ক্রান্তীয় জলবায়ু

কপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাসের পাঁচটি প্রধান জলবায়ু গোষ্ঠীর মধ্যে একটি ক্রান্তীয় জলবায়ু বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু। ক্রান্তীয় জলবায়ুযুক্ত স্থানগুলোর বৈশিষ্ট্য মাসিক গড় তাপমাত্রা ১৮°সে. (৬৪.৪° ফা.) বা উচ্চতর গরম তাপমাত্রা থাকে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ক্রান্তীয় জলবায়ুতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে সাধারণত দুটি মৌসুম থাকে, একটি ভেজা মৌসুম এবং শুকনো মৌসুম। ক্রান্তীয় জলবায়ুতে বার্ষিক তাপমাত্রার পরিসীমা সাধারণত খুব অল্প থাকে এবং সূর্যের আলো তীব্র হয়।

ক্রান্তীয় জলবায়ুগুলোর তিনটি মূল প্রকার রয়েছে: ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু , ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু এবং ভেজা এবং ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু , যা বার্ষিক বৃষ্টিপাতের এবং সেই অঞ্চলে সবচেয়ে শুষ্কতম মাসের বৃষ্টিপাতের পরিমান দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।[১]

কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস

কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস হলো একটি বহুল ব্যবহৃত জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থা। এটি একটি অঞ্চল হিসাবে ক্রান্তীয় জলবায়ুকে সংজ্ঞায়িত করে যেখানে শীতলতম মাসের গড় তাপমাত্রা ১৮°সে. (৬৪.৪° ফা.) এর চেয়ে বেশি বা সমান হয় এবং এ-গ্রুপ (ক্রান্তীয় জলবায়ু গোষ্ঠী) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।[২] এ-গ্রুপ অঞ্চলগুলো দক্ষিণ ও উত্তর উভয় গোলার্ধে সাধারণত ২৫ অক্ষাংশের নীচে পাওয়া যায়। এর মধ্যে নিরক্ষীয় অঞ্চল, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, মধ্য আফ্রিকা, এশিয়ার দক্ষিণ অংশ এবং অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর দ্বীপের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৩]

গ্রুপ এ-তে তিন ধরনের জলবায়ু রয়েছে: ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু , ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু এবং ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু। তিনটি জলবায়ুর সবগুলোই তাদের Pdry (সবচেয়ে শুষ্কতম মাসের বৃষ্টিপাতের জন্য সংক্ষিপ্ত) দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। ক্রান্তীয় বৃষ্টিপাতের জলবায়ুর Pdry ৬০ মিমি (২.৪ ইঞ্চি) এর চেয়ে বড় বা সমান হওয়া উচিত। ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর Pdry থেকে ৬০ মিমি। ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ুর Pdry এর কম হতে হয়।[২]

ক্রান্তীয় জলবায়ু বায়োম

ক্রান্তীয় জলবায়ুতে সাধারণত দুটি মৌসুম থাকে, একটি ভেজা মৌসুম এবং শুকনো মৌসুম। অঞ্চলের অবস্থানের উপর নির্ভর করে ভেজা এবং শুকনো মৌসুমের সময়কাল ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রীষ্মমণ্ডলীতে বার্ষিক তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলো খুব কম। উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদজীবনের বেশিরভাগ অংশ সারা বছর ধরে বৃদ্ধি পায়। উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ। অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে গাছপালা স্তরগুলোতে বৃদ্ধি পায়। লম্বা গাছের নীচে গুল্ম এবং গুল্মের নীচে ঝোপঝাড় বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছপালা কফি, কোকো এবং তেল খেজুর সহ অন্যান্য সম্পদগুলোতে সমৃদ্ধ।.[৪][৫] নীচে ক্রান্তীয় জলবায়ুর তিনটি জলবায়ুর উদ্ভিদের তালিকা দেওয়া হলো।

প্রাকৃতিক উদ্ভিদ

ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ুঃ বেঙ্গল বাঁশ, বাগানবিলাস, কুরারে, নারকেল গাছ, ডুরিয়ান (কাঁঠাল জাতীয় ফল)।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলঃ সেগুন, দেওদার, চন্দন এবং বাঁশ।

ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ুঃ আকাসিয়া সেনেগাল, জারাহ গাছ, ইউক্যালিপটাস, হুইস্লিং থর্ন

ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু

ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অঞ্চল

কোপেন শ্রেণিবিন্যাসটি ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অঞ্চলকে নিরক্ষ থেকে উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে ৫-১০ ডিগ্রি তে থাকা হিসেবে চিহ্নিত করে।.[৬][৭] ক্রান্তীয় বৃষ্টিপাতের জলবায়ুতে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২১° সে. থেকে ৩০°সে. এর মধ্যে থাকে।[৮][৯] বছরে বৃষ্টিপাত ১০০ ইঞ্চিরও বেশি পৌঁছতে পারে।[৮][৯] ঋতুগুলো সারা বছর ধরে সমানভাবে বিতরণ করা হয় এবং প্রায় কোনও খরার সময় নেই। ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে মূলত দক্ষিণ আমেরিকার উপরের আমাজন অববাহিকা, আফ্রিকার উত্তর জাইর (কঙ্গো) অববাহিকা এবং পূর্ব ইন্ডিজের দ্বীপগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৭]

ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অন্যান্য উষ্ণমন্ডলীয় জলবায়ুর উপ-প্রকারের চেয়ে পৃথক কারণ এতে আরও অনেক ধরনের গাছ রয়েছে। সংশ্লেষের কারণে প্রচুর সংখ্যক গাছ জলবায়ুর আর্দ্রতায় অবদান রাখে। এই প্রক্রিয়ায় জীবন্ত গাছের উপরিভাগ থেকে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে যায়। উষ্ণতা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য আবহাওয়ার উদ্ভিদের বৈচিত্র্যতে এবং বৈশিষ্ট্যগুলোতে অবদান রাখে।[৮] গাছপালা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো গ্রহণের জন্য একটি উল্লম্ব স্তরবিন্যাস বিকাশ করে, যা অন্যান্য ধরনের জলবায়ুর ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক।[৮]

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল

কোপেন শ্রেণিবিন্যাস ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু স্বল্প পরিমাণে বার্ষিক তাপমাত্রা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত থাকা হিসাবে চিহ্নিত করে। এই জলবায়ুতে শীতকালেও একটি সংক্ষিপ্ত শুকনো মৌসুম থাকে।[১০] ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু সাধারণত ১০ ডিগ্রি উত্তরের অক্ষাংশ এবং কর্কটক্রান্তি অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের উপকূল এবং চীনের হাইনান দ্বীপ।ক্রান্তীয় বর্ষা জলবায়ুর অধীনে অঞ্চলগুলোর বার্ষিক তাপমাত্রা স্থিতিশীল।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুতে নিম্নলিখিত মূল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২৭.০৫° সে. এবং বার্ষিক তাপমাত্রা পরিসীমা ৩.৬° সে. হয়।[১১] ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অন্যান্য ক্রান্তীয় জলবায়ুর চেয়ে আলাদা কারণ এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান অসম। গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত ভারী হয় এবং শীতকালে স্বল্প খরার মৌসুম হয়। এই জলবায়ুটির বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত ৩৪০৯.২ মিমি। গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত ৩১১২.৯ মিমি এবং শীতকালীন বৃষ্টিপাত হয় ২৯৩.৩ মিমি।[১১]

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুতে তিনটি প্রধান মৌসুম রয়েছে: শীতল শুকনো মৌসুমটি অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হয়, গরম শুকনো মৌসুমটি মার্চ থেকে মধ্য জুন এবং বর্ষাকাল মধ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে।[১২]

ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলের বন সাধারণত তিন স্তরের কাঠামো নিয়ে গঠিত। প্রথম স্তরটি হলো গুল্মর খুব ঘন স্তর। দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রায় ১৫ মিটার লম্বা গাছের স্তর। উপরের স্তরটিকে ক্যানোপি গাছ বলা হয় যেখানে ২৫ থেকে ৩০ মিটার লম্বা গাছ থাকে এবং সেই গাছগুলি ঘনিষ্ঠভাবে বৃদ্ধি পায়।

ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু

ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু অঞ্চল

এই জলবায়ুর অধীনে অঞ্চলগুলো প্রধানত ১০° থেকে ২০° উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। সাধারণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্য আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, পাশাপাশি উত্তর এবং পূর্ব অস্ট্রেলিয়া।[১৩] সাভানা আবহাওয়ার তাপমাত্রা ২০° সে. থেকে ৩০° সে. এর মধ্যে থাকে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস - ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।[১৪] বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৭০০ থেকে ১০০০ মিমি এর মধ্যে থাকে। শুষ্কতম মাস নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এবং সেখানে ৬০ মিমি থেকে কম বৃষ্টিপাত হয়।

সাভানা জলবায়ুর অধীনে অঞ্চলগুলো সাধারণত সমতল তৃণভূমি গাছপালায় ভরা থাকে। এই তৃণভূমিগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় ২০% অংশ জুড়ে বিস্তৃত।[১৫] তৃণভূমি উদ্ভিদের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে রোডস ঘাস, লাল ওট ঘাস, তারা ঘাস এবং লেমনগ্রাস।

[১৬]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ