কলম্বীয় শান্তি প্রক্রিয়া

কলম্বীয় শান্তি প্রক্রিয়া (স্পেনীয়: Acuerdos de paz entre el Gobierno de Juan Manuel Santos y las FARC) কলম্বীয় সরকারের রাষ্ট্রপতি হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস ও কলম্বিয়ার বিপ্লবী সেনাবাহিনী - পিপলস আর্মির (ফার্ক-ইপি) মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার ফলে কলম্বিয়ায় সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে। সেপ্টেম্বর, ২০১২ সালে আলোচনা পর্বের সূত্রপাত ঘটে। মূলতঃ কিউবার হাভানায় এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ চূড়ান্ত চুক্তিনামার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

প্রেক্ষাপট

আমেরিকা অঞ্চলে কলম্বীয় সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতের বিষয়টি বেশ পুরনো চলমান প্রক্রিয়া। ১৯৬৪ সালে ‘ফুরজাস আর্মাদাস রিভ্যলুসিওনারিস ডে কলম্বিয়া’ নামে কলম্বিয়ার বিপ্লবী সেনাবাহিনী গঠিত হয়। এটিই দেশের সর্ববৃহৎ বামপন্থী গেরিলা সংগঠন। তারা দেশ পরিচালনা করতো।

১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে বেশ কয়েকটি ছোট গেরিলা আন্দোলনকারী দলের সাথে শান্তি প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলে তাদের কার্যক্রম শেষ হয় ও নাগরিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে অগ্রসর হয়। এম-১৯ নামে পরিচিত ১৯শে এপ্রিল আন্দোলন নামীয় প্রথম গেরিলা সংগঠন শান্তি চুক্তিতে কলম্বীয় সরকারের সাথে স্বাক্ষর করে। এরফলে তাদের কার্যক্রম স্থগিত হয় ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় তাদের অস্ত্র সমর্পণ করা হয়। অন্যান্য গেরিলা সংগঠনও একইভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তাদের কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি ঘটায়। তন্মধ্যে, সম্মুখসারির পপুলার লিবারেশন আর্মি (ইপিএল) ও মোভিমিয়েন্তো আর্মাদো কুইনটিন লেম (এমএকিউএল) অন্যতম।[১] তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে পুণঃপুণঃ চেষ্টা চালানো হলেও সরকার ও ফার্কের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া আনয়ণের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

বর্তমান শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে ১৯৯৯-২০০২ সময়কালে ফার্কের সাথে রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস পাস্তারানা সরকার চেষ্টা চালায়। ফার্ক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিন বছর ধরে শান্তি প্রক্রিয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। তবে, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পাস্তারানা সরকার সকল প্রকার সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলে ও ২০০২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কয়েকমাস পূর্বে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে পুনরায় ঐ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করে।[২] ফার্ক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিরাপদ ঘাঁটি তৈরি করে অপহরণ, বন্দীদের বিনিময়ে আলোচনা, বিচ্ছিন্ন আক্রমণ ও আক্রমণধর্মী পরিকল্পনায় সচেষ্ট হয়। একই সাথে শান্তি প্রক্রিয়ার দিকেও অগ্রসর হয়। অন্যদিকে, কলম্বিয়া ইউনাইটেড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের (এইউসি) ন্যায় বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো ফার্কের সাথে সরকারের আলোচনার বিষয়ে বিরোধিতা করতে থাকে।

ক্ষয়-ক্ষতি

১৯৯৮ থেকে ২০০২ সময়কালে কলম্বিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সংঘাতমুখর সময় পার হয়। ১৯৯৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রতি লক্ষে ৫৮.৯২জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ২০০২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯.৬৯জন।[৩] পাশাপাশি জনসাধারণের বাড়ীঘরে ৩৯০টি আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। এর অধিকাংশই ফার্কের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এ সময়ে প্রতি বছরে তিন সহস্রাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটে ও ৮৯৮টি গণহত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়। অধিকাংশই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো করে ও ৫,৪০০-এরও বেশি মানুষ নিহত হয়।[৪]

গণভোট

২৪ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে এ শান্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেলক্ষ্যে ২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে গণভোটের আয়োজন করা হয়। এতে ৫০.২% ভোটার এ চুক্তিনামার বিপক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করে ও ৪৯.৮% ভোটার এর স্বপক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এরপর কলম্বীয় সরকার ও ফার্ক কর্তৃপক্ষ ২৪ নভেম্বর শান্তি প্রক্রিয়ার পর্যালোচনায় স্বাক্ষর করে ও কংগ্রেসে পুণঃমূল্যায়ণ শেষে দ্বিতীয়বারের গণভোটের জন্য প্রেরণ করে।[৫] ২৯-৩০ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে উভয় কংগ্রেসে চুক্তিনামার ত্রুটি দূর করে। এরফলে এ সংঘাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।[৬]

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ