মুজিবনগর সরকার

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর সরকার (যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনগণের রায়ে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার

মুজিবনগর সরকার
১৯৭১–১৯৭২
মুজিবনগর সরকারের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
মুজিবনগর সরকারের অবস্থান
অবস্থাঅস্থায়ী সরকার
রাজধানীবৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর)
নির্বাসনে রাজধানীকলকাতা
প্রচলিত ভাষাবাংলা
সরকারঅস্থায়ী প্রজাতন্ত্র
রাষ্ট্রপতি 
• ১৯৭১–১৯৭২
শেখ মুজিবুর রহমান
• ১৯৭১–১৯৭২
সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী)
প্রধানমন্ত্রী 
• ১৯৭১–১৯৭২
তাজউদ্দীন আহমদ
ঐতিহাসিক যুগবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
• প্রতিষ্ঠা
১৭ই এপ্রিল ১৯৭১
• বিলুপ্ত
১২ই জানুয়ারি ১৯৭২
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
পূর্ব পাকিস্তান
বাংলাদেশ

পটভূমি

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট সংঘটিত হবার সময় যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে তার আগ মুহূর্তে ২৫ মার্চ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর একটি ছোট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।[১] এরপর ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।[২][৩] মূলত সেই দিন হতেই বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এদিকে ২৫ মার্চের ভয়াবহ, দুর্বিষহ গণহত্যার সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ নিজ বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যান।[৩] এসময়েই তিনি বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন। প্রথমে আত্মরক্ষা তারপর প্রস্তুতি এবং সর্বশেষে পালটা আক্রমণ এই নীতিকে সাংগঠনিক পথে পরিচালনার জন্য তিনি সরকার গঠনের চিন্তা করতে থাকেন। এরই মধ্যে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি ফরিদপুর-কুষ্টিয়া পথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে পৌছান।[৪] ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পদার্পণ করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার বিষয়ে মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী তাদের সার্বিক সহায়তা করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিদর্শক গোলক মজুমদার তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। গোলক মজুমদারের কাছে সংবাদ পেয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক কেএফ রুস্তামজী তাদের আশ্রয়স্থলে এবং তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং পূর্ববাংলা সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাঙালির স্বাধীনতা লাভের অদম্য স্পৃহা সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। সীমান্তে পৌছে তাজউদ্দীন দেখেন যে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনাদের সমর্থনে ভারত সরকার থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সামরিক বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছুই করার নেই। মুক্তিফৌজ গঠনের ব্যপারে তাজউদ্দীন আহমদ বিএসএফ এর সাহায্য চাইলে তৎকালীন বিএসএফ প্রধান তাকে বলেন যে মুক্তিসেনাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র প্রদান সময় সাপেক্ষ কাজ । তিনি আরো বলেন যে ট্রেনিংয়ের বিষয়ে তখন পর্যন্ত ভারত সরকারের কোন নির্দেশ না থাকায় তিনি মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিতে পারবেন না। কেএফ রুস্তামজী দিল্লির ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয় তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য।[৫] উদ্দেশ্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাজউদ্দীন আহমদের বৈঠক। দিল্লিতে পৌছানোর পর ভারত সরকার বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হন যে, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতম সহকর্মী। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের কয়েক দফা বৈঠক হয় এবং তিনি তাদের বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার জন্য যেসব সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন তা বুঝিয়ে বলেন। এসময় তিনি উপলব্ধি করেন যে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে তিনি যদি সাক্ষাৎ করেন তবে সামান্য সহানুভূতি ও সমবেদনা ছাড়া তেমন কিছু আশা করা যায় না। সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐ সরকারের দৃঢ় সমর্থন ছাড়া বিশ্বের কোন দেশই বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। এছাড়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগের দিন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাজউদ্দীনের কাছে জানতে চান যে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কোনো সরকার গঠিত হয়েছে কিনা। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রূপে নিজেকে তুলে ধরবেন। কারণ এতে 'পূর্ব বাংলার জনগণের সংগ্রামকে সাহায্য করার জন্য ৩১ মার্চ ভারতীয় পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়'[৬] তা কার্যকর রূপ লাভ করতে পারে বলে তাজউদ্দীনের ধারণা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের সূচনাতে তাজউদ্দীন জানান যে পাকিস্তানি আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ২৬ মার্চেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে সরকার গঠন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকে যোগদানকারী সকল প্রবীণ সহকর্মীই মন্ত্রিসভার সদস্য। শেখ মুজিবের গ্রেফতার ছাড়া তখন পর্যন্ত দলের অন্যান্য প্রবীণ নেতাকর্মীর খবর অজানা থাকায় সমাবেত দলীয় প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে দিল্লীর উক্ত সভায় তাজউদ্দীন নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রূপে তুলে ধরেন।[৪][৭] । ঐ বৈঠকে তাজউদ্দীন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, উপযুক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হবে। এভাবেই অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ধারনার সূচনা।

আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠক শেষে তিনি বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলে তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের এমএনএ (M.N.A) এবং এমপিএদের (M.P.A) কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অধিবেশন আহ্বান করেন।

১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান

উক্ত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়।[৮][৯] এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ ও এমপিএগণ ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী,ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ মন্ত্রণালয়),খন্দকার মোশতাক আহমেদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান(স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়) কে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়। ১১ এপ্রিল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে ভাষণ প্রদান করেন। [৮][১০]

১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দের ভাস্কর্য

এরপর ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সকাল ৯ টা থেকেই সেখানে নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়। দেশি বিদেশি প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন[১১]। বেলা ১১টায় শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এবং শুরুতেই বাংলাদেশকে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' রূপে ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি একে একে প্রধানমন্ত্রী ও তার তিন সহকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রের মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী এবং মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রব এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ উইং কমান্ডার আবদুল করিম খন্দকার এর নাম ঘোষণা করেন[১২]। এরপর সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এই ঘোষণাপত্র এর আগেও ১০ এপ্রিল প্রচার করা হয় এবং এর কার্যকারিতা ঘোষণা করা হয় ২৬ই মার্চ ১৯৭১ থেকে। ঐদিন থেকে ঐ স্থানের নাম দেয়া হয় মুজিবনগর[১১]। ঐ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বক্তব্য পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। ভাষণের শেষাংশে তিনি বলেন,

বিশ্ববাসীর কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম, বিশ্বের আর কোন জাতি আমাদের চেয়ে স্বীকৃতির বেশি দাবিদার হতে পারে না। কেননা, আর কোন জাতি আমাদের চাইতে কঠোরতর সংগ্রাম করেনি। অধিকতর ত্যাগ স্বীকার করেনি। জয়বাংলা।

[১২] অর্থাৎ এর মধ্যদিয়েই প্রধানমন্ত্রী দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানালেন[১৩] আর এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সূচনা হল।[১৪]

অস্থায়ী সরকারের গঠন

রাষ্ট্রপতি- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী)

উপরাষ্ট্রপতি- সৈয়দ নজরুল ইসলাম(রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন)

প্রধানমন্ত্রী- তাজউদ্দীন আহমদ

মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ

নংমন্ত্রণালয়সমূহের নাম [৮]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
.পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়।
সাধারণ প্রশাসন বিভাগ।
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়।
১০সংসদ বিষয়ক বিভাগ।
১১কৃষি বিভাগ।
১২প্রকৌশল বিভাগ।
নংমন্ত্রীর নামদায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়[৮]
তাজউদ্দীন আহমদক- প্রধানমন্ত্রী খ- প্রতিরক্ষা

গ- তথ্য ও বেতার এবং টেলিযোগাযোগ

ঘ- অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন

ঙ- শিক্ষা,স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ

চ- সংস্থাপন ও প্রশাসন

ছ- যেসব বিষয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের অন্য কোন সদস্যকে প্রদান করা হয়নি

খন্দকার মোশতাক আহমেদক- পররাষ্ট্র বিষয় খ- আইন ও সংসদ বিষয়
এম মনসুর আলীক- অর্থ ও জাতীয় রাজস্ব খ- বাণিজ্য ও শিল্প

গ- পরিবহন

এ এইচ এম কামারুজ্জামানক- স্বরাষ্ট্র বিষয়ক খ- সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন

গ- কৃষি

মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরো কয়েকটি সংস্থা ছিল যারা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে কাজ করত। যেমনঃ

  1. - পরিকল্পনা কমিশন
  2. - শিল্প ও বাণিজ্য বোর্ড
  3. - নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, যুব ও অভ্যর্থনা শিবির
  4. - ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি
  5. - শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড ।[৮]

উপরাষ্ট্রপতির দপ্তর[১২]

উপদেষ্টাবৃন্দ- মোহাম্মদ উল্লাহ (এম এন এ), সৈয়দ আবদুস সুলতান (এম এন এ), কোরবান আলি (এম এন এ)

একান্ত সচিব- কাজী লুৎফুল হক

সহকারী সচিব- আজিজুর রহমান

প্রধান নিরাপত্তা অফিসার- সৈয়দ এম করিম

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর[১২]

এডিসি- মেজর নূরুল ইসলাম

একান্ত সচিব- ডাঃ ফারুক আজিজ

তথ্য অফিসার- আলী তারেক

মন্ত্রণালয়সমূহের বিবরণী

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
প্রধান সেনাপতিকর্নেল এম এ জি ওসমানী
চিফ অব স্টাফকর্নেল এম এ রব
বিমান বাহিনী প্রধানগ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার
প্রধান সেনাপতির এডিসিলেঃ নূর
প্রতিরক্ষা সচিবআবদুস সামাদ
উপ সচিবআকবর আলি খান

এস এ ইমাম

সহকারী সচিবনূরুল ইসলাম চৌধুরী

এম এইচ সিদ্দিকী

কেবিনেট ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
প্রধান সচিবরুহুল কুদ্দুস
সংস্থাপন সচিবনুরুল কাদের খান[১৫]
কেবিনেট সচিবএইচ টি ইমাম
উপ-সচিবকামাল উদ্দিন আহম্মদ

তৌফিক এলাহী চৌধুরী

দীপক কুমার চৌধুরী

ওলিউল ইসলাম

সহকারী সচিববজলুর রহমান

নরেশ চন্দ্র রায়

মতিউর রহমান

এম এ আউয়াল

আবু তালেব

মোহাম্মদ হেদায়েত উল্ল্যা

কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী

শাহ মতিউর রহমান

পরিকল্পনা কমিশন[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
চেয়ারম্যানডঃ মুজাফফর আহমদ চৌধুরী
সদস্যস্বদেশ বসু

ডঃ মোশাররফ হোসেন

ডঃ আনিসুজ্জামান

ডঃ খান সরওয়ার মোর্শেদ

ডেপুটি চীফএ এ মাসুদ মিঞা

কে এস ডি সরমান

এ এস এম হোসেন

এম খালেকুজ্জামান

এ কে রায়

ডঃ ওয়াজিঊর রহমান

ডঃ এম নুরুল ইসলাম

রিসার্স অফিসারডি কে কলিন নো

তপন কুমার বোস

এম এ নওজেশ আলী

ডি কে নাথ

স্বরাষ্ট্র,ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়[১২]
সচিবএম এ খালেক
উপ-সচিবখসরুজ্জামান চৌধুরী
সহকারী সচিবসৈয়দ মাহবুবুর রশিদ

জ্ঞানরঞ্জন সাহা

গোলাম আকবর

স্টাফ অফিসারএম এ গাফফার
জেলা আনসার অফিসারশরীফুল হক

রশীদ বখত মজুমদার

মহাকুমা আনসার অফিসারসৈয়দ হাবিবুল বারী
আনসার অফিসারশামসুর রহমান

আকরাম হোসেন

তবিবুর রহমান

এ কে হুমায়ূন

কে জি কাদের

আবুল বাশার

আবদুল মান্নান

আলী আকবর

মোঃ জহির উদ্দিন

প্রেস,তথ্য,বেতার,ফিল্ম,আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
এম এন এ ইনচার্জজনাব আবদুল মান্নান (এম এন এ)
সচিব (প্রথম)আবদুস সামাদ ( ৩ সেপ্টে-১৩ অক্টো)
সচিব (দ্বিতীয়)আনোয়ারুল হক খান (১৪ অক্টো-১৬ ডিসে)
ডাইরেক্টর-আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনকামরুল হাসান
ডাইরেক্টর-ফিল্মআব্দুল জব্বার খান
ডাইরেক্টর-প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটিএম আর আখতার মুকুল
অর্থ,শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
মন্ত্রীর একান্ত সচিবসাফাত হোসেন
সচিব (অর্থ)খোন্দকার আসাদুজ্জামান
সহকারী সচিব (অর্থ)মাখন চন্দ্র মাঝি

শামসুদ্দিন হায়দার

ক্ষিতিশ চন্দ্র কুন্ডু

এ কে এম হেফারত উল্লাহ

আলি করি

সহকারী সচিব (শিল্প ও বাণিজ্য)মোঃ ইদ্রিস আলি

জগন্নাথ দে

এ কে আনোয়ার হক

শিক্ষা মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
উপদেষ্টাকামরুজ্জামান (এম এন এ)
শিক্ষা অফিসারআহমেদ হোসেন
কৃষি মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
সচিবনূরউদ্দিন আহমদ
উপ-সচিবশহিদুল ইসলাম
বিভাগীয় বন কর্মকর্তাএন এম সরকার

মোজাম্মেল হোসেন

পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
সচিবমাহবুবুল আলম চাষী
ওএসডিব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
মন্ত্রীর একান্ত সচিবকামাল উদ্দিন সিদ্দিকী

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিশনসমূহ[১২]

কলকাতা
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
বাংলাদেশ হাই কমিশনার, কলকাতাএম হোসেন আলি
প্রথম সচিবআর আই চৌধুরী
তৃতীয় সচিব১। আনোয়ারুল চৌধুরী

২। কাজী নজরুল ইসলাম

সহকারী প্রেস এ্যাটাচীএম মোকছুদ আলী
অফিসারজায়েদুর রহমান
নয়াদিল্লী
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
কাউন্সিলরহুমায়ূন রশীদ চৌধুরী
দ্বিতীয় সচিবকে এম শাহাবুদ্দিন
সহকারী প্রেস এ্যাটাচীআমজাদুল হক
হংকং
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
ট্রেড কমিশনারমহিউদ্দিন আহমদ
ফিলিপাইন
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
রাষ্ট্রদূতকে কে পন্নী
নিউইয়র্ক
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
উপ-কন্সালএ এইচ মাহমুদ আলী
উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘএম এ করিম
ওয়াশিংটন
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
মিনিস্টারএনায়েত করিম
রাজনৈতিক কাউন্সিলারএ এম এম এস কিবরিয়া
অর্থনৈতিক কাউন্সিলারআবুল মাল আব্দুল মুহিত
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সিলারএ আর মতিনউদ্দিন
তৃতীয় সচিবসৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি
একাউন্টস অফিসারএম আর চৌধুরী
সহকারী তথ্য অফিসারশেখ রুস্তম আলি
সহকারী প্রশাসনিক অফিসারএ এম এস আলম
যুক্তরাজ্য
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
দ্বিতীয় সচিবমহিউদ্দিন আহমদ
পরিচালক(অর্থ)এ লুৎফুল মতিন
কাউন্সিলাররেজাউল করিম
ডেপুটি ডাইরেক্টরআবদুর রঊফ
লেবার এ্যাটাচীফজলুল হক চৌধুরী
সুইজারল্যান্ড
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
দ্বিতীয় সচিবওয়ালিউর রহমান
ইরাক
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
রাষ্ট্রদূতএ এফ এম আবুল ফাতাহ
জাপান
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
তৃতীয় সচিবএ রহিম
প্রেস এ্যাটাচীএম মাসুদ
নেপাল
পদের নামদায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
তৃতীয় সচিবএম এ জায়গীরদার

আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ[১০]

বেসামরিক প্রশাসনকে অধিক গণতান্ত্রিক করার জন্য বাংলাদেশের আঞ্চলিক সুবিধা চিন্তা করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯৭১ এর জুলাই মাসে ৯টি অঞ্চল এবং সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্তভাবে ১১টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। সেপ্টেম্বর নাগাদ অঞ্চলগুলোর বিন্যাস হয়েছিল এভাবে-

এক নজরে আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ
নংজোন/অঞ্চলপ্রধান অফিসএলাকাচেয়ারম্যানসচিব
দক্ষিণ পূর্ব জোন-১সাবরুমচট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী মহাকুমাপ্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরীএস এ সামাদ
দক্ষিণ পূর্ব জোন-২আগরতলাঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী বাদে নোয়াখালীজহুর আহমদ চৌধুরীকে আর আহমদ
পূর্ব জোনধর্মনগরহবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার মহাকুমাকর্নেল এম এ রবকে এ হাসান
উত্তর পূর্ব জোন-১ডাউকিসিলেট সদর,সুনামগঞ্জদেওয়ান ফরিদ গাজীসি এস এইচ চৌধুরী
উত্তর পূর্ব জোন-২তুরাময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলশামসুর রহমান খানলুৎফুর রহমান
উত্তর জোনকুচ বিহাররংপুরমতিউর রহমানফয়েজউদ্দিন আহমদ
পশ্চিম জোন-১বালুরঘাটদিনাজপুর, বগুড়াআবদুর রহিমএ কাসেম খান
পশ্চিম জোন-২মালদহরাজশাহীআশরাফুল ইসলামজেড আই ভূঁইয়া
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১কৃষ্ণনগরপাবনা,কুষ্টিয়াআবদুর রউফ চৌধুরীশামসুল হক
১০দক্ষিণ পশ্চিম জোন-২বনগাঁফরিদপুর,যশোরফণিভূষণ মজুমদারবি বি বিশ্বাস
১১দক্ষিণ জোনবারাসাতবরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনানভেম্বর পর্যন্ত কেউ ছিলেন নাএ মোমেন

প্রতিটি জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ গঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় ও প্রাদেশি পরিষদ সদস্যদের প্রশাসনিক পরিষদের সদস্য করে তাদের ভোটে নির্বাচিত একজন করে চেয়ারম্যানকে পরিষদের প্রধান করা হয়। সরকার হতে চেয়ারম্যানের অধীনে একজন করে সচিব নিযুক্ত করা হয়। একই সাথে প্রতিটি জোনে সরকার হতে ৭ জন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় তাদের বিভাগীয় কাজ সম্পাদন করতে।

কর্মকর্তাদের পদ মর্যাদা ছিলঃ-[] আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। [] শিক্ষা কর্মকর্তা। [] ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। [] প্রকৌশল কর্মকর্তা। [] পুলিশ কর্মকর্তা। [] তথ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা। [] হিসাব বিভাগীয় কর্মকর্তা।

আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রধানত রিলিফ ক্যাম্প,যুব শিবির,সেনাবাহিনীকে সহযোগীতা সংক্রান্ত কাজ

প্রতিটি আঞ্চলিক জোনে ৫টি উপ-পরিষদ গঠিত হয়ঃ- ১ | অর্থ উপ-পরিষদ। ২ | ত্রাণ উপ-পরিষদ। ৩ |স্বাস্থ্য উপ-পরিষদ। ৪ | প্রচার উপ-পরিষদ। ৫ | শিক্ষা উপ-পরিষদ। প্রয়োজনে আরো উপ-পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়।

প্রতিটি উপ-পরিষদ গঠনের বিধান হয় আঞ্চলিক পরিষদ হতে নূন্যতম ৩ জন ও ঊর্ধ্বে ৭ জন সদস্য নিয়ে। সদস্যরা তাদের মাঝ হতে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। জোনাল অফিসার বা কর্মকর্তাদের সচিব করা হয়। প্রতিটি জোনে সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি আঞ্চলিক উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হত।

যুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনা

যুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের বিভিন্নমুখী তৎপরতা যুদ্ধকে গতিময় রাখতে সহায়তা করে। এখানে সরকারের মন্ত্রণালয়সমূহের ভূমিকা ও কার্যবিবরনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রূপে লে কর্নেল আবদুর রবকে চিফ অফ স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ রূপে নিযুক্ত করে সমগ্র বাংলাদেশ কে একাধিক (গঠনতান্ত্রিক ভাবে ১১টি) সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। ঐসব সেক্টর কে আবার সেক্টর কমান্ডাররা তাদের নিজ নিজ সুবিধা মত সাব সেক্টরে ভাগ করে নিয়েছিলেন। এছাড়াও কর্নেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেছিলেন যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের অদ্যাংশ দিয়ে ( এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স )।

বিস্তারিতঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টরসমূহের তালিকা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান কাজ ছিল বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তোলা এবং যথাসম্ভব বন্ধু রাষ্ট্রদের থেকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালানো। যদিও বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নামে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় ও তার কর্মী ছিল তথাপি পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রায় সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। প্রধানমন্ত্রী এসব কাজ পরিচালনার জন্য বিশেষ দূত হিসেবে আবু সাঈদ চৌধুরীকে নিয়োগ করেন

অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি কাজ শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু হবার পর কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এবং এই ব্যবস্থা সরকারী চালিকা শক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়। নিম্নলিখিত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়ঃ

  1. বাজেট প্রণয়ন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব;
  2. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত সম্পদের হিসাব প্রস্তুত;
  3. বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গকে অর্থ প্রদানের দায়িত্ব পালন ও বিধিমালা প্রণয়ন;
  4. আর্থিক শৃঙ্খলা প্রবর্তন;
  5. রাজস্ব ও শুল্ক আদায়;
  6. আর্থিক অনিয়ম তদন্তের জন্য কমিটি গঠন।[৮]

বাংলাদেশ সরকারের অর্থসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি তহবিল খোলা হয়। এই ফান্ডে ভারত, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা হতো। সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের যে স্মারক ডাকটিকিট বের করেছিলেন তার বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতে বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচের টিকেট থেকে প্রাপ্ত ৩লক্ষ টাকা সরকারি ট্রেজারিতে জমা করেন।[৮]

তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়

তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ও সাফল্য ছিল বহুমুখী।একদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের অবিরাম উৎসাহ জোগানো,অন্যদিকে পত্র-পত্রিকা,ছোট ছোট পুস্তিকা,লিফলেট ইত্যাদি নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন খবরাখব্র পৌছানো এবং এসবের পরিকল্পনা করা এগুলোই ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অবিরাম উৎসাহ যোগাতে সহায়তা করে গেছে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশিত ছোট ছোট পত্র পত্রিকা দ্বারা রনাঙ্গনের যুদ্ধের বিবরণ,মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা,শরণার্থী শিবিরের অবস্থা ও মানুষদের মানবেতর জীবন-যাপন,বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য বিশ্ববাসীর কাছের আহবান,পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করা হত।

এসব কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মনোবল ধরে রাখতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।[৮]

স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীণ সময়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মত এই মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি এতবেশি ব্যাপক ছিল না। পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে পরে এবং সীমান্তের পাড়ে আশ্রয় নিতে থাকে। এ সময় ত্রাণ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। সীমান্ত অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে এবং দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে পুলিশ প্রশাসন গঠন ও একে কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়[৮]

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের কাজকর্ম সম্পন্ন করা হত। একজন রিলিফ কমিশনারের অধীনে এই বিভাগ সংগঠিত ছিল। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা হত। আবেদনপত্র ছিল বিভিন্ন ধরনের। এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হত। শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকদেরই ত্রাণ সুবিধা দেয়া হত[৮]

স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীণ সময়ে এ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা দুইই ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকেই যুদ্ধের প্রয়োজনেই সীমান্তের কাছাকাছি অনেক জায়গায় সামরিক হাসপাতাল গড়ে উঠে। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত বরাবর ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেন স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার ও আওয়ামী লীগ কর্মীগণ। ২ মে তারিখে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাঃ টি হোসেনকে স্বাস্থ্যসচিব হিসবে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে এই মন্ত্রণালয়ের কর্ম তৎপরতা শুরু হয়। শত্রুর আক্রমণে যারা আহত হতেন তাদের সেবা প্রদানই ছিল এ বিভাগের মুখ্য কাজ। এছাড়া বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির নাগরিকদের চিকিৎসা-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়।

বিজয়কালীন ঘটনাক্রম

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ক্রমশ শত্রু মুক্ত হতে থাকে। এর সাথে সাথে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে। তাই সরকার পরিস্থিতির উন্নতি সাধনের জন্য ১০ ডিসেম্বর একটি সিদ্ধান্ত নেন এবং তা বেতারে প্রচার করেন। ১৩ ডিসেম্বর হতে বেতারে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য বার বার আহবান জানানো হতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সকালে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটকে আত্মসমর্পণের সময় হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ হতে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।প্রথমত,আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে থাকবেন প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] (কিন্তু তিনি তখন প্রধান কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় এবং তার সাথে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার পরিবর্তে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানো হয়)। দ্বিতীয়ত, আত্মসমর্পণের পর যত দ্রুত সম্ভব সরকারের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তর করা। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তির পর সরকারি কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে দেশে ফিরতে থাকেন[৮]

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ