কিন্ডারগার্টেন
কিন্ডারগার্টেন শিশুদের প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ। এ শব্দটি জার্মান, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। 'কিন্ডারগার্টেন' শব্দটি বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদেরকে বাড়ী থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং 'শিশুদের বাগান' হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে।
উদ্দেশ্য
শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে উপস্থিত হয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ একে-অপরের সাথে খেলাধুলা করবে এবং অন্যের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে উপযুক্ত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে।
শ্রেণীকক্ষে একজন শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সঙ্গে রাখবেন। অতঃপর উপকরণগুলোর বাস্তবমূখী কলা-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। উপযুক্ত ভাষা ও শব্দ ভাণ্ডার প্রয়োগের মাধ্যমে পড়বেন কিংবা শিক্ষার্থীকে পড়াতে উদ্বুদ্ধ করবেন। গণিত, বিজ্ঞানসহ সঙ্গীত, কলা, সামাজিক আচার-আচরণ শেখানোও তার প্রধান দায়িত্ব।
সাধারণতঃ শিশুরা তাদের অধিকাংশ সময় বাড়ীতেই অতিবাহিত করে। কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশের পর পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের রক্ষণাবেক্ষন, প্রতিপালন, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন। সাহায্য-সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত করে পরিবেশের সাথে শিশুকে খাঁপ খাওয়ানোর মাধ্যমে পিতা-মাতা বা অভিভাবককে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ প্রয়াস চালান কর্তৃপক্ষ।
খেলাধুলা এবং পারস্পরিক ক্রিয়া বা যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সমজাতীয় শিশুদের মিলনক্ষেত্র হিসেবে এটি সুন্দর সুযোগ হতে পারে।
শিক্ষকমণ্ডলী
প্রাক-বিদ্যালয় হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে সাধারণতঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীর বয়সসীমা ৩ থেকে ৫ বছরের হয়ে থাকে। তাদের মনের মাঝে পারিবারিক পরিবেশই সর্বদা বিরাজমান থাকে। অনুকূল পরিবেশই তাদের শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তি। সাধারণতঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকাদের সংখ্যাই বেশি থাকে। বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধায় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর মা, বাবা কিংবা শিক্ষার্থীর সহচরকে খণ্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন চাকুরীর ব্যবস্থাও প্রদান করতে পারে।
উন্নয়ন ক্ষেত্র
অধিকাংশ দেশে বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষা পদ্ধতিতে কিন্ডারগার্টেনকে শিশুর শৈশবকালীন শিক্ষার অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে।[১] বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত মাপকাঠি দেশে-দেশে ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণতঃ বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষাপদ্ধতিতে নিম্নলিখিত বিষয়াদির মাধ্যমে শিশুর মানসিক গঠন ও মেধা বিকাশকল্পে নজর দেয়া হয়।[২][৩]
- ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আবেগিক উন্নয়ন
- ভাষা, কথা বলায় দক্ষতা এবং শোনার মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ
- বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ ও বোঝার ক্ষমতা অর্জন
- সৃষ্টিশীলতা এবং সৌন্দর্য্যবোধে উন্নয়ন
- শিক্ষামূলক সফটওয়্যার
- গাণিতিক সচেতনতা এবং উন্নয়ন
- শারীরিক উন্নয়ন
- স্বাস্থ্য সচেতনতা
- খেলাধুলা
- দলগতভাবে কাজ করা
- আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল ও দক্ষতা অর্জন
- সামাজিক কলাকৌশল রপ্তকরণ
- বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনাবোধ জাগ্রতকরণ
- সৃষ্টিশীল কলাজ্ঞান
- সাহিত্য চর্চা
- প্রাথমিকভাবে বক্তৃতা প্রদানে সক্ষমতা
অতীত ইতিহাস
পরিবারেই সাধারণতঃ শিশুরা বাবা-মায়ের সহযোগিতায় পড়তে ও লিখতে জানে। যে সকল শিশু পড়তে ও লিখতে জানতো তাদেরকে বিদ্যালয় গমনে নিরুৎসাহিত কিংবা বাঁধা-নিষেধ আরোপ করা হতো। পরবর্তীকালে কারখানায় কর্মরত নারীদের সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষ অনেকবার চেষ্টা করেছিলেন শিশু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্যে।
১৮১৬ সালে স্কটল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন নামীয় একজন দার্শনিক ও শিশু শিক্ষাবিদ নিউ ল্যানার্কে 'ইনফ্যান্ট স্কুল' বা শিশু বিদ্যালয় খোলেন।[৪][৫][৬] আরেকটি শিশু বিদ্যালয় স্যামুয়েল ওয়াইল্ডারস্পিন কর্তৃক লন্ডনে ১৮১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৭]
কাউন্টেস থেরেসা ব্রুন্সভিক (১৭৭৫-১৮৬১) উপরের উদাহরণগুলোয় আকৃষ্ট হয়ে বুদাপেস্ট বা বুদা'য় নিজ বাড়ীতে ২৭ মে, ১৮২৮ সালে 'এঙ্গিয়েলকার্ট' বা পরীদের বাগান খোলেন। এ ধারণাটি তৎকালীন হাঙ্গেরীয়ান রাজতন্ত্রের মধ্যবিত্ত সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং অনুসরণ করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।