সিল্যান্ড একটি অণুরাষ্ট্র (ইংরেজি Micronation মাইক্রোনেশন)। এখানকার বাসিন্দারা নিজেদেরকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করলেও বিশ্বের কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্র একে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দেয়নি।
ভৌগোলিক
এই তথাকথিত ক্ষুদ্রতম দেশটির মোট আয়তন ৫৫০ বর্গমিটার। ইংল্যান্ডের উত্তর সাগরে এই রাষ্ট্রটির অবস্থান। দেশটির একটি রাজধানীও রয়েছে। দেশটির রাজধানীর নাম HM Fort Roughs। এই দেশটি সাগরের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। মাটি থেকে অনেকটা উপরে দুটো বড় বড় ইস্পাতের পাইপের উপর এই দেশটির অবস্থান। এই দেশটিতে কোনো মাটি নেই। পুরোটাই ইস্পাত। এই দেশটিতে যেতে হলে ইংল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার সাগরের গভীরে যেতে হবে। দেশটিতে একটিমাত্র ঘর চোখে পড়বে এবং সেটিই এই দেশের রাজপ্রাসাদ। রাজপ্রাসাদের উপর দেশটির পতাকা উড়তে দেখা যাবে।
মুদ্রা
দেশটিতে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত এবং মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার।[১] তবে বাইরের কোনো দেশে এই মুদ্রা চলে না।
ইতিহাস
এটি আসলে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি সমুদ্র বন্দর। জার্মান সেনারা যে কোনো সময় ইংল্যান্ড আক্রমণ করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ইংল্যান্ডের উপকূলভাগে সমুদ্র দুর্গ বানানোর পরিকল্পনা করল। সে পরিকল্পনা থেকেই উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে বানানো হলো মউনশেল সি ফোর্ট। এখান থেকে শত্রু যুদ্ধ জাহাজগুলোর ওপর নজরদারি করা হতো। প্রয়োজনে শত্রু জাহাজে আক্রমণ পরিচালনার কাজও চলত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অন্যান্য অসংখ্য দুর্গের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এটাকেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।
১৯৬৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ নাগরিক Major Paddz Roy Bates এবং তার পরিবার এই জায়গাটির স্বত্বাধিকারী হোন। তারপর তারা এটাকে একটি স্বাধীন মাইক্রো রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন।[২] পৃথিবীর কোনো দেশ এখনও সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি না দিলেও কেউ তাদের বিরোধিতা করেনি। মোট জনসংখ্যার তিনজনই Bates পরিবারের সদস্য এবং যথাক্রমে তারা এই রাজ্যের রাজা, রানী এবং রাজপুত্র।
অগ্নিকাণ্ড
সিল্যান্ডে একবার অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। সময়টি ছিল ২০০৬ সালের ২৩ জুন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগে।[৩] এতে সিল্যান্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ইংল্যান্ডের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে সিল্যান্ডকে মেরামত করা হলে ২০০৬ সালের নভেম্বরে তারা আবার সিল্যান্ডে ফিরে যান।[৪]
প্রশাসন
সিল্যান্ডের আইনী বাবস্থা সিল্যান্ড ব্যাটস পরিবার দ্বারা পরিচালিত হয় যেন এটি কোনও স্বীকৃত সার্বভৌম সত্তা এবং তারা এর বংশগত রাজকীয় শাসক। রায় বাটস নিজেকে "প্রিন্স রায়" এবং তাঁর স্ত্রী "প্রিন্সেস জোয়ান" হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন সেপ্টেম্বর ০২, ১৯৬৭ সালে। তাদের পুত্র "প্রিন্স মাইকেল" হিসাবে পরিচিত এবং ১৯৯৯ সাল থেকে বেটস পরিবার "প্রিন্স রিজেন্ট" হিসাবে পরিচিত।
ব্যবসা
সিল্যান্ড বিভিন্ন মুদ্রা ও ডাকটিকিট মুদ্রণ এবং অফশোর ইন্টারনেট হোস্টিং সুবিধা প্রতিষ্ঠা বা "ডেটা হ্যাভেন" সহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত। ২০০০ সালে, হ্যাভেনকো প্রতিষ্ঠার পরে সিলল্যান্ড সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী প্রচার শুরু হয়েছিল, এটি একটি ডেটা হ্যাভেন, যা কার্যকরভাবে রাফস টাওয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। হাভেনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশের মূল অংশগ্রহণকারী রায়ান ল্যাকি সংস্থাটির পরিচালনার বিষয়ে বাটস পরিবারের সাথে মতবিরোধের কথা উল্লেখ করে ২০০২ সালে মারাত্মক পরিস্থিতিতে হাভেনকো ত্যাগ করেন। হ্যাভেনকো ওয়েবসাইটটি ২০০৮ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ক্রীড়া
সিল্যান্ড-এর ক্রীড়া কার্যক্রম কোনও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত নয়