চীনা অক্ষর
চীনা অক্ষর বা হানসি (সরলীকৃত চীনা অক্ষর: 汉字; ঐতিহ্যবাহী চীনা অক্ষরসমূহ: 漢字; ফিনিন: Hànzì) এক ধরনের শব্দলিপি-একক (logogram)। এগুলি চীনা ভাষা লিখতে ব্যবহার করা হয়।[১][২][৩] এই অক্ষরগুলি এশিয়ার অন্য কিছু ভাষা লিখতেও ব্যবহৃত হয়। অক্ষরগুলি জাপানি লিখন পদ্ধতির মূল উপাদান; জাপানি ভাষাতে এগুলি কাঞ্জি নামে পরিচিত। অতীতে এগুলিকে কোরীয় ভাষা (যেখানে তারা হাঞ্জা নামে পরিচিত), ভিয়েতনামীয় ভাষা (যেখানে তারা চু নোম নামে পরিচিত) এবং চুয়াং ভাষা (সাওন্দিপ নামক পদ্ধতিতে) লিখতেও ব্যবহার করা হত। সমষ্টিগতভাবে এগুলিকে ইংরেজিতে সিজেকে ক্যারেক্টারস (বাংলায় "চীজাকো অক্ষরসমূহ" অর্থাৎ "চীনা-জাপানি-কোরীয় অক্ষরসমূহ") নামে ডাকা হয়।
চীনা অক্ষরগুলি যে চীনা লিখন পদ্ধতির অংশ, সেটি অবিচ্ছিন্নভাবে প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি ব্যবহৃত বিশ্বের লিখন পদ্ধতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। [৪] পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাতে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বলে এবং ঐতিহাসিকভাবে চৈনিক মণ্ডলের সর্বত্র ব্যবহৃত হত বলে চীনা অক্ষরগুলি ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতির একটি গঠন করেছে।
চীনা অক্ষরগুলির সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষ হলেও এগুলির সিংহভাগই গৌণ চিত্রলৈখিক রূপভেদ যেগুলি কেবল ঐতিহাসিক পাঠ্যবস্তুতেই দেখতে পাওয়া যায়। চীনে সম্পাদিত গবেষণায় দেখা গেছে যে চীনা লিখন পদ্ধতিতে কাজ চালানোর মত সাক্ষরতা অর্জন করার জন্য ৩০০০ থেকে ৪০০০ অক্ষরের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।[৫] জাপানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ২,১৩৬টি কাঞ্জি অক্ষর শেখানো হয়, যাদের নাম "জোইয়ো কাঞ্জি"; এছাড়া জাপানের দৈনন্দিন জীবনে আরও শত শত অক্ষর ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কাঞ্জিগুলির সরলীকরণ করা হয়, তাই বর্তমানে জাপানে ব্যবহৃত চীনা অক্ষরগুলি চীনে ব্যবহৃত অক্ষরগুলির থেকে বেশ কিছু দিক দিয়ে আলাদা।
চীনা অক্ষরগুলির তালিকা, রূপ ও উচ্চারণের উপর ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় আদর্শমান স্থির করা আছে। মূল চীন ভূখণ্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে কিছু অক্ষরের সরলীকৃত রূপ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে তাইওয়ান, হংকং, মাকাও ও দক্ষিণ কোরিয়াতে ঐতিহ্যবাহী অক্ষরগুলি ব্যবহার করা হয়।
চীনা রীতি অনুসারে চীনা লিপির প্রতিটি বর্ণ একটি অক্ষর বা সিলেবল নির্দেশ করে। আধুনিক চীনা ভাষার অধিকাংশ শব্দই একাধিক সিলেবল-বিশিষ্ট, তাই এদের লিখতে দুই বা তার বেশি বর্ণের প্রয়োজন হয়। তবে শব্দের উচ্চারণ ও অর্থের মধ্যে সম্পর্ক খুব ক্ষীণ।