কোরীয় চারুলিপি

কোরীয় চারুলিপি, যা কোরীয় ভাষায় সএ (কোরীয় ভাষায়: 서예; হাঞ্জা: 書藝) নামে পরিচিত তা হল কোরীয় ঐতিহ্যবাহী শিল্পরূপি হস্তবিদ্যা বা লিপিবিদ্যা। কোরীয় চারুলিপিতে হাঞ্জা যা হল চীনা অক্ষর এবং হাঙ্গুল যা হল কোরীয় অক্ষর তার মিলিত প্রয়োগ দেখা যায়।

কোরীয় চারুলিপি
হাঙ্গুল서예
হাঞ্জা書藝
সংশোধিত রোমানীকরণSeoye
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াSŏye

প্রাচীন কোরীয় চারুলিপি প্রধানত হাঞ্জা-র ওপর নির্ভর করেই লেখা হত। গোরএও এবং জোসন রাজবংশের রাজত্বকালে বিভিন্ন উপাদান যেমন, তুলি, ধৃপ দহনকারী, বর্নিশ,  ব্রানডিং লোহা প্রভৃতির সাহায্য চারুলিপি করা হত।[১] ১৪৪৩ সালে কোরীয় অক্ষর হাঙ্গুল আবিষ্কার হওয়ার পরেও কোরীয় চারুলিপিকার-রা চীনা অক্ষরে চারুলিপি করা বেশি সম্মানজনক বলে মনে করতেন।  হাঞ্জা ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত লিপি লেখার জন্য ব্যবহৃত হত। পরবর্তী কালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া ভাগ যাওয়ার পরে তারা কোরীয় অক্ষরের পৃথক শব্দকরন করে। বর্তমানের দক্ষিণ কোরিয়ার চারুলিপিকাররা "হানগুল" লেখার নতুন নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করছেন, যা কোরীয় চারুলিপি বৃহত্তর প্রভাব বিস্তার করেছে।[২]

ইতিহাস

চীনা চারুলিপির সঙ্গে কোরিয়ার পরিচয় হয় প্রথম অথবা তৃতীয় সাধারণ যুগে (CE) এবং তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সপ্তম শতকে। অষ্টম শতকের, কীম সেং, প্রথম জনপ্রিয় কোরীয় চারুলিপিকার, যার চারুলিপিকে চীনা চারুলিপিকার ওয়াং শিচির (Wang Xizhi)[৩] কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নয়ের শতকে, কবি চোয়ে চিওন (Choe Chiwon) তাঁর জন্ম প্রদেশ শিলা এবং তাং রাজত্বের সময় তাঁর চারুলিপির জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[৪]

তাং মাস্টার, ইউ শিনান (Yu Shinan),  ওউএয়্যাং জূন (Ouyang Xun), এবং ইয়ান চেনছিং (Yan Zhenqing) তাদের কৌনিক আকৃতির চারুলিপির জন্য জনপ্রিয় ছিলেন যতদিন না পর্যন্ত ১৪ দশকে চাও মেংফু(Zhao Mengfu)-এর গোলাকার চারুলিপি  আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[৫] পরের বছরগুলিতে কোরীয় চারুলিপি খুবই আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠে।[৬] কোরীয় চারুলিপিকার কীম জং হুই (Gim Jeong-hui, 김정희, 金正喜, (1786–1856) জোসন রাজত্বের সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় চারুলিপিকার ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পদ্ধতিতে চারুলিপি করতেন,  তাঁর সব থেকে জনপ্রিয় পদ্ধতি ছিল "চুসাছে" (Chusache)। তিনি এই পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জন করেন যেযু দ্বীপে থাকার সময়।[৭] তিনি তাঁর কলম নাম "চুসা" -এর নামেও জনপ্রিয়, যা চীনা লিশু লিপি থেকে এসেছে।

কোরীয় চারুলিপিতে হাঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে, কোরিয়ার জাপানের দ্বারা অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত। কোরীয় চারুলিপিতে হাঙ্গুল জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ আবেগের জন্য। যদিও এখনও "হানজা" এর ব্যবহার কোরীয় চারুলিপিতে সমান ভাবে জনপ্রিয়।

কোরীয় চারুলিপি নিজের নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন অক্ষরের আকৃতির আবিষ্কার করেছে, যা "জং-সং" নামে পরিচিত।

চারুলিপির বিভিন্ন ধরন

কোরীয় হানজা চারুলিপির প্রধানত পাঁচটি ধরন আছে যাকে চীনা চারুলিপির থেকে আলাদা করা যায়।[২] এই কোরীয় চারুলিপির ধরনগুলি হল,

  • জনসো (전서/篆書) মানে শীল করা লিপি। এর আকার সাধারণ মাপ অনুযায়ী হয়। এই চারুলিপি তার সমান পুরু, আকার ও বাঁকানো দাগের জন্য পরিচিত। তাই এই চারুলিপি সাধারণত শীল জাতীয় লিপি জন্য ব্যবহার করা হয়।  
  • ছোসো (초서/草書) মানে টানা লেখা জাতীয় লিপি। এই চারুলিপি তার একক অক্ষরের দাগের জন্য বিখ্যাত। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় দুটি অক্ষর লেখার ধরনের জন্য একই রকমের মনে হয়।
  • হ্যেসো (해서/楷書) মানে ব্লক ধরনের লিপি। এই ধরনের চারুলিপিতে চৌকো বাস্কের মধ্যে অক্ষর লেখা হয়ে থাকে যাতে সব অক্ষর সমান আকারের হয়। প্রধানত চীনা চারুলিপিতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • হ্যেংসো (행서/行書) মানে অর্ধ বাঁকা লিপি। এই চারুলিপির অক্ষর বাস্ক ও টানা লেখার মাঝামাঝি একটি ধরন। এই চারুলিপি খুব তারাতারি ও সহজে লেখা যায় বলে বেশিরভাগ মানুষ এই চারুলিপির ধরন ব্যবহার করেন।  
  • অ্যাসো (예서/隸書) মানে সরকারি লিপি। এই লিপির শীল জাতীয় লিপি থেকে উৎপত্তি হয়েছে।

উপাদানের "চারটি বন্ধু"

কোরীয় চারুলিপিতে "চারটি বন্ধু উপাদান" বলতে চারুলিপির কাগজ, কলম, কালি দাণি ও কালি পাথরের কথা বলা হয়েছে। কোরীয় ভাষায় এদের "মুনবাংসাও" (문방사우, 文房四友) বলা হয়। কোরীয় চারুলিপিতে, ঐতিহ্যবাহী হানজি ব্যবহার করা হয়, যা কোরীয় তুঁত থেকে তৈরি করা হয়ে। এই কাগজ কালি ভাল শোষণ করার জন্য রঙ ভালভাবে ফুটে ওঠে। কলম তৈরি করার জন্য পশুর লোম ব্যবহার করা হয়। কালি দাণি বানানোর জন্য পোড়া গাছ ও আঁঠা ব্যবহার করা হয়। কালি পাথরের জন্য খুব মসৃণ পাথরের যেমন জেড পাথরের ব্যবহার করা হয়। কোরীয় চারুলিপির জন্য এই চারটি উপাদান ছাড়াও ইওনজোক, কালি তৈরির জন্য জল, বুট টোং, কলম দাণি, মুনজিন, কাগজ চাপার জন্য ভারি জিনিস, পিলসে, কলম ধোয়ার জন্য পাত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[৮]

চিত্রশালা

কোরীয় চারুলিপির উদাহরণ-

পণ্ডিত কর্মকর্তা সেওং সাম-মুন এর চারুলিপি (১৪১৮-১৪৫৬)।
হুমিনজংগম হ্যেরে এর প্রতিরূপে কোরীয় মিশ্র লিপির চারুলিপি (১৪৪৬)।
কোরিয়ার জনপ্রিয় চারুলিপিকারদের মধ্যে অন্যতম কিম জং-হুই এর তৈরি চারুলিপি।
হাঙ্গুল অক্ষরে লেখা কোরীয় চারুলিপি।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ