সার্বভৌম রাষ্ট্র

স্বাধীন স্বনির্ভর রাষ্ট্র

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হলো একটি অবস্তুগত বৈধ সত্ত্বা, যা একটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত এবং যার একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি স্থায়ী জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সীমানা, সরকার এবং অপর কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা থাকলে তাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয়।[১] সাধারণ অর্থে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র অন্য কোন শক্তি বা রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল বা অন্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত নয়।[২]

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, প্রত্যেকেই সার্বভৌম রাষ্ট্র, যদিও সকল সার্বভৌম রাষ্ট্র আবশ্যিকভাবে এর সদস্য নয়

রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বা বিলোপ একটি আইনগত প্রত্যয়।[৩] রাষ্ট্রসত্তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়াও একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্ত্বিত্ব থাকতে পারে। তবে অস্বীকৃত রাষ্ট্রসমূহ কখনও কখনও অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অপারগ হয়।

রাষ্ট্রের উদ্ভব

রাষ্ট্রের উদ্ভব তখনই ঘটে যখন মানুষ ধীরে ধীরে তাদের আনুগত্য কোনো ব্যক্তিক সার্বভৌমত্ব (রাজা, ডিউক, প্রিন্স) থেকে রাষ্ট্র নামক একটি অস্পৃশ্য কিন্তু স্থানিক রাজনৈতিক সত্তার প্রতি স্থানান্তরিত করে। রাষ্ট্র (অথবা নগররাষ্ট্র, কনফেডারেশন, রাজ্য) মূলত কতিপয় রাজনৈতিক কার্যকলাপের সমষ্টি যা সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

ওয়েস্টফেলিয় সার্বভৌমত্ব

ওয়েস্টফেলিয় সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রীয় সীমানা এবং আভ্যন্তরীণ কাঠামোর ভেতরে বিদেশী গুপ্তচরবৃত্তির অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে বোঝায়। এটি রাষ্ট্র, বহুজাতিক কর্পোরেশন এবং সংগঠনসমূহের এক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যা ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শুরু হয়।

সার্বভৌমত্ব এমন একটি প্রত্যয় যার প্রায়শই অপব্যবহার হয়। বিশ্বের কতিপয় মানুষের জীবন ছিল অসভ্য এবং সমাজকাঠামো ছিল অসংগঠিত, এটা নির্ণয়ের জন্য ১৯ শতাব্দীতে "সভ্যতার মান" এর বিচ্ছিন্ন ধারণাটি বিস্তার লাভ করে।ধারণাটি এই বিশ্বাসে গঠিত হয়েছিল যে, হয় তাদের "সার্বভৌমত্ব" সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত ছিল, নাহয় "সভ্য" মানুষের তুলনায় একেবারে নিকৃষ্ট ছিল। লাসা ওপেনহেইম উল্লেখ করেন, "সম্ভবত সার্বভৌমত্বের ধারণার মতো বিতর্কিত বিষয় আর কিছু নেই। এটি একটি অকাট্য সত্য যে, ধারণাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এর অর্থ বিষয়ে বিশ্বজনীন ঐকমত্যে পৌছানো সম্ভব হয়নি।" অস্ট্রেলিয়া উচ্চ আদালতের বিচারক এইচ ভি এভাট মত দেন, "সার্বভৌমত্ব নীতিগত প্রশ্ন বা আইনগত প্রশ্ন কোনটিই নয়, বরং এটি এমন একটি প্রশ্ন যা উত্থিতই হয়না।"

আধুনিক আন্তর্জাতিক আইনের হুমকি বা বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও নিষেধের নীতিমালা উন্নয়নের সাথে সাথে সার্বভৌমত্ব একটি ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘ সনদ ও অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সনদ অনুযায়ী, সকল রাষ্ট্রই আইনগতভাবে সমান এবং তাঁদের অস্তিত্ব অনুযায়ী সম অধিকার ভোগ করে। আইনের দ্বারা নির্ধারিত নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয় ও স্থায়ী সার্বভৌমত্ব চর্চার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অধিকার ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সার্বভৌমত্বকে সাধারণত তার স্বয়ংসম্পূর্ণতার নিরিখে ও আঞ্চলিকতার কাঠামোয় রাষ্ট্রের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা আভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এবং পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে স্বাধীন।

১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির পর ওয়েস্টফেলিয় সার্বভৌমত্বের উদ্ভব ঘটে, ব্রায়ান টার্নারের মতে যা ছিল ধর্ম ও রাষ্ট্রের মাঝামাঝি এবং "রাজ্য যার ধর্ম তাঁর"- এই বাস্তব নীতির দ্বারা যা রাষ্ট্রে ধর্মের অন্তর্ভুক্তি নির্ণয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রনেতাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।

পাশ্চাত্য উপনিবেশবাদের মাধ্যমে ওয়েস্টফেলিয় সার্বভৌমত্বের মডেলটি অপাশ্চাত্য দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। এ মডেলটি ধর্মকে রাজনীতির অধীনস্থ করে, যা কিনা মুসলিম দেশসমূহে কিছু সমস্যার জন্ম দেয়। এই ব্যবস্থা মুসলিম বিশ্বের জন্য উপযুক্ত নয়, কেননা "রাষ্ট্র ও উপাসনালয়ের" বিভেদ এবং "স্বতন্ত্র বিবেকের" ধারণা ইসলাম ধর্মে সামাজিক প্রথা হিসেবে স্বীকৃত নয়।

ব্যবহারিক অর্থে "দেশ", "জাতি" বা "রাষ্ট্র" সমার্থক মনে হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।

  • দেশ বলতে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও রাজনৈতিক সীমারেখাবিশিষ্ট অঞ্চল বা ভূখণ্ডকে বোঝায়।
  • জাতি বলতে একদল মানুষকে বোঝায় যারা তাঁদের সাধারণ রীতিনীতি, ধর্ম, ভাষা, উৎস, উৎপত্তি বা ইতিহাস পরস্পরের সাথে বিনিময় করে। যাইহোক, জাতীয়আন্তর্জাতিক বিশেষণদ্বয় প্রায়ই "সার্বভৌম রাষ্ট্র", "জাতীয় রাজধানী", "আন্তর্জাতিক আইন" সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • রাষ্ট্র বলতে শাসনসংক্রান্ত ও সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সমষ্টিকে বোঝায় যার নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনগনের উপর সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। সার্বভৌম রাষ্ট্র হলো বৈধ সত্ত্বা।

স্বীকৃতি

সাংবিধানিক তত্ত্ব

ঘোষণামূলক তত্ত্ব

একজন নাগরিক তার নিয়মের বাহিরে কোন কাজেই। করতে পারে না তবে একজন রাষ্ট্র, সেটিও করতে পারে না। সাধারন পরিভাষায় বলতে হলে নিজেদের আইন তারা কখনই ঘোষনা করতে পারে না। তদপরি রাষ্ট্র যখন কোন নাগরিকদের সুবিধা বা অসুবিধা মাথায় রেখে কাজ করে তাকেই মূলত ঘোষনা রাষ্ট্র বলে থাকি।

রাষ্ট্রচর্চা

ডি ফ্যাক্টো ও ডি জুরি রাষ্ট্র

ডি জুরি রাষ্ট্র

ডি জুরি রাষ্ট্র শব্দবন্ধটির উৎপত্তি ল্যাটিন ভাষা থেকে। ল্যাটিন ডি জুরি অর্থ আইনত। অর্থাৎ ডি জুরি রাষ্ট্র মানে আইনত স্বাধীনসার্বভৌম রাষ্ট্ররাষ্ট্র গঠনের চারটি মৌলিক উপাদান (ভূমি, জনসংখ্যা, সরকারসার্বভৌমত্ব) বাদে এর বাড়তি আরো একটি যোগ্যতা আছে। সেটি হলো, স্বীকৃতি। অর্থাৎ অন্যান্য আইনত স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বলতে সাধারণত আইনত স্বাধীন রাষ্ট্রই বোঝায়। যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা নেপাল; এগুলো ডি জুরি রাষ্ট্রের উদাহরণ।

ডি ফ্যাক্টো রাষ্ট্র

ডি জুরির মতো ডি ফ্যাক্টো শব্দটি ল্যাটিন; যার অর্থ "কার্যত"। অর্থাৎ ডি ফ্যাক্টো রাষ্ট্র মানে কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র। কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্রে মৌলিক চারটি উপাদান বহাল থাকে। তবে তার পঞ্চম এবং গৌণ উপাদানটি সীমিত থাকে বা থাকে না। অন্যান্য আইনত স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়াও রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। এরকম রাষ্ট্রের উদাহরণ যেমন, ফিলিস্তিন, কসোভো, তাইওয়ান বা সোমালিল্যান্ড ইত্যাদি।

রাষ্ট্রের সত্ত্বাতাত্ত্বিক ধারণা

আপাত-বিমূর্ত হিসেবে রাষ্ট্র

আধ্যাত্মিক সত্ত্বা হিসেবে রাষ্ট্র

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ