ট্রেইনেরা
কান্তাব্রিয়ান সাগর ঊপকূলের দক্ষিণ দিকের বে অব বিস্কেতে প্রচলিত এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী নৌকা হল ট্রেইনার। ট্রেইনার প্রসারিত অগ্রভাগ সমেত গোলাকার শক্তপোক্ত এক ধরনের নৌকা, যা কান্তাব্রিয়ান সাগরের ঢেউ মোকাবেলায় সক্ষম। সাধারণত এই নৌকার মাঝিদেরকে ট্রেইনার বলে। তারা সামুদ্রিক এনকোভি ও সারডিন মাছ নিকটস্থ বাজারে বিক্রি করতে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত। সেই স্মরণে বর্তমানে ট্রেইনার একটি আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক খেলাধূলার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যভাষায়
স্প্যানিশ ভাষায় ট্রেইনেরা, ট্রেইনেরু, ট্রেইনর বা ট্রেইনরো বলা হলেও ব্যাস্ক ভাষায় ট্রেনেরো নামে পরিচিত।[১] ফ্রেঞ্চ ভাষায় ট্রেইনিয়ার এবং গ্যালিসিয়ান ভাষায় ট্রেইনিয়েরা বা ট্রেইনা বলা হয়।[২] ট্রেইনা শব্দটি এসেছে "হাতে বোনা জাল" শব্দটি থেকে, যা সামুদ্রিক মাছ ধরতে ব্যবহার করা হত।[৩][৪] আবার ল্যাটিন ভাষার দিক থেকে ধরলে নৌকাটির নাম এসেছে "টেনে ধরা" শব্দটি থেকে।
নৌকা এবং নিয়ম
বর্তমানে তেরো জন সদস্যের একটি দল নৌকা চালায়। আরো জন সদস্য জোড়ায় জোড়ায় বৈঠা চালালেও একজন সদস্য বৈঠা হাতে নেয় না। তেরো নাম্বার সদস্য নৌকার একদম কোনায় উঁচুতে বসে থাকে। তার দায়িত্ব হয় অন্য সদস্যদের উজ্জীবিত রাখা এবং নৌকা বাইতে উৎসাহ দেয়া। প্রতিটা নৌকার নিজস্ব পতাকা থাকে। প্রায়শঃই দলের নিজস্ব রঙে নৌকা রাঙানো হয়।
একটি নৌকা বানাতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়। ট্রেনার নৌকাগুলো ১২ মিটার লম্বা এবং ঠিক মাঝখানে ১.৭২ মিটার প্রশস্ত হয়। ৯৫ সে.মি গলুই, ৭৫ সে.মি লেজ এবং ৬০.৫ সে.মি গভীরতা এই ধরনের নৌকার বৈশিষ্ট্য। আনুসাঙ্গিক সব কিছু মিলিয়ে একটা নৌকার ওজন ২১০ থেকে ২৩০ কে.জির মত হয়ে থাকে। তবে বৈঠা এবং অন্যান্য জিনিসপাতি মিলিয়ে কোনভাবেই ২০০ কে.জি কম হতে পারবে না। বছরের পর বছর ধরে ট্রেইনার বানাতে কাঠের ব্যবহার প্রচলিত আছে। তবে আজকাল কার্বন ফাইবার এবং কেভলারের ট্রেইনার বানাতে অনেকটা বিমান বানানোর প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হয়।[৫] অনেকটা এয়ারবাস ৩৮০ বানানোর প্রযুক্তিতে এইসনব ট্রেইনারে জিপিএস সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসবের ফলে ট্রেইনারের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ভালো ধরনের ক্লাবের নৌকা সাধারনত দুই থেকে তিন বছর টিকে।। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী একটি ট্রেইনারের দাম সাধারণত ২৫,০০০ ইউরো দিয়ে শুরু হয়।
একটি প্রতিযোগিতা সাধারণত সাড়ে পাঁচ কি.মি দৈর্ঘ্যের হয়। হয় একবার নাহয় যাওয়া আসা মিলিয়ে দুই ধরনের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রতিটা নৌকার নিজস্বে লেইন থাকে এবং কোন নৌকা নিজস্বে লেইনের বাইরে যেতে পারবে না। এছাড়াও, এক দলের মাঝির বৈঠা কোনভাবেই অন্য দলের মাঝির বৈঠায় বা অন্যদলের নৌকা স্পর্শ করতে পারবে না। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরুর ২০ সেকেন্ডের মাঝে কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে প্রতিযোগিতা পুনরায় শুরু করার নিয়ম আছে। জয়ী দলকে পুরষ্কারের টাকার পাশাপাশি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত শহরের ব্যান্ডেরা বা পতাকা দেয়া হয়। জয়ো দল তাদের বৈঠা উঁচু করে ধরে বিজয়োৎসব পালন করে থাকে। এঁকে "অরস আপ" বলে অভিহিত করা হয়।
নারী এবং ট্রেইনারস
যদিও বেশিরভাগ নৌকা বাইচের দল পুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত, তবে ঐতিহাসিকভাবে নারী মাঝিদের খোঁজ পাওয়া যায়।