জাপানের অর্থনৈতিক ইতিহাস
জাপানের অর্থনৈতিক ইতিহাস ১৮০০ এর দশকে মেইজি পুনরুত্থান পরবর্তী অনন্য সাধারণ সামাজিক ও আর্থিক প্রবৃদ্ধির জন্য সর্বাধিক পঠিত অর্থনৈতিক ইতিহাস। এই সময়ে জাপান প্রথম ইউরোপীয় ব্যতীত বড় শক্তি হয়ে ওঠে, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর অর্থনীতির বিস্তারের ফলে জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠে, এবং ২০১৩ এর পর থেকে চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠেছে। পণ্ডিতগণ স্নায়ুযুদ্ধ সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত-সংযুক্ত শক্তির দেশগুলোতে রপ্তানিকারী দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থান মূল্যায়ন করেন এবং স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে জাপানি হারানো দশকের অবস্থানের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করেন।
ইউরোপের সাথে প্রথম যোগাযোগ (১৬শ শতাব্দী)
ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা জাপানে পৌঁছায় এবং রেনেসাঁ সময়ের ইউরোপীয়গণ জাপানের প্রশংসা করে। জাপানকে মূল্যবান ধাতু সমৃদ্ধ ধনী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্তে মন্দির ও প্রাসাদের বর্ণনা[১] এবং শিল্পায়ন সময়ে বড় ধরনের গভীর খনি উত্তোলনের পূর্বে আগ্নেয়গিরি পূর্ণ দেশটির ভূত্বকে আকরিকের প্রাপ্যতার কারণে এই ধারণা জন্মে। ষোড়শ শতাব্দীতে জাপান কপার ও রূপার বৃহৎ রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে।
ইউরোপের সাথে বাণিজ্য
প্রথম পর্তুগিজ জাহাজ জাপানে পৌঁছায় সম্পূর্ণ চীনা পণ্য (রেশম, চীনামাটির বাসন) নিয়ে। জাপানিরা এই ধরনের পণ্য গ্রহণ করতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু ওয়াকো জলদস্যুদের আক্রমণের শাস্তিস্বরূপ চীনের সম্রাটের সাথে যে কোন প্রকারের যোগাযোগ নিষিদ্ধ ছিল। পর্তুগিজরা (যাদের "নানবান" বলে ডাকা হত) তারা এশীয় বাণিজ্যে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ গ্রহণ করে।
১৫৫৭ সালে ম্যাকাওয়ে বাণিজ্য ঘাঁটি স্থাপন করার সময় থেকে তারা চীনাদের বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করে এবং জাপানের সাথে বাণিজ্য শুরু করে। তারা জাপানের বার্ষিক সর্বোচ্চ নিলামকারী হিসেবে পণ্য বিক্রি শুরু করে এবং এর ফলে প্রতি বছরে একটি ক্যারাক থেকে বিশেষ বাণিজ্য অধিকার লাভ করতে থাকে। ক্যারাক হল বৃহৎ জাহাজ, যা ১০০০ থেকে ১৫০০ টন হয়ে থাকে এবং বড় গ্যালিয়ন বা জাঙ্কের দিগুণ বা তিনগুণ আকারের হয়ে থাকে। এই বাণিজ্য কিছু বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও ১৬৩৮ সাল পর্যন্ত চলে। এই সময়ে জাহাজে করে জাপানে ধর্মযাজক নিয়ে আসা হচ্ছে এই অপরাধে পর্তুগিজদের সাথে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়।
পর্তুগিজ বাণিজ্য ১৫৯২ সালের দিকে জাঙ্কে চীনা চোরাকারবারি ও জাপানি লাল সিলযুক্ত জাহাজ[২] (প্রতি বছর ১০টি জাহাজ), ১৬০০ সালের দিকে ম্যানিলা থেকে স্পেনীয় জাহাজ (প্রতি বছর একটি জাহাজ), এবং ১৬১৩ সাল থেকে ইংরেজ জাহাজের (প্রতি বছর একটি জাহাজ) কারণে আরও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়।
ইদো যুগ
ইদো যুগের শুরু নানবান বাণিজ্য যুগের শেষ দশকের সাথে কাকতালীয় ভাবে মিলে যায়। এই সময়ে ইউরোপীয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসমূহের সাথে যোগাযোগ গাঢ় হয়, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন সাধিত হয়। ইদো যুগের শুরুতে, জাপান তার প্রথম সমুদ্রগামী পশ্চিমা-ধাঁচের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করে। সান জুয়ান বোতিস্তা নামের ৫০০ টন গ্যালিয়ন ধরনের জাহাজটি হাসেকুরা তসুনেনাগার নেতৃত্বে জাপানি কূটনীতিকদের নিয়ে আমেরিকা অভিমুখে যাত্রা করে, এবং পরবর্তীতে ইউরোপেও যাত্রা করে। এই যুগে বাকুফু আন্তঃএশীয় বাণিজ্যের জন্য ৩৫০ লাল সিলযুক্ত জাহাজ, তিন মাস্তুলযুক্ত ও অস্ত্রধারী বাণিজ্য জাহাজ। জাপানি পর্যটক ইয়ামাদা নাগামাসা পুরো এশিয়া জুড়ে সক্রিয় ছিলেন।
মেইজি যুগ
১৮৫৪ সালের পর যখন তোকুগাওয়া শোগুনাতে পশ্চিমাদের জন্য বাণিজ্য ব্যবস্থা খুলে দেন এবং বাকুমাৎসুর প্রভাবে জাপান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুই যুগ পার করে। তোকুগাওয়া শোগুনাতে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হলে এবং মেইজি সরকার প্রতিষ্ঠার পর জাপানি পশ্চিমাকরণ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী জাপান ছিল এর প্রথমার্ধ এবং যুদ্ধ-উত্তর জাপান ছিল এর দ্বিতীয়ার্ধ।[৩]
শিল্প বিপ্লব প্রথম দেখা যায় বস্ত্রশিল্পে, বিশেষ করে সুতা ও রেশমে, যা মূলত গ্রাম্য এলাকায় গৃহে উৎপাদিত হত। ১৮৯০ এর দশকে জাপানি বস্ত্রশিল্প দেশের বাজার দখল করে এবং চীন ও ভারতের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় সফল হয়। জাপানি জাহাজগুলো ইউরোপীয় বণিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমগ্র এশিয়ায় এবং এমনকি ইউরোপে সেই পণ্যগুলো সরবরাহ করতে থাকে। পশ্চিমে বস্ত্রকলের বেশির ভাগই ছিল নারী এবং তাদের অর্ধেকের বেশি ছিল বিশ বছরের কম বয়সী। তাদের পিতারা তাদের সেখানে পাঠাত, এবং তারা তাদের মজুরি তাদের পিতার কাছে জমা দিত।[৪]
মেইজি যুগ থেকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ব্যাংকের অর্থায়নের প্রতি আস্থা জাপানি অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৫]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
টেমপ্লেট:জাপানের অর্থনীতি