বরগীত
বরগীত অসমের নব-বৈষ্ণব ধৰ্মের হোতা শংকরদেব এবং মাধবদেব দ্বারা ব্ৰজৱলি ভাষায় রচিত, উচ্চ আধ্যাত্মিক ভাবপূৰ্ণ, নিৰ্দিষ্ট রাগ বিশিষ্ট, এক বিশেষ শৈলীর গীত।[১][২] বরগীতকে বাণীকান্ত কাকতি মহান সঙ্গীত, কালিরাম মেধি স্বর্গীয় সঙ্গীত এবং দেবেন্দ্ৰনাথ বেজেবরুয়া পবিত্র সঙ্গীত বলে আখ্যা দিয়েছেন।[৩] শঙ্করদেব প্রায় দুই শত চল্লিশটি বরগীত রচানা করলেও এক অগ্নিকান্ডে তাঁর অধিকাংশ রচনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং মাত্র পঁয়ত্রিশটি গীত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।[৪] মাধবদেব দুইশতের অধিক বরগীত রচনা করেন।[৫]:৬০ ১৪৮৮ খ্রিষ্টাব্দে শঙ্করদেব রচিত মন মেরি রাম চরনহি লাগু ইতিহাসের প্রথম বরগীত।[৬]:৪৫,৪৬
বিষয়বস্তু
বরগীতে কৃষ্ণের শৈশবের বিভিন্ন প্ৰকার লীলা, দুষ্টুমি, খেলা, চাতুরি, চৌৰ্য্যবৃত্তি ও কৈশোরে গোপী লীলা, গোপিনীদের কৃষ্ণ বিরহ ও কৃষ্ণ প্ৰেমের ব্যাকুলতা, বন্ধু উদ্ধবের কৃষ্ণের প্ৰতি প্ৰেম ও ভক্তি, কৃষ্ণবিহীন বৃন্দাবনের অন্ধকার চিত্ৰ অঙ্কিত হয়েছে।[৩] কোনো কোনো বরগীতে মানব জীবনের নশ্বরতা, ধন-জন, রূপ-যৌবনের অস্থায়িত্ব, কাম-ক্ৰোধাদি রিপুদমনে ভক্তিৰ মাহাত্ম্য, মুক্তির জন্য ভক্তের ভগবানের নিকটে আত্মসমৰ্পণ ইত্যাদি পারমাৰ্থিক তত্ত্বও বৰ্ণিত হয়েছে।
সংগীত শৈলী
এই ভক্তি গীতসমুহ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এক স্বতন্ত্ৰ ধারা। ভারতের অন্যান্য শাস্ত্ৰীয় সংগীতৰ মতোই এই গীতসমুহ কেদার, ধনশ্ৰী, সিন্ধুরা ইত্যাদি বিভিন্ন রাগভিত্তিক। এই গীতে কোনো বাদ্যযন্ত্ৰের আবশ্যক না হলেও সাধারণতঃ পরিবেশনের সময় খোল, ও বাঁশির প্ৰয়োগ করা হয়।[৩] বরগীত শুরু করার পূর্বে 'রাম', 'হরি', 'গোবিন্দ' ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করে আলাপ গাইতে হয়, যা 'রাগ দিয়া' বা 'রাগ তান' নামে পরিচিত।[৭] এই সঙ্গীতে তাল ব্যবহৃত না হলেও পরিবেশনের সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তখন নির্দিষ্ট রাগে নির্দিষ্ট তাল ব্যবহৃত হয়, যেমন খরমানতাল ব্যবহৃত হয় কল্যাণ রাগের সাথে, ইত্যাদি।[৭]:২৭৮ এই গীত ধ্রুপদের মতো গম্ভীর প্রকৃতির।
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
- Barua, B K (১৯৫৩), "Sankaradeva: His Poetical Works", Kakati, Banikanta, Aspects of Early Assamese Literature, Gauhati: Gauhati University
- Mahanta, Bapchandra (২০০৮)। Borgeet (Assamese ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Guwahati: Students' Stores।
- Das-Gogoi, Hiranmayee (ডিসেম্বর ৬, ২০১১)। "Dhrupadi Elements of Borgeet"। Society for Srimanta Sankaradeva। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৩, ২০১২।