এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এমন একটি ক্যান্সার যেটি শুরু হয় এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ু বা গর্ভের আস্তরণ) থেকে।[১] এটি কোষ গুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফল যাদের শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করার বা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আছে। [৮] প্রায়ই প্রথম লক্ষণ থাকে যোনিমুখে রক্তপাত যেটি ঋতু চক্র এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।[১] অন্য লক্ষণগুলির মধ্যে আছে প্রস্রাবের সময় ব্যথা, যৌন সংসর্গের সময়ে ব্যথা, বা শ্রোণীচক্রে ব্যথা.[১] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার অধিকাংশ সময়েই রজোনিবৃত্তি র পর দেখা যায়।[২]আনুমানিক ৪০% অসুস্থতা অতিস্থূলতার সঙ্গে যুক্ত।[৩] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার অধিকমাত্রায় ইস্ট্রোজেন এর ব্যবহার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বহুমূত্র রোগ হলে ঘটতে দেখা যায়।[১] যেখানে শুধুমাত্র ইস্ট্রোজেন গ্রহণ করলে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, সেখানে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোজেন একযোগে (অধিকাংশ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি) নিলে ঝুঁকি কমে যায়।[১][৩] দুই থেকে পাঁচ শতাংশ ঘটনা পিতামাতা থেকে পাওয়া জিন সম্পর্কিত।[৩] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারকে কখনও কখনও উল্লেখ করা হয় "জরাযুর ক্যান্সার" নামে, যদিও জরায়ুর ক্যান্সারের অন্যান্য অবস্থা, যেমন জরায়ুমুখ ক্যান্সার, ইউটেরাইন সারকোমা, এবং ট্রফোব্লাস্টিক ডিজিজ থেকে এটি স্বতন্ত্র।[৯] সবচেয়ে বেশি ধরনের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হল এন্ডোমেট্রয়েড কার্সিনোমা, যা ৮০% বা তার বেশি ক্ষেত্রে দেখা যায়।[৩] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার সাধারণত নির্ণয় করা হয় এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপ্সি দ্বারা বা ডাইলেশন এবং কিউরেটেজ পদ্ধতিতে নমুনা গ্রহণ করে।[১] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা সাধারণত যথেষ্ট নয়।[৪] যাদের সাধারণ ঝুঁকি আছে তাদের নিয়মিত পরীক্ষার জন্য বলা হয় না।[১০]এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা বিকল্পগুলি হল অ্যাবডোমিনাল হিস্টেরেক্টমি (অস্ত্রোপচার করে জরায়ু সম্পূর্ণ অপসারণ), এবং এর সঙ্গে দুই পাশের ফ্যালোপিয়ান নালিগুলি এবং ডিম্বাশয়দুটির অপসারণ, যাকে বলা হয় দ্বিপার্শ্বীয় সালপিঙ্গো-উফোরেক্টমি।[৪] আরো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায়, বিকিরণ চিকিৎসা, রাসায়নিক চিকিৎসা (ক্যান্সার) বা হরমোন চিকিৎসা করা যেতে পারে।[৪] যদি রোগটি প্রথম অবস্থায় নির্ণয় করা যায়, নিরাময় হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে,[৪] এবং সামগ্রিকভাবে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার যুক্তরাষ্টে ৮০% এরও বেশি।[৫]২০১২ সালে, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার নতুনভাবে ৩,২০,০০০ মহিলার মধ্যে দেখা দিয়েছিল এবং তাঁদের মধ্যে ৭৬,০০০ মারা গিয়েছিলেন[৩] এটি মহিলাদের আক্রমণকারী ক্যান্সারের মৃত্যুর কারণ হিসাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে, জরাযুর ক্যান্সার এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সারের পরেই।[৩] এটি উন্নত বিশ্বে আরও বেশি দেখা যায়।[৩] এবং উন্নত বিশ্বের নারী প্রজনন তন্ত্রের সবচেয়ে বেশি হওয়া ক্যান্সার।[৪] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের হার ১৯৮০ থেকে ২০১০ এর মধ্যে বহু দেশে অনেক বেড়ে গেছে।[৩] মনে করা হয় বয়ষ্ক মানুষের সংখ্যা এবং স্থূলতা বেড়ে যাবার কারণে এটি ঘটেছে।[১১]

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
প্রতিশব্দজরায়ুজ ক্যান্সার
A diagram of the location and development of endometrial cancer
এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের অবস্থান এবং বিকাশ।
বিশেষত্বঅনকোলজি, স্ত্রীরোগবিদ্যা
লক্ষণযোনিমুখে রক্তপাত, যৌন সংসর্গ অথবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা, শ্রোণীচক্রে ব্যথা[১]
রোগের সূত্রপাতরজোনিবৃত্তি র পর[২]
ঝুঁকির কারণঅতিস্থূলতা, অধিকমাত্রায় ইস্ট্রোজেন এর ব্যবহার, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র রোগ, পারিবারিক ইতিহাস[১][৩]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিএন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপ্সি[১]
চিকিৎসাঅ্যাবডোমিনাল হিস্টেরেক্টমি, বিকিরণ চিকিৎসা, রাসায়নিক চিকিৎসা (ক্যান্সার), হরমোন চিকিৎসা[৪]
আরোগ্যসম্ভাবনাপাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার ~৮০% (US)[৫]
সংঘটনের হার৩.৮ মিলিয়ন (২০১৫ তে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা)[৬]
মৃতের সংখ্যা৮৯,৯০০ (২০১৫)[৭]

লক্ষণ ও উপসর্গ

মহিলাদের রজোনিবৃত্তির পর যোনিমুখে রক্তপাত অথবা ছিটা লাগা ৯০% এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে দেখা যায়।[২][১২][১৩] বিশেষত অ্যাডিনোকার্সিনোমাতে রক্তপাত খুব সাধারণ, মোটামুটি দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ঘটে। [২][১০] অস্বাভাবিক ঋতু চক্র বা রজোনিবৃত্তির আগে অনেকদিন ধরে, ভারী, বা ঘন ঘন রক্তপাত এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।[১০]

রক্তপাত ছাড়া অন্য কোন উপসর্গ খুব একটা দেখা যায় না। রজোনিবৃত্তির পরে মহিলাদের অন্য উপসর্গগুলির মধ্যে আছে সাদা অথবা স্বচ্ছ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ। রোগের পুরনো হলে আরো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখায় অথবা শারীরিক পরীক্ষাতে লক্ষণ শনাক্ত করা যেতে পারে। জরায়ু বড় হয়ে যেতে পারে বা ক্যান্সার ছড়িয়ে গিয়ে তলপেটে ব্যথা বা শ্রোণীতে খিল ধরতে পারে।[১০] যৌন সংসর্গ বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে খুব কম দেখা যায়।[৯] জরায়ু পূঁযে (পায়োমেট্রিয়া) ভর্তি হয়ে যেতে পারে।[১৪] যে মহিলাদের এইসব কম সাধারণ লক্ষণ (ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, তলপেটে ব্যথা, এবং পূঁয) থাকে তাঁদের মধ্যে ১০–১৫% মহিলার ক্যান্সার আছে।[১৫]

ঝুঁকির কারণ সমূহ

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে পড়ে অতিস্থূলতা, বহুমূত্র রোগ, স্তন ক্যান্সার, ট্যামক্সিফেন এর ব্যবহার, কখনো সন্তান না হওয়া, দেরিতে রজোনিবৃত্তি, অধিকমাত্রায় ইস্ট্রোজেন এর ব্যবহার, এবং বয়স হয়ে যাওয়া। [১৪][১৫] ইমিগ্রেশন গবেষণা (অভিবাসন গবেষণা), জনসংখ্যার, যাঁরা বিভিন্ন দেশে ঘোরেন যেখানে ক্যন্সারের হার বিভিন্ন, তাঁদের ক্যান্সারের ঝুঁকির পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের কিছু পরিবেশগত উপাদান আছে।[১৬] এই পরিবেশগত ঝুঁকির কারণগুলি ভাল ভাবে চিহ্নিত করা হয় নি।[১৭]

হরমোনের প্রভাব

অধিকাংশ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে দেখা যায় উচ্চমাত্রায় ইস্ট্রোজেনের ব্যবহারে ঝুঁকি বেড়েছে।। আনুমানিক ৪০% ক্ষেত্রে মনে করা হয় অসুখটি স্থূলতা সম্পর্কিত। [৩] স্থূলতার ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত অ্যাডিপোজ টিস্যু অ্যান্ড্রোস্টেননিডিওনকে বেশিমাত্রায় ইস্ট্রোনে পরিবর্তিত করে, যেটি একধরনের ইস্ট্রোজেন। রক্তে বেশিমাত্রার ইস্ট্রোন কম ডিম্বানু মুক্ত করে বা কোন ডিম্বানুই মুক্ত করেনা এবং এন্ডোমেট্রিয়ামকে একটানা উচ্চমাত্রায় ইস্ট্রোজেনের সম্মুখীন করে।[১১][১৮] স্থূলতার জন্য রক্ত থেকে কম পরিমানে ইস্ট্রোজেন অপসারিত হয়।[১৮] পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস), যা অনিয়মিত করে বা কোনরকম ডিম্বপাত করতে দেয়না, স্থূলতার মত একই কারণে অধিকাংশ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত।[১৬] বিশেষত; স্থূলতা, টাইপ ২ বহুমূত্র রোগ, এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ; টাইপ ১ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ।[১৯] স্থূলতা ৩০০–৪০০% হারে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।[২০]রজোনিবৃত্তির সময় ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির প্রোজেস্টিনের সাথে ভারসাম্য না থাকা (বা "বিরোধিতা করা") একটি অন্যতম ঝুঁকির কারণ। উচ্চ মাত্রায় বা অনেকদিন ধরে ইস্ট্রোজেন থেরাপি চললে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।[১৮] কম ওজনের মহিলারা বাধাহীন ইস্ট্রোজেনের কারণে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকেন।[৩] দীর্ঘ সময় ধরে উর্বর থাকা- প্রথম ঋতু চক্র তাড়াতাড়ি আসার জন্য বা রজোনিবৃত্তি দেরীতে আসার জন্য—এটিও একটি ঝুঁকির কারণ।[২১] ওজন এবং থেরাপি চলার সময়ের উপর নির্ভর করে, বাধাহীন ইস্ট্রোজেন এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ২ থেকে–১০ গুণ।[৩] ট্রান্স মানুষ এর ক্ষেত্রে যিনি টেস্টোস্টেরন গ্রহণ করেন এবং হিস্টেরেক্টমি হয়নি, অ্যান্ড্রোস্টেনেডিওনের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের ইস্ট্রোজেনে রূপান্তর এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।[২২]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ