অ্যানাটেজ

অ্যানাটেজ টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের (TiO2) একটি স্বল্প-সুস্থিত (মেটাস্ট্যাবল) খনিজ রূপভেদ। প্রাকৃতিক পরিবেশে একে কালো বর্ণের খনিজ পদার্থ হিসেবে পাওয়া যায়, তবে বিশুদ্ধ অ্যানাটেজ বর্ণহীন বা সাদা। TiO2 এর অপর দুটি প্রাকৃতিক রূপভেদ হলো ব্রুকাইটরুটাইল

অ্যানাটেজ
সাধারণ তথ্য
শ্রেণীখনিজ অক্সাইড
রাসায়নিক সূত্রTiO2
স্ত্রুনজ শ্রেণীবিভাগ4.DD.05
স্ফটিক ভারসাম্যI41/amd
একক কোষa = ৩.৭৮৪৫, c = ৯.৫১৪৩ [Å]; Z = ৪
সনাক্তকরণ
পেষক ভর৭৯.৮৮ গ্রাম/মোল
বর্ণকালো, লালচে থেকে হলদে বাদামি, গাঢ় নীল, ধূসর
স্ফটিক রীতিপিরামিড (স্ফটিকসমূহ পিরামিড আকৃতির), ছকবদ্ধ
স্ফটিক পদ্ধতিচতুষ্কোণাকার
যমজ{১১২} তে বিরল
বিদারণ[০০১] ও [০১১] তে আদর্শ
ফাটলআংশিক শঙ্খাকৃতি (সাবকনকয়ডাল)
সংসক্তিভঙ্গুর
কাঠিন্য মাত্রা৫.৫-৬
ঔজ্জ্বল্যঅ্যাডাম্যান্টাইন থেকে স্প্লেনডেন্ট (উজ্জ্বল), ধাতব
ডোরা বা বর্ণচ্ছটাহালকা হলদে সাদা
স্বচ্ছতাস্বচ্ছ থেকে প্রায় অস্বচ্ছ
আপেক্ষিক গুরুত্ব৩.৭৯–৩.৯৭
আলোকিক বৈশিষ্ট্যএকাক্ষ (-), গাঢ় বর্ণের স্ফটিকে ব্যতিক্রমী দ্বি-অক্ষ
প্রতিসরাঙ্কnω = ২.৫৬১, nε = ২.৪৮৮
বায়ারফ্রিঞ্জেন্সδ = ০.০৭৩
Pleochroismদুর্বল
তথ্যসূত্র[১][২][৩]

প্রকৃতিতে অ্যানাটেজ ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন ও ধারালো প্রান্তবিশিষ্ট স্ফটিক আকারে পাওয়া যায়। এটি তাপগতীয়ভাবে সুস্থিত রুটাইলের (টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের রূপভেদ) ন্যায় চতুষ্কোণাকার স্ফটিক গঠন করে। অ্যানাটেজ সকল তাপমাত্রা ও চাপে স্বল্প-সুস্থিত, অন্যদিকে রুটাইল সুস্থিত। তা সত্ত্বেও অনেক সময় অ্যানাটেজ টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের প্রথম রূপভেদ হিসেবে গঠিত হয়। এর কারণ অ্যানাটেজের পৃষ্ঠশক্তি অপেক্ষাকৃত কম, উচ্চ তাপমাত্রায় এটি রুটাইলে পরিবর্তিত হতে পারে।[৪] অ্যানাটেজ ও রুটাইল উভয়ের প্রতিসমতার মাত্রা একই হলেও, আন্তঃতলীয় কোণের ক্ষেত্রে প্রিজমের ৪৫° ও ৯০° ব্যতীত এদের মধ্যে কোনো সাদৃশ্য নেই। অ্যানাটেজের সাধারণ পিরামিড আদর্শ চিড়যুক্ত তলসমূহের সাথে সমান্তরালে পোলার প্রান্তের উপরে ৮২°৯' কোণ উৎপন্ন করে, যেখানে রুটাইলে ৫৬°৫২.৫' কোণ উৎপন্ন হয়। এই অধিকতর ঢালু পিরামিডের কারণে ১৮০১ সালে রেনে জাস্ট এঅয় খনিজটির নামকরণ করেন- অ্যানাটেজ। গ্রিক শব্দ অ্যানাটেসিস (অর্থ: "সম্প্রসারণ") থেকে অ্যানাটেজ শব্দের উৎপত্তি, অ্যানাটেজের স্ফটিকের উল্লম্ব অক্ষ রুটাইলের চেয়ে দীর্ঘ বা সম্প্রসারিত।

অ্যানাটেজ ও রুটাইলের ভৌত গঠনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, যেমন: অ্যানাটেজ রুটাইলের চেয়ে কম শক্ত (কাঠিন্য: ৫.৫-৬ বনাম ৬-৬.৫ মো'জ) ও কম ঘনত্বসম্পন্ন (আপেক্ষিক গুরুত্ব: প্রায় ৩.৯ বনাম ৪.২); অ্যানাটেজ আলোক ঋণাত্মক, কিন্তু রুটাইল আলোক ধনাত্মক। এছাড়া অ্যানাটেজের ঔজ্জ্বল্য রুটাইলের চেয়ে বেশি অ্যাডাম্যান্টাইন বা ধাতব-অ্যাডাম্যান্টাইন প্রকৃতির।[৫]

স্ফটিকের বৈশিষ্ট্য

অ্যানাটেজ ল্যাটিসের বর্ধিত অংশ

অ্যানাটেজের দুই ধরনের স্ফটিকের গঠন কৌশলে পার্থক্য দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে স্ফটিকটি গঠিত হয় সেটি সূক্ষ্মকোণী দ্বি-পিরামিড আকৃতির, আসমানি-নীল থেকে কালচে বর্ণের ও ইস্পাতের ন্যায় উজ্জ্বল পদার্থ। এধরনের স্ফটিক ডউফিনেই- এর লি বার্গ-ডি'অয়সান্সে প্রচুর পাওয়া যায়। সেখানে এগুলো গ্রানাইট ও মাইকা-শিস্টের সূক্ষ্ম ফাটলে পাথর, ফেল্ডস্পার ও অ্যাক্সিনাইটের সাথে সম্মিলিতভাবে অবস্থান করে। এছাড়া আণুবীক্ষণিক আকারের স্ফটিকসমূহ সাধারণত পাললিক শিলায়, যেমন- বেলেপাথর, কাদামাটি ও স্লেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এগুলোকে আলাদা করার জন্য গুঁড়ো পাথর থেকে হালকা পদার্থসমূহ অপসারণ করা হয়।[৫] অ্যানাটেজের (১০১) তলটি তাপগতীয়ভাবে সবচেয়ে সুস্থিত তল, একারণে প্রাকৃতিক ও সংশ্লেষিত উভয় ধরনের অ্যানাটেজেই বেশিরভাগ সময় এই দিকটি পরিবেশে উন্মুক্ত থাকে।[৬]

দ্বিতীয় ধরনের স্ফটিকের বহু পিরামিড আকৃতির গঠন বিদ্যমান, এগুলো সচরাচর সমতল, আবার মাঝেমধ্যে প্রিজমের ন্যায় আচরণ করে। এরূপ স্ফটিক মধুর ন্যায় হলুদ থেকে বাদামি বর্ণ প্রদর্শন করে। এগুলো দেখতে অনেকটা জেনোটাইমের মতো, এমনকি দীর্ঘদিন ধরে এদেরকে উক্ত গোত্রেরই মনে করা হতো এবং ওয়াইজেরিন নামে পরিচিত ছিল। আল্পস পর্বতমালার নাইসের (একধরনের রূপান্তরিত শিলা) গাত্রে এবং সুইজারল্যান্ডের ক্যান্তন অফ ভ্যালের ব্রিগের নিকটবর্তী বিনেনথাল এলাকায় অ্যানাটেজের এই স্ফটিকগুলো পাওয়া যায়। অ্যানাটেজের মতো প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রুটাইলের প্রকারভেদও (সিউডোমর্ফ) দেখা যায়।[৫]

অ্যানাটেজ টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের সাম্যদশা না হলেও, এটি কক্ষ তাপমাত্রায় প্রায় সুস্থিত। সাধারণত ৫৫০° থেকে প্রায় ১০০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যানাটেজ রুটাইলে রূপান্তরিত হয়। তবে এই রূপান্তর তাপমাত্রা অ্যানাটেজে বিদ্যমান ভেজাল বা অপদ্রব্য এবং নমুনার অভ্যন্তরীণ গঠনের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল।[৭]

সংশ্লেষিত অ্যানাটেজ

অর্ধ-পরিবাহী হিসেবে অ্যানাটেজের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার থাকায় এটি প্রায়ই রসায়নাগারে সংশ্লেষণ করা হয়। রসায়নাগারে স্ফটিক অ্যানাটেজ প্রস্তুতির জন্য সল-জেল পদ্ধতির মতো বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যেমন: টাইটানিয়াম টেট্রাক্লোরাইড (TiCl4) বা টাইটানিয়াম ইথক্সাইডের নিয়ন্ত্রিত আর্দ্রবিশ্লেষণ। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লেষণের সময় অপদ্রব্য মিশিয়ে অ্যানাটেজের আকৃতি, গঠন, ইলেকট্রনীয় কাঠামো ও পৃষ্ঠরসায়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।[৮]

বিকল্প ও অপ্রচলিত নাম

অ্যানাটেজের প্রচলিত অপর নাম অক্টাহেড্রাইট যা "অ্যানাটেজ" নামকরণের পূর্বেই দেওয়া হয়েছিল, এরূপ নামকরণের কারণ- অ্যানাটেজের স্ফটিকের অষ্টতলকীয় (অক্টাহেড্রাল) বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের স্থানীয় এলাকায় পরিচিত অয়সেনাইট ও ডউফিনাইট, এগুলো বর্তমানে অপ্রচলিত।

আরও দেখুন

  • কালো বর্ণের অ্যানাটেজ স্ফটিক

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ