কল মি বাই ইয়োর নেম (উপন্যাস)

কল মি বাই ইয়োর নেম হল মার্কিন লেখক আন্দ্রে অ্যাসিম্যান রচিত একটি উপন্যাস। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির আখ্যানবস্তু গড়ে উঠেছে ১৯৮০-এর দশকের ইতালিতে এলিও পার্লম্যান নামে এক সতেরো বছর বয়সী অকালপক্ক মার্কিন-ইতালীয় ইহুদি বালক এবং অলিভার নামক চব্বিশ বছর বয়সী আগন্তুক এক মার্কিন ইহুদি বিশারদের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রণয়সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। এই উপন্যাসে উক্ত দুই পুরুষের গ্রীষ্মকালীন প্রেম এবং কুড়ি বছর পরের ঘটনা বিবৃত হয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এটির ধারাবাহিক ফাইন্ড মি উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

কল মি বাই ইয়োর নেম
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকআন্দ্রে অ্যাসিম্যান
অডিও পাঠকআর্মি হ্যামার
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
প্রকাশকফারার, স্ট্রস অ্যান্ড গিরোক্স
প্রকাশনার তারিখ
২০০৭
মিডিয়া ধরনমুদ্রণ (হার্ডকভারপেপারব্যাক)
পৃষ্ঠাসংখ্যা২৫৬ পৃষ্ঠা
আইএসবিএন০-৩৭৪-২৯৯২১-৮
ওসিএলসি৬৬৪৬৩৬১৭
813/.6
এলসি শ্রেণীPS3601.C525 C35 2007
পরবর্তী বইফাইন্ড মি 

কাহিনি-সারাংশ

উপন্যাসের কথক এলিও পার্লম্যান ১৯৮৭ সালের গ্রীষ্মের কয়েকটি ঘটনা স্মরণ করছেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল সতেরো এবং তিনি ইতালিতে বাস করতেন তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে তাঁর বাবা-মা একজন ডক্টরাল ছাত্রকে ছয় মাসের জন্য অতিথি হিসাবে গ্রহণ করতেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, সেই ছাত্র যাতে নিজের বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করতে করতে তাঁর বাবাকে অ্যাকাডেমিক লেখালিখির কাজে সাহায্য করতে পারেন। এই ব্যবস্থাটি নিয়ে এলিও একটু অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ, অতিথির ব্যবহারের জন্য তাঁকে তাঁর শোওয়ার ঘরটি ছেড়ে দিতে হত।

সেই গ্রীষ্মের অতিথি অলিভার দুশ্চিন্তামুক্ত ও নির্লিপ্ত মনের এক যুবক—অন্তর্মুখী এলিওর সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির মানুষ। তাদের দু’জনের মধ্যে "ত্বরিতে ঘনিষ্ঠতা" হয়ে যাবে সেই আশায় এলিও অলিভারকে অতিথি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর পর্যটন সহায়কের কাজ করছিলেন। কিন্তু নিজের সম্পর্কে অলিভারের মনে অনুকূল ধারণা সৃষ্টির তাঁর প্রত্যেকটি প্রয়াসের প্রতি অলিভারের উদাসীনতাই ফুটে উঠতে থাকে। এক ভলিবল ম্যাচের পর অলিভার এলিওর হাত ধরলে এলিও ভয় পেয়ে যান। এলিও জানতেন যে তিনি উভকামী এবং অলিভারের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন। অলিভার যে ইহুদি সে কথা জানতে পেরে তিনি বিশেষভাবে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, এই ব্যাপারটি তাঁদের দু’জনের সম্পর্কের একটি সূত্র। তবুও অলিভার তাঁর অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হবেন কিনা তা নিয়ে এলিওর মনে সন্দেহ ছিল।

একদিন চুপি চুপি অলিভারের ঘরে ঢুকে অলিভারের সুইমিং ট্রাঙ্কটি পরে এলিও হস্তমৈথুন করেন। পরে এলিও অলিভারের কাছে তাঁর প্রতি নিজের আকর্ষণবোধের কথা স্বীকার করেন। যে বার্মে বসে ক্লড মনেট তাঁর কয়েকটি চিত্র অঙ্কন করেছিলেন বলে মনে করা হয় সেখানে তাঁরা একে অপরকে চুম্বন করেন। এলিও যখন অলিভারের পরিধেয় বস্ত্রের ভিতর তাঁর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করতে যান, সেই সময় অলিভার তাঁকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেন।

এর পরের দিনগুলিতে অলিভার ও এলিওর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এলিওর সঙ্গে মার্জিয়া নামে এক স্থানীয় সমবয়সী কিশোরীর প্রণয়সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। পুনর্মিত্রতা স্থাপনের আশায় এলিও মধ্যরাতে দেখা করার পরিকল্পনার কথা লিখে একটি চিরকুট অলিভারের শয়নকক্ষের দরজার নিচে রেখে যান। মধ্যরাতে এলিও প্রবেশ করেন অলিভারের ঘরে। তারপর তাঁদের মধ্যে স্থাপিত হয় শারীরিক সম্পর্ক। কিন্তু এই ঘটনাটি নিয়ে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন। সিদ্ধান্ত নেন অলিভারের সঙ্গে সম্পর্কটি তিনি ছিন্ন করবেন।

এই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট বোর্ডিঘেরা, লিগুরিয়া

পরদিন সকালে প্রাতঃরাশের সময় অলিভার এলিওর স্নানের পোষাকটি পরেন—প্রতিফলিত হয় এলিওর আগেকার ফেটিশ-সুলভ আচরণ—এবং পরে তিনি এলিওর সঙ্গে মৌখিক সঙ্গমে লিপ্ত হন। এলিও বুঝতে পারেন, অলিভারের প্রতি তাঁর আকর্ষণবোধ আগের মতোই রয়েছে এবং তাঁরও ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের সম্পর্কটি রক্ষা করার। এলিও মার্জিয়ার বাড়ি যান। সেখানে দু’জনে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন। বিকালে এলিও একটি কাটা পিচ ফল দিয়ে হস্তমৈথুন করে সেটির মধ্যে রেতঃপাত ঘটান। পরে এলিওর ঘরে এসে অলিভার সেই পিচ ফলটি বীর্যসমেত ভক্ষণ করেন। দু’জনে আবার যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে অলিভার তিন দিন রোমে অতিবাহিত করতে চান। সেখানে এলিও তাঁকে সঙ্গ দেন। ফিরে এসে এলিও দেখেন তাঁর জিনিসপত্র সব আগেই তাঁর নিজের শয়নকক্ষে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং অলিভারের সকল স্মৃতি সেখান থেকে মুছে গিয়েছে। দুঃখ পান এলিও। নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলে এলিও। তিনি এলিওকে বলেন যে, তিনি এলিও ও অলিভারের মধ্যে বন্ধুত্বটিকে (ও সম্পর্কটিকেও) অনুমোদন করেন।

সেই বড়দিনে অলিভার আবার পার্লম্যান পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। পরের বছর গ্রীষ্মে তিনি বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অলিভার ও এলিওর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বহু বছর তাঁদের মধ্যে কোনও যোগাযোগ থাকে না।

পনেরো বছর পরে এলিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অলিভারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে অলিভার তখন এক অধ্যাপক। অলিভারের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে এলিওর ছিল না। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তখনও তিনি অলিভারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন এবং অলিভারের নতুন পরিবারের প্রতি তিনি ঈর্ষান্বিত। অলিভারও স্বীকার করেন যে তিনি এলিওর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারটি অনুসরণ করেছেন। সেই সঙ্গে ইতালি ছাড়ার আগে এলিওকে সঙ্গে নিয়ে কেনা একটি পোস্টকার্ডও তিনি এলিওকে দেখান। জিনিসটি এতদিন তিনি সযত্নে রক্ষা করছিলেন। শেষবারের মতো দেখা করার জন্য একটি বারে মিলিত হয়ে এলিও ও অলিভার তন্ময়ভাবে ভাবতে থাকে যে মানুষ দু’টি সমান্তরাল জীবনও যাপন করতে পারে—একটি তাদের বাস্তব জীবন এবং আরেকটি কল্পনার জীবন যেটি থেকে বাইরের শক্তি তাদের বঞ্চিত করে।

প্রথম সাক্ষাতের কুড়ি বছর পরে এবং কথকের বর্ণনা দেওয়ার এক বছর আগে অলিভার ইতালিতে আসেন এলিওর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরা একসঙ্গে কাটানো সময়গুলির কথা স্মরণ করেন। এলিও অলিভারকে বলেন যে তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন এবং এলিও তাঁর চিতাভস্ম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। উপন্যাসের শেষে কথক রূপে এলিও পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অলিভার বলেছেন তাঁর সব কিছু মনে আছে। সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে তাঁর উচিত আর একবার “আমার মুখের দিকে মুখ তুলে চাওয়া, স্থির দৃষ্টিতে আমাকে দেখা এবং তোমার নামে আমাকে ডাকা।”

প্রতিক্রিয়া

সমালোচনা

কল মি বাই ইয়োর নেম উপন্যাসটি সাহিত্য সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে।[১]

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় চলচ্চিত্র-সমালোচক স্ট্যাসি ডি’এরাসমো উপন্যাসটিকে "একটি অসাধারণ সুন্দর বই" বলে বর্ণনা করেন।[২] দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকায় সিনথিয়া জারিন লেখেন, "অ্যাসিম্যানের প্রথম উপন্যাসটিই দেখিয়ে দিল যে তিনি আকাঙ্ক্ষার এক সূক্ষ্ম বৈয়াকরণ।"[৩] দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় চার্লস কাইসার লেখেন, "যদি কখনও আপনি স্বেচ্ছায় উন্মত্ত প্রেমের শিকার হয়ে থাকেন—যে প্রেম আপনার নিজের থেকেও বড়ো এমন এক শক্তি যা আপনাকে ঘনিষ্ঠভাবে টেনে আনে আপনার আকাঙ্ক্ষিতের প্রতি—তাহলে আপনি আন্দ্রে অ্যাসিম্যানের অসাধারণ নতুন উপন্যাস কল মি বাই ইয়োর নেম-এর প্রতিটি সূক্ষ্ম দ্যোতনা অনুধাবন করতে পারবেন।"[৪]

বিক্রয়

নিয়েলসেন বুকস্ক্যানের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২৫২,৬৭৫ পাউন্ডে বইটির মোট ৩৩,৩৭৬টি কপি বিক্রি হয়। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বইটির বিক্রি ৬১৮ কপি থেকে বেড়ে হয়েছিল ১,১৬৪ কপি, যা সাপ্তাহিক বৃদ্ধির হিসাবে ছিল ৮৮%। পরের বছর ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যেই বইটির বিক্রি ২,০১২ কপিতে পৌঁছে যায়।[৫]

পুরস্কার

২০তম লাম্বডা সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানে এই উপন্যাসটি শ্রেষ্ঠ পুরুষ-সমকামী কথাসাহিত্য পুরস্কার জয় করে।[৬]

গণমাধ্যম

চলচ্চিত্রায়ন

২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র মুক্তিলাভ করে। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন লুকা গুয়াডাগনিনো এবং এটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন টিমাথি শালামে (এলিও), আর্মি হ্যামার (অলিভার) ও মাইকেল স্টুলবার্গ (এলিওর বাবা)। ছবিটি সমালোচকদের থেকে উচ্চ প্রশংসা অর্জন করে।[৭] ৯০তম অ্যাকাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (ক্যালামেট), শ্রেষ্ঠ মৌলিক গান (সাফজান স্টিভেনস গীত "মিস্ট্রি অফ লাভ") এবং শ্রেষ্ঠ অভিযোজিত চিত্রনাট্য (জেমস আইভরি) বিভাগে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে এবং শেষোক্ত পুরস্কারটি জয় করে।[৮][৯]

অডিওবুক

২০১৭ সালে ম্যাকমিলান পাবলিশার্স থেকে আর্মি হ্যামার পঠিত একটি অডিওবুক প্রকাশিত হয়।[১০]

ধারাবাহিক

২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর, নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে অ্যাসিম্যান ঘোষণা করেন যে, তিনি কল মি বাই ইয়োর নেম উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বটি লিখছেন।[১১] ২০১৯ সালের ২০ মার্চ, অ্যাসিম্যান ঘোষণা করেন যে, ফাইন্ড মি নামাঙ্কিত দ্বিতীয় পর্বটি সেই বছর ২৯ অক্টোবর ফারার, স্ট্রস অ্যান্ড গিরোক্স থেকে প্রকাশিত হবে।[১২]

আরও দেখুন

  • ফাইন্ড মি (আন্দ্রে অ্যাসিম্যানের উপন্যাস)

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ