দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য

দক্ষিণ কোরিয়ায় মানুষের গড় আয়ু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০১৬ সালে গড় আয়ুষ্কালের দিক দিয়ে বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ছিল ১৬তম। [১] দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের হারও সর্বনিম্ন (০.১%), যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে সংক্রমণের হার যথাক্রমে ০.৬%, ০.৪% ও ০.৩%। এশিয়াতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনেশনে দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষে, যেখানে প্রতি হাজারে ৩১১ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। [২]

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে 'দ্য ল্যানসেটে' ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষাগত অর্জন, শিক্ষার গুণগত মান ও স্বাস্থ্যগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ২০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানবসম্পদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের নতুন মানদণ্ড প্রকাশিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল সূচকে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে এ তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থান লাভ করে। [৩]

কোরিয়ানদের মধ্যে স্থূলতার হারও সর্বনিম্ন - মোট জনগণের মাত্র ৩% স্থূল, যা ওইসিডির অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। উল্লেখ্য, মার্কিন জনগণের ৩০% এবং ব্রিটিশদের ২৩% স্থূলতা সমস্যায় ভুগছে। [৪] এর ফলে, দক্ষিণ কোরিয়ায় হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হারও ওইসিডির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন।[৫][৬]

ডাক্তার লি জং উক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন মহাপরিচালক, যিনি যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে এবং পোলিও নির্মূলে আত্মনিয়োগ করেছেন

স্বাস্থ্য সমস্যা

ক্যান্সার

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, ক্যান্সার থেকে কোরীয়দের আরোগ্য লাভের হারও সর্বোচ্চ। [৭][৮]

আত্মহত্যা

দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যা বেশ গুরুতর সমস্যা। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার ওইসিডির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ (প্রতি লাখে ২৯.১ জন).[৯] আত্মহত্যার হারের দিক দিয়ে লিথুনিয়া শীর্ষে থাকলেও ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ওইসিডির সদস্য দেশ ছিল না। [১০]

স্থূলতা

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ স্থূলকায় সমস্যায় ভুগছে এবং ৩০ শতাংশের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। তবে ওইসিডির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দশ বছরে কোরিয়ায় স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। [১১]

ধূমপান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের হার ছিল ৪৯.৮ শতাংশ। [১২] ২০১৫ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট ও বারে ধূমপান নিষিদ্ধ করে।[১৩] সরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন এবং স্কুলগুলোকে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। [১৩] ১৯৮৬ সালে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সতর্কতা বার্তা লেখার জন্য সিগারেট প্রস্তুতকারকদের হুকুম দেয়া হয়।[১৩] আর ধূমপানবিরোধী আইন লঙ্ঘন করলে প্রায় ১ লাখ ওন জরিমানার বিধান রয়েছে। [১৪]

মদ্যপান

দক্ষিণ কোরিয়া মদ্যপানে বিশ্বে শীর্ষে

মদ্যপানের দিক দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ছিল ২৮ তম এবং ওইসিডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ছিল ২২তম। [১৫][১৬] ইউরোমনিটরের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মদ্যপানের দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল শীর্ষে।[১৭][১৮][১৯] লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে কোরীয় পুরুষদের মৃত্যুর হার ২০.৬ শতাংশ, যার ৭০.৫ শতাংশের জন্যই মদ্যপান দায়ী।[২০] দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষদের মধ্যে মদ্যপানজনিত স্বাস্থ্যসমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার হার ১০.৬ শতাংশ, যা পশ্চিমা প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের পুরুষদের (৪.৬ শতাংশ) তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।[২০]

সংক্রামক রোগ

২০১৫ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্স রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে বেড়াতে গিয়ে একজন কোরীয় নাগরিক নিজ দেশে মার্স ভাইরাস বয়ে আনেন। সাত মাস পর কোরীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়, মার্স রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। [২১]

বায়ু দূষণ

বিশ্ব জরিপে প্রাপ্ত,দক্ষিণ কোরিয়ার বায়ুর গুণগত মান বেশ খারাপ
   খুব অস্বাস্থ্যকর
   অস্বাস্থ্যকর
   সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর
   মাঝারি মানের
  ভালো

২০১৬ সালের পরিবেশগত মূল্যায়ন সূচক অনুযায়ী,বায়ুমানের দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৩ তম। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্ধেকের বেশি জনগণকে বিপজ্জনক মাত্রার মিহি ধুলার সংস্পর্শে আসতে হয়।[২২]

যক্ষ্মা

ওইসিডির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় যক্ষ্মার হার সর্বনিম্ন। ১৯৯৬ সালে ওইসিডির সদস্যপদ লাভের পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরের মতো যক্ষ্মা পরিসংখ্যানের তিনটি সূচক: যক্ষ্মা হওয়ার হার, যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবের হার ও যক্ষ্মায় মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে ওইসিডির দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। [২৩]

২০১৪ সালে ওইসিডি দেশগুলোর যক্ষ্মা পরিসংখ্যান (প্রতি লাখে) [২৩]
অবস্থানআক্রান্ত হওয়ার হারপ্রাদুর্ভাবের হারমৃত্যুর হার
দেশমানদেশমানদেশমান
 দক্ষিণ কোরিয়া৮৬.০  দক্ষিণ কোরিয়া১০১.০  দক্ষিণ কোরিয়া৩.৮
 পর্তুগাল২৫.০  পর্তুগাল২৯.০  এস্তোনিয়া২.১
 মেক্সিকো
 পোল্যান্ড
২১.০  মেক্সিকো২৭.০  Japan১.৮
গড়১২.০গড়১৪.৮গড়০.৭

দুরারোগ্য রোগ

কোরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়ানদের অসুখবিসুখের মধ্যে দুরারোগ্য রোগব্যাধির পরিমাণ বেশি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগ প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারের দিকে গুরুত্ব দেয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় ২৪ শতাংশ। ২০০৩ সালের শেষে এসে এইচআইভি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের হার ছিল ০.১ শতাংশেরও কম। ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করে। [২৪] দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স্ক লোকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে দুরারোগ্য ও ক্ষয়িষ্ণু রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে চলেছে। ২০১৪ সালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩%, যা ২০৫০ সালে ৩৮%-এ পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আর্থিক প্রণোদনার অভাবে অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রোগ প্রতিরোধে কাজ করার পরিবর্তে শুধু রোগীদের রোগ নিরাময়ে কাজ করছেন। [২৫]

চিকিৎসকদের অসম বণ্টন

শহরে ও গ্রামে চিকিৎসক প্রাপ্যতাতেও রয়েছে বৈষম্য। শহরের তুলনায় গ্রামে প্রাথমিক সেবাদাতা চিকিৎসকদের পরিমাণ প্রায় ৩৭.৩ শতাংশ বেশি। তরুণ চিকিৎসকরা শহরেই প্র্যাকটিস জীবন বেছে নেয়ায় এ বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে।[২৬]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ