সোনাগাজী উপজেলা
সোনাগাজী উপজেলা বাংলাদেশের ফেনী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
সোনাগাজী | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() মানচিত্রে সোনাগাজী উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৫০′৫৯″ উত্তর ৯১°২৩′২০″ পূর্ব / ২২.৮৪৯৭২° উত্তর ৯১.৩৮৮৮৯° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | ফেনী জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৩৯.১৪ বর্গকিমি (৯২.৩৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৪,২৭,৯১৩ |
• জনঘনত্ব | ১,৮০০/বর্গকিমি (৪,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৯৩০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ৩০ ৯৪ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ![]() |
নামকরণ
ধারণা করা হয় পলাশী যুদ্ধের পর ১৭৮০ সালে থেকে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময় চাঁদ গাজী নামে জনৈক ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য উপমহাদেশের পশ্চিম অংশ থেকে অত্র এলাকায় আগমন করেন। সোনাগাজী নামে তার এক ছেলে ধন সম্পদের অধিকারী হয়ে এ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। সম্ভবত তার নাম অনুসারে অত্র উপজেলার নাম সোনাগাজী নামকরণ করা হয়।
নোয়াখালীর প্রখ্যাত ইতিহাস গবেষক আবু হেনা আবদুল আউয়াল এর বিবরণীতে তিনি লিখেন - 'সোনাগাজী ভূঞা নামে এক ব্যক্তি উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ ব্যবসার জন্য একটি বাজার স্থাপন করেন এবং এ বাজার তার নামে পরিচিতি অর্জন করে। এ বাজারকে কেন্দ্র করেই সোনাগাজী থানার পত্তন। ধারণা করা হয় সোনাগাজী ভূঞা ছিলেন বার ভুঁইয়াদের কোন এক ভুঁইয়ার উপবংশের বিশিষ্ট ব্যক্তি। পরবর্তীতে যানা যায় যে,পছাগাজী ও অছিম উদ্দিন গাজী নামে সোনাগাজী ভূঁইয়ার দুটি পুত্র সন্তান ছিল। নদী ভাঙ্গনের সময় তাঁহার সন্তানরা লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে ঘরবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে।
গবেষক আবু হেনা আবদুল আউয়াল আরো লিখেন - 'যদ্দুর জানা যায়, ফেনীর দক্ষিণে মুঘল আমলের শেষ দিকে জুগিদিয়া ও আমীরগাঁও নামে দুটি পুলিশি থানা স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কোন এক সময় নদী ভাঙ্গনের মুখে থানা দুটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। পরে নতুন চর জেগে উঠলে ১৮৮৬ সালে সোনাগাজী নামে একটি নতুন থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।'
বিশিষ্ট কবি ও ঐতিহ্য গবেষক এরশাদ মজুমদার তার একটি বাড়ি একটি ইতিহাস প্রবন্ধে বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ, ইতিহাস, ঐতিহ্য পর্যালোচনা করে লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্বে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের পছাগাজী বাড়ির অধিবাসীগন সোনাগাজী ভূঞার উত্তর পুরুষ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ইতিহাস বা পটভূমি
মোগল সম্রাট ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর পুত্র মোহাম্মদ সুজাকে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। তখনকার সময় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরাকানী নৌ হামলা হতো। তাই, দায়িত্ব গ্রহণের পর আরাকানী নৌ হামলা থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করার জন্য মেঘনা নদীর মোহনা ও ফেনী নদীর ভাটি অঞ্চলে কয়েকটি শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেন। সোনাগাজী অঞ্চলেও তিনি দুর্গ স্থাপন করেন। তাই, তাঁর নামানুসারে এখনো এই অঞ্চল সুজাপুর নামে পরিচিত।[২]
অবস্থান ও আয়তন
সোনাগাজী উপজেলার আয়তন ২৮৪.৯০ বর্গ কিলোমিটার। এটি আয়তনের দিক থেকে ফেনী জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। জেলা শহর থেকে দুরত্ব ২০ কিলোমিটার। উপজেলার উত্তরে ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ফেনী নদী ও চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলা, পশ্চিমে ছোট ফেনী নদী ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও দাগনভূঞা উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
সোনাগাজী উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম সোনাগাজী থানার আওতাধীন।
অর্থনীতি
সোনাগাজী উপজেলা প্রধাণত কৃষিপ্রধাণ হলেও পরিবারের মহিলা সদস্যরা নানা শিল্পের সাথে যুক্ত। এই ধরনের একটি শিল্প হলো বাঁশবেত শিল্প। এখানে কৃষিকাজ ও গৃহস্থালীর বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য বাঁশ ও বেত দিয়ে হাজারি, বাঁশের খাঁচা, কোরা, মুরগির খাঁচা, ওড়া, কুলা, ধোচনা প্রভৃতি তৈরি করা হয়। [৩] এছাড়াও এই উপজেলার নারীরা পাটিপাতা দিয়ে পাটি/বটনি তৈরি করে। নারীরা বংশপরম্পরায় এই শিপ্লের প্রয়োজনীয় কৌশল শিখে। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে অভাব অনটন দূর করার জন্য নারীরা বটনি ও পাটি তৈরি করে সংসারের আয় উপার্জন বৃদ্ধি করে। এছাড়াও সোনাগাজী উপজেলার চরখোন্দকার জেলেপাড়ায় প্রায় ১০০টি জেলে পরিবার বাস করে। তাদের আর্থিক অবস্থা করুণ। এছাড়াও সুদের হার বেশি এবং প্রায়ই জলদস্যুরা জেলেদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।[৪]
সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প
১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে শুরু হয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে দেশের বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফেনী নদী, মুহুরী নদী ও কালিদাস-পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদায়কার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলের অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরি সেচ প্রকল্প।[৫]
হাটবাজার
কুঠিরহাট,বক্তারমুনশি বাজার, মঙ্গলকান্দি,ওলামা বাজার,সওদাগর হাট, ভৈরব চৌধুরী বাজার, মনগাজী বাজার, সোনাগাজী বাজার, আমিরাবাদ বাজার, সোনাপুর বাজার, বাদামতলী বাজার, নবাবপুর, ভোরবাজার, কাজীর হাট, নাড়ু মিয়ার হাট, বাঘের হাট, কেরামতিয়া বাজার, মতিগঞ্জ বাজার, কাশ্মীর বাজার, তাকিয়া বাজার, নুরানি বাজার, মদিনা বাজার, কোম্পানী বাজার, কাটাখিলা বাজার, বহদ্দারহাট, জমাদার বাজার, বাংলা বাজার, মানুমিয়ার বাজার, চরলামছি কমাণ্ডার বাজার, শাহাপুর বাজার, সুলাখালী বাজার, মনগাজী বাজার, কুদ্দুস মিয়ার বাজার, মমতাজ মিয়ার বাজার, রঘুনাথপুর বাজার ইত্যাদি।[৬]
উল্লেখযোগ্য স্থান বা স্থাপনা
- মুহুরী সেচ প্রকল্প
- বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক (ইপিজেড)
- আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র,
- আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার,
- বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।[৭]
- সেনেরখিল জমিদার বাড়ি
- শাহাপুর মুসলিম জামে মসজিদ
- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধ
- বগাদানা আমির বখস ফকির বাড়ি জামে মসজিদ
- সফরপুর সুফি সাহেবের বাড়ী জামে মসজিদ
- সুজাপুর ওয়ালি ভূঁঞা বাড়ী জামে মসজিদ
- বাদশা মিয়া চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ
- কুঠির হাট কালী মন্দির
★ অবসরকালীন বিনোদন কেন্দ্র :মুহুরী সেতু (বড় ফেনী নদী) সাহেবের ঘাট (ছোট ফেনী নদী সেতু), ফাজিলের ঘাট ব্রীজ, মিয়াজি ঘাট সেতু (নদীর কুল কাবাব হাউজ), মাওলানা ঘাট সেতু, চর গোপালগাঁও সেতু, কুঠিরহাট ব্রিজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আহমদ সেতু, নবাবপুর ব্রীজ (বন্দর মার্কেট)
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- শহীদুল্লা কায়সার - সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী।
- জহির রায়হান - চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার।
- সেলিম আল দীন - নাট্যতত্ত্ববিদ।
- আমিন আহমদ - প্রধান বিচারপতি (সাবেক)।
- এ বি এম তালেব আলী - সাবেক সংসদ সদস্য।
- ডাঃ মোঃ মোশারফ হোসেন - স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী - সেনা কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং জাতীয় সংসদ সদস্য।
- রোকেয়া প্রাচী - নাট্য ব্যক্তিত্ত্ব।
- শমী কায়সার - নাট্য ব্যক্তিত্ত্ব।
- মাহমুদ কলি - চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ত্ব।
- লায়ন শামসুল হুদা - ভাষা সৈনিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও কলামিস্ট।
জনপ্রতিনিধি
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৮] | সংসদ সদস্য[৯][১০][১১][১২][১৩] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৬৭ ফেনী-৩ | দাগনভূঞা উপজেলা এবং সোনাগাজী উপজেলা | মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী | জাতীয় পার্টি (এরশাদ) |
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান : জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ) ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াতুল হক বিটু (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান : জোবেদা নাহার মিলি, ফেনী জেলা পরিষদের (৬নং ওয়ার্ড) দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য : আবদুর রহিম মানিক।
মুক্তিযুদ্ধ
ফেনী জেলায় মুক্তিযুদ্ধ অনেক জোরদার ছিল। যার প্রভাব সোনাগাজী উপজেলায়ও পড়ে। ফেনী জেলার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের, বিশেষ করে ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, সোনাগাজী ও ফেনী থানায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র-যুবক যারা ছাগলনাইয়ার অদূরে ভারতীয় সীমান্তের শ্রীনগর ইয়ুথ ক্যাম্পে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবককে প্রাথমিকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে রাইফেল, গ্রেনেডসহ হানাদার বাহিনীর দালাল ও রাজাকারদের উপর ছোটো ছোটো গেরিলা অপারেশনের জন্য ছাগলনাইয়া থানা ও সোনাগাজী থানার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে পাঠানো হয়। ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে এসব গেরিলারা ছাগলনাইয়া থানার জঙ্গল মিয়ার হাট, করৈয়া, শুভপুর, গোপাল, মুহুরীগঞ্জ ও সোনাগাজী থানার নবাবপুর, আহম্মদপুর, মজলিশপুর, বগাদানা, চরদরবেশ, চরচন্দিয়া, মতিগঞ্জ এবং ফেনী থানার অনেক অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর অনেক দালালের বাড়িতে ও স্থানীয় রাজাকারদের উপর অনেকগুলো অপারেশন চালানো হয়।
আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাদামতলী এলাকায় বড় ফেনী নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টারে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি (স্মৃতিসৌধ) নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যমতে এখানে পাঞ্জাবি মিলিশিয়া ও রাজাকারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ৩০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসী শহীদ হয়েছেন, তাদের অনেকের লাশ নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সোনাগাজীর উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শহীদ কমাণ্ডার নুরুল আফছার, সৈয়দ নাছির উদ্দিন, কমাণ্ডার কেএম খোরশেদ আলম, কমাণ্ডার শাহজাহান, মোশাররফ হোসেন ও মোঃ ইসমাইল উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র
★ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন:
- জেড এম কামরুল আনাম : কবি, লেখক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- নুরুল আমিন পলাশ : সাংস্কৃতিক কর্মী, (পরিচালক : শিল্প কলি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র)
- গিয়াস উদ্দিন লিটন : ব্লগার ও রম্য লেখক।
- আকবর হোসেন লিপু : রম্য লেখক।
- গাজী মোহাম্মদ হানিফ : কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও আবৃত্তিকার। (সভাপতি : সোনাগাজী উপজেলা সাহিত্য ফোরাম)
বহিঃসংযোগ
- বাংলাপিডিয়ায় সোনাগাজী উপজেলা
- সোনাগাজী উপজেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন।