জার্মানির ইতিহাস

জামার্নির ইতিহাসের বিবরণ প্রথম পাওয়া যায় রোমান অধিপতি জুলিয়াস সিজার কর্তৃক অনধিকৃত রাইন নদী পূর্ববর্তী অঞ্চল জের্মানিয়া হিসেবে। সিজার মধ্য ইউরোপের গল (বর্তমান ফ্রান্স) অঞ্চল অধিকৃত করলেও এই অঞ্চলটি দখল করতে পারেননি। ৯ খ্রিষ্টাব্দে তেউতোবুর্গ বনের যুদ্ধে জার্মান গোত্রের বিজয়ের ফলে এই অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যে সংযুক্তি হয়নি; তবে রাইন নদীর পাশে জের্মানিয়া সুপিরিয়র ও জের্মানিয়া ইনফেরিয়র নামে দুটি রোমান প্রদেশ গঠিত হয়েছিল। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফ্রাঙ্করা পশ্চিম জার্মানীয় গোত্রকে পরাজিত করে। ৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঙ্কীয় সামাজ্য শার্লমাইনের উত্তরাধিকারীদের মধ্য বিভক্ত হওয়ার পর পূর্ব খণ্ড পূর্ব ফ্রাঙ্কিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। ৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম অটো মধ্যযুগীয় জার্মান রাজ্য পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে পবিত্র রোমান সম্রাট হন।

প্রাক-ইতিহাস

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে হোমো হাইডেলবার্গেনসিস চোয়ালের হাড় আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জার্মানিতে কমপক্ষে ৬০০,০০০ বছর পূর্বে প্রাচীন মানুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।[১] লোয়ার স্যাক্সনির শ্যোনিঙ্গেনের কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত শিকারের পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিকারের পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আটটি ৩৮০,০০০ বছরের পুরনো ১.৮২ থেকে ২.২৫ মিটার (৫.৯৭ থেকে ৭.৩৮ ফুট) দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট কাঠের বল্লম পাওয়া যায়।[২][৩]

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার ডুসেলডর্ফের নিকটবর্তী নিয়ান্ডার উপত্যকার চুনাপাথরের গ্রটু থেকে বিলুপ্ত মানব প্রজাতির হাড়ের ফসিল উদ্ধার করা হয়। এই ফসিলের ৪০,০০০ বছরের পুরনো বলে ধারণা করা হয় এবং ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হারমান শাফহাউসেন প্রথমবারের মত জীবাশ্ম-নৃবৈজ্ঞানিক প্রজাতির বৈশিষ্ট প্রকাশ করেন।[৪] ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রজাতির নামকরণ করা হয় নিয়ানডার্থাল (Homo neanderthalensis)।

জার্মানিক গোত্র, খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০-৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ

জার্মানিক গোত্রের উৎপত্তির বিবরণ নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। তবে লেখক অ্যাভেরিল ক্যামেরনের ধারণা অনুসারে নর্ডিক ব্রোঞ্জ যুগে বা প্রাক-রোমান লৌহ যুগের শেষভাগে এই গোত্রের আবির্ভাব ঘটে।[৫] দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও উত্তর জার্মানিতে তাদের বাড়ি থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে তারা দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে বিস্তার লাভ করতে থাকে।[৬] এছাড়া একই সময়ে তারা গলের কেল্টীয় গোত্র এবং ইরানি,[৭] বাল্টিক,[৮] ও মধ্য/পূর্ব ইউরোপের স্লাভিক সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসতে শুরু করে।[৯]

মধ্যযুগ

৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঙ্কিস রাজা পেপিনের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শার্লমাইন তার ক্ষমতা আরও দৃঢ় করেন এবং তার রাজ্য সম্প্রসারণ করেন। শার্লমাইন পাভিয়া দখলের মধ্য দিয়ে রয়্যাল লম্বার্ডের ২০০ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটান এবং ৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে নিজেকে লম্বার্ডদের রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন। ৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এক বিপ্লবের পর লয়াল ফ্রাঙ্কিস অভিজাতগণ প্রাক্তন লম্বার্ড অভিজাতদের স্থলাভিষিক্ত হন।[১০] শার্লমাইনের রাজত্বে পরবর্তী ৩০ বছর ফ্রাঙ্কিয়ায় তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়া তিনি পূর্বে স্লাভ ও পানোনিয়ান অ্যাভারদের পরাজিত করেন এবং স্যাক্সন ও বাভারিয়ানসহ সকল গোত্রের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।[১১][১২] ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের বড়দিনে পোপ তৃতীয় লিও শার্লমাইনকে রোমের ইমপেরাতোর রোমানোরুম (রোমানদের সম্রাট) হিসেবে মুকুট পরান।[১২]

প্রারম্ভিক আধুনিক যুগ

১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে ধর্মযাজক মার্টিন লুথার ৯৫টি সন্দর্ভ বিশিষ্ট একটি পাম্ফলেট প্রকাশ করে ভিটেনবার্গ শহরের মোড়ে লাগিয়ে দেন এবং সামন্ততান্ত্রিক জমিদারদের হাতে এর কপি দেন। তিনি তাদেরকে ভিটেনবার্গের গির্জায় নিয়ে আসতে পেরেছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে এই ৯৫টি উক্তির তালিকায় ক্যাথলিক গির্জার অধীনে খ্রিষ্টধর্ম বিশ্বাসের বিকৃত অনুশীলন ও অসদাচরণ বর্ণিত হয়েছে। পরিতোষণ ও কেরানি দপ্তর, পোপ ও উচ্চতর যাজকদের ক্ষমতার অপব্যবহার, গির্জার ধারণার প্রতি তার সংশয় এবং পোপের শাসনের বিরুদ্ধে আরোপ লাগানো লুথারের মুখ্য উদ্দেশ্য না হলেও তিনি এই বিষয়গুলোর জন্য জনগণের সমর্থন লাভ করেন।[১৩]

জার্মান সাম্রাজ্য, ১৮৭১-১৯১৮

চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্ক ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এক দিকে ফ্রান্সকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও অন্য দিকে ইউরোপে জার্মানির প্রভাব দৃঢ় করতে ইউরোপে মিত্র বৃদ্ধি করেন। তার প্রধান রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল সমাজতন্ত্রকে দমিয়ে রাখা ও রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রভাব কমানো। তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, পেনশন পরিকল্পনা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক আইনের পাশাপাশি একাধিক সমাজতন্ত্র-বিরোধী আইন জারি করেন। ক্যাথলিকগণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৈরি করে তার কুলটুরকাম্ফ নীতিকে প্রবলভাবে প্রতিরোধ করেন।

১৮৮৮ সালে তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাইজার দ্বিতীয় ভিলহেল্ম সম্রাট হন। তিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের উপদেশ প্রত্যাখ্যান করেন এবং ১৮৯০ সালে বিসমার্কের পদত্যাগের নির্দেশ দেন। তিনি বিসমার্কের সতর্ক ও সূক্ষ্ম পররাষ্ট্র নীতির বিরোধিতা করেন এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মত উপনিবেশিক নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯০ সালে জার্মান শিল্প ও অর্থনৈতিক পরাক্রম বেড়ে ব্রিটেনের সমতুল্য আকার ধারণ করে।

ভাইমার প্রজাতন্ত্র, ১৯১৯-১৯৩৩

ভার্সাই চুক্তির শান্তির অবমাননা শর্তাবলি জার্মানি জুড়ে তিক্ত অবিচারের বিরুদ্ধে উদ্দীপ্ত করে তুলে এবং নতুন গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল প্রতিপন্ন করে। ১৯১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি (কেপিডি) গঠিত হয় এবং ১৯১৯ সালে তারা নতুন প্রজাতন্ত্রকে পরাজিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আডলফ হিটলার ১৯১৯ সালে নব্য গঠিত ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির (এনএসডিএপি) নিয়ন্ত্রণ ভার গ্রহণ করেন, কিন্তু দলটি ১৯২৩ সালে মিউনিখে একটি অভ্যুত্থানে পরাজিত হয়। দুটি দল এবং প্রজাতন্ত্রকে সমর্থনকারী দলগুলো বিপ্লবী দল গড়ে তুলে যারা রাস্তাঘাটে সহিংস দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ১৯২৯ সালের পর দেশটি মহামন্দার কবলে পড়লে দুটি দলের ইলেক্টোরাল সমর্থন বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অনেক বেকার জনগণ আধা-সামরিক বাহিনীতে কাজ পায়। গ্রামীণ ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রধান নাৎসিরা (সাবেক জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি) ভাইমার শাসন ব্যবস্থাকে হটিয়ে দেয় এবং ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানি শাসন করে।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ