দিল্লি
দিল্লি বা দিল্লী[ক] (বাংলা উচ্চারণ: [d̪ilːi]),[খ] আনুষ্ঠানিক নাম দিল্লি জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্র,[৫] ভারতের একটি মহানগর, যেখানে দেশের জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি অবস্থিত। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে দিল্লি যমুনা-গঙ্গা নদী উপত্যকার উচ্চ দোয়াব[৬] ও পাঞ্জাব অঞ্চলের অংশ।[৭] এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির পূর্ব সীমায় উত্তরপ্রদেশ রাজ্য এবং অপর তিন সীমায় হরিয়ানা রাজ্য অবস্থিত। দিল্লির আয়তন ১,৪৮৪ বর্গকিলোমিটার (৫৭৩ মা২) এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লক্ষ। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল মহানগর অঞ্চল।এটি বিশ্বের ভারতের ৩য় বৃহত্তম শহরাঞ্চলও বটে।[৮][৯][১০] দিল্লির নগরাঞ্চলীয় প্রসার এতটাই বেশি যে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির শহরও এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের হিসেব অনুসারে, বৃহত্তর দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার।[১১] মুম্বই শহরের পরেই দিল্লিতে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক সংখ্যায় কোটিপতি ও লক্ষপতিরা বসবাস করেন।[১২][১৩]
দিল্লি
| |
---|---|
মহানগর ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | |
দিল্লি জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্র | |
ভারতের মানচিত্রে দিল্লির অবস্থান | |
ইন্টার্যাক্টিভ মানচিত্র | |
স্থানাঙ্ক: ২৮°৩৬′৩৬″ উত্তর ৭৭°১৩′৪৮″ পূর্ব / ২৮.৬১০০০° উত্তর ৭৭.২৩০০০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
স্থাপিত | খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ (কিংবদন্তি অনুসারে) |
দিল্লী সালতানাতের রাজধানী | ১২১৪ |
মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী | ১৫২৬ |
ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী | ১৯১১ |
ভারত অধিরাজ্যের রাজধানী | ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ |
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাজধানী | ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ |
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল† | ১ নভেম্বর ১৯৫৬ |
জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্র†† | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ |
রাজধানী | নয়াদিল্লি |
জেলা | ১১ |
সরকার | |
• শাসক | দিল্লি সরকার |
• উপরাজ্যপাল | বিনয় কুমার সক্সেনা |
• মুখ্যমন্ত্রী | অরবিন্দ কেজরিওয়াল (আম আদমি পার্টি) |
• বিধানসভা | এককক্ষীয় (৭০ আসনবিশিষ্ট) |
• হাইকোর্ট | দিল্লি হাইকোর্ট |
• পুলিশ কমিশনার | অলোক বর্মা[১] |
আয়তন | |
• মহানগর ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | ১,৪৮৪.০ বর্গকিমি (৫৭৩.০ বর্গমাইল) |
• জলভাগ | ১৮ বর্গকিমি (৬.৯ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৫৮,৩৩২ বর্গকিমি (২২,৫২২ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ৩১তম |
উচ্চতা | ২০০−২৫০ মিটার (৬৫০−৮২০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১)[২] | |
• মহানগর ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | ১,১০,৩৪,৫৫৫ |
• ক্রম | ২য় |
• জনঘনত্ব | ১১,২৯৭.০১/বর্গকিমি (২৯,২৫৯.১২/বর্গমাইল) |
• মহানগর[৩] | ২,১৭,৫৩,৪৮৬ |
বিশেষণ | দিল্লিবাসী |
ভাষা | |
• সরকারি | হিন্দি[৪] |
• দ্বিতীয় সরকারি | ইংরেজি, পাঞ্জাবি, উর্দু[৪] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ১১০ XXX |
এলাকা কোড | +৯১ ১১ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-DL |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
† সংবিধান (সপ্তম সংশোধনী) আইন, ১৯৫৬-র গ খণ্ড অনুসারে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল †† সংবিধান (৭৯তম সংশোধনী) আইন, ১৯৯১ অনুসারে |
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে দিল্লি নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি জনবসতি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে।[১৪] ইতিহাসের অধিকাংশ সময় দিল্লি ছিল বিভিন্ন রাজ্য ও সাম্রাজ্যের রাজধানী। এই শহরটি বহুবার শত্রু কর্তৃক অধিকৃত, লুণ্ঠিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। এই ঘটনাগুলি মূলত ঘটেছিল মধ্যযুগে। আধুনিক দিল্লি একটি মহানগর অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত একাধিক শহরের একটি নগরপুঞ্জ।
দিল্লি ও তার সংশ্লিষ্ট নগরাঞ্চলকে ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৬৯তম সংশোধনী বলে জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দিল্লির প্রতিবেশী শহরগুলি হচ্ছে ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, নেহারপার (বৃহত্তর ফরিদাবাদ), বৃহত্তর নয়ডা, বাহাদুরগড়, সোনিপথ, পানিপথ, কারনাল, রোহতক, ভিওয়ানি, রেওয়ারী, বাগপথ, মিরাট, মজঃফরনগর, আলোয়ার, ভরতপুর ইত্যাদি। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে দিল্লি জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্রের রাজনৈতিক প্রশাসন ভারতের ভারতের রাজ্যগুলির অনুরূপ। দিল্লির নিজস্ব বিধানসভা, উচ্চ আদালত ও মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী মন্ত্রিপরিষদ রয়েছে। নয়াদিল্লির প্রশাসনিক দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত সরকার ও স্থানীয় দিল্লি সরকারের হাতে যুগ্মভাবে ন্যস্ত। নয়াদিল্লিই দিল্লির রাজধানী।
নামকরণ
"দিল্লি" নামটির উৎপত্তি নিয়ে একাধিক পুরাণকথা ও কিংবদন্তি রয়েছে। এগুলির মধ্যে একটি হল এই যে, ধিল্লু বা দিলু নামে এক রাজা এই স্থানে একটি শহর নির্মাণ করেছিলেন এবং নিজের নামানুসারে এই শহরটির নামকরণ করেছিলেন।[১৫][১৬][১৭] আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, এই শহরটির নামটির মূল হিন্দি/প্রাকৃত ঢিলী (‘আলগা’) শব্দ। তোমররা এই নামটি ব্যবহার করতেন। কারণ, দিল্লির লৌহস্তম্ভ একটি দুর্বল ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়েছিল এবং সেই কারণে এটিকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছিল।[১৭] তোমরদের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে যে মুদ্রা প্রচলিত হয়েছিল, তার নাম ছিল ‘দেহলিওয়াল’।[১৮] ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে, ইন্দ্রপ্রস্থের রাজা পৃথ্বীরাজ অধুনা পুরনো কেল্লা অঞ্চলে তাঁর রাজ্যের চার বর্ণের ব্যবহারের উপযোগী একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি সেই দুর্গের একটি সিংহদ্বার নির্মাণের আদেশ দেন এবং পরবর্তীকালে দুর্গটির নাম হয় দেহ্লী।[১৯] কোনো কোনোও ইতিহাসবিদ মনে করেন, "দিল্লি" নামটি উর্দু দেহালিজ় বা দেহালী শব্দের অপভ্রংশ। এই দুই শব্দের অর্থ "প্রবেশপথ" বা "দরজা"। দিল্লি শহরটি গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের প্রবেশপথ। এই নামটি তারই প্রতীক।[২০][২১] আরেকটি তত্ত্ব অনুসারে, এই শহরের আদি নাম ছিল ধিল্লিকা।[২২]
দিল্লির অধিবাসীদের বলা হয় "দিল্লিবাসী" বা হিন্দিতে "दिल्लीवाले" (দিল্লীৱালে)।[২৩] বাংলাসহ বিভিন্ন ইন্দো-আর্য ভাষার বাগধারায় এই শহরের নামটি পাওয়া যায়। যথা:
ইতিহাস
দিল্লি সংলগ্ন অঞ্চলে জনবসতি স্থাপিত হয়েছিল সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের পূর্বে। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে এই অঞ্চল যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি জনবসতি অঞ্চল ছিল, তারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[১৪] মনে করা হয়, এই শহরটিই হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে উল্লিখিত পাণ্ডবদের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থের স্থান।[১৫] মহাভারত অনুসারে, এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে ছিল ‘খাণ্ডবপ্রস্থ’ নামে একটি বিরাট বনাঞ্চল। সেই বন পুড়িয়ে ফেলে ইন্দ্রপ্রস্থ শহরটি নির্মিত হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীনতম স্থাপত্য ধ্বংসাবশেষটি মৌর্য যুগের (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ)। ১৯৬৬ সালে শ্রীনিবাসপুরীর কাছে মৌর্য সম্রাট অশোকের (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩৫ অব্দ) একটি স্তম্ভলিপি পাওয়া গিয়েছে।[২৬][২৭] দিল্লিতে আটটি প্রধান শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথম পাঁচটি শহর অধুনা দিল্লির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত ছিল। গুর্জর-প্রতিহার রাজা তোমর রাজবংশের অনঙ্গ পাল ৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে লাল কোট শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[২৮][২৯] ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে চৌহানরা লাল কোট দখল করে এবং এই শহরের নামকরণ করে কিলা রাই পিথোরা।[৩০]
১১৯২ সালে মহম্মদ ঘোরি নামে আফগানিস্তান থেকে আগত তাজিক মহম্মদ ঘুরি রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন। মহম্মদ ঘুরি উত্তর ভারতের অনেক অঞ্চল জয় করেছিলেন।[১৫] ১২০০ সালের মধ্যে স্থানীয় হিন্দু রাজাদের প্রতিরোধ দুর্বল হতে শুরু করেছিল। পরবর্তী পাঁচশো বছর উত্তর ভারত মুসলমান রাজবংশগুলির শাসনাধীনে ছিল। মহম্মদ ঘুরির ক্রীতদাস সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক ভারতের বিজিত অঞ্চলগুলি শাসন করার দায়িত্ব পান।[৩৩] তিনি কুতুব মিনার[৩৪] ও কাওয়াত-আল-ইসলাম (ইসলামের শক্তি) মসজিদের[৩৫] নির্মাণকাজ শুরু করেন। এটিই ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ যেটি এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কুতুবুদ্দিনের রাজত্বকালে অনেক জায়গায় হিন্দুরা বিদ্রোহ করেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি ইলতুতমিশ (১২১১-৩৬ খ্রিস্টাব্দ) উত্তর ভারতে তুর্কি শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় করেন।[১৫][৩৬]
পরবর্তী তিনশো বছর দিল্লি ছিল একাধিক তুর্কি এবং একটি আফগান লোদি রাজবংশের অধীনে। তাঁরা দিল্লিতে একাধিক দুর্গ ও নগর নির্মাণ করেছিলেন। এগুলি দিল্লির সাতটি শহরের অংশ।[৩৮] এই যুগে দিল্লি ছিল সুফিবাদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।[৩৯] ১২৯০ সালে মামলুক সালতানাতকে সিংহাসনচ্যুত করে খিলজি রাজবংশ (১২৯০-১৩২০) দিল্লি অধিকার করে।[৪০] দ্বিতীয় খলজি শাসক আলাউদ্দিন খিলজির অধীনে দিল্লি সুলতানি দাক্ষিণাত্যে নর্মদা নদীর দক্ষিণে প্রসার লাভ করে।[৪১] দিল্লি সুলতানির সর্বাধিক প্রসার ঘটেছিল মহম্মদ বিন তুগলকের (১৩২৫-১৩৫১) শাসনকালে।[৪২] সমগ্র দাক্ষিণাত্যকে নিজ অধিকারে আনার মানসে তিনি মধ্য ভারতের দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন।[৪৩] যদিও দিল্লি থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি উত্তর ভারতের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং সেই নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য পুরায় দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হন।[৪২] এরপর দাক্ষিণাত্যের প্রদেশগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী বছরগুলিতে ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকালে দিল্লি সালতানাত উত্তর ভারতের প্রদেশগুলির উপর থেকেও দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে।[৪৪] ১৩৯৮ সালে তৈমুর লং দিল্লি দখল ও লুণ্ঠন করেন[৪৫] এবং এক লক্ষ বন্দীকে হত্যা করেন।[৪৬] সৈয়দ রাজবংশের (১৪১৪-১৪৫১) শাসনকালেও দিল্লির অবনতি অব্যাহত থেকে। অবশেষে এই সুলতানির শাসন পরিসীমা দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।[৪৭] আফগান লোদি রাজবংশের শাসনকালে দিল্লি সুলতানি পাঞ্জাব ও গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের পুনরায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে এবং উত্তর ভারতে নিজ কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করে। যদিও এই পুনরুদ্ধার ছিল ক্ষণস্থায়ী। ১৫২৬ সালে বাবর এই সুলতানিকে পরাজিত করে মুঘল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।[৪৮]
বাবর ছিলেন চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লঙের বংশধর। তাঁর আদি নিবাস ছিল অধুনা উজবেকিস্তানের ফারগানা উপত্যকা। ১৫২৬ সালে তিনি ভারত আক্রমণ করেন এবং পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সর্বশেষ লোদি সুলতান ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাম্রাজ্য দিল্লি ও আগ্রা থেকে ভারত শাসন করত।[১৫] মুঘল রাজবংশ তিনশো বছরেরও বেশি সময় দিল্লি শাসন করেছিল। মাঝে ষোলো বছর (১৫৪০-১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ) শের শাহ সুরি ও হিমু দিল্লি শাসন করেছিলেন।[৪৯] ১৫৫৩ সালে হিন্দু রাজা হিমু মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের বাহিনীকে আগ্রা ও দিল্লিতে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। যদিও ১৫৫৬ সালে আকবর পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে হিমুর বাহিনীকে পরাজিত করে মুঘল শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।[৫০][৫১][৫২] শাহজাহান দিল্লির সপ্তম শহরটি নির্মাণ করেন। এই শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল শাহজাহানাবাদ ১৬৩৮ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী। এই শহরটি এখন ‘পুরনো শহর’ বা ‘পুরনো দিল্লি’ নামে পরিচিত।[৫৩]
১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের অবনতি সূচিত হয়। এই সময় দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের হিন্দু মারাঠা সাম্রাজ্য আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।[৫৪] ১৭৩৭ সালে মারাঠা বাহিনী দিল্লির প্রথম যুদ্ধে মুঘলদের পরাজিত করে দিল্লি দখল করে। ১৭৩৯ সালে মারাঠা বাহিনী কারনালের যুদ্ধে পারস্যের নাদির শাহের নেতৃত্বাধীন একটি ছোটো অথচ প্রবল সামরিক শক্তিধর বাহিনীর হাতে পরাজিত হয়। ভারত আক্রমণের পর তিনি দিল্লি সম্পূর্ণত দখল ও লুণ্ঠন করেন। এই সময় ময়ূর সিংহাসন, দরিয়া-ই-নুর ও কোহ্-ই-নুর সহ একাধিক মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গিয়েছিলেন। মুঘলরা আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা সেই পরাজয় ও অপমানের পর আর হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এর ফলে আরও বেশি সংখ্যায় বহিরাগত বাহিনী ভারত আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তীকালে এভাবেই ব্রিটিশরা ভারত অধিকার করে।[৫৫][৫৬][৫৭] নাদির শাহ দিল্লি ও ভারত ত্যাগ করতে রাজি হন একটি শর্তে। তিনি মুঘল সম্রাট প্রথম মহম্মদ শাহকে দয়াভিক্ষা করতে বাধ্য করেন এবং শহর ও রাজকোষের চাবি অর্পণ করেন।[৫৮] ১৭৫২ সালে একটি চুক্তি বলে মারাঠারা দিল্লির মুঘল রাজসিংহাসনের রক্ষাকর্তায় পরিণত হন।[৫৯]
১৭৫৭ সালে আফগান শাসক আহমদ শাহ দুররানি দিল্লি দখল করেন। তিনি একজন মুঘল অনুগামী শাসককে নামমাত্র ক্ষমতা প্রদান করে আফগানিস্তানে ফিরে যান। ১৭৫৮ সালে মারাঠারা পুনরায় দিল্লি দখল। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয় পর্যন্ত দিল্লি তাঁদেরই দখলে ছিল। এরপর আহমদ শাহ দুররানি আবার দিল্লি দখল করেন।[৬১] যদিও ১৭৭১ সালে মারাঠা শাসক মহদজি সিন্ধে দিল্লি দখল করে দিল্লিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন এবং ১৭৭২ সালে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে অনুগামী শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন।[৬২] ১৭৮৩ সালে বাঘেল সিং-এর অধীনে শিখরা দিল্লি ও লাল কেল্লা দখল করেন। কিন্তু একটি চুক্তির বলে শিখরা লাল কেল্লার অধিকার পরিত্যাগ করে এবং শাহ আলমকেই সম্রাট হিসেবে স্থাপন করে। ১৮০৩ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনী দিল্লির যুদ্ধে মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে।[৬৩] সিপাহি বিদ্রোহের সময় দিল্লি অবরোধ নামে পরিচিত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দিল্লি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৮৫৮ সালে এই শহরটি ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে। দিল্লিকে পাঞ্জাব প্রদেশের একটি জেলায় পরিণত করা হয়।[১৫] ১৯১১ সালে ঘোষণা করা হয় যে, ভারতের ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চলগুলির রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হবে।[৬৪] ১৯২৭ সালে ‘নয়াদিল্লি’ নামটি দেওয়া হয় এবং নতুন রাজধানী উদ্বোধন করা হয় ১৯৩১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। নয়াদিল্লি, যেটি ‘লুটিয়েন’স দিল্লি’ নামেও পরিচিত,[৬৫] সেটিকেই ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতার সময় ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঘোষণা করা হয়।[৬৬]
ভারত বিভাজনের সময় সহস্রাধিক হিন্দু ও শিখ শরণার্থী মূলত পাকিস্তানের পাঞ্জাব থেকে দিল্লিতে চলে আসেন এবং শহরের অনেক মুসলমান অধিবাসী পাকিস্তানে চলে যান। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে অধিবাসীদের দিল্লিতে চলে আসার ঘটনা ঘটতে থাকে। এর ফলে দিল্লির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং জন্মহার হ্রাস পায়।[৬৭]
১৯৯১ সালে সংবিধান (৬৯তম সংশোধনী) আইন অনুসারে দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে "দিল্লীর জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্র" নামে পরিচিত হয়।[৬৮][৬৯] এই আইন অনুসারে দিল্লির নিজস্ব বিধানসভা ও নির্বাহী গঠিত হয়। যদিও এই নির্বাহীর ক্ষমতা সীমিত।[৬৮] ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে নয়াদিল্লির ভারতীয় সংসদ ভবনে সশস্ত্র জঙ্গিরা হানা দেয়। এই সংঘাতে ছয় জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছিলেন।[৭০] ভারত সন্দেহ করে পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এই হানার পিছনে মূল চক্রী ছিল। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়।[৭১] ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে এবং ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে আবার জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটে। এই দুই জঙ্গিহানায় মোট ১০৩ জন নিহত হয়েছিলেন।[৭২]
বাস্তু পরিবেশবিদ্যা
প্রাণী | নীলগাই[৭৩] | |
---|---|---|
পাখি' | পাতি চড়ুই[৭৪][৭৫] | |
গাছ | নির্দিষ্ট করা হয়নি[৭৬] | |
ফুল | নির্দিষ্ট করা হয়নি[৭৩] |
উত্তর ভারতে ২৮°৩৭′ উত্তর ৭৭°১৪′ পূর্ব / ২৮.৬১° উত্তর ৭৭.২৩° পূর্ব অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে দিল্লি অবস্থিত। দিল্লির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে হরিয়ানা রাজ্য এবং পূর্ব দিকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য অবস্থিত। দিল্লির ভূগোলের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যমুনা নদী ও দিল্লি শৈলশিরা। যমুনা নদী ছিল পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক সীমানা। এই নদীর প্লাবন সমভূমি কৃষিকার্যের উপযোগী উর্বর পলিমাটি জোগায়। তবে এই নদীতে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেয়। হিন্দুধর্মের পবিত্র নদী যমুনাই দিল্লির একমাত্র প্রধান নদী। হিন্ডন নদী গাজিয়াবাদকে দিল্লির পূর্ব অংশকে বিচ্ছিন্ন করেছে। দিল্লি শৈলশিরার উৎস দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আরাবল্লি পর্বতমালা। এটি শহরের পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশগুলিকে বৃত্তাকারে পরিবেষ্টন করে আছে। এই শৈলশিরার সর্বোচ্চ স্থানটির উচ্চতা ৩১৮ মি (১,০৪৩ ফু)। এটি এই অঞ্চলের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।[৭৭]
দিল্লি জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্রের আয়তন ১,৪৮৪ কিমি২ (৫৭৩ মা২)। এর মধ্যে ৭৮৩ কিমি২ (৩০২ মা২) গ্রামাঞ্চল এবং ৭০০ কিমি২ (২৭০ মা২) শহরাঞ্চল। এই কারণে আয়তনের হিসেবে এটি ভারতের বৃহত্তম শহর। উত্তর-দক্ষিণে এই শহরের প্রসার ৫১.৯ কিমি (৩২ মা) এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর প্রসার ৪৮.৪৮ কিমি (৩০ মা)।
দিল্লি ভারতের ভূ-কম্পী ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। অর্থাৎ, প্রবল ভূমিকম্পে এই শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।[৭৮]
জলবায়ু
দিল্লি আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ুর (কোপেন সিডব্লিউএ) একটি নিদর্শন। এখানে গ্রীষ্মকার ৯ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় দৈনিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩৬ °সে (৯৭ °ফা) বা ততোধিক। বছরের উষ্ণতম দিনটি হল ২২ মে। এই দিনের গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৮ °সে (১০০ °ফা) এবং সর্বনিম্ন ২৫ °সে (৭৭ °ফা)।[৭৯] শীতকাল ১১ ডিসেম্বর থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় দৈনিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ১৮ °সে (৬৪ °ফা) বা তার কম। বছরের শীতলতম দিনটি হল ৪ জানুয়ারি। এই দিনের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকে ২ °সে (৩৬ °ফা) এবং সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা থাকে ১৫ °সে (৫৯ °ফা)।[৭৯] মার্চ মাসের প্রথম দিকে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়। উত্তর-পশ্চিম দিকের পরিবর্তে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা উষ্ণ থাকে। জুন মাসের শেষ দিকে বর্ষা আসে। সেই সময় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।[৮০] নভেম্বরের শেষ দিকে অল্পকালের জন্য অল্প শীত অনুভূত হয়। জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা সবচেয়ে হ্রাস পায়। এই সময় প্রায়ই কুয়াশা দেখা দেয়।[৮১]
দিল্লি তাপমাত্রা সাধারণত ৫ থেকে ৪০ °সে (৪১.০ থেকে ১০৪.০ °ফা)-এর মধ্যে থাকে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে যথাক্রমে −২.২ এবং ৪৮.৪ °সে (২৮.০ এবং ১১৯.১ °ফা)-এর মধ্যে।[৮২] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৫ °সে (৭৭ °ফা); মাসিক গড় তাপমাত্রা ১৩ থেকে ৩২ °সে (৫৫ থেকে ৯০ °ফা)। জুলাই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছিল ১৯৩১ সালে। এই তাপমাত্রা ছিল ৪৫ °সে (১১৩ °ফা)।[৮৩][৮৪] গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭১৪ মিমি (২৮.১ ইঞ্চি)। বৃষ্টি হয় মূলত জুলাই থেকে অগস্ট মাসে বর্ষাকালে।[১৫] দিল্লিতে বর্ষার আগমনের গড় তারিখটি হল ২৯ জুন।[৮৫]
টেমপ্লেট:দিল্লি আবহাওয়া বাক্স
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) একটি পরিসংখ্যান মতে ১৬৫০ টি বৈশ্বিক শহরের মধ্যে দিল্লির বায়ু সবচেয়ে বেশি দূষিত। যার প্রভাব এর পারিপার্শ্বিক শহরগুলোর উপরেও পড়ছে।[৮৬]
নগর প্রশাসন
প্রতিবর্গমাইল নজরদারি ক্যামেরার নিরিখে শহরটি বিশ্বে ১ম স্থানে রয়েছে।[৮৭]
সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি
অর্থনীতি
দিল্লির অর্থনীতি দেশের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ত্রয়োদশ সবচেয়ে বড়। জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) আনুমানিক US$২৭২.৬০৩ বিলিয়ন (২০২১)[৮৮] এবং জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্রের জিডিপি আনুমানিক ₹১০৮৩০০০ কোটি (US$ ১৩২.৩৮ বিলিয়ন) (২০২২–২৩)।[৮৯] ২০২০–২১ সালে দিল্লির জিডিপি-তে সেবা খাতের অবদান ৮৫% অবদান, যেখানে উৎপাদন খাত ও প্রাথমিক খাতের অবদান যথাক্রমে ১২% ও ৩%।
পরিষেবা
পরিবহন
বিমান
দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল শহরের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহনের প্রধান প্রবেশদ্বার। ২০১৫-১৬ সালে, বিমানবন্দরটি ৪৮ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে পরিচালনা করে,[৯০] যা এই বিমানবন্দরকে ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর তৈরি করে। টার্মিনাল ৩, যা ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে নির্মাণ করতে ₹৯৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় হয়। এই টার্মিনাল বার্ষিক অতিরিক্ত ৩৭ মিলিয়ন যাত্রী পরিচালনা করতে সক্ষম।[৯১] ২০১০ সালে, আইজিআইএ'কে এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ১৫-২৫ মিলিয়ন বিভাগে বিশ্বের চতুর্থ সেরা বিমানবন্দর পুরস্কার দেওয়া হয়। এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৫-৪০ মিলিয়ন যাত্রী বিভাগে বিমানবন্দরটিকে বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর হিসাবে স্থান দেওয়া হয়। দিলি বিমানবন্দরকে মধ্য এশিয়ার সেরা বিমানবন্দর এবং মধ্য এশিয়ার সেরা বিমানবন্দর কর্মী বিভাগে স্কাইট্র্যাক্স ওয়ার্ল্ড বিমানবন্দর পুরস্কার ২০১৫-এ ভূষিত করা হয়।[৯২][৯৩]
১৯২৮ সালে দিল্লি ও রোশনারা নামক দুটি ডি হাভিল্যান্ড মথ বিমান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দিল্লি ফ্লাইং ক্লাবটি সাফদারজং বিমানবন্দরে অবস্থিত, যা ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এটি সেই সময়ে দিল্লির একমাত্র বিমানবন্দর এবং ভারতের দ্বিতীয় বিমানবন্দর ছিল।[৯৪] বিমানবন্দরটি ২০০১ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল; তবে, সেপ্টেম্বরে ২০০১ সালে নিউইয়র্কের হামলার পরে এর নিরাপত্তাজনিত কারণে উদ্বেগের কারণে ২০০২ সালের জানুয়ারিতে সরকার বিমানবন্দরটি বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন থেকে ক্লাবটি কেবল বিমান রক্ষণাবেক্ষণের কোর্স পরিচালনা করে এবং ভিআইপি-র জন্য ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেলিকপ্টার চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সহ।[৯৪][৯৫]
গাজিয়াবাদে হিনডন অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দরটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের দ্বিতীয় বিমানবন্দর হিসাবে ৮ ই মার্চ, ২০১৮ সালে উদ্বোধন করেন।[৯৬]
বাণিজ্যিক উড়ানের জন্য উন্মুক্ত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মিরাট বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ বা বৃহত্তর নয়ডায় একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের দ্বারা প্রস্তাবিত রয়েছে।[৯৭] জেওাররের তাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পটি উত্তরপ্রদেশ সরকার অনুমোদন করেছে।[৯৮]
রেলপথ
মেট্রো
২৪ ডিসেম্বর ২০০২ সালে দিল্লি মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। এটি ভারতের প্রথম আধুনিক ও দীর্ঘতম মেট্রো রেল। দিল্লি মেট্রো হ'ল একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে দিল্লি, ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম, নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে পরিষেবা প্রদান করে। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে দিল্লি মেট্রো বিশ্বের দশম বৃহত্তম মেট্রো ব্যবস্থা। দিল্লি মেট্রো ভারতের দ্বিতীয় আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা দ্রুত, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ এবং আরামদায়ক পরিবহনের ব্যবস্থা করে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। ২৮৫ টি স্টেশন সহ মোট ৩৮৯ কিলোমিটার (২৪২ মাইল) দৈর্ঘ্যের সাথে নেটওয়ার্কটি ১২ টি লাইন নিয়ে গঠিত, যা ভূগর্ভস্থ, ভুমিগত এবং উত্তোলিত স্টেশনগুলির মিশ্রণ। স্টেশন প্রবেশপথ থেকে ট্রেনগুলিতে চড়ার জন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের গাইড করার জন্য সমস্ত স্টেশনে এসকেলেটর, লিফট এবং স্পর্শী টাইলস রয়েছে।
স্থানীয় দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা
সড়কপথ
জনপরিসংখ্যান
ব্যক্তি বা পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপনের জন্য এই শহর বিশ্বের সবথেকে কম ব্যায়বহুল শহরের একটি। খুব সাশ্রয়ী খরচে এখানে ঘর ভাড়া বা কেনা যায় যা বিশ্বের মেট্রোসিটিগুলোতে বিরল।[৯৯]
সংস্কৃতি
উৎসব
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি অংশ হওয়ায় সাধারণতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী - ভারতের এই তিনটি জাতীয় দিবস এখানে বিশেষ সমারোহের সঙ্গে উদযাপিত হয়। স্বাধীনতা দিবসে (১৫ অগস্ট) ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এই দিন দিল্লির অধিবাসীরা ঘুড়ি উড়িয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করেন।[১০০] দিল্লির সাধারণতন্ত্র দিবস কুচকাওয়াজ একটি বিরাট সাংস্কৃতিক ও সামরিক কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সামরিক শক্তি প্রদর্শিত হয়।[১০১][১০২] কয়েক শতাব্দী ধরে, দিল্লি বহুত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। দিল্লিতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে "ফুলওয়ালো কি সায়র" নামে একটি উৎসব হয়। এই উৎসবের সময় মেহরাউলিতে অবস্থিত ত্রয়োদশ শতাব্দীর সুফি সন্ত খাজা বখতিয়ার কাকি ও যোগমায়া মন্দিরে ফুল ও ফুলবসানো "ফাঁকে" পাখা উৎসর্গ করা হয়।[১০৩]
দিল্লির ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে দীপাবলি, মহাবীর জয়ন্তী, গুরু নানক জয়ন্তী, দুর্গাপূজা, হোলি, লোহরি, চৌথ, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, মহাশিবরাত্রি, ঈদ উল-ফিতর, মহরম ও বুদ্ধজয়ন্তী উল্লেখযোগ্য।[১০২] কুতুব উৎসব দিল্লির একটি বিখ্যাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কুতুব মিনারের প্রেক্ষাপটে ভারতের সব অঞ্চলের গায়ক ও নর্তকদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।[১০৪] অন্যান্য উৎসবগুলির মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব, আন্তর্জাতিক আম উৎসব ও বসন্ত পঞ্চমী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অটো এক্সপো এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি মেলা।[১০৫] এটি প্রতি দুই বছর অন্তর দিল্লিতে আয়োজিত হয়। প্রগতি ময়দানে প্রতি বছর আয়োজিত বিশ্ব বইমেলা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই প্রদর্শনী।[১০৬] প্রচুর বই বিক্রি হয় বলে দিল্লিকে ভারতের "বই রাজধানী"ও বলা হয়।[১০৭]
খাদ্যাভ্যাস
শিক্ষা
গণমাধ্যম
খেলাধুলা
দিল্লিতে সব রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের আসর এখানে বসে। দিল্লি ডায়নামোস এফসি দিল্লি শহরের প্রতিনিধিত্ব করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
দিল্লি এশীয় প্রধান মহানগর নেটওয়ার্ক ২১-এর সদস্য।
ভগিনী শহর
আরও দেখুন
টীকা
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
- Economic Survey of Delhi 2005–2006. Planning Department. Government of National Capital Territory of Delhi. Retrieved on 12 February 2007
- Dalrymple, W (২০০৩)। City of Djinns (1 সংস্করণ)। Penguin Books। আইএসবিএন 978-0-14-200100-4।
- Prager, D (২০১৩)। Delirious Delhi (1 সংস্করণ)। Arcade Publishing। আইএসবিএন 978-1-61145-832-9।
- Brown, L (২০১১)। Lonely Planet Rajasthan, Delhi & Agra (5 সংস্করণ)। Lonely Planet Publications। আইএসবিএন 978-1-74179-460-1।