জেলে
জেলে হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি জলের ভিতর থেকে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীকে ধরেন বা শেলফিশ সংগ্রহ করেন।[১] সাধারণভাবে যারা মাছের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা জেলে বা জালিয়া হিসেবে স্বীকৃত।
পেশা | |
---|---|
নাম | জেলে |
পেশার ধরন | কর্মসংস্থান, স্ব-কর্মসংস্থান |
প্রায়োগিক ক্ষেত্র | ব্যবসায়িক |
বিবরণ | |
সম্পর্কিত পেশা | মাছ চাষি |
সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩৯০ লক্ষ বাণিজ্যিক এবং জীবিকা নির্বাহকারী জেলে এবং মাছ চাষি রয়েছে।[২] জেলেরা পেশাদার বা বিনোদনমূলক হতে পারে। মেসোলিথিক যুগ থেকে খাদ্য প্রাপ্তির উপায় হিসেবে মাছ ধরার প্রমাণ পাওয়া যায়।[৩]
ইতিহাস
মেসোলিথিক যুগ থেকেই খাবারের জন্য আদিম লোকেরা মাছ শিকার করত। পরে মাছ ধরা ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি বেঁচে থাকার একটি প্রধান উপায় হয়ে ওঠে।[৪]
মাছ ধরা এবং জেলেরা প্রাচীন মিশরীয় ধর্মকেও প্রভাবিত করেছে। বন্যা আগমন ঋতুর একটি চিহ্ন হিসাবে মুলেট (মাছ)-এর পূজা করা হতো। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের দেবী বাস্টেট বা বাস্টকে প্রায়শই একটি ক্যাটফিশ (মাগুর জাতীয় মাছ)-এর আকারে দেখা যেত। ২৮৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি দেখা যায়। প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যে, প্রাচীন মিশরীয় দেবতা আমুন যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ব তৈরি করছিলেন তাতেও মাছের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাণিজ্য
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা অনুসারে, ২০১২ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৯০ লক্ষ জেলে মিলে ২০০,০০০ টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন করেছিল। ১৯৯৫ সালের তুলনায় ২০১২ সালে দেশগুলিতে জেলেদের সংখ্যা শতকরা প্রায় ১৪০% বেড়েছে। মোট মৎস্য উৎপাদন ৬৬০ লক্ষ টন জনপ্রতি গড়ে ৩.৫ টন উৎপাদনশীলতার সমান।[২]
এই বৃদ্ধির বেশিরভাগই ঘটেছে এশিয়ার দেশগুলিতে, যেখানে বিশ্বের চার-পঞ্চমাংশ জেলে এবং মাছ চাষি বাস করে।[২]
বেশিরভাগ জেলে নারী ও পুরুষ স্থলভাগে মৎস্য চাষে জড়িত। অনেক জেলেরা আবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। কিছু অঞ্চলে মহিলা এবং পুরুষ জেলেরা ছোট নৌকা করে মাছ ধরে অথবা শেলফিশ এবং সামুদ্রিক শৈবাল সংগ্রহ করে। অনেক জেলে পরিবারে, মহিলা বা পুরুষরা জাল তৈরি ও মেরামতের কাজ করে।[২]
মাছ ধরাই জেলেদের প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচিত হত একসময়। কারণ অতীতে উৎপাদিত মাছের বেশিরভাগই প্রাকৃতিকভাবে খাল-বিল, নদী-নালায় বিপুল পরিমাণে পাওয়া যেতো। মাছের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে জেলেদের কাজের পরিধিও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। মাছের প্রজননকাল থেকে শুরু করে মাছ চাষের প্রতিটি ধাপ এরাই পরিচালিত করে থাকে। আর তাই এখন জেলে শব্দের ব্যবহার কমে গিয়ে ‘মাছ চাষী’ বা ‘মৎস্য চাষী’র ব্যবহার-ই বেশি হচ্ছে।
একটা সময় ছিল যখন মাছ শিকারে জেলেদের অতি প্রয়োজনীয় নৌকা তৈরি হত জেলেপাড়ার ভেতরেই। আর তাই জেলেদেরকে দেখা যেত নানা ধরনের নৌকা ব্যবহার করতে। এই নৌকা তৈরির ব্যপারটা নির্ভর করত নিকটবর্তী নদীর আকার, পানি প্রবাহ, বায়ু প্রবাহ, নৌকা ব্যবহারের উদ্দেশ্য, গাছের প্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপর।
যখন নদীতে মাছের প্রাপ্যতা কমে যেত তখন জেলেরা নিজেদেরকে নদীর মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত করতো। আবার বর্ষা মওসুমে প্রাপ্ত অতিরিক্ত মাছ বিশেষভাবে শুকিয়ে ও মটকিতে প্রক্রিয়াজাত করে শুটকি তৈরি করার ঐতিহ্য অনেক দিনের। তবে বর্তমানে শুটকিকে আকর্ষণীয় করতে ও পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তন্মধ্যে ডিডিটি পাউডার ব্যবহারে মানবদেহের বিরাট ক্ষতিসাধিত হয়।
জেলে সম্প্রদায়
কিছু জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরাকে শুধুমাত্র খাদ্য এবং কাজের উৎস বলে মনে করে না। এটি তাদের সম্প্রদায় এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ও প্রদান করে বলে মনে করা হয়।[৫]
যেহেতু নদীর উপরই জেলেদের নির্ভরশীলতা তাই জেলে পাড়াগুলো নদীর পাড় ঘেষেই তৈরি হতে দেখা যায়। আবার নদীর বারবার পাড় ভাঙাগড়ার ব্যাপার থাকায় জেলেপাড়ার ঘর বাড়ীগুলো হত সাধারণত অস্থায়ী কাঠামোর। আর উঠানের উপস্থিতি থাকত না বললেই চলে। সাধারণত নদীর বালিয়াড়িতেই তারা জাল শুকিয়ে নেয়। অধিকাংশ জেলে পরিবারগুলো নিম্নমানের জীবনধারায় অভ্যস্ত।
নিরাপত্তা বিষয়
মাছ ধরার শিল্প জেলেদের জন্য বিপজ্জনক পেশা। ১৯৯২ এবং ১৯৯৯ এর মধ্যে, মার্কিন বাণিজ্যিক মাছ ধরার জাহাজে প্রতি বছর গড়ে ৭৮ জন মারা যায়। মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রধান কারণগুলি হলো:[৬]
- জরুরি অবস্থার জন্য অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি
- জাহাজগুলির দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম
- স্থিতিশীলতার সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব বা উপেক্ষা করা।
অনেক জেলে, মাছ ধরা বিপজ্জনক স্বীকার করেও, দৃঢ়ভাবে তাদের স্বাধীন এই পেশা রক্ষা করে চলেছে। অনেকেই জেলেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য আইন এবং অতিরিক্ত প্রবিধান প্রস্তাবিত করলেও তা সফল হয়নি কারণ জেলেরা তাদের বিরোধিতা করে।[৬]
আলাস্কার বাণিজ্যিক জেলেরা বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পরিবেশে ও পরিস্থিতিতে কাজ করে। সেইসব কঠিন পরিবেশে ও পরিস্থিতিগুলি হলো, বিচ্ছিন্ন মাছ ধরার জায়গা, প্রবল বাতাস, মৌসুমী অন্ধকার, খুব ঠান্ডা জল, বরফে ঢাকা জায়গা এবং ছোট মাছ ধরার মরসুম। তাই অনুকূল পরিস্থিতির সময় তাদেরকে খুব দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়। বেশিরভাগ আলাস্কার জেলেদের জীবিকার দিনগুলিতে ক্লান্তি, শারীরিক এবং আর্থিক চাপের মুখোমুখি হয়। ১৯৯০-২০০৬ সালের মধ্যে আলাস্কায় ঘটে যাওয়া ৯৪৮টি কার্যকালীন সংক্রান্ত মৃত্যুর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ (৩১১টি) জেলেদের মধ্যে ঘটেছে। এটি বছরের আনুমানিক ১০০,০০০ কর্মীর মধ্যে ১২৮কর্মীর বার্ষিক মৃত্যুর হারের সমান। এই মৃত্যুর হার একই সময়ের জন্য বার্ষিক আনুমানিক ৫/১০০,০০০ কর্মী যা সামগ্রিক মার্কিন কার্যকালীন সংক্রান্ত মৃত্যুর হারের ২৬ গুণ।[৭]
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
- Fields, Leslie Leyland (editor) (2002) Out On The Deep Blue: Women, Men, and the Oceans They Fish. St. Martin's Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩১২-২৭৭২৬-০
- Jones, Stephen (2001) Working Thin Waters: Conversations with Captain * Lawrence H. Malloy, Jr. University Press of New England. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৮৪৬৫-১০৩-১
বহিঃসংযোগ
- Moore, Charles W (1998) Did fishermen discover the New World?
- For Those in Peril: Dangers at Sea for fishermen on the East Coast of Scotland historyshelf.org