জোসেফ লিস্টার

জোসেফ লিস্টার, ১ম ব্যারন লিস্টার, ওএম, পিসি, পিআরএস (৫ এপ্রিল ১৮২৭ - ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১২),[১] ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৭ সালের মধ্যে স্যার জোসেফ লিস্টর নামে পরিচিত, বিটি। তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ শল্যচিকিৎসক এবং বীজাণু বারক শল্যচিকিৎসার একজন প্রবর্তক।

দ্য রাইট অনারেবল
জোসেফ লিস্টার
১৯০২ সালে লিস্টারের ছবি
রয়েল সোসাইটির প্রধান
কাজের মেয়াদ
১৮৯৫ – ১৯০০
পূর্বসূরীবেরন কেলভিন
উত্তরসূরীস্যার উইলিয়াম হাগিন্স
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৮২৭-০৪-০৫)৫ এপ্রিল ১৮২৭
আপটন হাউস, পশ্চিম হ্যাম, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১২(1912-02-10) (বয়স ৮৪)
ওয়ালমার, কেন্ট, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
দাম্পত্য সঙ্গীআগন্যাস লিস্টার (নি সাইমি)
স্বাক্ষর
মাতৃশিক্ষায়তনবিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লন্ডন
পরিচিতির কারণসার্জিক্যাল নির্বীজকরণ পদ্ধতি
পুরস্কাররয়্যাল মেডেল (১৮৮০)
আলবার্ট মেডেল (১৮৯৪)
কোপলি মেডেল (১৯০২)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রমেডিসিন
প্রতিষ্ঠানসমূহকিংস কলেজ লন্ডন
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লন্ডন
লিস্টারের রোগবীজনাশক পদার্থযুক্ত বাষ্পীয় জলযন্ত্র, হান্টেরিয়ান জাদুঘর, গ্লাসগো

লিস্টার, গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে কাজ করার সময় জীবাণুমুক্ত অস্ত্রোপচারের ধারণাটি প্রচার করেছিলেন। সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি বিশুদ্ধ করতে এবং ক্ষতগুলি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কার্বলিক অ্যাসিডের (বর্তমানে ফেনল নামে পরিচিত) ব্যবহার, লিস্টার সফলভাবে প্রবর্তন করেন।

অণুজীববিদ্যায় লুই পাস্তুরের অগ্রগতি প্রয়োগ করে, লিস্টার এন্টিসেপটিক হিসাবে কার্বলিক অ্যাসিডের ব্যবহার চূড়ান্ত করেন,এতে শল্যচিকৎসার ক্ষেত্রে কার্বলিক অ্যাসিড প্রথমবারের মতো বহুল ব্যবহৃত এন্টিসেপটিক হয়ে উঠে। তিনি প্রথমেই সন্দেহ করেছিলেন যে এটি পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক হিসাবে প্রমাণিত হবে কারণ এটি নিকাশীর বর্জ্য দ্বারা সেচকৃত ক্ষেত থেকে দুর্গন্ধ লাঘব করতে ব্যবহৃত হতো। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, এটি নিরাপদ কারণ কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহৃত ক্ষেতগুলিতে যে পশুগুলো চরানো হতো তাদের উপর এটি কোনও আপত্তিজনক প্রভাব ফেলেনি।

লিস্টারের কাজ, অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং রোগীদের জন্য অস্ত্রোপচারকে আরও নিরাপদ করে তোলে, এ কারণে, তাকে "আধুনিক অস্ত্রোপচারের জনক" হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। [২]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

লিস্টার তার সতীর্থদের সাথে পুরনো রয়্যাল ইনফামারিতে ,সি ১৮৫৫ (সামনের কাতারে লিস্টার,তার হাত আলিঙ্গন করা অবস্থায়)
১৮৬৭ সালে লিস্টারের শল্যচিকিৎসার ব্যবহারে এন্টিসেপ্টিকের মূলনীতি নামক বই প্রকাশের পর এন্টিসেপ্টিক সার্জিকাল পদ্ধতির সাথে বিশ্বের পরিচিতি

ওয়েস্ট হ্যাম, এসেক্স, ইংল্যান্ডের একটি সমৃদ্ধ কোয়েরার বাড়িতে তার জন্ম, তিনি মদ ব্যবসায়ী জোসেফ জ্যাকসন লিস্টারের ছেলে, যিনি যৌগিক অণুবীক্ষণযন্ত্রের জন্য আক্রোমেটিক অবজেক্ট লেন্সের পথিকৃৎও। [৩]

স্কুলে, লিস্টার ফরাসি এবং জার্মান ভাষার সাবলীল পাঠক হয়ে ওঠেন। তরুণ জোসেফ লিস্টার বেঞ্জিন অ্যাবট-এর আইজাক ব্রাউন একাডেমিতে পড়েন, যেটি ছিল, হার্টফোর্ডশায়ারের হিচিনের একটি কোয়াকার স্কুল ("লর্ড লিস্টার" পাবলিক হাউসে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বে )। [৪] কিশোর বয়সে লিস্টার টটেনহ্যামের গ্রোভ হাউস স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, যেখানে তিনি গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

লিস্টার লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশুনা করেছেন [৫][৬] যা সেই সময়ে কোয়াকারদের গ্রহণ করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। তিনি প্রথমে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন এবং ১৮৪৭ সালে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। [৭] তিনি মেডিকেলের ছাত্র হিসাবে নিবন্ধিত হন এবং ব্যাচেলর অফ মেডিসিন হিসাবে স্নাতক শেষ করেন, পরবর্তীকালে ২৬ বছর বয়সে রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনে প্রবেশ করেন। ১৮৫৪ সালে, লিস্টার স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ রয়্যাল ইনফার্মারির এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জন জেমস সিমের প্রথম সহকারী এবং বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। সেখানে তিনি রয়েল মেডিকেল সোসাইটিতে যোগদান করেছিলেন এবং ১৮৫৫ এবং ১৮৭১ সালে দুটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন, যা আজও সোসাইটির দখলে রয়েছে। [৮]

লিস্টার পরবর্তীকালে কোয়েকারদের ছেড়ে স্কটিশ এপিস্কোপাল চার্চে যোগ দেন এবং শেষ পর্যন্ত সাইমের মেয়ে অ্যাগনেসকে বিয়ে করেন। [৯] তাদের হানিমুনে তারা তিন মাস ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল ইনস্টিটিউট (হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়) পরিদর্শন করে কাটিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, অ্যাগনেস চিকিৎসা গবেষণায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং সারা জীবনের জন্য পরীক্ষাগারে লিস্টারের সহযোগী ছিলেন। [১০]

কর্মজীবন এবং অবদান

রোগীর উপরে ফেনোল স্প্রে করছে লিস্টার
জোসেফ লিস্টার সি. ১৮৫৫
যৌবনকালে জোসেফ লিস্টার

অস্ত্রোপচারের বিষয়ে লিস্টারের গবেষণার আগে, বেশিরভাগ লোক বিশ্বাস করতো যে দূষিত বাতাসের সংস্পর্শের কারণে রাসায়নিক ক্ষয়ই, ক্ষততে সংক্রমণের জন্য দায়ী। মিয়াসমা'র মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসাবে মাঝেমধ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলি বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হত, তবে হাত ধোয়ার সুবিধা বা রোগীর ক্ষত স্থান পরিষ্কার করার সুবিধা ছিল না। রোগীকে দেখার আগে একজন শল্যচিকিৎসকের হাত ধোয়ার প্রয়োজন ছিল না; ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণের ব্যপারে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে, এ জাতীয় অনুশীলন প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হতো না। ইগনাজ সেমেলওয়েস এবং অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস সিনিয়র এর কাজ সত্ত্বেও, হাসপাতালগুলি অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে সার্জারি করাতো। তৎকালীন সার্জনরা "ভাল পুরাতন অস্ত্রোপচারের দুর্গন্ধ" বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতার প্রদর্শন হিসাবে তাদের আধোয়া ব্যবহৃত গাউনগুলিতে দাগ নিয়ে গর্ব করতেন। [১১]

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক থাকাকালীন লিস্টার, ফরাসী রসায়নবিদ লুই পাস্তুরের দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র সম্পর্কে সচেতন হয়েছিলেন, যাতে দেখা গিয়েছিল যে অণুজীবের উপস্থিতি থাকলে অবাত অবস্থায় খাদ্য দূষণ ঘটতে পারে। পাস্তুর দায়বদ্ধ অণুজীবকে নির্মূল করার জন্য তিনটি পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছিলেন: পরিস্রাবণ, উত্তাপের সংস্পর্শ বা দ্রবণ / রাসায়নিক দ্রবণ সংস্পর্শের মাধ্যমে। লিস্টার নিজের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পাস্তুরের সিদ্ধান্তগুলি নিশ্চিত করেছেন এবং ক্ষতগুলির জন্য এন্টিসেপটিক কৌশল বিকাশের জন্য তার অনুসন্ধানগুলি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। [১২] যেহেতু পাস্তুরের প্রস্তাবিত প্রথম দুটি পদ্ধতি মানব টিস্যুর চিকিৎসার জন্য অনুপযোগী, তাই লিস্টার তৃতীয় ধারণাটি নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন।

১৮৩৪ সালে, ফ্রেডলিব ফার্ডিনান্দ রঞ্জ ফেনল আবিষ্কার করেন, এটি কার্বলিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত, যা তিনি খনিজ আলকাতরা থেকে অপরিষ্কার অবস্থায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তখন ক্রোসোটের পদার্থের - এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা রেলপথ এবং জাহাজে ব্যবহৃত কাঠ পচা থেকে রক্ষা করে - এবং কার্বলিক অ্যাসিডের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ছিল। [১২] ক্রোসোট নিকাশীর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতো এটা শুনার পর লিস্টার জখমের উপর সরাসরি প্রয়োগ করে কার্বলিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে শুরু করেন। [১৩]

অতএব, লিস্টার কার্বলিক অ্যাসিডের দ্রবণ দিয়ে স্প্রে করার যন্ত্র, শল্য চিকিৎসা এবং ড্রেসিংয়ের ফলাফল পরীক্ষা করেন। লিস্টার দেখল যে দ্রবণটি দিয়ে ক্ষতগুলিতে মুছার পর পচন ধরার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। [১৪] ১৮৬৫ সালের আগস্টে , গ্লাসগো ইনফার্মারিতে লিস্টার, সাত বছরের এক বালকের ক্ষতস্থানে কার্বলিক অ্যাসিড দ্রবণে ডুবানো লিন্টের টুকরো ব্যবহার করেছিলেন, যার পায়ের উপর দিয়ে একটি মালবাহী গাড়ির চাকা যাওয়ার পর তার পায়ে যৌগিক ফাটল ধরেছিল। চার দিন পরে, তিনি প্যাডটি পুনর্নবীকরণ করলেন এবং আবিষ্কার করলেন যে কোনও সংক্রমণ হয়নি এবং মোট ছয় সপ্তাহ পরে তিনি অবাক হলেন এটা জানতে পেরে যে ছেলেটির হাড়গুলি একসাথে ফিরেছে, কোন পূঁয নির্গত হওয়া ছাড়াই। পরবর্তীতে তিনি ল্যানসেটে ছয়টি নিবন্ধের ধারাবাহিকতায় তার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন, যা ১৮৬৭ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত চলছিল। [৩][১৫][১৬]

তিনি নিজের অধিনে কাজ করা শল্যচিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা পরিষ্কার গ্লাভস পড়েন এবং অপারেশন করার আগে ও পরে ৫% কার্বলিক অ্যাসিড দ্রবণ দিয়ে তাদের হাত পরিষ্কার করে নেন।[১৭] যন্ত্রগুলিও একই দ্রবণে ধুয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং সাহায্যকারীরা অপারেটিং থিয়েটারেও দ্রবণেটি স্প্রে করে দেয়। তার অতিরিক্ত পরামর্শগুলির মধ্যে একটি হ'ল চিকিৎসা সরঞ্জামের হ্যান্ডল উৎপাদন করতে ছিদ্রযুক্ত প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার বন্ধ করা। [১৭]

লিস্টার ১৮৬৯ সালে অধ্যাপক জর্জ হন্ডাব্যান্ড বেয়ার্ড ম্যাকলিয়ডের হাতে তার দায়িত্ব তুলে দিয়ে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসেন। [১৮] এরপরে লিস্টার এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে সিমের উত্তরসূরি হিসাবে এডিনবার্গে ফিরে আসেন এবং বীজবারণ এবং অপচনশীলতা বিষয়ে উন্নততর পদ্ধতির বিকাশ চালিয়ে যান। সেখানে তিনি যে সকলের সাথে কাজ করেছিলেন, তাদের মধ্যে যারা তাকে এবং তার কাজে সহায়তা করেছিলেন তারা হলেন সিনিয়র এপোথেকারি এবং পরবর্তীকালে এমডি, ডাঃ আলেকজান্ডার গুন। ততক্ষণে লিস্টারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং প্রায় ৪০০ এর মতো শ্রোতা প্রায়ই তার বক্তৃতা শুনতে আসতেন। রোগের জীবাণু তত্ত্বটি যেহেতু আরও ভালো বোঝা গেছে, অনুধাবন করা হয়েছিল যে, প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ আরও ভালভাবে এড়ানো যেতে পারে। এর ফলে নির্বীজ শল্যচিকিৎসার উত্থান ঘটে। ২০১২ সালে তার শততম মৃত্যু বার্ষিকীতে, চিকিৎসা ক্ষেত্রের বেশিরভাগ মানুষই লিস্টারকে "আধুনিক শল্যচিকিৎসার জনক" হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। [১৩]

সমালোচনা

যদিও লিস্টার পরবর্তী জীবনে সব দিক থেকে অধিক সম্মানিত হয়েছিলেন, তবে তার প্রাথমিক জীবনে সংক্রমণের প্রবাহ এবং এন্টিসেপটিক্সের ব্যবহার সম্পর্কে তার ধারণাগুলি সমালোচিত হয়েছিল। [৩] ১৮৬৯ সালে, লিডসে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাগুলিতে, লিস্টারের ধারণাগুলিকে উপহাস করা হয়েছিল; এবং আবারও, ১৮৭৩ সালে, চিকিৎসা জার্নাল ল্যান্সেট পুরো চিকিৎসা পেশাকে লিস্টারের প্রগতিশীল ধারণাগুলির বিরুদ্ধে হুশিয়ার করেছিল।[১৯] তবে, লিস্টারের কিছুটা সমর্থক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালের পরামর্শক সার্জন মারকাস বেক, যিনি কেবল লিস্টারের অ্যান্টিসেপটিক কৌশলই অনুশীলন করেননি, বরং সে সময়ের অন্যতম সার্জিকাল পাঠ্যপুস্তকের পরবর্তী সংস্করণে এ কৌশলগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। [২০][২১]

লিস্টারের কার্বোলিক অ্যাসিডের ব্যবহার সমস্যাযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল। স্প্রে শ্বাসকষ্ট এবং চাক্ষুষ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিল এবং ভেজানো ব্যান্ডেজগুলি টিস্যুগুলির ক্ষতি করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল, তাই তার শিক্ষা এবং পদ্ধতিগুলি সেখানে সর্বদা পুরোপুরি গ্রহণ করা হয়নি। [২২] এগুলি জীবাণু তত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি, যা নিজেই সেসময় উন্মেষকালে পার করছে এবং তার ধারণাগুলি গ্রহণকে ধীর করে দিয়েছিল। [২৩] সাধারণ সমালোচনাকে তীব্র করে তুলেছিল, লিস্টারের দুর্বল লেখার ক্ষমতা যা তার পদ্ধতিগুলি জটিল, অসংগঠিত এবং অযৌক্তিক বলে মনে করাচ্ছিল। [২৪]

শল্যচিকিৎসার কৌশল

লিস্টার স্কটল্যান্ড থেকে লন্ডনের কিং কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছিলেন। ১৮৮১ সালে তিনি লন্ডনের ক্লিনিকাল সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। [২৪] তিনি ধাতব তারের সাহায্যে হাঁটুর হাড় মেরামত করার একটি পদ্ধতিও বিকাশ করেছিলেন এবং মাস্টেকটমির কৌশল উন্নত করেছিলেন। তিনি আঁত বন্ধনী, সেলাই, রাবার ড্রেন ব্যবহারকারী এবং মহাধমনীয় পক-তাগা বিকাশকারী প্রথম সার্জন হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। [২৫][২৬] তিনি কার্বলিক অ্যাসিডের মিশ্রিত স্প্রেও তার শল্য চিকিৎসার ব্যবহারে প্রবর্তন করেছিলেন, তবে কার্বলিক অ্যাসিড দ্বারা পরিচালিত সার্জারির ফলাফলে কোনও লাভজনক পরিবর্তন না দেখা দেওয়ায়, তিনি ১৮৯০ এর দশকের শেষের দিকে কার্বলিক অ্যাসিড স্প্রের ব্যবহার ত্যাগ করেছিলেন। কেবল প্রকাশিত প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে ছিল সামান্য লক্ষণ যেমন কাশি, চোখের জ্বালা এবং সার্জারির সময় কার্বলিক অ্যাসিড স্প্রে দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ছোটখাটো টিস্যু ক্ষতি যা পুরোপুরি শল্য চিকিৎসার ফলাফলকে প্রভাবিত করে না। [২৭][২৮]

পরবর্তী জীবন

ইতালিতে লিস্টের স্ত্রীর মৃত্যুর (যে কয়েক দিন ছুটির মধ্যে তারা নিজেদের অনুমতি দিয়েছিলেন এর মধ্যে যেকোন একদিন) আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় লিস্টের স্ত্রী তাকে গবেষণায় সহায়তা করেছিলেন। ১৮৯৩ সালে তিনি অনুশীলন থেকে অবসর নিয়েছিলেন। পড়াশোনা এবং লেখনি তার কাছে আবেদন হারিয়েছিল এবং তিনি ধর্মীয় কাজে ডুবে গেলেন। স্ট্রোকের পরেও তিনি সময়ে সময়ে প্রকাশ্যে এসেছিলেন। ১৯০২ সালের ২৪ আগস্ট, এডওয়ার্ড সপ্তম তার নির্ধারিত রাজ্যাভিষেকের দু'দিন আগে অ্যাপেনডিসাইটিসের সমস্যার মুখোমুখি হন। তখনকার সমস্ত অভ্যন্তরীণ অস্ত্রোপচারের মতো, রাজার প্রয়োজনীয় অ্যাপেন্ডেকটমি তখনও অপারেশন-পরবর্তী সংক্রমণে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকির মুখোমুখি ছিল যার কারণে সার্জনরা ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় সার্জিকাল কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ না করেই অপারেশন করার সাহস করেনি। লিস্টার বাধ্যতামূলকভাবে তার সর্বশেষ অ্যান্টিসেপটিক সার্জিকাল পদ্ধতির (যা তারা আক্ষরে আক্ষরে অনুসরণ করেছিল) পরামর্শ দিয়েছিল এবং এতে রাজা বেঁচে গিয়েছিলেন, পরে লিস্টারকে বলেছিলেন, "আমি জানি যে যদি এটি আপনার এবং আপনার কাজের অবদান না হত তবে আজ আমি এখানে বসে থাকতে পারতাম না। । "[২৯]

মৃত্যু

লিস্টর ১৯৮২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তার দেশের বাড়িতে (বর্তমানে কোস্ট হাউস নামে পরিচিত [৩০][৩১]) ৮৪ বছর বয়সে কেন্টের ওলমারে মৃত্যু বরণ করেন। ওয়েস্টমিনিস্টা অ্যাবেতে শেষকৃত্যের পরে তাকে লন্ডনের ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টেড কবরস্থানে দাফন করা হয় কেন্দ্রীয় প্রার্থনাগৃহ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের মাটিতে ।

উত্তরাধিকার এবং সম্মান

"এ জাতীয় স্বাধীনতা না থাকলে, না শেক্সপিয়র, না গিথে, না নিউটন, না ফ্যারাডে, না পাস্তুর এবং লিস্টারও থাকতেন না।"

---১৯৩৩ সালের ৩ অক্টোবর নাজি জার্মানি, থেকে পালিয়ে আসার পরে লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে লৌকিক স্বাধীনতা বিষয়ে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বক্তব্য। [৩২]

লিস্টার ১৮৯৫ এবং ১৯০০ এর মধ্যে রয়েল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে, একটি স্মারক তহবিল "লিস্টার পদক" প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে, এটি একজন সার্জনকে দেওয়া যেতে পারে এমন সম্মানজনক পুরস্কারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে দেখা হয়।

লিস্টারের আবিষ্কারগুলি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল এবং ১৮৮৩ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাকে মিডলসেক্স কাউন্টির সেন্ট মেরিলেবোন পেরিশের পার্ক ক্রিসেন্টের ব্যারনেট হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। [৩৩] ১৮৯৭ সালে যখন তার মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মর্যাদা তাকে ডরসেট কাউন্টির লাইম রেজিসের ব্যারন লিস্টার হিসাবে সমবয়সীদের কাছে উত্থাপন করেছিলেন তখন তিনি আরও সম্মানিত হন। [৩৪][৩৫] ১৯০২ সালের ২৬ শে জুন (কিং এডওয়ার্ড সপ্তম এর রাজ্যাভিষেকের মূল দিন) সম্মানিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়,[৩৬] লর্ড লিস্টারকে প্রিভি কাউন্সেলর নিযুক্ত করা হয় এবং নতুন অর্ডার অফ মেরিটের (ওএম) সদস্যদের একজন করা হয়েছিল। ১৯০২ সালের ৮ আগস্ট তিনি রাজার কাছ থেকে আদেশ পেয়েছিলেন [৩৭][৩৮] এবং ১৯০২ সালের ১১ আগস্ট বাকিংহাম প্যালেসিওনে কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। [৩৯]

জোসেফ লিস্টারের বাহিনী: এরমিন, একটি ফেসে এসেকুলাপিয়াসের স্টাফের প্রধানের মধ্যে ছয়টি পয়েন্টের আরজেন্টের তিনটি মাল্টিট আবিষ্কার করা হয়েছিল, ব্যারনেটের রেড হ্যান্ড অফ আলস্টারের ক্যান্টনটি খাড়া করে।

বিদেশী সম্মানগুলির মধ্যে, তিনি প্রুসিয়ার সর্বোচ্চ যোগ্যতার অন্যতম সম্মানী পোর লে মেরিট পেয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে তিনি রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের বিদেশ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। লিস্টারকে অ্যান্টিসেপটিক সার্জারিতে অগ্রণী কাজের জন্য সম্মান জানাতে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে দুটি ডাকটিকিট জারি করা হয়েছিল। [৪০]

লিস্টার যুক্তরাজ্যের দু'জন সার্জনদের মধ্যে একজন, যিনি, লন্ডনে প্রকাশ্য স্মৃতিস্তম্ভ থাকার গৌরব অর্জন করেছেন। পোর্টল্যান্ড প্যলেসে লিস্টারের স্ট্যান্ড; অন্য সার্জন হলেন জন হান্টারগ্লাসগোতে কেলভিভ্রভ পার্কে লিস্টিরের একটি মূর্তি রয়েছে, যা এই শহরের সাথে তার যোগসূত্র প্রকাশ করে। লিস্টারের সম্মানার্থে, ১৯০৩ সালে, ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের নামকরণ করা হয় লিস্টার ইনস্টিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিন।[৪১] এখন আরও একটি সংলগ্ন বিল্ডিং সহকারে এই বিল্ডিংটি লিস্টার হাসপাতাল হিসেবে গঠন হয় যা ১৯৮৫ সালে চেলসিতে লিস্টার হাসপাতাল হিসেবে চালু হয়। ২০০০ সালে, এটি এইচসিএ গ্রুপের হাসপাতালগুলির একটি অংশে পরিণত হয়েছিল।

গ্লাসগো রয়্যাল ইনফিরমারিতে একটি বিল্ডিং যেখানে সাইটোপ্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং প্যাথলজি বিভাগগুলি রয়েছে সেখানে হাসপাতালে তার কাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য লিস্টারের সম্মানে এসবের নামকরণ করা হয়েছিল। স্টিভেনজের লিস্টার হাসপাতাল, হার্টফোর্ডশায়ার তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯০১-০৪ এর আবিষ্কারের অভিযানটি অ্যান্টার্কটিকার, রয়্যাল সোসাইটি রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট লিস্টারের নাম প্রাপ্ত হয়। [৪২]

১৮৭৯ সালে, লিস্টারিন অ্যান্টিসেপটিক (একটি সার্জিকাল এন্টিসেপটিক হিসাবে বিকাশিত কিন্তু আজকাল সর্বাধিক মাউথওয়াশ হিসাবে পরিচিত) এর নামকরণ করা হয়েছিল লিস্টারের নাম অনুসারে।[৪৩] তার সম্মানে যে অনুজীবগুলির নামকরণ করা হয়েছিল এর মধ্যে রয়েছে- জে এইচ এইচ পিরি দ্বারা রোগজনক ব্যাকটিরিয়ার জেনাস লিস্টারিয়া, খাদ্যবাহিত জীবাণু লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেন দ্বারা দৃষ্টান্ত প্রদর্শিত হয়েছে এবং সেইসাথে স্লাইম ছাঁচের জিনাস লিস্টারেলা, যা ১৯০৬ সালে প্রথম এডওয়ার্ড অ্যাডল্ফ উইলহেলম জাহান দ্বারা বর্ণিত। [৪৪] ১৯৩৬ সালে, হলিওয়েল হবস-দ্বারা নির্মিত একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী "দ্য স্টোরি অফ লুইস পাস্তুর" এ লিস্টারকে চিত্রিত করা হয়েছে। ফিল্মে, লিস্টারকে অবরুদ্ধ মাইক্রোবায়োলজিস্ট, অন্যভাবে মূলত প্রতিকূল চিকিৎসা সম্প্রদায়ের অন্যতম সর্বাধিক প্রখ্যাত সমর্থক এবং তার সম্মানে অনুষ্ঠানের মূল বক্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

লিস্টারের নামটি লন্ডনের স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ফ্রিইজিতে প্রকাশিত তেইশটি নামের মধ্যে একটি। [৪৫] - যদিও যে কমিটি ফ্রিইজিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নামগুলি বেছে নিয়েছিল তারা নির্দিষ্ট নাম কেন বেছে নেওয়া হয়েছে এবং অন্যগুলো কেন বেছে নেয় নি সে সম্পর্কে কোন দলিল প্রকাশ করেনি। [৪৬]

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

যুক্তরাজ্যের অভিজাত সম্প্রদায়
নতুন সৃষ্টিBaron Lister
1897–1912
Extinct
Baronetage of the United Kingdom
নতুন পদবীBaronet
(of Park Crescent)
1883–1912
Extinct
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ