কর্পাস ক্রিস্টি, টেক্সাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের শহর।

কর্পাস ক্রিস্টি (সাধারণত কর্পাস নামে কথিত) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের একটি উপকূলীয় শহর। শহরটি নুয়েসেস কাউন্টির সদর দপ্তর। [১] এছাড়াও শহরটি আরানসাস, কিয়েবার্গ ও সান প্যাট্রিসিও কাউন্টির অংশ। কর্পাস ক্রিস্টি সান আন্তোনিও শহরের ১৩০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। নুয়েসেস উপসাগর ও কর্পাস ক্রিস্টি উপসাগর শহরটির সীমানা দিয়ে বয়ে যায়।

সেতু থেকে তোলা ডাউনটাউন কর্পাস ক্রিস্টি।

২০১৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী কর্পাস ক্রিস্টির জনসংখ্যা ৩,২৬,৫৮৬। জনসংখ্যায় শহরটি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অষ্টম বৃহত্তম শহর। কর্পাস ক্রিস্টি বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম বন্দর। শহরে কর্পাস ক্রিস্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত।

লাতিন ভাষায় কর্পাস ক্রিস্টি শব্দের অর্থ যিশুখ্রিস্টের দেহ। ১৫১৯ সালে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের কর্পাস ক্রিস্টি উৎসবের দিন স্পেনীয় অভিযাত্রী আলোনসো আলভারেজ দি পিনেদা এটি আবিষ্কার করেন। এ থেকেই তিনি শহরটির নাম দেন কর্পাস ক্রিস্টি। এর ডাকনাম "সমুদ্রের জাজ্বল্যমান শহর।"[২]

ইতিহাস

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আগমনের পূর্বে কারানকাওয়ান জাতির লোক এখানে বসবাস করত। [৩]

ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালের দিকে কাবেজা দি ভাকা এখানে আগমন করেন। ১৭৪৭ সালে হোয়াকিন দি অরোবিও ওয়াই দি বাস্তেরা নুয়েসেস নদী ও কর্পাস ক্রিস্টি উপসাগর সম্পর্কে গভীর অধ্যয়ন করেন। বছরখানেক পরে হোসে দি এস্কান্দন ৫০টি পরিবার নিয়ে একটি উপনিবেশ গঠন করেন। তবে উপনিবেশটি ক্ষণস্থায়ী ছিল।

১৮৩৯ সালে কর্নেল হেনরি লরেন্স কিনি ও উইলিয়াম পি অব্রে কর্পাস ক্রিস্টিতে প্রথম স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। [৪] ১৮৪৫ সালের জুলাই মাসে কর্নেল জাচারি টেলর মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য এখানে একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি এখানে অবস্থান করেন। এক বছর পরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে "কর্পাস ক্রিস্টি" নামে স্বীকৃত হয়। ১৮৫২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শহরটিকে স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত করা হয়।[৫]

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় ১৮৬২ সালের ১২-১৮ আগস্ট এখানে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যেটি "ব্যাটল অব কর্পাস ক্রিস্টি" বা কর্পাস ক্রিস্টির যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইউনিয়ন সেনাবাহিনী কনফেডারেট নৌবাহিনীকে কর্পাস ক্রিস্টির যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করে। [৬]

১৯২৬ সালে কর্পাস ক্রিস্টি বন্দর ও ১৯৪১ সালে কর্পাস ক্রিস্টি নৌ-স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। [৪]

১৯১৯ সালে সংঘটিত এক ঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। নর্থ বিচ এলাকায় শুধু তিনটি বাড়িই ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায়। [৭] শহরে কতগুলো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। এগুলো হলো- সিলিয়া (১৯৭০), অ্যালেন (১৯৮০), আইকে (২০০৮), হার্ভে (২০১৭), হানা (২০২০)।

১৯২৯ সালে কর্পাস ক্রিস্টি শহরে লিগ অব ইউনাইটেড লাতিন আমেরিকানস প্রতিষ্ঠিত হয়। হিস্পানিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্য গড়ে তোলার জন্য এটি অবদান রাখে। ১৯৪৯ সালে শহরে মানবাধিকার সংগঠন আমেরিকান জিআই ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভূগোল

আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, কর্পাস ক্রিস্টির আয়তন ১,১৯২ বর্গকিলোমিটার। এর ৪০০.৫ বর্গকিলোমিটার স্থল ও ৭৯১.৫ বর্গকিলোমিটার জল। কর্পাস ক্রিস্টি হ্রদ, চোক ক্যানিয়ন জলাধার ও টেক্সানা হ্রদ কর্পাস ক্রিস্টির পানি সরবরাহের প্রধান উৎস।

উল্লেখযোগ্য এলাকা

  1. বেসাইড
  2. ফ্লাওয়ার ব্লাফ
  3. সাউথ সাইড
  4. ক্যালালেন
  5. ক্লার্কউড
  6. অ্যানাভিল
  7. নর্থ বিচ
  8. গার্ডেনডেল

শহরতলি

  1. পোর্টল্যান্ড
  2. রবসটাউন
  3. টাফট
  4. গ্রেগরি
  5. ইঙ্গলসাইড
  6. বিশপ

জলবায়ু

কর্পাস ক্রিস্টির জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের। গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকাল অত্যন্ত ঠাণ্ডা ও সংক্ষিপ্ত। শহরে দুইটি মাত্র মৌসুম বিরাজ করে - একটি শুষ্ক মৌসুম (এপ্রিল থেকে অক্টোবর) ও অপরটি আর্দ্র মৌসুম (নভেম্বর থেকে মার্চ)।

২০০৪ সালের ক্রিসমাস ইভে কর্পাস ক্রিস্টি শহরে তুষারঝড় হয়। সেসময় ৪.৪ ইঞ্চি তুষারপাত রেকর্ড করা হয়।

শহরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যেমন সংঘটিত হয়েছে, তেমনি টর্নেডো-ও সংঘটিত হয়েছে। ১৯৬১ সালের ২৯শে এপ্রিল এফটু মাত্রার টর্নেডোর আঘাতে কর্পাস ক্রিস্টি ধ্বংস হয়। [৮]

জনমিতি

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩,০৫,২১৫; ২০১০ সালের পর থেকে কর্পাস ক্রিস্টির জনসংখ্যা ১০% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। [৯]

সেন্ট্রাল কানেটিকাট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কম শিক্ষিত শহরগুলোর মধ্যে কর্পাস ক্রিস্টির অবস্থান দ্বিতীয়। [১০]

২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী, বাসিন্দাদের ৮০.৯% শ্বেতাঙ্গ, ৪.৩% আফ্রিকান আমেরিকান, ১.৮% এশীয় ও ০.১% প্রশান্ত মহাসাগরীয়। শহরের বাসিন্দাদের ৬২.৩৩% হিস্পানিক অথবা লাতিনো বংশোদ্ভূত। [৯]

শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৪১,৬৭২ মার্কিন ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩১,৮৬৩ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২২,৬১৬ ডলার। ১৪.১% পরিবার ও ১৭.৬% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ২২.৯% এর বয়স ১৮ বছরের নিচে ও ১৫.৫% এর বয়স ৬৫ বছরের উপরে।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ