বন্দে ভারত এক্সপ্রেস

ভারতের সেমি-হাই-স্পিড এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস[৩] ভারতীয় রেল দ্বারা পরিচালিত নিকটপাল্লার সেমি-হাই-স্পিড এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা। শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো এগুলি দৈনিক রেলগাড়ি পরিষেবা যা ঐসব বড় বড় শহরদেরকে যুক্ত রাখে যেগুলির দূরত্ব এক দিনের থেকে কম। পরিষেবায় ব্যবহৃত বন্দে ভারত রেলগাড়ির সর্বোচ্চ বেগ ১৮৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা) হলেও রেলপথ ও ট্রাফিকের সীমাবদ্ধতার জন্য রেলগাড়িটির সর্বোচ্চ পরিচালনা বেগ দিল্লি–ভোপাল রেলপথে ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং অন্যান্য রেলপথে ১১০–১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৬৮–৮১ মাইল প্রতি ঘণ্টা) রাখা হয়।[২][৪]

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
উপরে: নীল সাদা রঙে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
নিচে: গেরুয়া ধূসর রঙে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
পরিষেবা ধরনআন্তঃনগর সেমি-হাই-স্পিড রেল
অবস্থাসক্রিয়
পূর্বসূরীশতাব্দী এক্সপ্রেস, মেমু
প্রথম পরিষেবা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯; ৫ বছর আগে (2019-02-15)
ওয়েবসাইটindianrail.gov.in
যাত্রাপথ
ব্যবহৃত লাইন৩৪
যাত্রাপথের সেবা
শ্রেণীচেয়ার কার
এগজিকিউটিভ চেয়ার কার
আসন বিন্যাস
  • বিমানধর্মী
  • ঘূর্ণায়মান আসন
খাদ্য সুবিধাঅনবোর্ড ক্যাটারিং
পর্যবেক্ষণ সুবিধাবড় জানালা
বিনোদন সুবিধা
  • ওয়াই-ফাই
  • ইনফোটেনমেন্ট
  • বৈদ্যুতিক আউটলেট
  • পড়ার আলো
মালপত্রের সুবিধাওভারহেড র‍্যাক
অন্যান্য সুবিধা
  • স্বয়ংক্রিয় দরজা
  • স্মোক অ্যালার্ম
  • সিসিটিভি ক্যামেরা
  • বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট
  • সেন্সরভিত্তিক কলের জল
  • রোলার ব্লাইন্ড
কারিগরি
গাড়িসম্ভারবন্দে ভারত ট্রেনসেট[১]
ট্র্যাক গেজ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি গেজ
পরিচালন গতি
  • ১৬০ কিমি/ঘ (৯৯ মা/ঘ) (দিল্লি–ভোপাল রেলপথে)[২]
  • ১১০–১৩০ কিমি/ঘ (৬৮–৮১ মা/ঘ) (অন্যান্য রেলপথে)
রক্ষণাবেক্ষণইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি, চেন্নাই

এটি ১৮ মাসের মধ্যে ভারত সরকার, মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অধীনে চেন্নাই শহরের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) দ্বারা পরিকল্পনা ও নির্মাণ হয়েছিল। প্রথম রেকের নির্মাণ খরচ হিসাবে  ১০০ কোটি (US$ ১২.২২ মিলিয়ন) দেওয়া হয়েছিল, যদিও ইউনিট প্রতি খরচ পরবর্তী প্রজন্মের সাথে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।[৫] আসল মূল্যে ইউরোপ থেকে আমদানি করা একই রেলগাড়ির তুলনায় এটি ৪০% কম ব্যয়বহুল।[৬] ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে এই ট্রেনটির বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু করা হয়।[৭]

ইতিহাস

প্রেক্ষাপট

৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫-এ ভারতের বোম্বাই শহরে প্রথম ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ইএমইউ চালু হয়েছিল।[৮] ১৯৬০-এর দশকে চেন্নাই শহরের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) স্বদেশী ইএমইউ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিল।[৯][১০]

১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় রেলের কাছে কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি ও মুম্বইয়ে খুব কম দূরত্বের জন্য প্রচুর ইএমইউ পরিষেবা বর্তমান ছিল। সাধারণ দূরপাল্লার পরিবহনের জন্য ভারতকে লোকোমোটিভের উপর নির্ভর হতে হয়েছিল। তখন দূরপাল্লার ইএমইউ-র আবির্ভাব হয়েছিল, যা মেইনলাইন ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা মেমু নামে পরিচিত। এক দশকের মধ্যে ভারতের বিদ্যুতায়িত রেলপথ জুড়ে বহু আন্তঃনগর মেমু পরিষেবা চালু হতে লাগল। [১১]

ভারতীয় রেলের বেশিরভাগ ইতিহাসে গতি ও সময়ানুবর্তিতা প্রাথমিক চিন্তার বিষয় ছিল না, তখন নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছিল। ২০০৩-০৪ সালে ভারতে ৩২৫টি রেল দুর্ঘটনা হতো এবং ২০১৫-১৬ সালে ভারতে ১০৬টি রেল দুর্ঘটনা হতে লাগল।[১২] রেল নিরাপত্তার বিষয়টি সামলানোর পরে ভারতীয় রেলের কাছে গতি ও আরাম গুরুত্ব পেতে লাগল। বড় বড় শহরের মধ্যে সেমি-হাই-স্পিড (১৬০–২২০ কিমি/ঘ অথবা ৯৯–১৩৭ মা/ঘ) রেল পরিষেবার জন্য প্রস্তাব হতে লেগেছিল।[১৩] ২০১৬ সালে গতিমান এক্সপ্রেস দেশের প্রথম সেমি-হাই-স্পিড রেল পরিষেবা হিসেবে চালু হয়েছিল। ট্রেনটি আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট ও তুঘলকাবাদের মধ্যে গ্রেড এ রেলপথের উপর দিয়ে যায় এবং এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৬০ কিমি/ঘ (৯৯ মা/ঘ)।[১৪]

জুন ২০১৬-এ ভারতীয় রেল যৌথভাবে ৫০০০ আধুনিক ইএমইউ কোচ তৈরির জন্য একটি রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশনের (আরএফকিউ) আবেদন করেছিল এবং কানাডা, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল।[১৫] কিন্তু রেল মন্ত্রক বলল যে ভারতীয় রেল কোনও প্রত্যক্ষ চুক্তিতে রাজি হতে পারবে না এবং তাকে টেন্ডারিঙের মাধ্যমে যেতে বলেছিল। যেহেতু অন্য কোনও দরদাতা ছিল না, সেহেতু এই ট্রেনের লাভ করা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প নতুন প্রজন্মের ইএমইউ অর্ধ-উচ্চ-গতির ট্রেন স্বদেশীভাবে তৈরির জন্য ইন্ধন যুগিয়েছিল।[১৬] এরপর আইসিএফে জেনারেল ম্যানেজার সুধাংশু মানির নেতৃত্বে ভারতীয় রেল আমদানির অর্ধেক দামে নতুন ইএমইউ রেলগাড়ির নকশা তৈরি করতে শুরু করেছিল। রেলগাড়িটি সম্পূর্ণভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সেখানে ছিল স্বয়ংক্রিয় প্লাগ দরজা, কামরার ভিতর ওয়াই-ফাই, ইনফোটেনমেন্টসহ বহু আধুনিক পরিষেবা। এধরনের ট্রেন দেশে প্রথম এবং এটি ভবিষ্যতে এগোনোর এক মাইলফলকস্বরূপ।[১৭]

উদ্বোধন ও প্রাথমিক পরিষেবা

নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করছেন

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে দিল্লি ও বারাণসীর মধ্যে প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেছিলেন।[১৮][১৯] ট্রেনটি কানপুরপ্রয়াগরাজ হয়ে বারাণসীকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং ঐ পথ বরাবর যাত্রার সময় ১৫% কমে গিয়েছিল।[২০] দিল্লি ও বারাণসীর মধ্যে এই ৮-ঘণ্টার যাত্রা শহরদুটির মধ্যে ৭৬২ কিলোমিটার (৪৭৩ মা) পথ অতিক্রান্ত করে।[২১] পরের বছর, দিল্লি ও কাটরার মধ্যে দ্বিতীয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল, যা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম প্রজন্মের রেলগাড়ি (ভিবি১)।[২২]

শতাব্দী এক্সপ্রেসের প্রতিস্থাপন

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসকে প্রধান শহরের মধ্যে নিকটপাল্লার দ্রুত ও আধুনিক পরিষেবা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৮৮ সালে শতাব্দী এক্সপ্রেসও ঐ একই কারণে চালু করা হয়েছিল। সুতরাং, শতাব্দী এক্সপ্রেসের রুটে শতাব্দীর পরিবর্তে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দুই পরিষেবা চালু করার পর অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য ভারতীয় রেল নতুন রেলগাড়ি তৈরি করা বন্ধ ক'রে দিয়েছিল।[২৩] রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর তারা নতুন সেটের জন্য টেন্ডার পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছিল। তবে এক কর্মীর মতে, সবচেয়ে কম নিলামের জন্য তারা প্রস্তুতকারকদের আর সময় চায় এবং ট্রেনটিকে গোঁড়া থেকে উন্নীত করা দরকার।[২৪] ২০২২ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের ট্রেনসেট (ভিবি২) তৈরি হয়েছিল এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ এটি প্রথম চালু হয়েছিল। এটি পরিকল্পিত যে সমস্ত শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিবর্তে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হবে।[২৫]

পরিকাঠামো

ইকোনমি চেয়ার কার
এগজিকিউটিভ চেয়ার কার
হাওড়া–নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের খাদ্য পরিবেশন ব্যবস্থা

বন্দে ভারত ট্রেনের অগ্রভাগ বায়ুগতীয়, অর্থাৎ এটি উচ্চগতিতে বায়ুর ঘর্ষণ এড়াতে পারে।[২৬]ট্রেনের প্রতিটি প্রান্তে একটি ড্রাইভার কক্ষ রয়েছে, যার ফলে লাইনের প্রতিটি প্রান্তে দ্রুত চালক পরিবর্তন করা যায়, যা লোকোমোটিভ ট্রেনে সম্ভব নয়।[২৭] ট্রেনটিতে ১৬টি কোচ বর্তমান ওজন এবং এটি ১,৮২৮ জন যাত্রী ধারণ করতে পারে।[২৮]

কেন্দ্রীয় দুটি কামরায় প্রথম শ্রেণির কামরা রয়েছে যার প্রতিটিতে ৫২টি আসন রয়েছে, বাকি কামরাগুলিতে ৭৮টি ক'রে আসন আছে।[২৯] প্রত্যেক কামরার চ্যাসিসের দৈর্ঘ্য ২৩ মিটার (৭৫ ফু) এবং ট্রেনের বহিঃকাঠামো মরিচাবিহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি।[৩০] উভয়প্রান্তের কোচগুলি মোটরাইজড যাতে ক'রে ক্ষমতার সমবণ্টন এবং দ্রুত ত্বরণ ও মন্দন সম্ভব হয়। গাড়িগুলি পরস্পর যুক্ত এবং সম্পূর্ণভাবে সিল করা যাতে ক'রে কামরাগুলির মধ্যে সহজে যাতায়াত করা যায় এবং আওয়াজ কম হয়। ট্রেনে জিপিএস ভিত্তিক যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা, বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট, এগজিকিউটিভ চেয়ার কারে ঘূর্ণায়মান আসন যা যাত্রার অভিমুখে ঘোরানো যায়[৩১] এবং রিজেনারেটিভ ব্রেকিং ব্যবস্থা বর্তমান।[৩২]

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সর্বোচ বেগ ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১০ মা/ঘ)।[৩৩][৩৪] আমদানি করা উপাদানের মধ্যে আছে চাকা, আসন, দরজা, ব্রেকিং ব্যবস্থা, রূপান্তরক ও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম যেমন প্রসেসিং চিপ।[৩০][৩৫]

মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প অনুযায়ী ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) বন্দে ভারত ট্রেনসেট তৈরি করে। নকশা উন্নয়ন ও নতুন বিশিষ্টের ভিত্তিতে ট্রেনটির বিভিন্ন প্রজন্ম বর্তমান।[৩৬][৩৭]

যাত্রীসংখ্যা

ভদ্রকে হাওড়া–পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস

উত্তর রেল বলেছেন যে ২০১৯ সালে চালু নতুন দিল্লি–বারাণসী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের এক বছরের মধ্যে মোট আয়  ৯২ কোটি (US$ ১১.২৫ মিলিয়ন) এবং অকিউপেন্সি ১০০%।[৩৮] দক্ষিণ রেল কর্তৃপক্ষের মতে, তিরুবনন্তপুরম–কাসারগড় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ২০০% বুকিং হার কেরলে ট্রেনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাকে ইঙ্গিত করে। কাসারগড় থেকে তিরুবনন্তপুরমের যাত্রার জন্য আয় ১.১৭ কোটি (US$ ১,৪৩,০১২.৬১)[৩৯]

ভারতীয় রেল প্রদত্ত উপাত্ত অনুযায়ী ১ এপ্রিল ২০২২ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত বন্দর ভারত এক্সপ্রেসের গড় অকিউপেন্সি ৯৯%। বিলাসপুর–নাগপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের অকিউপেন্সি ৫২.৮৬%, যা সর্বনিম্ন।[৪০] অন্যদিকে, ২০১৯–২০ সালে রাজধানী, শতাব্দী ও দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের অকিউপেন্সি ৯৭.০১% এবং এতে ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিম বর্তমান।[৪১] সিএজি রেলের ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিমে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছিল এবং এর ফলে অনেক প্রিমিয়াম ট্রেনে এটি তুলে দেওয়া হয়েছিল।[৪২]

নিকট ভবিষ্যতে সাধারণ নিম্ন অকিউপেন্সির রুটে ১৬-কামরার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিবর্তে ৮-কামরার মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করা হবে।[৪৩] মে ২০২৩-এ সাময়িকভাবে ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিবর্ত তেজস এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হয়েছিল।[৪৪][৪৫]

বেগসীমা

ট্রেনটির সর্বাধিক অনুমতিযোগ্য বেগ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা)[৪৬] এবং ট্রায়ালের সময় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ১৮৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা) বেগ তুলেছিল।[৪৭] কিন্তু ভারতের বেশিরভাগ রেলপথ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা) বেগ সহ্য করতে পারে না এবং সেইজন্যই বেশিরভাগ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের সর্বাধিক অনুমতিযোগ্য বেগ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা) বেগের তুলনায় কম হয়। ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী, গতিমান এক্সপ্রেস ও রানি কমলাপতি–হযরত নিজামুদ্দিন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন এবং উভয়ের সর্বোচ্চ বেগ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা)।[৪৮][৪৯]

পরিষেবা

১ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী, ২৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা বর্তমান, যার মধ্যে ১৪টি ১৬-কামরার পরিষেবা ও ১১টি ৮-কামরার পরিষেবা বর্তমান। ৮-কামরার পরিষেবা অনেকসময় "মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস" নামে পরিচিত। সম্পূর্ণ তালিকার জন্য বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পরিষেবার তালিকা দেখুন।

মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস

কেএসআর বেঙ্গালুরু–ধারওয়াড় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, এক মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদাহরণ

মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হলো নিম্ন চাহিদার জন্য ৮টি কামরাবিশিষ্ট বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এর মোট খরচ  ৬৫ কোটি (US$ ৭.৯৫ মিলিয়ন) এবং প্রত্যেক কামরার খরচ  ৮.১২৫ কোটি (US$ ০.৯৯ মিলিয়ন)। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রাথমিক গবেষণার জন্য  ১০ লাখ (US$ ১২,২০০) ব্যয় করা হয়েছে।[৫০]

মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মূল লক্ষ্য হলো ৪–৫ ঘণ্টার স্বল্প দূরত্বে মধ্যে পরিষেবা প্রদান করা, যেখানে ১৬টি কোচবিশিষ্ট বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ৬–৭ ঘণ্টার দূরত্বের পরিষেবা প্রদান করে। যেখানে যাত্রীর চাহিদা কম সেখানে ভারতীয় রেল মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালাতে চায়।[৫১]

এমজিআর চেন্নাই সেন্ট্রাল–কোয়েম্বাটুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং সেকেন্দ্রাবাদ–তিরুপতি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস দুটিকে মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হিসেবে অভিহিত করা হয় কারণ এদের ১৬টি কামরার বদলে ৮টি কামরা বর্তমান এবং এদের খরচ  ৭০ কোটি (US$ ৮.৫৬ মিলিয়ন)[৫২] পরবর্তীকালে উচ্চ চাহিদার জন্য সেকেন্দ্রাবাদ–তিরুপতি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কামরার সংখ্যা আটের বদলে ষোলো করা হয়েছে।[৫৩] মে ২০২৩-এ বিলাসপুর–নাগপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসকে মিনি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পরিণত করে হয় কারণ এর গড় অকিউপেন্সি ৫১%।[৪৩][৫৪][৫৫]

বন্দে মেট্রো

ভারতীয় রেল বন্দে মেট্রো নামক এক নিকটপাল্লার আন্তঃনগর রেল পরিষেবার প্রস্তাব করেছিল, যা ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরত্বের মধ্যে বড় শহরগুলিকে যুক্ত রাখবে। বন্দে মেট্রোর তাত্ত্বিক বেগ হবে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৮১ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং রেলগাড়িটি অনেক বেশি ফ্রিকোয়েন্সিতে (দিনে ৪-৫ বার) চলবে। বন্দে মেট্রো মেমু ট্রেনগুলিকে প্রতিস্থাপিত করবে।[৫৬][৫৭] মে ২০২৩-এ মুম্বই শহরতলি রেলের জন্য বন্দে মেট্রোর ২৩৮টি রেকের বন্দোবস্ত করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল।[৫৮]

সমস্যা ও সমালোচনা

উদ্বোধনের প্রথম দিনে বারাণসী থেকে ফেরার পথে এক গোরুর জন্য নতুন দিল্লি–বারাণসী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভেঙে পড়েছিল। সূত্রের মতে, ট্রেনের চারটি কামরা এক বৈদ্যুতিক গোলাযোগে ভুগছিল এবং ব্রেকগুলিও জ্যাম হয়ে গিয়েছিল যার ফলে পুনরায় চালু করার আগে রেলগাড়িটি টুন্ডলা জংশন রেলওয়ে স্টেশনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে থেমে ছিল।[২১]

এছাড়া বহু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে চেন্নাই–মহীশূর,[৫৯] বিলাসপুর–নাগপুর,[৬০][৬১] হাওড়া–নিউ জলপাইগুড়ি,[৬২][৬৩] বিশাখাপত্তনম–সেকেন্দ্রাবাদ,[৬৪][৬৫] ভোপাল–দিল্লি,[৬৬] দিল্লি–আজমির,[৬৭] কাসারগড়–তিরুবনন্তপুরম[৬৮][৬৯][৭০] ও বেঙ্গালুরু–ধারওয়াড়[৭১][৭২] রুট উল্লেখযোগ্য।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন