদেও (১১।৭।১৪) এই শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।[৭][৮]

মৎস্য পুরাণ অনুসারে,[৯] পুরাণের মূল বিষয় পাঁচটি। এগুলি পঞ্চলক্ষণ নামে পরিচিত –

  1. সর্গ – ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকাহিনি
  2. প্রতিসর্গ – পরবর্তীকালের (মুখ্যত প্রলয় পরবর্তী) সৃষ্টিকাহিনি
  3. বংশ – দেবতা ও ঋষিদের বংশবৃত্তান্ত
  4. মন্বন্তর – মানবজাতির সৃষ্টি ও প্রথম সৃষ্ট মানবজাতির কাহিনি। মনুর শাসনকালের কথা; এই শাসনকাল ৭১টি দিব্য যুগ বা ৩০৮,৪৪৮,০০০ বছরের সমান
  5. বংশানুচরিতম্ – রাজবংশের ইতিহাস

কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে পঞ্চলক্ষণ নামে পরিচিত এই বিশেষ লক্ষণগুলি অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও দৃষ্ট হয়।[১০]

পুরাণের বক্তব্য অনুসারে একটি পুরাণশাস্ত্র সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা সৃষ্টির পূর্বে রচনা করেছিলেন, প্রত্যেক দ্বাপর যুগে ব্যাসদেব এসে সেটি সংক্ষিপ্ত করে একটি পুরাণ কে ১৮টি ভাগে বিভক্ত করে ১৮টি পুরাণ বিরচিত করেছিলেন।

পুরাণে বংশবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ রাখার উপরেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বায়ু পুরাণ অনুসারে: "পুরাকালে ল দেবতা, ঋষি, গৌরবশালী রাজন্যবর্গের বংশবৃত্তান্ত ও মহামানবদের কিংবদন্তি লিপিবদ্ধ রাখার দায়িত্ব সূতের উপর অর্পিত হয়।"[১১] পৌরাণিক বংশবৃত্তান্ত অনুযায়ী মনু বৈবস্বত ভারত যুদ্ধের ৯৫ প্রজন্ম পূর্বে জীবিত ছিলেন।[১২]

পারগিটার (১৯২২) বলেছেন, "মূল পুরাণগুলি" ("original Purana") সম্ভবত বেদের সর্বশেষ লিখিত রূপের সমসাময়িক।[৭] এবং পারগিটার (১৯৭৯) মনে করেন,[১৩][১৪] বায়ু পুরাণে যে যুগগুলি ৪৮০০, ৩৬০০, ২৪০০ ও ১২০০ বছরে বিভক্ত হয়েছে তার মধ্যে পৌরাণিক কৃত যুগ " সমাপ্তি রাম জমদগ্ন্যের দ্বারা হৈহয়দের ধ্বংসপ্রাপ্তিতে; ত্রেতা যুগের সূত্রপাত রাজা সগরের সময়কালে এবং সমাপ্তি রাম দাশরথি কর্তৃক রাক্ষস ধ্বংসে; দ্বাপর যুগের সূত্রপাত অযোধ্যা-প্রত্যাবর্তনে এবং সমাপ্তি ভারতযুদ্ধে।"[১৫]

আরিয়ান রচিত ইন্ডিকায়, মেগাস্থিনিস থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে ভারতীয়রা শিব (ডায়োনিসাস) থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (সান্ড্রাকোটাস) পর্যন্ত "ছয় হাজার তেতাল্লিশ বছরে একশো তিপান্ন জন রাজা" গণনা করে।[১৬] খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে রচিত বৃহদারণ্যক উপনিষদে (৪।৬) গুরু-পরম্পরায় ৫৭টি যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ গুরু-পরম্পরা তারও ১৪০০ বছর আগে থেকে প্রচলিত ছিল। যদিও এই তালিকার যথার্থতা নিয়ে মতদ্বৈধ রয়েছে।[১৭] কহ্লন রচিত রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে বর্ণিত রাজাবলিতে খ্রিস্টপূর্ব ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত রাজাদের তালিকা পাওয়া যায়।[১৮]

পুরাণ গ্রন্থসমুচ্চয় এমন এক জটিল উপাদান-সংগ্রহ যাতে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী সম্প্রদায়ের উদ্ভবতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে।[৩] তাই গেভিন ফ্লাড ঐতিহাসিকভাবে লিখিত পুরাণের উদ্ভবের সঙ্গে গুপ্তযুগে নির্দিষ্ট দেবতাকেন্দ্রিক ধর্মসম্প্রদায়ের উদ্ভবের ঘটনাকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মনে করেছেন:

যদিও এই গ্রন্থগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এদের একটিতে অপরটির উপাদান প্রায়শই গৃহীত হয়েছে, তবুও বলতে হয়, প্রতিটি গ্রন্থেই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে জগতকে দেখা হয়েছে। এগুলিকে প্রচলিত উপকথার এলোপাথাড়ি সংকলন মনে করা উচিত নয়। এগুলি সুসংকলিত, বিষয়গতভাবে সুসংবদ্ধ, বিশ্বচেতনার অভিপ্রকাশ এবং ধর্মীয় তত্ত্বকথা। ব্রাহ্মণদের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নির্দিষ্ট দর্শনকে তুলে ধরার জন্য এগুলি সংকলন করেছিলেন; কেবল কেউ বিষ্ণু, কেউ শিব, কেউ বা দেবী বা অন্য কোনো দেবতার উপর আলোকপাত করেন।

স্থানীয় ভাষার অনুবাদে পুরাণগুলি সহজলভ্য। কথক নামে পরিচিত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে কথকতার মাধ্যমে ভক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে পুরাণের কাহিনিগুলি জনসমাজে প্রচার করে সাধারণ্যে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেন।

পুরাণগুলির তালিকা

মহাপুরাণ

পুরাণ নামাঙ্কিত সাহিত্যধারায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ মহাপুরাণ (সংস্কৃত: महापूराण, Mahāpurāṇas)। সাধারণ বিশ্বাস অনুযায়ী মহাপুরাণের সংখ্যা আঠারো এবং এগুলি ছয়টি করে পুরাণযুক্ত তিনটি পৃথক শ্রেণিতে বিন্যস্ত। যদিও এই সংখ্যা ও শ্রেণিবিভাগ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র অধ্যয়ন করে ডিমিট ও ভ্যান বুইটেনেন[১৯] ২০টি মহাপুরাণের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন:

অগ্নিপুরাণ-এর প্রবক্তা হিন্দু দেবতা অগ্নি, অজ্ঞাত শিল্পী, পুনে, ১৮০০-০৫।
  1. অগ্নিপুরাণ বা আগ্নেয় পুরাণ: সঠিক রচনাকাল জানা যায় না। শ্লোকসংখ্যা ১১৫০০। এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং একে "পৌরাণিক ও সাহিত্যবিদ্যার কোষগ্রন্থ" বলা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, ঋষি বশিষ্ঠের অনুরোধে অগ্নি এই পুরাণ রচনা করেছিলেন। এই পুরাণে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের বর্ণনা, বংশানুচরিত, সৃষ্টিতত্ত্ব, ভূগোল, ছন্দ, অলংকার, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, রাজনীতি, অশ্বচিকিৎসা ইত্যাদির বর্ণনা আছে। এটি বৈষ্ণব পুরাণ; তবে এতে তান্ত্রিক উপাসনা পদ্ধতি, লিঙ্গপূজা, দুর্গাপূজা ইত্যাদি শাক্তশৈব বিষয়বস্তুও সংযোজিত হয়েছে।[২০]
  2. ভাগবত পুরাণ (১৮,০০০ শ্লোক) – সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় পুরাণ[২১]। এই পুরাণের মূল উপজীব্য বিষ্ণুর দশাবতারের কাহিনি। দশম স্কন্দটি গ্রন্থের বৃহত্তম অধ্যায়; এই অধ্যায়ে কৃষ্ণের লীলা বর্ণিত হয়েছে। পরবর্তীকালে একাধিক ভক্তি আন্দোলনের মুখ্য বিষয়বস্তু কৃষ্ণের বাল্যলীলা এই পুরাণেই লিপিবদ্ধ।[২২]
  3. ভবিষ্য পুরাণ (১৪,৫০০ শ্লোক)
  4. ব্রহ্মপুরাণ বা আদিপুরাণ (রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম-দ্বাদশ শতাব্দী): শ্লোকসংখ্যা ২৪,০০। কিংবদন্তি অনুসারে, সূত লোমহর্ষণ নৈমিষারণ্যে উপস্থিত ঋষিদের কাছে এই পুরাণ প্রথম বর্ণনা করেন। এই পুরাণে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, দেব, মনু চন্দ্র ও সূর্য বংশের বিবরণ, বিশ্বের ভূগোল, স্বর্গ-নরক, তীর্থের মাহাত্ম্য, সূর্য ও বিষ্ণু উপসনার পদ্ধতি, আদিত্যগণের বিবরণ, বিষ্ণু-সংক্রান্ত পৌরাণিক গল্প, শিব-পার্বতীর গল্প, কৃষ্ণের জীবনী, বর্ণাশ্রম ধর্ম, নীতিধর্ম ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে। এই পুরাণের প্রক্ষিপ্ত অংশগুলি অন্যান্য পুরাণ থেকে গৃহীত এবং কয়েকটি প্রক্ষিপ্ত তীর্থমাহাত্ম্যের বর্ণনা বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ও সৌর সম্প্রদায়ের লেখকদের রচনা।[২৩]
  5. ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ (১২,০০০ শ্লোক; হিন্দু প্রার্থনাগাথা ললিত সহস্রনাম এই গ্রন্থের অন্তর্গত)
  6. ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ (১৮,০০০ শ্লোক)
  7. গরুড় পুরাণ (১৯,০০০ শ্লোক)
  8. হরিবংশ পুরাণ (১৬,০০০ শ্লোক; ইতিহাস নামে সমধিক আখ্যাত)
  9. কূর্ম পুরাণ (১৭,০০০ শ্লোক)
  10. লিঙ্গ পুরাণ (১১,০০০ শ্লোক)
  11. মার্কণ্ডেয় পুরাণ (৯,০০০ শ্লোক; পবিত্র শাক্ত ধর্মগ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্ এই পুরাণভুক্ত)
  12. মৎস্য পুরাণ (১৪,০০০ শ্লোক)
  13. নারদ পুরাণ (২৫,০০০ শ্লোক)
  14. পদ্ম পুরাণ (৫৫,০০০ শ্লোক)
  15. শিব পুরাণ (২৪,০০০ শ্লোক)
  16. স্কন্দ পুরাণ (৮১,১০০ শ্লোক) – বৃহত্তম পুরাণ। একাধিক পাঠান্তর সংবলিত এই পুরাণের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বহু কাহিনি-উপকাহিনি ও কিংবদন্তির কথা। একাধিক গ্রন্থে এই পুরাণের উদ্ধৃতি প্রাপ্ত হয়।[২৪]
  17. বামন পুরাণ (১০,০০০ শ্লোক)
  18. বরাহ পুরাণ (১০,০০০ শ্লোক)
  19. বায়ু পুরাণ (২৪,০০০ শ্লোক)
  20. বিষ্ণু পুরাণ (২৩,০০০ শ্লোক)

ত্রিমূর্তির বিচারে নিম্নলিখিত তিন শ্রেণিতে পুরাণগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। আবার পদ্ম পুরাণ[২৫] অনুসারে সত্ত্বগুণ, রজোগুণতমোগুণ – এই ত্রিগুণের আলোকে পুরাণ তিনপ্রকার হয়ে থাকে:

বৈষ্ণব পুরাণব্রাহ্ম পুরাণশৈব পুরাণ
সাত্ত্বিকরাজসিকতামসিক
  1. বিষ্ণু পুরাণ
  2. ভাগবত পুরাণ
  3. নারদেয় পুরাণ
  4. গরুড় পুরাণ
  5. পদ্ম পুরাণ
  6. বরাহ পুরাণ
  1. ব্রহ্মা পুরাণ
  2. ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ
  3. ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
  4. মার্কণ্ডেয় পুরাণ
  5. ভবিষ্য পুরাণ
  6. বামন পুরাণ
  1. মৎস্য পুরাণ
  2. লিঙ্গ পুরাণ
  3. শিব পুরাণ অথবা বায়ু পুরাণ (বায়ু পুরাণ নিয়ে মতভেদ দেখা যায়)
  4. স্কন্দ পুরাণ
  5. অগ্নি পুরাণ
  6. কূর্ম পুরাণ

উপপুরাণ

উপপুরাণ (সংস্কৃত: उपपुराण, Upapurāṇas) অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অথবা আনুষঙ্গিক ধর্মগ্রন্থ। কোনো কোনো মতে উপপুরাণ আঠারোটি। কিন্তু মহাপুরাণের সংখ্যার মতোই এই সংখ্যা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। কয়েকটি উপপুরাণ সমালোচনার সহিত সম্পাদিত হয়েছে।

উপপুরাণের তালিকা
  • সনৎকুমার
  • নৃসিংহ
  • বৃহন্নারদীয়
  • শিবরহস্য
  • দুর্বাশা
  • কপিল
  • সূর্য
  • পরাশর
  • বশিষ্ট
  • দেবীভাগবত
  • গণেশ
  • হংস
  • মুদগল[২৬]

গণেশ ও মুদগল পুরাণ গণেশের মহিমাবাচক।[২৭][২৮] দেবীভাগবত পুরাণ দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য কীর্তন করে। মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবীমাহাত্ম্যম্ অংশের সঙ্গে এই পুরাণটিও শক্তি উপাসকদের মূল ধর্মগ্রন্থ বলে বিবেচিত হয়।[২৯]

ভারতীয় উপমহাদেশে এইরূপ অনেক উপপুরাণের সন্ধান পাওয়া যায়।[৩০] তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বঙ্গদেশঅসমে প্রচলিত সর্পদেবী মনসার মহিমাজ্ঞাপক পদ্মপুরাণ

স্থলপুরাণ

সংস্কৃতে স্থল শব্দের অর্থ স্থান। পুরাণের এই বিশেষ অংশটি মন্দির বা তীর্থের উৎপত্তি ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করে। স্থলপুরাণ অসংখ্য; বেশিরভাগই স্থানীয় ভাষায় রচিত; যদিও কয়েকটির সংস্কৃত পাঠান্তরও পাওয়া যায়। আবার কোনো কোনো স্থলপুরাণকে মহাপুরাণ বা উপপুরাণেও বর্ণিত হতে দেখা যায়। ডেভিড ডিন শ্যুলম্যান তামিল স্থলপুরাণগুলির উপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম চালিয়েছেন।[৩১]

কুলপুরাণ

সংস্কৃতে কুল শব্দের অর্থ পরিবার বা গোত্র। কুলপুরাণ সাধারণত নির্দিষ্ট বর্ণের উদ্ভব, আখ্যান ও কিংবদন্তির বর্ণনা দেয়। বর্ণভেদ পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কুলপুরাণ। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বী বর্ণের কুলপুরাণের দ্বারা এই পুরাণগুলির বক্তব্য খণ্ডিত হয়েছে। কুলপুরাণ সাধারণত স্থানীয় ভাষায় লিখিত অথবা অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক পরম্পরায় প্রচারিত।[৩২] কুলপুরাণগুলি নিয়ে গবেষণাকর্ম কমই হয়েছে। তবে ব্রিটিশ জনগণনা রিপোর্টে ও বিভিন্ন গেজেটিয়ারে এগুলি নথিবদ্ধ করা হয়।[৩৩]

জৈন ও বৌদ্ধ পুরাণ

বৌদ্ধ স্বয়ম্ভু পুরাণে কাঠমান্ডু উপত্যকার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।

জৈন পুরাণগুলিতে বর্ণিত হয়েছে জৈন লোকগাথা, ইতিহাস ও কিংবদন্তির কথা। জৈন পুরাণ প্রাচীন কন্নড় সাহিত্যের প্রধান উপাদান।[৩৪][৩৫] এই পুরাণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আচার্য জিনসেনের মহাপুরাণ। তবে জৈন পুরাণের উপর গবেষণা ও অনুবাদকর্ম কমই হয়েছে।

পাদটীকা

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ