আদিরসাত্মক রূপায়নের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক
(যৌনাবেদনময়ী অঙ্কন ইতিহাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আদিরসাত্মক রূপায়নের ইতিহাস বলতে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে রংচিত্র, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, নাটক, সঙ্গীত এবং পুঁথিতে যৌন প্রকৃতির নানান দৃশ্য প্রকাশ করার ব্যাপারটিকে নির্দেশ করা হয়। প্রাচীন এবং আধুনিক, প্রায় সমস্ত সভ্যতাতেই সেগুলিকে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃতিতে প্রায়শই দেখা যায় যৌন আচরণগুলি অতিপ্রাকৃত শক্তির সঙ্গে জড়িত এবং এইভাবেই তাদের ধর্ম এই ধরনের চিত্রকলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ভারতবর্ষ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান এবং চীন এশিয়া মহাদেশের এই দেশগুলিতে যৌনতা এবং কামদ শিল্পের উপস্থাপনা, স্থানীয় ধর্মের আধ্যাত্মিক রূপের মধ্যেই নির্দিষ্ট রয়েছে। প্রাচীন গ্রীক ও রোমানরা কামদ বা প্রেমমূলক প্রকৃতির উপর অনেক শিল্প এবং অলঙ্করণের সৃষ্টি করেছিলেন যার বেশিরভাগই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক অভ্যাসের অংশভূত ছিল।[১][২]

কামদ দৃশ্য, লাল রঙ, পানীয়ের পাত্রের প্রান্ত, ৫১০ খ্রীষ্ট পূর্ব
রোমান তৈল লম্ফ, কুকুর শৈলী যৌন মিলন বর্ণিত করছে
রোমান লম্ফ (খ্রীষ্টাব্দ) দুইজন পুরুষ এবং একজন নারীর একই সঙ্গে যৌন মিলন
পম্পেইতে ইতর-রতি প্রবণ রোমানদের চিত্র
রোমান (পতিতালয়) মুদ্রা বা টোকেন
ভাস্কর্য (ভারতবর্ষ), প্রথম শতাব্দী
ঐতিহ্যময় পায়ুকাম পূর্বরাগের দৃশ্য এথেন্সের ইতিহাস

সাম্প্রতিক কালে, এই চিত্রগুলি প্রদর্শন এবং প্রচারের জন্য মুদ্রণ, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র এবং কম্পিউটার-এর মতো যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভাবন কৌশলকে অভিযোজিত করা হয়েছে।[৩]

ইতিহাসের মাধ্যমে ধারণা

প্রথমদিকের সময়ে, প্রেমমুলক চিত্রাবলী স্থানীয় বা ধর্মীয় শিল্প সংস্কৃতির উপসাগর ছিল এবং এগুলিকে অন্য কোনোভাবে সরানো বা ব্যবহার করা হয়নি। ভিক্টোরিয়ান যুগ পর্যন্ত পর্নোগ্রাফির আধুনিক কোনো ধারণা বিদ্যমান ছিলনা। ১৮৬০ এর দশকে, পতিতাবৃত্তির পুরনো সংজ্ঞাটিকে প্রতিস্থাপিত করে বর্তমান সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করা হয়।[৪] ১৮৫৭ সালে একটি ইংরাজী চিকিৎসা অভিধানে "জনস্বাস্থ্যের বিষয় হিসেবে পতিতাবৃত্তি এবং পতিতাবৃত্তির বিবরণ (a description of prostitutes or of prostitutions, as a matter of public hygeine)" হিসাবে বর্ণ্না করা হয়েছে।[৫] ১৮৬৪ সালের মধ্যে আধুনিক সংজ্ঞাটির প্রথম সংস্করণটি ওয়েবস্টারের অভিধানে (Webster's Dictionary) প্রকাশ হয়েছিল। কামুক চিত্রগুলি মদ্যপানজনিত আনন্দানুষ্ঠানে গৃহের দেওয়ালে সজ্জিত হতে ব্যবহৃত হতো, যার উদাহরণ পাম্পেইতে বিদ্যমান।"[৬] আজকের দিনে এর শুরু ঠিক কোথায় তার স্বাভাবিক, সুষ্পষ্ট ছবি বোঝা যায়। যদিও কিছু যৌন কার্যকলাপ নির্দিষ্ট কিছু পূর্ববর্তী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নিষিদ্ধ ছিল তবুও ১৮৫৭ সাল অবধি এই ধরনের বস্তু কিংবা চিত্রকলাকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে কিছু বই, খোদাই কিংবা চিত্র সংগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যৌনতা সম্পর্কিত জিনিসগুলি পরিদর্শন সীমিত বা খর্ব করা ভিক্টোরিয়ান সংগঠনের কাজ ছিল।[৩]১৮৬০-এর দশকে যখন পম্পেইয়ের বড় পরিমাপ খনন হয়, প্রাচীন রোমের বেশিরভাগ কামদ শিল্প প্রকাশ্য দিবালোকে উপস্থিত হয়; যা ভিক্টোরিয়ান অর্থাৎ যারা নিজেদের রোমান সাম্রাজ্যের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরাধিকারি মনে করেছিল তাদের কাছে অত্যন্ত হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই মুহূর্তে তারা বুঝতে পারেননি সেইসব খোলামেলা, অকপট চিত্রাবলীগুলি নিয়ে ঠিক কি করা উচিত এবং তাই তারা উচ্চশ্রেণীর পণ্ডিত বাদে সমাজের সব স্তরের মানুষদের থেকে সেগুলিকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। অবশেষে নেপলসের গুপ্ত জাদুঘরে চলমান বস্তুগুলিকে বন্ধ করে আবরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয় যাতে সেইসমস্ত বস্তুগুলি নারী, শিশু এবং শ্রমিকশ্রেণীর সংবেদনশীলতাকে দূষিত করতে না পারে। ইংল্যান্ড তথা সমগ্র বিশ্বে ১৮৫৭ সালের অশ্লীল প্রকাশনা (Obscene Publications Act) আইন পাসের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফিকে অপরাধমূলক কাজ হিসেবে প্রণয়ন করা হয়।[৩] মাঝেমধ্যে দমন করা স্বত্বেও কামদ বিষয়ের উপরে তৈরী চিত্রনাট্য সহস্রাব্দের জন্য খুবই সাধারণ বিষয় ছিল।[৭]

পর্ণোগ্রাফির অস্তিত্ব সমগ্র ঐতিহাসিক লিপি জুড়ে বিদ্যমান এবং ফোটোগ্রাফি, সিনেমা, ভিডিও, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটসহ প্রতিটি আধুনিক মাধ্যমের সাহায্যে অভিযোজিত হয়েছে।

আধুনিক পর্ণোগ্রাফির প্রাথমিক দৃষ্টান্ত ষোড়শ শতাব্দীর দিকে যখন যৌনতায় স্পষ্ট চিত্রগুলি ইউরোপীয় শিল্পের ঐতিহ্যগত যৌন উপস্থাপনা এবং সেই সময়কার নৈতিক নিয়মগুলিকে মিশ্রিত করে ইউরোপীয় ঐতিহ্যময় যৌনতার স্পষ্ট উপস্থাপনার থেকে নিজেকে আলাদা করে।[৮]

প্রথম সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে বক্তৃতার বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে বক্তৃতাকে সীমাবদ্ধ করার ক্ষেত্রকে নিষিদ্ধ করেছে। বিব্রত ভাষণ সুরক্ষিত এবং নিয়ন্ত্রিত হতে পারে কিন্তু নিষিদ্ধ করা যায়না। প্রথম সংশোধনের ক্ষেত্রে অশ্লীলতা বিচারিকভাবে স্বীকৃত ব্যতিক্রম। ঐতিহাসিকভাবে, এই ব্যতিক্রমটিকে যৌন শিক্ষা সম্বন্ধীয় তথ্য নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা, নগ্নতাবাদের উপর গবেষণা যৌনতা কেন্দ্রিক সাহিত্যে ব্যবহার করা হয়েছিল।[৯]

১৯৭০ এর যুক্তরাষ্ট্রে, পর্ণোগ্রাফি শিল্প বন্ধ করার প্রচেষ্টায় পতিতাবৃত্তির অভিযোগে এক একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নালিশ করা হয়েছিল। পিপল ভি. ফ্রিম্যানের ক্ষেত্রে ক্যালিফোর্নিয়ার সুপ্রিম কোর্ট পতিতাবৃত্তিকে, একজন ব্যক্তির অর্থের বিনিময়ে যৌনক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার বদলে পর্দায় চিত্রিতকারী একজন অভিনেতার অভিনয়ের অংশ হিসাবে পৃথকীকৃত করার আদেশ দিয়েছিলেন।[১০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাটি আপিল করা হয়নি, যার ফলে এটি কেবলমাত্র ক্যালিফোর্নিয়াতেই সীমাবদ্ধ।[১১]

পূর্ব চিত্রায়ন

অতিরঞ্জিত যৌন বৈচিত্র্য সহ একটি ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি
প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রস্তর খদিত মূর্তি,স্ত্রী যৌনাঙ্গ

প্রস্তরযুগ এবং মধ্য প্রস্তরযুগ

কামদ চিত্রের প্রাচীনতম জীবন্ত নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হল প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র এবং ভাস্কর্য। তার মধ্যে কিছু সাধারণ চিত্র হল প্রাণী, শিকারের চিত্র এবং মানব জিনতত্ত্বের চিত্রাবলী। অতিপ্রাকৃত যৌন বৈশিষ্ট্যের সহিত নগ্ন মানুষের বেশকিছু চিত্র প্যালাইওলিথিক চিত্রকর্ম ও শিল্পকর্মে (উদাঃ, ভেনাস মূর্তি) চিত্রিত আছে। ইংল্যান্ডের ক্রিসওয়েল ক্রাগ গুলিতে সম্প্রতি আবিষ্কৃত গুহাশিল্পটি ১২,০০০ বছরেরও বেশি বলে মনে করা হয় এবং এতে কিছু প্রতীক রয়েছে যা নারীদের জনন্দ্রিয়ের শৈলযুক্ত সংস্করণ। যদিও এই বস্তুগুলির ব্যবহারের সরাসরি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই ধরে নেওয়া হয় বস্তুগুলি কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হতো,[১২] আরো পরিষ্কার ভাবে বললে, যৌন উদ্দেশ্যে।[১৩]

জার্মানির প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে রিপোর্ট করেছিলেন যে, তারা খুঁজে পেয়েছেন একটি ৭২০০ বছরের পুরনো দৃশ্যে দেখানো হয়েছে যে যৌন সম্পর্কের সময়ে একটি পুরুষ যৌন মূর্তি একটি নারী যৌন মূর্তির উপরে নমন করে আছে। পুরুষ মূর্তিটি অ্যাডোনিস ভন জেসারহানিট নামে পরিচিত।[১৪]

মেসোপটেমিয়া

প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে ইতররতি প্রবন যৌন চিত্রের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।[১৫][১৬] প্রাক সুমেরীয় যুগে খোদাই সংক্রান্ত গ্লিপ্টিক শিল্প মিশনারি আসনে ফ্রন্টাল যৌনতার দৃশ্য দেখায়।[১৫] প্রাক সহস্র খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে মেসোপটেমিয়ায় দেখা গেছে, যখন মেয়েটি বিয়ার খাবার জন্য আনমিত হয়, সাধারণত তখনই পুরুষটি মেয়েটির পিছনে প্রবেশ করে।[১৫] মধ্য আসিরীয়ার নেতৃত্বাধীন ক্ষুদ্র প্রস্তর মূর্তিগুলিতে প্রায়শই দেখায গেছে একজন পুরুষকে দাঁড়িয়ে এবং একজন মহিলাকে বেদীর উপরে বসে আরাম করতে।[১৫] ধর্মগ্রন্থগুলি ঐতিহ্যগত ভাবে এই সমস্ত দৃশ্যগুলির ব্যাখ্যা করেছেন এগুলিকে ধর্মীয় রীতিগত যৌনতা হিসাবে।[১৫] তবে যৌনতা এবং পতিতাবৃত্তির দেবী ইনান্না সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত হবার সম্ভবনা বেশি।[১৫] আসুরের ইনান্না মন্দিরে যৌন চিত্রের বহু নিদর্শন স্পষ্টত পাওয়া যায়।[১৫] যেগুলিতে নারী এবং পুরুষের যৌন অঙ্গের নমুনা পাওয়া যায়,[১৫] যার মধ্যে দেখা গেছে পাথরে খদিত লিঙ্গ রূপ বা ফাল্লি (phalli) যেগুলিকে সাধারণত গলার চারপাশে মাদুলির আকারে পরিধান করা হতো অথবা পূজা মূর্তি সাজাতে ব্যবহার করা হতো এবং স্ত্রী যোনিপথের মাটির নমুনাগুলি (মডেল) বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।[১৫]

মিশর

যৌন মিলনের চিত্রগুলি প্রাচীন মিশরীয়দের আনুষ্ঠানিক শিল্পের সাধারণ বিধির অংশ ছিলনা[১৭] তবে ইতররতি প্রবণ যৌন সংসর্গের অপরিস্ফুট রেখাচিত্র কিছু মৃৎশিল্পের ভাঙা টুকরো এবং দেওয়াল চিত্রতে পাওয়া গেছে।[১৭] তুরিনের কামদ প্যাপিরাস (প্যাপিরাস ৫৫০০১) ৮.৫ ফুট (২.৬ মিঃ) লম্বা এবং ১০ ইঞ্চি (২৫ সেমি) চওড়া একটি মিশ্রীয় প্যাপিরাস স্ক্রল যা দেইর-এল-মদিনা তে পাওয়া গিয়েছিল।[১৭][১৮] যার মধ্যে শেষ দুই তৃতীয়াংশে নারী এবং পুরুষের রতি অবস্থানের বারোটি ভিন্ন চিত্র দেখানো হয়েছে।[১৮] The men in the illustrations are "scruffy, balding, short, and paunchy" with exaggeratedly large genitalia[১৯] দৃষ্টান্তের মধ্যে পুরুষ চিত্রগুলিকেতাদের অতিরিক্ত বড় যৌনাঙ্গের সহিত "অপরিচ্ছন্ন, টাক, বেঁটে এবং ভুঁড়িদাস" দেখানো হয়েছে যা মিশরীয়দের আকর্ষণীয় শারীরিক গঠনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।[১৭][১৯] কিন্তু নারীরা যৌন আবেদন সম্পন্না[১৭][১৯] এবং তাদেরকে ঐতিহ্যবাহী কামদ চিত্রের বস্তুগুলির সাথে দেখানো হয়েছে যেমন, কনভোভুলাস নামক পুষ্পবৃক্ষের পাতা। এমনকি কিছু দৃশ্যে দেখানো হয়েছে তারা প্রেমের দেবী হাথরের সঙ্গে জড়িত এমন ঐতিহ্যশালী জিনিস ধরে থাকতে যেমন, পদ্মফুল, বানর এবং সিস্ত্রা[১৭][১৯] নামক বাদ্যযন্ত্র। স্ক্রোলটি সম্ভবত রামেসাইড যুগে(১২৯২-১০৭৫ খ্রীঃপূঃ) চিত্রিত হয়েছিল এবং এর উচ্চতর শৈল্পিক গুণ নির্দেশ করে কোনো উচ্চবিত্ত দর্শকের জন্যই এটি নির্মিত হয়েছিল। অন্য কোনো অনুরুপ স্ক্রোল পরে আবিষ্কৃত হয়নি।[১৮] and its high artistic quality indicates that was produced for a wealthy audience.[১৮] No other similar scrolls have yet been discovered.[১৭]

গ্রিক ও রোমান

প্রাচীন গ্রীসে যৌন দৃশ্যগুলিকে প্রায়ই সিরামিকে চিত্রাঙ্কন করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেক গুলিই সমকাম এবং পায়ুকামের প্রাচীনতম চিত্রণের জন্য বিখ্যাত। গ্রীক শিল্প প্রায়ই যৌন কার্যকলাপ চিত্রিত করে, কিন্তু প্রাচীন গ্রীকে পর্ণোগ্রাফির ধারণা না থাকার কারণে তাদের কি অবৈধ বা অনৈতিক তার পার্থক্য করা ছিল অসম্ভব। তাদের শিল্প কেবল দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্যগুলি প্রতিফলিত করে, বাকিদের চেয়ে বেশিমাত্রায় যৌন। দেলোসের উপর ডায়নিসাসের মন্দিরে পুজোর স্থানগুলিতে উৎকীর্ণ ফাল্লি দেখা যায়, যখন সাধারণ গ্রাহস্থ্য জিনিসপত্র এবং প্রতিরক্ষামূলক কবজ জার্ম ছিল, সেখানে একটি মূর্তি ছিল যার মাথা একটি বর্গাকার স্তম্ভের পাদদেশে এবং তার সামনে স্পষ্ট পুং জননতন্ত্র ছিল। গ্রীক পুরুষদের আদর্শ একটি ছোট লিঙ্গ ছিল, যে নান্দনিকতা রোমানরা পরে গ্রহণ করেছিল। গ্রীকরা সাফোর হাইম থেকে অ্যাফ্রোডাইটঁ (গ্রীকদের পূজার বেদী)এবং অন্যান্য সমকামি কাজকাগুলির সাথে সাথে নারী সমকাকমের মতো অতি পরিচিত ঘটনা প্রথম সৃষ্টি করে।

পম্পেই অথবা হারকুলানিয়ামের ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান ভবনগুলিতে বহুসংখ্যক কামদ চিত্র এবং ভাস্কর্য আছে কিন্তু চিত্রাবলীরগুলির প্রধান উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হতে পারে। একদিকে, রহস্যমণ্ডিত সেই ভবনে, ধর্মীয় আত্মনিগ্রহের একটি দৃশ্য রয়েছে যা স্পষ্টতই ধর্মীয় উপাসনার সহিত যুক্ত এবং এই ছবিটিকে যৌনতার পরিবর্তে তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় ছবি হিসাবে দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, বেশ্যালয়ে গ্রাফিক চিত্রগুলি প্রতিটি দরজার উপরে দেওয়ালে যৌন সেবার বিজ্ঞাপন হিসাবে দেওয়া হতো। সাধারণ প্রসাধন এবং পতিতাবৃত্তি ও বিনোদনের জগৎ এ দর্শকদের পথনির্দেশ দিতে পম্পেইয়ের মধ্যে পুরুষের লিঙ্গ এবং অণ্ডকোষ উৎকীর্ণ করা হয়েছিল। রোমানরা মনে করত, যৌন চিত্রগুলি সুরুচিসম্পন্ন সজ্জাকরণের পরিচয়বাহক এবং প্রকৃতপক্ষেই সেগুলি তাদের যৌন আচার-আচরণ এবং সংস্কৃতির রীতিগুলিকে প্রতিফলিত করে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ওয়ারেন কাপের উপর ছবিগুলির কথা। যৌন ক্রিয়াকলাপ যেগুলি নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়েছিল (যেমন মুখের পবিত্রতা নষ্ট করা) কৌতুক প্রভাবের জন্য সেগুলিকে স্নানের মধ্যে অঙ্কন করা হয়েছিল। বৃহৎ পুরুষ লিঙ্গ প্রায়শই প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি ব্যবহৃত হতো যেহেতু লিঙ্গ মূর্তিকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হতো এবং গ্রহস্থালিতে ক্ষোদন অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার ছিল। বস্তুগুলি আবিষ্কারের সময় মার্বেলের একটি অন্যতম মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। মূর্তিটিতে দেখানো হয়েছে, দেবতা প্যানকে একটি ছাগলের সাথে সঙ্গমরত অবস্থায়, পশুবৃত্তির বিস্তারিত রুপায়ন। মূর্তিটি এতোটাই অশ্লীল ছিল যে ২০০০ সাল অবধি সেটিকে জনসমক্ষে আনা হয়নি এবং সেটি নেপলসের গুপ্ত সংগ্রহশালায় রাখা আছে।

পেরুভিয়ান

পেরু দেশটির অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা মাওচে, যে সভ্যতায় সেখানকার আদিবাসীরা তাদের মৃৎশিল্পে যৌন দৃশ্যগুলিকে স্পষ্ট খোদাই করেছেন। কমপক্ষে ৫০০ মাওচে সেরামিক পাত্রে যৌন বিষয়বস্তু আছে। সর্বাধিক বর্ণিত বিষয়টি ছিল পায়ুগত যৌনমিলন, যোনিতে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়টি ছিল খুবই বিরল। বেশিরভাগ যুগলই ইতর-রতি প্রবণ, প্রতিটি খদিত মূূর্তিই অতি সাবধানে খোদাই করা হয়েছে যাতে জননাঙ্গটি যোনির বদলে পায়ুদ্বারে প্রবেশ করানো হচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রায়শই দেখা যায় দম্পতির যৌনমিলনের সময়ে একটি শিশুকে স্তন্যপান করানো হচ্ছে। কখনো কখনো মুখমেহনের দৃশ্যও চিত্রিত করা হয়েছে, কিন্তু যোনিলেহন অনুপস্থিত। চিত্রিত আছে, কিছু পুরুষ মূর্তি স্বমেহন করছে অথবা কোনো নারীকে দিয়ে হস্তমৈথুন করানো হচ্ছে।

রাফায়েল লারকো হোয়েল ধারণা করেন যে তাদের উদ্দেশ্য অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় আলাদা ছিল। তিনি বলেছিলেন যে মাওচেরা বিশ্বাস করত মৃতদের জগৎ জীবিতদের জগতের ঠিক বীপরিত। তাই অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় উতসর্গের জন্য তারা হস্তমৈথুন, মুখমেহন এবং পায়ুলেহনের চিত্র দ্বারা বর্ণিত কিছু পাত্র তৈরী করা হতো, যা থেকে বোঝা যায় এমন যৌনক্রিয়াই চিত্রিত করা হয়েছে যা থেকে জীবিতদের জগতে বংশবিস্তার কখনই সম্ভব নয়। আশা ছিল মৃতদের জগতে তারা তাদের বীপরিত অর্থ গ্রহণ করবে এবং যার ফলসবরূপ সন্তান লাভ করবে। মাওচের কামদ মৃৎশিল্পের নিদর্শন- এর চিত্র হোয়েলের বই শেক্যানে অঙ্কিত আছে।

এশিয়া

সুজুকি হারুনবু শুঙ্গা, শুঙ্গা শিল্প (জাপান)
এক রাতে সুলতান এবং সম্রাজ্ঞী প্রাসাদের ছাদে (ভারতবর্ষ)

কামদ চিত্রশিল্পের ইতিহাসে পূর্বের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। ভারত, জাপান, চীন, পার্সিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলিতে প্রেমের ক্ষেত্রে মানব প্রফুল্লতার উৎযাপিত শিল্প প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত। সেইসমস্ত কাজগুলিতে নারী-পুরুষের প্রেম এবং তারসাথে সমকামী প্রেমের কথাও বর্ণিত আছে। প্রথম কয়েক শতাব্দি পূর্বে ভারতবর্ষে বাৎস্যায়ন দ্বারা লিখিত বিখ্যাত প্রাচীন যৌন হস্তকৃত গ্রন্থটি হল কামসুত্র। পনেরো শতকে তুনিসিয়ান মহম্মদ ইবনে মহম্মদ অল- নাফজাউ কর্তৃক রচিত মানব যৌনতা সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দ্য পারফিউমড গার্ডেন (The Perfumed Garden)।

জাপানে, কামদ শিল্পের পুষ্পোদ্গম ঘটে মুদ্রিত কাঠের খন্ডের মাধ্যমে। এই শৈলীটি শুঙ্গা (বসন্তের ছবি) নামে পরিচিত এবং কিছু উচ্চশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা (যেমন, হারুনবু, উটামারো) প্রচুর পরিমাণে এই জিনিস তৈরী করেন। হাতে আঁকা রঙিন স্ক্রলগুলিও খুব জনপ্রিয় ছিল। তেরো শতাব্দিতে শুঙ্গা আবির্ভূত হয় এবং বারংবার প্রচলিত প্রচেষ্টা স্বত্বেও এর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। কিয়োহো ৭ (১৭২২) এ তোকুগাওয়া শোগুনা দ্বারা প্রাকশিত কামদ গ্রন্থ কোশোকুবান নিষিদ্ধ ছিল। ১৯ শতকে ফোটোগ্রাফি উদ্ভাবনের পরে শুঙ্গার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

কামদ শিল্পে চৈনিক ঐতিহ্যও ব্যাপক, ইয়ং সাম্রাজ্যের (১২৭১-১৩৬৮) শিল্প যার অন্যতম উদাহরণ। মিং সাম্রাজ্যের (১৩৬৮-১৬৪৪) পরবর্তি অধ্যায়ে চৈনিক কামদ শিল্প সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়।

চীন এবং জাপান উভয় দেশেই, উপন্যাস বিকাশের ক্ষেত্রে কামদতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এগারো শতকে এক জাপানি অভিজাত বংশীয় নারী দ্বারা সৃষ্ট উপন্যাস, "গেঞ্জির গল্প" (The Tale of Genji), যাকে বিশ্বের প্রথম উপন্যাস বলা হয়ে থাকে। গল্পে শারীরিক অতচ বুদ্ধিদীপ্ত ভাষায় নায়কের বহুগামিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ১৬ শতকের চীনে রচিত, চীনা সাহিত্যের চারটি বিখ্যাত সর্বোৎকৃষ্ট উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম সুস্পষ্ট উপন্যাস "দ্য প্লাম ইন দ্য গোল্ডেন ভেস"(The Plum in the Golden Vase)। জাপানে গেনজির গল্প উপন্যাসটি লেখার পর থেকেই অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু দ্য প্লাম ইন দ্য গোল্ডেন ভেস উপন্যাসটি বেশিরভাগই তার ইতিহাসের কারণে পর্ণোগ্রাফি হিসাবে দমিত হয়েছিল এবং চারটি ক্লাসিক উপন্যাসের তালিকায় প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।

ইউরোপিয়ান

মধ্যযুগীয় আলোকপ্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিগুলির মধ্যে যৌন দৃশ্যও উপস্থিত ছিল, কিন্তু সেইসমস্ত অত্যন্ত ব্যায়বহুল হাতে লেখা পুঁথিগুলির খরচ যারা বহন করতে পারতেন সেগুলি কেবলমাত্র তাদের কাছেই দ্রষ্টব্য ছিল। বেশিরভাগ ছবিই ঘণ্টার বই (books of hours) -এর প্রান্তের দিকে অঙ্কন করা হতো। অনেক মধ্যযুগীয় পন্ডিতেরা মনে করতেন যে ছবিগুলি একইসাথে কামদ এবং ধর্মমূলক হওয়ায় মধ্যযুগীয় সমস্ত অভিলাষকেই চরিতার্থ করে, বিশেষত যখন এটি প্রায়ই মালিকানাধীন একমাত্র ছবি ছিল। আবার অন্যান্য পণ্ডিতেরা মনে করতেন প্রান্তের দিকে অঙ্কিত চিত্রগুলি একধরনের নৈতিক সতর্কতা ছিল এবং তার সাথেই যৌন কর্মকাণ্ডে জড়িত পুরহিত এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের ছবিগুলি রাজনৈতিক উৎস হিসাবেও নির্দেশ করে।[৩]

জোহান্স গুটেনবার্গএর ছাপাখানা আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলিতে স্বচ্ছ যৌন চিত্রগুলির গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। সেই সময়ের আগে অবধি, কামদ চিত্রগুলি হাতে প্রস্তুত করা হতো এবং তা ছিল ব্যায়বহুল। কেবলমাত্র উচ্চশ্রেণীর পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। এমনকি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ইরোটিকার একটি গুপ্ত সংগ্রহশালা ছিল যা ১৮৬৫ সালে উচ্চশ্রেণীর এক ডাক্তার জর্জ উইট (George Witt) কর্তৃক দান করা হয়। তার কাগজ বা বই থেকে কাটা ছবির টুকরাংশ দিয়ে তৈরী স্ক্রাপবুক সহ সংগ্রহের অবশিষ্টাংশ এখনো ৫৫ নং আলমারিতে রাখা আছে, যদিও এর অধিকাংশই জাদুঘরের অন্যান্য সংগ্রহের সাথে একত্রিত হয়েছে।[২০]

ব্যপক প্রচলনের সূচনা

মুদ্রণ

কামদ শিল্প,Agostino Carracci-এর দ্বারা সৃষ্ট (১৫৫৭-১৬০২)
Die Nacht - Night, Sebald Beham (1548) 108 x 78 mm.

পঞ্চদশ শতাব্দির মাঝামাঝি ইউরোপে মুদ্রণ খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাদের সম্পৃক্ত প্রকৃতি কামদ চিত্রের পক্ষে অত্যন্ত উপযুক্ত ছিল এবং সেগুলিকে স্থায়ীভাবে প্রদর্শনের প্রয়োজন ছিলনা। নগ্নতা এবং শাস্ত্রীয় বিষয়গুলির পুনরোজ্জীবন মুদ্রণ ইতিহাসের সঙ্গে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিল এবং পৌরাণিক বিষয়ের উপরে অনেক মুদ্রণই পরিষ্কারভাবে যৌন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল; বিশেষ করে জিওভানি বাতিস্তা পেলুম্বার খোদাই এর অন্যতম। ১৪৭৫-১৫০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটি প্রিন্টিং প্লেটে একটি পার্থিব কামদ সঙ্গমের রূপক বর্ণনার দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে দেখা যায় একটি অল্পবয়সী দম্পতি রতিক্রিয়ায় লিপ্ত এবং একটি বেঞ্চির একপ্রান্তে মেয়েটির এক পা শীর্ষে তুলে রাখা এবং অপরপ্রান্তে পা, ডানা এবং শিশ্নের তলদেশে বাঁধা ঘণ্টা একটি বিশালাকার শিশ্ন বেঞ্চির উপরে চড়ার চেষ্টা করছে। যদিও প্লেটটি জীর্ণ হওয়া অবধি ব্যবহার করা হয়েছে, তবে পুনর্নির্মিত করে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, সমসাময়িক কোনো প্রভাবই মুদ্রিত হয়নি যা সম্ভবত শত শতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।[২১]

প্রাচীন দেবতাদের প্রেম, বিশেষ করে ওভিডে বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত জুপিটারের প্রেমকাহিনীতে এমন অনেক বিষয় আছে যেখানে গল্পগুলির মূখ্য ঘটনা যৌনসঙ্গম কেন্দ্রিক এবং প্রতিক্ষেত্রেই এই চিত্রনাট্যগুলিকে ন্যায্য বলে মনে করা হয়েছিল। নির্দিষ্টভাবে বললে লিডা (পুরাণ)- এ কথিত লিডা এবং রাজহংস কাহিনী, যেখানে দেবতা রাজহংসের রূপ ধরে এসে মহিলাটিকে বিমোহিত করে, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সুচারুভাবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং মনে হয় যেন তাকে পাখি হিসাবে দেখানোর কারণেই অদ্ভুতভাবে এটি আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। [২২] ষোড়শ শতকের প্রথমদিকে শেষ হওয়া যুগের সীমাবদ্ধতা ছিল, নবজাগরণের প্রাসাদের চিত্রগুলির আধা-গোপনীয়তার মধ্যে প্রদর্শন অনিশ্চিত ছিল।[২৩] মাইকেলেঞ্জেলোর 'লিডা' যুক্তিসম্মত ভাবেই একটি প্রশস্ত চিত্র যা রতিক্রিয়ার অগ্রগতিকে দৃশ্যত করেছে এবং ১৪৯৯ সালে "হাইপনারটোম্যাশিয়া পলিফিলি" নামক বইয়ের শতাধিক চিত্রের একটিতে দেখা যায় লিডা এবং রাজহংস একটি "ট্রাইম্ফল গাড়ি র উপর রতিক্রিয়ায় মত্ত এবং একদল জনতা ভীড় করে তাদের দেখছে।[২৩] প্রায় ১৫৩০ থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বিশিষ্ট প্রকারের ইরোটিকার উপর হওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি কল্পনা করা কঠিন। পনেরো শতকের পরের দিকে প্রাসাদের জন্য বড় তৈল চিত্র গুলি এবং সংগ্রাহকদের জন্য ছোট মুদ্রণগুলিতে স্পষ্ট রতিক্রিয়া অথবা নারীদের জননেন্দ্রিয় দেখানো বন্ধ করা হয়। নগ্ন নারীদেহের প্রতিমান বা ছাঁচের নমুনা জর্জিওনের ড্রেসডেন ভেনাস নামক চিত্রে স্থির করা হয়েছিল, যেখানে চিত্রিত হয়েছে এক নগ্ন মহিলা শায়িত রয়েছে সামনের দিকে মুখ রেখে, যদিও স্পষ্টভাবে দেখানো হয়নি। টিটিয়ান এবং অন্যান্যরা মূলত এই ধরনটি অব্যাহত রেখেছে, ভেলাকুইজের(১৬৪০) রকবি ভেনাস চিত্রে পিছনের দৃশ্যের চিত্রাঙ্কন করত জার্মানির দ্য লিটিল মাস্টার্স মধ্যবিত্ত সংগ্রাহকদের জন্য অনেকগুলি ছোট ছোট মুদ্রণ করেন- অনেকসময়ই মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা- প্রেমমূলক বিষয়, কিন্তু কোনোটিই ত্রিশ বছর আগেকার শিল্পীদের মতো এতো স্পষ্ট নয়।

১৫২৪ সালে ইতালির বিখ্যাত শিল্পী মারকানটোনিও রেমন্ডি, আই মোদি নামক ষোলো রকমের "দৈহিক ভঙ্গি" বা যৌন ভঙ্গির চিত্রিত একটি বই প্রকাশ করেন ফলস্বরূপ ষোড়শ শতকে কামদ বিষয়বস্তুর মুদ্রণের প্রয়াস একধরনের কলঙ্কের সৃষ্টি করে। এরপরেই পোপ সপ্তম ক্লেমেন্ট রেমন্ডিকে কারাগারে বন্দী করেন এবং বইটির সমস্ত মুদ্রণ নষ্ট করে ফেলা হয়। রেমন্ডির অঙ্কিত কামদ চিত্রের সিরিজের উপর ভিত্তি করে মান্তুয়া শহরের প্যালাজো ডেল তে প্রাসাদের জন্য জিউলিও রোমানো কমিশন হিসাবে কাজ করেছেন। যদিও চিত্রনাট্য দুটি খুবই অনুরূপ ছিল, তবুও যেহেতু রেমন্ডির অঙ্কিত চিত্রগুলি জনসম্মুখে আসে তাই কেবলমাত্র তার বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পেইট্রো অরিটিনো যতদিন অবধি আসল ছবিগুলি দেখননি, রোমানো ততদিন সেগুলি সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিলেন এবং তখনো সেগুলির উপর কাজ করছিলেন। রেমন্ডির কারাগার থেকে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ছবিগুলিকে সমর্থন করার জন্য এরপরেই অরিটিনো ষোলোটি সুস্পষ্ট সনেট রচনা করেছিলেন("both in your cunt and your behind, my prick will make me happy, and you happy and blissful")।[৩][২৪] এরপরই ১৫২৭ সালে কবিতা এবং ছবি সমেত আই মোদি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রকাশিত হয়। এইপ্রথম যৌনমিলনমূলক লেখা এবং ছবি একত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও পোপেরা সেইসমস্ত অনুলিপিগুলি আবার আয়ত্ত করেন যাতে সেগুলিকে খুঁজে না পাওয়া যায়। সেইসময় রেমন্ডি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। তখনকার সেন্সরশিপ এতোই কঠোর ছিল যে মূল মুদ্রণের সম্পূর্ণ কোনো সংস্করণ আজো পাওয়া যায়নি। চারশো বছর পরে লেখাটির যে অস্তিত্ব বর্তমানে পাওয়া গেছে তা কেবল মুল মুদ্রণের অনুলিপির একটি প্রতিলিপি মাত্র।[৩][২৪]

ফ্রান্সের এক চিত্রশিল্পী এডোয়ারদ-হেনরি আভ্রিল দ্বারা অঙ্কিত একটি কামদ বর্ণনা
পিটার ফেনডি দ্বারা অঙ্কিত দাস লেইবেসপার (প্রেমিক যুগল)

সতেরো শতকে অগণিত পর্ণোগ্রাফিক অথবা কামদ সাহিত্যের প্রচার শুরু হয়। যার অন্যতম উদাহরণ হল ল'ইকোলে দেস ফাইলস, ১৬৫৫ সালে মুদ্রিত এই ছবিটি একটি ফরাসি কাজ এবং ফ্রান্সে এটিকে পর্ণোগ্রাফির সূচনা বলে মনে করা হয়। দুই নারীর মধ্যবর্তী সচিত্র কথোপকথন দিয়ে গঠিত এই মুদ্রণে দেখা গেছে, একটি বছর ষোলোর মেয়ে এবং তার এক অভিজ্ঞ তুতো বোনের যৌনতা সম্বন্ধীয় বিস্তারিত আলোচনার কথা। এই সময়কার লেখকেরা অজ্ঞাত পরিচয়েই রয়ে গেছেন। যদিও কিছু সন্দেহভাজন লেখকেরা লেখাগুলির কৃতির জন্য লাইট প্রিসন বাক্য ব্যবহার করেছেন।[২৫] স্যামুয়েল পেপিস তার বিখ্যাত ডায়রিতে লিখেছিলেন, তার একক পাঠের জন্য একটি বই তিনি কিনে এনেছিলেন এবং পড়ার পরে তা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন যাতে না তার স্ত্রী সেই বইটিকে খুঁজে পান, "the idle roguish book, L'escholle de filles; which I have bought in plain binding… because I resolve, as soon as I have read it, to burn it."[২৬]

মারকুইস দে সাদে দ্বারা সচিত্রিত জুলিয়েট থেকে নেওয়া

নবজাগরণের সময়ে অনেক ফরাসি মুক্ত-চিন্তাবিদ সামাজিক সমালোচনা এবং ব্যঙ্গচিত্র রচনার মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফিকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন। লিবার্টিন পর্নোগ্রাফি একটি বিধবংসীকর সামাজিক ভাষ্য ছিল এবং ক্যাথলিক গির্জাযৌন নির্যাতনের সাধারণ ধারণাই ছিল সেগুলির লক্ষ্যবস্তু। জনগণ দ্বারা সৃষ্ট, সস্তা প্রচারপত্রের বাজার খুব শীঘ্রই বুর্জোয়া শ্রেণীর অন্তর্গত হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডে যেমন উচ্চবিত্ত- শ্রেণীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়, সেইসময়ে বিশেষত নারী, ক্রীতদাস এবং অশিক্ষিতদের থেকে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর নৈতিকতা ও দুর্বল মনোভাব কলুষিত হয়ে পড়ে। গল্প এবং চিত্রগুলি (গণিকা পরিষেবা সহ প্যালাইস রয়্যাল এর গ্যালারীগুলিতে বিক্রি করা হয়) প্রায়শই ধর্মবিরোধী ছিল এবং পুরোহিত, সন্ন্যাসী এবং সন্ন্যাসিনীদের দুর্ব্যবহারে ভরা ছিল, ফরাসী পর্নোগ্রাফিতে এই ঐতিহ্যটি ২০শতকের মধ্যবর্তী সময়ে অব্যাহত ছিল।

আরও দেখুন

  • চার্লস গুয়েত
  • এরিক স্ত্যানতন
  • জিনি বিলব্রিউ
  • ইরভিং ল'
  • জন উইলি
  • ইরোটিকা
  • পম্পেই এবং হারকুলানেয়ামের কামদ শিল্প
  • বাট্টক্সের সাংস্কৃতিক ইতিহাস
  • মানব যৌনতার ইতিহাস

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন