দীর্ঘস্থায়ী শক্তি

শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই বলা হয় যদি তা "ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের ক্ষমতা নষ্ট না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে পারে।"[১][২] টেকসই শক্তির অধিকাংশ সংজ্ঞায় পরিবেশগত দিক যেমন গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক যেমন শক্তি স্বল্পতার মতো বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বায়ু, জলবিদ্যুৎ, সৌরভূ-তাপীয় শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসের তুলনায় সাধারণত অনেক বেশি টেকসই। তবে, কিছু নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প, যেমন জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বনভূমি উজাড় করা, মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্পেনে গলিত লবণ তাপ সঞ্চয়কারী কেন্দ্রীভূত সৌরশক্তি (Concentrated solar power): এই ব্যবস্থা দর্পণ ব্যবহার করে সূর্যালোককে কেন্দ্রীভূত করে এবং তাপ তৈরি করে যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। গলিত লবণ তাপ সঞ্চয় করে, যার ফলে বিদ্যুৎ চাহিদা থাকলেও সূর্য না থাকার সময়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বায়ু শক্তি (Wind energy): বায়ু টারবাইন স্থাপন করে বায়ুর গতিশক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী এবং ধারাবাহিক বায়ু প্রবাহ থাকায় এই প্রযুক্তি বিশেষভাবে কার্যকর।
সিঙ্গাপুরে বিদ্যুতায়িত গণপরিবহন (Electrified public transport): বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবস্থাগুলোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা। এতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কম হয় এবং বায়ুর মানের উন্নতি হয়।
ইথিওপিয়ায় পরিষ্কার রান্নার ব্যবস্থা (Clean cooking): স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঐতিহ্যবাহী রান্নার চুলাগুলোর পরিবর্তে কম দূষণকারী জ্বালানী বা উন্নত চুলা ব্যবহারের পদ্ধতির প্রচলন। এর ফলে অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ হ্রাস পায় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
টেকসই শক্তির উদাহরণ: স্পেনে গলিত লবণ তাপ সঞ্চয়কারী কেন্দ্রীভূত সৌরশক্তি (Concentrated solar power), দক্ষিণ আফ্রিকায় বায়ুশক্তি (Wind energy), সিঙ্গাপুরে বিদ্যুতায়িত গণপরিবহন (Electrified public transport), ইথিওপিয়ায় পরিষ্কার রান্নার ব্যবস্থা (Clean cooking)

টেকসই শক্তির ক্ষেত্রে অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের ভূমিকা বিতর্কিত। পারমাণবিক শক্তি একটি নিম্ন-কার্বন উৎস যার ফলে সৃষ্ট ঐতিহাসিক মৃত্যুহার বায়ু ও সৌর শক্তির ফলে সৃষ্টি মৃত্যহারের অনুরূপ। তবে এর টেকসইতার ব্যাপারে বিতর্ক থেকে যায় কারণ এটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার এবং দুর্ঘটনার উদ্বেগ সৃষ্টি করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসে জ্বালানি পরিবর্তন করলে পরিবেশের উপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার মধ্যে জলবায়ুতে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হওয়া অন্যতম। কয়লার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ। তাই কয়লার পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার জলবায়ুগত প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যদিও প্রাকৃতিক গ্যাস কয়লা অপেক্ষা কম ক্ষতিকর, তাও এটি একটি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং এটিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে কয়লার চেয়ে কম খারাপ বিকল্প হিসেবে দেখার ফলে সত্যিকারের স্থায়ী জ্বালানি (নবায়নযোগ্য) উৎস, যেমন সৌর এবং বায়ু শক্তিতে বিনিয়োগ ও এগুলোর ব্যাপক প্রয়োগে অনীহা তৈরি হতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কার্বন ক্যাপচার এন্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি স্থাপন করে তাদের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO
) নির্গমন দূর করা সম্ভব, তবে এটি ব্যয়বহুল এবং খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বের ৮৫% শক্তি খরচের যোগান দেয় এবং এই শক্তি ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৭৬% এর জন্য দায়ী। উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং প্রায় ২.৬ বিলিয়ন রান্নার জন্য কাঠ বা কয়লার মতো দূষণকারী জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হলে শক্তি উৎপাদন, বিতরণ, সঞ্চয় এবং ব্যবহারের পদ্ধতিতে একটি সিস্টেম-ব্যাপী রূপান্তরের প্রয়োজন হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়োমাস পোড়ানো বায়ু দূষণের একটি প্রধান অবদানকারী, যার ফলে প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। তাই, কম-কার্বন শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর হলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর উপকারী প্রভাব থাকবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে আনার সময়, জলবায়ু লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সার্বজনীন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিরাপদ রান্নার সুযোগ দেওয়ার উপায় বিদ্যমান।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যে এমন কিছু উপায় প্রস্তাব করা হয়েছে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। এই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা, বায়ু ও সৌরশক্তির মতো পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, এবং পরিবহন ও ভবনে উত্তাপের মতো ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে পরিবর্তিত হওয়া। কিছু শক্তি-নিবিড় প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া যেগুলোর বৈদ্যুতিকরণ কঠিন, সেগুলোর ক্ষেত্রে বহু উপায়ে কম-নিঃসরণকারী উৎস থেকে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে। অধিক পরিমাণে পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলিকে শক্তি সঞ্চয়ের মতো অবকাঠামোর মাধ্যমে নমনীয় করে তুলতে হবে। নিঃসরণে উল্লেখযোগ্য হ্রাস আনতে, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি, যেমন ভবন এবং পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে পরিবর্তন করা এবং শক্তি সংরক্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শক্তি সম্পর্কিত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি এখনও পরিপূর্ণ হয়নি।

২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮.৫% ছিল বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে। এই অংশটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একইসাথে এর ব্যয় হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) সীমাবদ্ধ রাখতে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল (IPCC) অনুমান করে যে, ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর বিশ্ব মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫% শক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

শক্তি খাতের রূপান্তরকে উৎসাহিত করে এমন সঠিকভাবে পরিকল্পিত সরকারি নীতিসমূহ গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করতে পারে। বহু ক্ষেত্রে, এগুলো শক্তি নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করে। এই নীতিগত পন্থাগুলির মধ্যে রয়েছে কার্বন মূল্য নির্ধারণ, নবায়নযোগ্য শক্তির পোর্টফোলিও মানদণ্ড, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকির পর্যায়ক্রমিক বিলোপ, এবং বিদ্যুতায়ন ও টেকসই পরিবহনকে সমর্থন করার জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন। নতুন পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তির গবেষণা, উন্নয়ন , এবং বিক্ষোভের জন্য অর্থায়ন করাও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সংজ্ঞা ও পটভূমি

"শক্তি হলো সেই সোনালী সংযোগ যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সমতা বৃদ্ধি এবং একটি পরিবেশের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে যা বিশ্বকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। শক্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, এবং টেকসই শক্তি ছাড়া টেকসই উন্নয়নও সম্ভব নয়।"

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন [৩]

সংজ্ঞা

১৯৮৭ সালে প্রকাশিত "আওয়ার কমন ফিউচার" প্রতিবেদনে জাতিসংঘের ব্রান্টল্যান্ড কমিশন টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি বর্ণনা করেছিল, যেখানে শক্তি একটি মূল উপাদান।[১] এটি টেকসই উন্নয়নকে "ভবিষ্যত প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের ক্ষমতা নষ্ট না করে বর্তমানের চাহিদা মেটানো" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। টেকসই উন্নয়নের এই বর্ণনাটি পরবর্তীতে টেকসই শক্তির অনেক সংজ্ঞা এবং ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে।[১][৪][৫][৬]

বিশ্বব্যাপী পরিসরে শক্তির ক্ষেত্রে টেকসইতার ধারণাটি কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তার কোনও সর্বজনীনভাবে গৃহীত ব্যাখ্যা নেই। টেকসই শক্তির কর্মক্ষম সংজ্ঞাগুলি পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মাত্রার মতো টেকসইতার একাধিক মাত্রা অন্তর্ভুক্ত করে।[৭] ঐতিহাসিকভাবে, টেকসই শক্তি উন্নয়নের ধারণা নির্গমন এবং শক্তি নিরাপত্তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে, এই ধারণাটি আরও বিস্তৃত সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত হয়েছে।[৮]

টেকসইতার পরিবেশগত মাত্রার মধ্যে রয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব, বিপজ্জনক বর্জ্য ও বিষাক্ত নির্গমন,[৯] পানির ব্যবহার[১০] এবং অ-নবায়নযোগ্য সংস্থানের অবক্ষয়।[১১] কম পরিবেশগত প্রভাব সহ শক্তির উত্সগুলিকে কখনও কখনও সবুজ শক্তি বা পরিষ্কার শক্তি বলা হয়। টেকসইতার অর্থনৈতিক মাত্রা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শক্তির দক্ষ ব্যবহার এবং শক্তি নিরাপত্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে প্রতিটি দেশের পর্যাপ্ত শক্তির ক্রমাগত সুবিধা রয়েছে।[১২][১৩][১৪] সামাজিক বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে সকলের জন্য সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য শক্তির সুবিধা, শ্রমিক অধিকার এবং ভূমি অধিকার।[১৫][১৬] বিশ্বব্যাপী শক্তির বাজারে জীবাশ্ম জ্বালানির বর্তমান আধিপত্যের কারণে টেকসই শক্তিতে রূপান্তর একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রকল্প এই রূপান্তরকে সহজতর করার চেষ্টা করছে।

পরিবেশগত প্রভাব

ভারতের গ্রামীণ রাজস্থানের একজন মহিলা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছেন। রান্নার জন্য কাঠ ও অন্যান্য দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বায়ু দূষণে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।

বর্তমান শক্তি ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ু দূষণ, জীববৈচিত্র্য বিনাশ, পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন এবং পানির অভাবসহ অনেক পরিবেশগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত, বিশ্বের শক্তির চাহিদার ৮৫% জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।[১৭] ২০১৮ সাল পর্যন্ত, বার্ষিক মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৭৬% এর জন্য শক্তি উৎপাদন এবং ব্যবহার দায়ী।[১৮][১৯] ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বিশ্ব উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর অনেক নীচে এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যে রাখা। এই লক্ষ্য অর্জনে যুগান্তকারী প্রভাব রাখবে, শতাব্দীর মধ্যভাগের আগে নির্গমন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিয়ে নেট-শূন্যতে পৌঁছানোর প্রয়োজন হবে।[২০]

জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বায়োমাস পোড়ানো বায়ু দূষণের একটি প্রধান উৎস,[২১][২২] যার ফলে প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। নিম্ন এবং মধ্যম-আয়ের দেশগুলিতে এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি দেখা যায়।[২৩] বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যানবাহন এবং কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হলো মূলত সেই নির্গমনের উৎস যা বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সাথে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[২৪] বায়ু দূষণ হলো নন-কন্টেজিয়াস (non-infectious) রোগ থেকে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।[২৫] বিশ্বের আনুমানিক ৯৯% মানুষ বায়ু দূষণের এমন স্তর নিয়ে বাস কড়ে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত সীমা অতিক্রম করে।[২৬]

কাঠ, গবাদি পশুর গোবর, কয়লা, বা কেরোসিনের মতো দূষিত জ্বালানি হলো প্রায় সমস্ত গৃহমধ্যস্থ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী, যার ফলে প্রতি বছর আনুমানিক ১৬ থেকে ৩৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে[২৭][২৫] এবং গৃহের বাইরের বায়ু দূষণকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।[২৮] রান্নার প্রাথমিক দায়িত্ব সাধারণত নারীদের উপর থাকে, যাদের স্বাস্থ্যের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে, এবং এই দূষণ কচি শিশুদের জন্যও বিপদজনক।[২৮]

পরিবেশগত প্রভাব দহনের উপ-ফলাফল অতিক্রম করে প্রসারিত। সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়লে সামুদ্রিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে যা বিষাক্ত নির্গমন ছড়ায়।[২৯] বিশ্বব্যাপী পানির ব্যবহারের প্রায় ১০% শক্তি উৎপাদনের দিকে যায়, প্রধানত তাপীয় শক্তি কেন্দ্রে শীতলীকরণের জন্য। শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে এটি পানির দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জৈবশক্তি উৎপাদন, কয়লা খনন এবং প্রক্রিয়াকরণ, এবং তেল উত্তোলনের জন্যও প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়।[৩০] পোড়ানোর জন্য কাঠ ও অন্যান্য দাহ্য বস্তুর অতিরিক্ত সংগ্রহ মরুভূমিকরণ সহ মারাত্মক স্থানীয় পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।[৩১]

২০২১ সালে, UNECE বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তির পরিবেশগত প্রভাবের একটি জীবনচক্র বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে, যেখানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়েছে: সম্পদ ব্যবহার (খনিজ, ধাতু); ভূমি ব্যবহার; সম্পদ ব্যবহার (জীবাশ্ম); পানির ব্যবহার; কণা পদার্থ; ফটোকেমিক্যাল ওজোন গঠন; ওজোন হ্রাস; মানব বিষাক্ততা (নন-ক্যান্সার); আয়নাইজিং রেডিয়েশন; মানব বিষাক্ততা (ক্যান্সার); ইউট্রোফিকেশন (স্থল, সামুদ্রিক, মিঠা পানি); ইকোটক্সিসিটি (মিঠা পানি); অম্লীকরণ; জলবায়ু পরিবর্তন।[৩২]

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা

বিশ্বের যেসব অঞ্চলের মানুষেরা ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তা দেখানো একটি বিশ্ব মানচিত্র—প্রধানত সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা, জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, এবং একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতের শক্তির চাহিদা টেকসই উপায়ে পূরণ করা।[৩৩] নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী শক্তি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।[৩৪] ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রায় ৭৯ কোটি মানুষ বিদ্যুতের সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রায় ২৬০ কোটি মানুষ রান্নার জন্য দূষণকারী জ্বালানির উপর নির্ভরশীল।[৩৫][৩৬]

স্বল্প-উন্নত দেশগুলোতে শক্তির সুবিধা উন্নত করা এবং শক্তিকে আরও পরিষ্কার করা জাতিসংঘের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির অধিকাংশ অর্জনের জন্য মূল চাবিকাঠি,[৩৭] যেগুলো জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে লিঙ্গসাম্য পর্যন্ত নানা বিষয়কে আওতাভুক্ত করে।[৩৮] টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৭ "সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক শক্তির ব্যবস্থা" নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়, যার মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুতের সুবিধা এবং পরিষ্কার রান্নার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত।[৩৯]

শক্তি সংরক্ষণ

বিশ্বব্যাপী শক্তি ব্যবহারে রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। উচ্চ আয়ের দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা, আফ্রিকার কিছু স্বল্প-উন্নত দেশের তুলনায় মাথাপিছু প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তি ব্যবহার করে।[৪০]

একই পরিষেবা বজায় রেখে কম শক্তি ব্যবহার করা বা কম পণ্য ব্যবহার করে তুলনীয় পরিষেবা প্রদান করার ধারণাটি অনেক টেকসই শক্তি কৌশলের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।[৪১][৪২] ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (IEA) অনুমান করেছে যে শক্তির দক্ষতা বাড়ানো প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ৪০% অর্জন করতে পারে।[৪৩]

যন্ত্রপাতি, যানবাহন, শিল্প প্রক্রিয়া এবং ভবনের কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে শক্তি সংরক্ষণ করা যেতে পারে।[৪৪] অন্য আরেকটি উপায় হলো কম সামগ্রী ব্যবহার করা যাদের উৎপাদনে ব্যাপক শক্তি লাগে, উদাহরণস্বরূপ উন্নত ভবন নকশা এবং পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া (রিসাইক্লিং) এর মাধ্যমে এটি সম্ভব। ব্যবসায়িক উড্ডয়নের পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করা, বা গাড়ি দ্বারা নগর ভ্রমণের পরিবর্তে সাইকেল চালানো, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহার করার মতো আচরণগত পরিবর্তন শক্তি সংরক্ষণের আরেকটি উপায়।[৪৫] দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সরকারী নীতির মধ্যে থাকতে পারে বিল্ডিং কোড সংস্কার, কর্মক্ষমতার মানদণ্ড, কার্বন মূল্য নির্ধারণ, এবং পরিবহন পদ্ধতির পরিবর্তনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শক্তি-দক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন।[৪৫][৪৬]

বিশ্ব অর্থনীতির শক্তি তীব্রতা (মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রতি একক শক্তি খরচের পরিমাণ) অর্থনৈতিক উৎপাদনের শক্তি দক্ষতার একটি আনুমানিক সূচক।[৪৭] ২০১০ সালে, বিশ্বব্যাপী শক্তি তীব্রতা ছিল ৫.৬ মেগাজুল (১.৬ kWh) প্রতি মার্কিন ডলার জিডিপির।[৪৭] জাতিসংঘের লক্ষ্য হলো ২০১০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর শক্তি তীব্রতা ২.৬% হ্রাস করা।[৪৮] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ এবং ২০১৮ এর মধ্যে শক্তি তীব্রতা মাত্র ১.১% হ্রাস পেয়েছে।[৪৮] দক্ষতা বৃদ্ধিপ্রাপ্তি প্রায়শই একটি রিবাউন্ড প্রভাব তৈরি করে যেখানে ভোক্তারা বাঁচানো টাকা আরও বেশি শক্তি-নির্ভর পণ্য ও পরিষেবা কিনতে ব্যবহার করেন।[৪৯] উদাহরণস্বরূপ, পরিবহন ও ভবনে সাম্প্রতিক কারিগরি দক্ষতার উন্নতিগুলি ভোক্তা আচরণের প্রবণতা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, যেমন বড় যানবাহন এবং বাড়ি বাছাই করা।[৫০]

টেকসই শক্তির উৎস

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস

২০২৩ সালে, ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ু ও সৌর উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০% ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।[৫১]
নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার মধ্যে সৌর ফটোভোলটাইক শক্তি অন্যতম।[৫২]
মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, উচ্চ জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্যের সাথে জড়িত একটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট এবং বিভিন্ন দেশে ক্রমবর্ধমান নীতিগত সমর্থন থেকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিনিয়োগ উপকৃত হয়েছে।[৫৩]

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো টেকসই শক্তির জন্য অপরিহার্য, কারণ এগুলো সাধারণত শক্তির নিরাপত্তা জোরদার করে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে।[৫৪] নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলি কখনও কখনও উল্লেখযোগ্য টেকসই উদ্বেগের জন্ম দেয়, যেমন জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি যখন উচ্চ বাস্তুসংস্থানগত মূল্যের এলাকাগুলোকে জৈবশক্তি উৎপাদন বা বায়ু বা সৌর ফার্মে রূপান্তরিত করা হয়।[৫৫][৫৬]

জলবিদ্যুৎ হল নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের বৃহত্তম উৎস যখন সৌর ও বায়ুশক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফটোভোল্টাইক সৌর এবং স্থলভাগের বায়ুশক্তি বেশিরভাগ দেশে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়।[৫৭][৫৮] বর্তমানে বিদ্যুতের প্রবেশাধিকার নেই এমন ৭৭ কোটি মানুষের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য, সৌরচালিত মিনি-গ্রিডের মতো বিকেন্দ্রীভূত নবায়নযোগ্য শক্তি সম্ভবত ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রদানের সবচেয়ে সাশ্রয়ী পদ্ধতি।[৫৯] জাতিসংঘের ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের শক্তি সরবরাহে নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা।[৬০] আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা অনুসারে, বায়ু ও সৌর শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো বিদ্যুতের একটি সাধারণ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদনে করা সমস্ত নতুন বিনিয়োগের ৭০%।[৬১][৬২][৬৩][৬৪] সংস্থাটি আশা করছে নবায়নযোগ্য শক্তিগুলি কয়লাকে ছাড়িয়ে, আগামী তিন বছরে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক শক্তি উৎস হবে।[৬৫]

সৌরশক্তি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত একটি ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সূর্য হলো পৃথিবীর প্রাথমিক শক্তির উৎস, অনেক অঞ্চলে একটি পরিচ্ছন্ন এবং প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এমন সম্পদ।[৬৬] ২০১৯ সালে, সারা বিশ্বের বিদ্যুতের প্রায় ৩% সরবরাহ করেছে সৌরশক্তি,[৬৭] মূলত ফটোভোলটাইক কোষ (PV) ভিত্তিক সোলার প্যানেলের মাধ্যমে। আশা করা হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে সৌর PV বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যুক্ত উৎস হবে।[৬৮] এই প্যানেলগুলো ভবনের ছাদে বা ইউটিলিটি স্কেল সোলার পার্কে স্থাপন করা হয়।[৬৯] সৌর ফটোভোলটাইক কোষের ব্যয় যথেষ্ট কমেছে, যা বিশ্বব্যাপী এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি চালিত করেছে। নতুন সোলার ফার্ম থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের খরচ প্রতিযোগিতামূলক, বা অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও কম।[৭০] ভবিষ্যতের শক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন পূর্বাভাস সৌর PV কে একটি টেকসই শক্তি মিশ্রণে প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে।[৭১][৭২]

সোলার প্যানেলের বেশিরভাগ উপাদান সহজেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু নিয়মনীতির অভাবে এটি সবসময় করা হয় না।[৭৩] প্যানেলগুলিতে সাধারণত ভারী ধাতু থাকে, তাই সেগুলি ল্যান্ডফিলগুলিতে রাখলে পরিবেশগত ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[৭৪] একটি সোলার প্যানেলকে তার উৎপাদনে ব্যবহৃত শক্তির সমান শক্তি উৎপাদন করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগে। খনন করার পরিবর্তে যদি উপাদানগুলি পুনর্ব্যবহার করা হয় তবে কম শক্তির প্রয়োজন হয়।[৭৫]

গাঢ় সৌর শক্তিতে (Concentrated solar power), সৌরশক্তির রশ্মিগুলোকে বিভিন্ন আয়নার মাধ্যমে কেন্দ্রীভূত করে তরল পদার্থকে উত্তপ্ত করা হয়। ফলস্বরূপ বাষ্প থেকে একটি তাপ ইঞ্জিন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। গাঢ় সৌর শক্তি বিপণনযোগ্য (dispatchable) বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে পারে কারণ কিছু তাপ সাধারণত প্রয়োজনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।[৭৬][৭৭] বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি, সৌর শক্তি আরও সরাসরি ব্যবহৃত হয়; যেমন গরম পানি উৎপাদন, ভবন উত্তপ্তকরণ, শস্য শুকানো এবং লবণমুক্তকরণের জন্য সৌর তাপীয় উত্তাপন ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।[৭৮]

বায়ু শক্তি

চীনের শিনচিয়াং প্রদেশে বায়ু শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থাপিত বায়ু টারবাইন।

হাজার হাজার বছর ধরে উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক হিসেবে কাজ করছে বায়ু শক্তি – শিল্প প্রক্রিয়া, পাম্প, এবং পালতোলা জাহাজের জন্য যান্ত্রিক শক্তি সরবরাহ করে আসছে।[৭৯] আধুনিক বায়ু টারবাইনগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের প্রায় ৬% সরবরাহ করেছে।[৮০] স্থলভাগে অবস্থিত বায়ু ফার্ম থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ প্রায়শই বিদ্যমান কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির তুলনায় সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পারমাণবিক শক্তির সাথে প্রতিযোগিতামূলক।[৮১] বায়ু টারবাইনগুলিকে উপকূলের বাইরের সমুদ্রেও স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে স্থলভাগের তুলনায় বাতাস বেশি স্থির এবং শক্তিশালী, তবে সেক্ষেত্রে নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি পড়ে।[৮২]

প্রায়ই বন্য বা গ্রামীণ এলাকায় নির্মিত, স্থলভাগে অবস্থিত বায়ু ফার্মগুলির ভূ-দৃশ্যের উপর একটি চাক্ষুষ প্রভাব রয়েছে।[৮৩] যদিও বায়ু টারবাইনের সাথে সংঘর্ষে বাদুড় এবং কিছুটা কম পরিমাণে পাখি মারা যায়, এই প্রভাব জানালা এবং ট্রান্সমিশন লাইনের মতো অন্যান্য অবকাঠামোর তুলনায় কম।[৮৪][৮৫] বাতাসের শক্তি, পারমাণবিক এবং জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিপরীতে, পানি খরচ করে না।[৮৬] বায়ু টারবাইন নির্মাণের জন্য খুবই কম শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই তুলনায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিজেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শক্তি উৎপাদন করতে পারে।[৮৭] টারবাইনের পাখাগুলি পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পাখা তৈরির পদ্ধতির উপর গবেষণা চলছে।[৮৮]

জলবিদ্যুৎ

ভেনিজুয়েলার একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ, গুরি বাঁধ।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলমান পানির শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। ২০২০ সালে, বিশ্বের বিদ্যুতের ১৭% জলবিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, যা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকের প্রায় ২০% উৎপাদনের শীর্ষস্থান থেকে কমে এসেছে।[৮৯][৯০]

প্রচলিত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে, একটি বাঁধের পিছনে একটি জলাধার তৈরি করা হয়। প্রচলিত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি একটি অত্যন্ত নমনীয়, বিপণনযোগ্য (dispatchable) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। চাহিদার শীর্ষ মেটাতে এবং বায়ু ও সূর্য কম উপলব্ধ থাকলে ক্ষতিপূরণ দিতে সেগুলিকে বায়ু এবং সৌর শক্তির সাথে যুক্ত করা যেতে পারে।[৯১]

জলাধার-ভিত্তিক সুবিধাগুলির তুলনায়, স্বাভাবিক প্রবহমান নদীর জলবিদ্যুৎ (run-of-the-river hydroelectricity) সাধারণত পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে। যাইহোক, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা নদীর প্রবাহের উপর নির্ভর করে, যা দৈনিক এবং মৌসুমি আবহাওয়ার সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। জলাধার পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে যা বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নমনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেইসাথে পানীয় জল সরবরাহ এবং সেচের জন্য খরার সময় নিরাপত্তাও প্রদান করে।[৯২]

জলবিদ্যুৎ প্রতি ইউনিটে সর্বনিম্ন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের শক্তি উৎসগুলির মধ্যে স্থান পায়, তবে নির্গমনের মাত্রা প্রকল্পগুলির মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।[৯৩] ক্রান্তীয় অঞ্চলে বড় বাঁধগুলির সাথে সর্বোচ্চ নির্গমন ঘটে।[৯৪] জলাধারের বন্যাগ্রস্ত এলাকায় জৈবিক পদার্থ পচে গিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন নির্গমন হলে এই নির্গমন ঘটে। বন-উজাড় এবং জলবায়ু পরিবর্তন জলবিদ্যুৎ বাঁধ থেকে শক্তি উৎপাদন কমাতে পারে।[৯৫] অবস্থানের উপর নির্ভর করে, বড় বাঁধগুলি আবাসিকদের স্থানচ্যুত করতে পারে এবং উল্লেখযোগ্য স্থানীয় পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে; সম্ভাব্য বাঁধ ভাঙ্গনের ঘটনা আশেপাশের জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।[৯৬]

ভূ-তাপীয় শক্তি

ইতালির লার্ডারেলোতে একটি ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠান্ডা বুরুজ।

গভীর ভূগর্ভস্থ তাপের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ভূ-তাপীয় শক্তি উৎপাদিত হয়[৯৭] এবং এই শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অথবা পানি এবং ভবন উত্তপ্ত করতে ব্যবহার করা হয়। যেসব অঞ্চলে তাপ নিষ্কাশন লাভজনক সেখানে ভূ-তাপ শক্তির ব্যবহার কেন্দ্রীভূত । উচ্চ তাপমাত্রা, তাপ প্রবাহ, এবং সান্দ্রতার (শিলা দিয়ে তরল বস্তু যাওয়ার ক্ষমতা) সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।[৯৮] ভূগর্ভস্থ জলাধারে সৃষ্ট বাষ্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।[৯৯] ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী শক্তি খরচের ১% এরও কম ভূ-তাপীয় শক্তি সরবরাহ করেছে।[১০০]

ভূ-তাপীয় শক্তি একটি নবায়নযোগ্য সম্পদ কারণ তাপীয় শক্তি প্রতিবেশী উত্তপ্ত অঞ্চল এবং প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত আইসোটোপের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় থেকে ক্রমাগতভাবে পুনঃপূরণ হয়।[১০১] কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুতের তুলনায় গড়ে ভূ-তাপ ভিত্তিক বিদ্যুতের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৫% এরও কম।[১০২] ভূতাপীয় শক্তি থেকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ে, পানি দূষণ এড়াতে কার্যকর সুরক্ষা প্রয়োজন, এবং বিষাক্ত নির্গমন মুক্ত করে, যা ধারণ করা যেতে পারে।[১০৩]

জৈবশক্তি

জৈব পদার্থ থেকে উৎপাদিত বায়োগ্যাস একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, যা রান্না বা আলো জ্বালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনিয়ার একজন দুগ্ধ খামারী বায়োগ্যাসের ল্যাম্প জ্বালাচ্ছেন।
ইথানল উৎপাদনের জন্য ব্রাজিলে একটি আখের বাগান।

জৈবশক্তি বা বায়োমাস হলো নবায়নযোগ্য জৈব পদার্থ যা উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে পাওয়া যায়।[১০৪] এটিকে হয় তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পোড়ানো যেতে পারে, নয়তো এটিকে জৈব জ্বালানীতে (যেমন বায়োডিজেল এবং ইথানল) রূপান্তরিত করা যেতে পারে, যা যানবাহন চালাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১০৫][১০৬]

জৈবশক্তির জলবায়ু প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, এবং এই প্রভাব নির্ভর করে বায়োমাস ফিডস্টকের (feedstock) উৎস এবং সেগুলি কীভাবে চাষ করা হয় তার উপর।[১০৭] উদাহরণস্বরূপ, শক্তির জন্য কাঠ পোড়ানো কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে। একটি সু-পরিচালিত বনে কাটা গাছগুলিকে নতুন গাছ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলে, নতুন গাছগুলি বেড়ে ওঠার সাথে সাথে এয়ার থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করবে, ফলে বেশিরভাগ নির্গমন কমে আসবে।[১০৮] যাইহোক, জৈবশক্তির ফসল প্রতিষ্ঠা এবং চাষ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রকে স্থানচ্যুত করতে পারে, মাটির গুণমান কমিয়ে দিতে পারে এবং পানির ভাণ্ডার এবং সিনথেটিক সার ব্যবহার করতে পারে।[১০৯][১১০] গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী গরম এবং রান্নার জন্য ব্যবহৃত সমস্ত কাঠের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংগ্রহ করা হয়।[১১১] জৈবশক্তি ফিডস্টক সংগ্রহ, শুকানো এবং পরিবহনের জন্য সাধারণত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়; এই প্রক্রিয়াগুলির জন্য শক্তি ব্যবহার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণের প্রভাবগুলি জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের তুলনায় জৈব-শক্তির সামগ্রিক কার্বন নির্গমনের কারণ।[১১০][১১২]

খাদ্য উৎপাদনের জন্য দখলকৃত জমি বায়োমাস চাষের জন্য ব্যবহারের ফলে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কম জমি উপলব্ধ থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায় ১০% মোটোর গ্যাসোলিনকে কর্ন-ভিত্তিক ইথানল দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে, যার জন্য ফসলের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত প্রয়োজন।[১১৩][১১৪] মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায়, বায়োডিজেলের জন্য পাম অয়েল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বনভূমি উজাড়ের ফলে গুরুতর সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব পড়েছে, কারণ এই বনগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন নিমজ্জন কেন্দ্র (carbon sink) এবং বৈচিত্র্যময় প্রজাতির আবাসস্থল।[১১৫][১১৬] যেহেতু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সূর্যালোকের শক্তির একটি ক্ষুদ্র অংশ গ্রহণ করে, তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ জৈব-শক্তি উৎপাদনের জন্য অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের তুলনায় প্রচুর পরিমাণ জমির প্রয়োজন হয়।[১১৭]

দ্বিতীয়-প্রজন্মের জৈব জ্বালানী, যা অ-খাদ্য উদ্ভিদ বা বর্জ্য থেকে উৎপাদিত হয়, খাদ্য উৎপাদনের সাথে প্রতিযোগিতা কমায়। কিন্তু এগুলি সংরক্ষণ এলাকার সাথে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং স্থানীয় বায়ু দূষণসহ অন্যান্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।[১১৮] অপেক্ষাকৃত টেকসই বায়োমাসের উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে শৈবাল, বর্জ্য এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য অনুপযুক্ত মাটিতে জন্মানো ফসল।[১১৯]

জৈবশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গমন ধারণ করতে কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি বায়োএনার্জি উইথ কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (BECCS) নামে পরিচিত এবং এর ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে নেট কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ হতে পারে। যাইহোক, বায়োমাস উপাদান কীভাবে জন্মানো, সংগ্রহ করা এবং পরিবহন করা হয় তার উপর নির্ভর করে BECCS-ও নেট পজিটিভ নির্গমনের কারণ হতে পারে। কিছু জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি কমানোর পথে বর্ণিত মাত্রায় BECCS বাস্তবায়নের জন্য বড় পরিমাণে কৃষিজমি রূপান্তর করার প্রয়োজন হবে।[১২০]

সামুদ্রিক শক্তি

সামুদ্রিক শক্তি বাজারে শক্তির সবচেয়ে ছোট অংশ দখল করে আছে। এটিতে OTEC,[১২১] জোয়ারের শক্তি (যা পরিণতিতে পৌঁছাচ্ছে) এবং তরঙ্গের শক্তি (যা এখনও উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে) অন্তর্ভুক্ত। ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় দুটি জোয়ারের বাঁধ ব্যবস্থা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৯০% সরবরাহ করে। যদিও একক সামুদ্রিক শক্তি ডিভাইস পরিবেশের জন্য খুব কম ঝুঁকি তৈরি করে, বৃহত্তর ডিভাইসগুলির প্রভাব তেমন ভালভাবে জানা যায় না।[১২২]

অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস

জীবাশ্ম জ্বালানীতে পরিবর্তন এবং এর প্রভাব প্রশমন

কয়লা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসে স্থানান্তরের টেকসইতার ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে। উৎপাদিত শক্তির প্রতিটি ইউনিটের জন্য, প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইফ-সাইকেল গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন বায়ু বা পারমাণবিক শক্তির নির্গমনের চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি, তবে কয়লার চেয়ে অনেক কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হলে প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো কয়লার নির্গমনের প্রায় অর্ধেক এবং তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হলে কয়লার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নির্গমন করে।[১২৩] প্রাকৃতিক গ্যাস দহনে কয়লা থেকে কম বায়ু দূষণও হয়।[১২৪] যাইহোক, প্রাকৃতিক গ্যাস নিজেই একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, এবং নিষ্কাশন এবং পরিবহনের সময় লিক কয়লা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সুবিধাগুলিকে নাকচ করে দিতে পারে।[১২৫] মিথেন লিক রোধ করার প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে উপলব্ধ কিন্তু এটি সবসময় ব্যবহার করা হয় না।[১২৬]

কয়লা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসে স্থানান্তর করা স্বল্পমেয়াদে নির্গমন হ্রাস করে এবং এইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে অবদান রাখে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এটি নেট-শূন্য নির্গমনের পথ তৈরি করে না। প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামো উন্নয়ন কার্বন লক-ইন এবং স্ট্র্যান্ডেড অ্যাসেটস (অপ্রয়োজনীয় মূলধন) এর ঝুঁকি তৈরি করে, যেখানে নতুন জীবাশ্ম অবকাঠামো হয় দশকের পর দশক ধরে কার্বন নির্গমনের সাথে জড়িত হয়, অথবা লাভের আগেই তা বাতিল করতে হয়।[১২৭][১২৮]

কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (CCS) এর মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বায়োমাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। বেশিরভাগ গবেষণায় একটি কার্যকরী অনুমান ব্যবহার করা হয় যে CCS একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৮৫-৯০% কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নির্গমন ক্যাপচার বা ধরে রাখতে পারে।[১২৯][১৩০] কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ৯০% CO2 ক্যাপচার বা ধরে রাখা হলেও, এর অ-ক্যাপচারকৃত নির্গমন এখনও উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে পারমাণবিক, সৌর বা বায়ু শক্তির নির্গমনের চেয়ে অনেক বেশি হবে।[১৩১][১৩২] যেহেতু CCS ব্যবহারকারী কয়লা প্ল্যান্টগুলি কম দক্ষ হবে, তাদের আরও বেশি কয়লা প্রয়োজন হবে এবং এইভাবে কয়লা খনन এবং পরিবহনের সাথে সম্পর্কিত দূষণ বৃদ্ধি পাবে।[১৩৩] CCS প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল, নির্গমনের জন্য উপযুক্ত ভূতত্ত্বের অবস্থানের নিকটবর্তিতা এর গুরুত্বপূর্ণভাবে ব্যয়কে প্রভাবিত করে।[১৩৪][১৩৫] এই প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও খুব সীমিত, ২০২০ সালের হিসাবে বিশ্বব্যাপী মাত্র ২১টি বড় আকারের CCS প্ল্যান্ট চালু রয়েছে।[১৩৬]

পারমাণবিক শক্তি

১৯৮৫ সাল থেকে, নিম্ন-কার্বন উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অনুপাত সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন বৃদ্ধির অগ্রগতি পারমাণবিক শক্তির হ্রাসমান অবদানের দ্বারা অধিকাংশই ম্লান হয়ে গেছে।[১৩৭]

১৯৫০-এর দশক থেকে পারমাণবিক শক্তিকে নিম্ন-কার্বন বিদ্যুৎ উৎস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।[১৩৮] ৩০টিরও বেশি দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের প্রায় ১০% উৎপাদন করে।[১৩৯] ২০১৯ সাল পর্যন্ত, জলবিদ্যুতের পরে পারমাণবিক শক্তি সমগ্র নিম্ন-কার্বন শক্তির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি উৎপাদন করে, যা একে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস করে তোলে।[১৪০]

ইউরেনিয়াম খনন এবং প্রক্রিয়াকরণ সহ পারমাণবিক শক্তির লাইফ-সাইকেল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে নির্গমনের সমান।[১৪১] প্রধান নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলির তুলনায় পারমাণবিক শক্তি উৎপাদিত শক্তির প্রতি ইউনিটে খুব অল্প জমি ব্যবহার করে। উপরন্তু, পারমাণবিক শক্তি স্থানীয় বায়ু দূষণ তৈরি করে না।[১৪২][১৪৩] যদিও পারমাণবিক বিভাজন প্ল্যান্টগুলিতে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম আকরিক একটি অ-নবায়নযোগ্য সম্পদ, শত শত থেকে হাজার হাজার বছর সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম রয়েছে।[১৪৪][১৪৫] যাইহোক, বর্তমান অবস্থায়, যে ইউরেনিয়াম সম্পদগুলো অর্থনৈতিকভাবে নিষ্কাশন করা সম্ভব তা সীমিত এবং উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের সময় তত দ্রুত ইউরেনিয়াম উৎপাদন সম্ভব হবে না।[১৪৬] জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের পথ, যা উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাধারণত পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে দেখা যায়।[১৪৭]

পারমাণবিক বর্জ্য, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার এবং দুর্ঘটনার উদ্বেগের কারণে পারমাণবিক শক্তি টেকসই কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[১৪৮] তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্য হাজার হাজার বছর ধরে পরিচালনা করতে হবে[১৪৯] এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এমন বিদারণক্ষম উপাদান (fissile material) তৈরি করে যা অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।[১৫০] উৎপাদিত শক্তির প্রতি ইউনিটের হিসাবে, জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় পারমাণবিক শক্তি দুর্ঘটনাজনিত এবং দূষণ-সম্পর্কিত মৃত্যুর কারণ হয়েছে অনেক কম, এবং পারমাণবিকের ঐতিহাসিক মৃত্যুর হার নবায়নযোগ্য উৎসগুলির সাথে তুলনীয়।[১৫১] পারমাণবিক শক্তির প্রতি জনগণের বিরোধিতা প্রায়শই পারমাণবিক প্ল্যান্টগুলির বাস্তবায়নকে রাজনৈতিকভাবে কঠিন করে তোলে।[১৫২]

দশকের পর দশক ধরে নতুন পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরির সময় এবং ব্যয় হ্রাস করা একটি লক্ষ্য ছিল, কিন্তু খরচ এখনও বেশি এবং সময় নির্ধারণী অনেক দীর্ঘ।[১৫৩] বিভিন্ন নতুন ধরনের পারমাণবিক শক্তি বিকাশাধীন, এগুলো প্রচলিত প্ল্যান্টের ত্রুটিগুলোর সমাধান করবে বলে আশা করা হয়। ফাস্ট ব্রিডার রিঅ্যাক্টরগুলি পারমাণবিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করতে সক্ষম এবং তাই ভূতাত্ত্বিক অপসারণের প্রয়োজনীয় বর্জ্যের পরিমাণকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, তবে এগুলিকে এখনও বড় আকারের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোতায়েন করা হয়নি।[১৫৪] থোরিয়াম-ভিত্তিক (ইউরেনিয়ামের পরিবর্তে) পারমাণবিক শক্তি, সেইসব দেশগুলোর জন্য উচ্চতর শক্তি নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম, যে দেশগুলোর বড় ইউরেনিয়াম সরবরাহ নেই।[১৫৫] ছোট আকারের মডুলার রিঅ্যাক্টরগুলোর বর্তমান বড় রিঅ্যাক্টরের চেয়ে বেশ কিছু সুবিধা থাকতে পারে: এগুলি দ্রুত নির্মাণ করা যেতে পারে এবং এগুলোর মডুলারাইজেশনের মাধ্যমে কাজ করার মধ্যে দিয়ে শিখার সুবিধা দিয়ে খরচ হ্রাস সম্ভব।[১৫৬]

বেশ কয়েকটি দেশ পারমাণবিক ফিউশন চুল্লি তৈরি করার চেষ্টা করছে, যা সামান্য পরিমাণে বর্জ্য এবং বিস্ফোরণের কোন ঝুঁকি ছাড়াই তৈরি করবে।[১৫৭] যদিও ল্যাবরেটরিতে ফিউশন পাওয়ার এগিয়ে গেছে, বাণিজ্যিকীকরণ এবং তার উৎপাদন বাড়ানোতে দশকের সময় লাগবে, ফলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্য ২০৫০-এর নেট জিরো লক্ষ্যে এর অবদান আশা করা যায় না।[১৫৮]

শক্তি ব্যবস্থায় পরিবর্তন

ব্লুমবার্গ NEF রিপোর্ট করেছে যে ২০২২ সালে, বিশ্বব্যাপী শক্তি রূপান্তরের বিনিয়োগ প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের সমান হয়েছে।[১৫৯]

বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখতে যে পরিমাণ নির্গমন হ্রাস করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে পুরো শক্তি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন - শক্তির উৎপাদন, বিতরণ, সংরক্ষণ এবং ভোগের প্রক্রিয়ায়।[১৭] এক ধরণের শক্তিকে অন্য ধরণের দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে শক্তি ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং আচরণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে তেলের পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহারে রূপান্তর করতে হলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়োজন, সৌর প্যানেলের চড়া-উতরাই মেটাতে বৈদ্যুতিক গ্রিডে পরিবর্তন আনা বা বিভিন্ন শক্তির চার্জার এবং উচ্চ চাহিদা মেটাতে ব্যাটারি প্রযুক্তির বিকাশ করা প্রয়োজন, ইলেকট্রিক গাড়ির প্রসার এবং ইলেকট্রিক যানবাহন চার্জিং সুবিধা এবং ওয়ার্কশপের নেটওয়ার্ক তৈরি করাও প্রয়োজন।[১৬০]

অনেক জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন পথে নিম্ন-কার্বন শক্তি ব্যবস্থার তিনটি প্রধান দিক দেখা যায়:

  • বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিম্ন-নির্গমন যুক্ত শক্তির উৎসের ব্যবহার
  • বিদ্যতায়ন - অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি সরাসরি পোড়ানোর পরিবর্তে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি
  • জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থার দ্রুত গ্রহণ[১৬১]

বিমান চলাচল, জাহাজ চলাচল এবং ইস্পাত তৈরি সহ কিছু শক্তি-নির্ভর প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়াগুলিকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা কঠিন। এই সেক্টরগুলি থেকে নির্গমন হ্রাস করার জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে: জৈব জ্বালানি এবং সংশ্লেষণমূলক কার্বন-নিরপেক্ষ জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর জন্য ডিজাইন করা অনেক যানবাহনকে শক্তি দিতে পারে, তবে টেকসইভাবে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জৈব জ্বালানি উৎপাদন করা যায় না এবং সংশ্লেষণমূলক জ্বালানি বর্তমানে খুব ব্যয়বহুল।[১৬২] কিছু ব্যবহারের জন্য, বিদ্যুতায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হল টেকসইভাবে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানি-ভিত্তিক একটি সিস্টেম বিকাশ করা।[১৬৩]

বিশ্বব্যাপী শক্তি ব্যবস্থার পূর্ণ কার্বনমুক্ত করতে কয়েক দশক সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং বেশিরভাগই বিদ্যমান প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।[১৬৪] IEA (ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি) বলেছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন পৌঁছাতে ব্যাটারি প্রযুক্তি এবং কার্বন-নিরপেক্ষ জ্বালানির মতো শক্তি খাতে আরও উদ্ভাবনের প্রয়োজন।[১৬৫] নতুন প্রযুক্তি বিকাশের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রদর্শনী এবং বাড়তি উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যয় হ্রাসের প্রয়োজন।[১৬৫] শূন্য-কার্বন শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর মানব স্বাস্থ্যের জন্য জোরালো সহ-সুবিধা বয়ে আনবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমান করে যে বায়ু দূষণ হ্রাসের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার প্রয়াস প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে পারে।[১৬৬][১৬৭] ভাল পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, জলবায়ু লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পরিচ্ছন্ন রান্নার অ্যাক্সেস প্রদানের পথ রয়েছে।[১৬৮][১৬৯] ঐতিহাসিকভাবে, বেশ কিছু দেশ কয়লার ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।[১৬৮] তবে, অনেক দরিদ্র দেশ ও অঞ্চলের জন্য সঠিক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং জ্ঞানের হস্তান্তরের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ভিত্তি করে তাদের শক্তি ব্যবস্থা বিকশিত করার মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা এড়িয়ে উন্নতির একটি সুযোগ রয়েছে।[১৬৮]

পরিবর্তনশীল শক্তির উৎস সমন্বিত ব্যবস্থাপনা

জার্মানির শ্লিরবার্গের সোলার সেটলমেন্টের ভবনগুলো এগুলো যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে তার চেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন করে। এই ভবনগুলোর ছাদে সৌর প্যানেল সংযুক্ত করা আছে এবং সর্বাধিক শক্তি সাশ্রয়ের জন্য এগুলো নির্মিত।[১৭০]

বায়ু ও সৌরের মত পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস (variable renewable energy sources) থেকে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে, বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমের নমনীয়তা প্রয়োজন।[১৭১] বেশিরভাগ বিদ্যুৎ গ্রিড কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো অ-আন্তঃকালীন (non-intermittent) শক্তির উৎসের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।[১৭২] গ্রিডে যত বেশি পরিমাণে সৌর ও বায়ুশক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়, শক্তি ব্যবস্থায় তত বেশি পরিবর্তন আনতে হয়, যাতে বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার সাথে মেলে।[১৭৩] ২০১৯ সালে, এই উৎসগুলি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের ৮.৫% উৎপন্ন করেছে, এই অংশগ্রহনটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৭৪]

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও নমনীয় করে তোলার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। অনেক জায়গায়, বায়ু এবং সৌর উৎপাদন প্রতিদিন এবং মৌসুমী দিক থেকে একে অপরের পরিপূরক: সৌরশক্তির উৎপাদন কম হলে রাতে এবং শীতকালে বায়ুর পরিমাণ বেশি থাকে।[১৭৫] দীর্ঘ-দূরত্বের সংক্রমণ লাইনের মাধ্যমে (long-distance transmission lines) বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলকে সংযুক্ত করা আরও পরিবর্তনশীলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।[১৭৬] শক্তির চাহিদা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা (energy demand management) এবং স্মার্ট গ্রিডের ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তির চাহিদাকে সময়ের সাথে স্থানান্তর করা যায়, যাতে পরিবর্তনশীল শক্তির উৎপাদন সর্বোচ্চ হয় সেই সময়গুলোর সাথে মেলে। গ্রিডে শক্তি সঞ্চয় (grid energy storage) করে, অতিরিক্ত উৎপাদিত শক্তিকে প্রয়োজনের সময় মুক্ত করা যেতে পারে।[১৭৭] পাওয়ার-টু-হিট সিস্টেম এবং ইলেকট্রিক যানবাহনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতকে তাপ (heat) এবং পরিবহন (mobility) খাতের সাথে যুক্ত করেও, অর্থাৎ সেক্টর কাপলিং-এর মাধ্যমে, আরও নমনীয়তা প্রদান করা যেতে পারে।[১৭৮]

বায়ু এবং সৌর উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা (overcapacity) তৈরি করা খারাপ আবহাওয়ার সময়ও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। সর্বোত্তম আবহাওয়ায়, অতিরিক্ত বিদ্যুৎকে ব্যবহার বা সঞ্চয় করা না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিমাণ কমানোর (curtailed) প্রয়োজন হতে পারে। জলবিদ্যুৎ, বায়োএনার্জি বা প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো বন্টনযোগ্য শক্তির উৎস (dispatchable energy sources) ব্যবহার করে চাহিদা-সরবরাহের শেষ ব্যবধান মেটাতে হবে।[১৭৯]

শক্তি সঞ্চয়

ব্যাটারি সংরক্ষণ কেন্দ্র বা ব্যাটারি স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি হল এমন একটি স্থান যেখানে বড় আকারের ব্যাটারিগুলি সংরক্ষণ করা হয়। এই কেন্দ্রগুলি প্রায়শই বৈদ্যুতিক গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অতিরিক্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে বা চাহিদার সময়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।

শক্তি সঞ্চয় আন্তঃকালীন নবায়নযোগ্য শক্তির (intermittent renewable energy) ক্ষেত্রে বাধাগুলো অতিক্রম করতে সাহায্য করে এবং একটি টেকসই শক্তি ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।[১৮০] সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং সহজলভ্য সঞ্চয় পদ্ধতি হলো পাম্পড-স্টোরেজ হাইড্রোইলেক্ট্রিসিটি (pumped-storage hydroelectricity), যেখানে উচ্চতার ব্যাপক পার্থক্য এবং পানি সরবরাহের প্রয়োজন হয়।[১৮১] ব্যাটারি, বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যাটারি সাধারণত অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে; ঋতুব্যাপী ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তির গবেষণা চলছে।[১৮২] যুক্তরাষ্ট্রে ইউটিলিটি-স্কেল ব্যাটারির খরচ ২০১৫ সাল থেকে প্রায় ৭০% কমেছে, তবে ব্যয় এবং ব্যাটারির কম শক্তি ঘনত্ব (energy density) শক্তি উৎপাদনের ঋতুগত পার্থক্যগুলোকে ভারসাম্য করার জন্য প্রয়োজনীয় খুব বড় আকারের শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এগুলোকে অবাস্তব করে তোলে।[১৮৩] কিছু কিছু জায়গায় পাম্পড হাইড্রো স্টোরেজ এবং পাওয়ার-টু-গ্যাস প্রযুক্তি (বিদ্যুতকে গ্যাসে রূপান্তর এবং ফিরিয়ে আনা) বহু-মাসের ব্যবহারের জন্য কাজে লাগানো হয়েছে।[১৮৪][১৮৫]

বিদ্যুতায়ন

একটি হিট পাম্পের বাহিরের অংশ। তেল এবং গ্যাস বয়লারের বিপরীতে, এগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং অত্যন্ত দক্ষ। ফলস্বরূপ, উত্তপ্তকরণের বিদ্যুতায়ন নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।[১৮৬]

শক্তি ব্যবস্থার বাকি অংশের তুলনায় বিদ্যুৎ খাতে নির্গমন অনেক দ্রুত কমানো যেতে পারে।[১৬১] ২০১৯ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের ৩৭% নিম্ন-কার্বন উৎস (নবায়নযোগ্য এবং পারমাণবিক শক্তি) থেকে উৎপাদিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি, প্রাথমিকভাবে কয়লা, বাকি বিদ্যুৎ সরবরাহ উৎপাদন করে।[১৮৭] গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুততম উপায়গুলির একটি হল কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ করা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা।[১৬১]

জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন পথে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন রয়েছে - ভবন উত্তপ্তকরণ এবং পরিবহনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি সরাসরি পোড়ানোর পরিবর্তে বিদ্যুতের ব্যবহার।[১৬১] একটি উচ্চাভিলাষী জলবায়ু নীতি ২০২০ সালের ২০% থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ হিসাবে ব্যবহৃত শক্তির অংশ দ্বিগুণ করবে।[১৮৮]

সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধা প্রদানের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ। অফ-গ্রিড এবং মিনি-গ্রিড সিস্টেমগুলি নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ভিত্তি করে, যেমন ছোট সৌর PV ইনস্টলেশন যা একটি গ্রামের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চয় করতে পারে, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমাধান।[১৮৯] নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের উন্নত ব্যবহার কেরোসিন আলো এবং ডিজেল জেনারেটরের কম ব্যবহার করবে, যা বর্তমানে উন্নয়নশীল বিশ্বে সাধারণ।[১৯০]

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চয়ের জন্য পরিকাঠামোর জন্য খনিজ ও ধাতু প্রয়োজন, যেমন ব্যাটারির জন্য কোবাল্ট এবং লিথিয়াম এবং সৌর প্যানেলের জন্য তামা।[১৯১] পণ্যের জীবনচক্র ভালভাবে পরিকল্পিত হলে পুনর্ব্যবহার এই চাহিদার কিছুটা মেটাতে পারে, তবে নিট-শূন্য নির্গমন অর্জনের জন্য এখনও ১৭ ধরণের ধাতু এবং খনিজের জন্য খনির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।[১৯২] একটি ছোট দেশের গোষ্ঠী বা কোম্পানি কখনও কখনও এই পণ্যের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে, যা ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করে।[১৯৩] উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের বেশিরভাগ কোবাল্ট গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কঙ্গোতে খনন করা হয়, একটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল অঞ্চল যেখানে খনন প্রায়ই মানবাধিকার ঝুঁকির সাথে যুক্ত।[১৯৪] আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগলিক সোর্সিং একটি আরও নমনীয় এবং কম ভঙ্গুর সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারে।[১৯৫]

হাইড্রোজেন

শক্তির ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের সম্ভাবনা আছে এমন একটি শক্তি বাহক হিসেবে হাইড্রোজেনকে দেখা হয়।[১৯৬][১৯৭] এর জন্য পরিষ্কার, টেকসই উপায়ে বড় আকারে হাইড্রোজেন উৎপাদন প্রয়োজন যাতে কঠিন জ্বালানীগুলোর (যেখানে কার্বন মুক্ত বিকল্প সহজে পাওয়া যায় না) পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। ভারী শিল্প এবং দীর্ঘ-দূরত্বের পরিবহন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।[১৯৬]

হাইড্রোজেনকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ফুয়েল সেল (fuel cell) এ শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, বা তাপ উৎপাদনের জন্য একে পোড়ানো যেতে পারে।[১৯৮] ফুয়েল সেল এ হাইড্রোজেন ব্যাবহৃত হলে, ব্যবহারের সময় শুধু জলীয় বাষ্প নির্গত হয়।[১৯৯] হাইড্রোজেন কে পোড়ালে তাপের মাধ্যমে ক্ষতিকারক নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি হতে পারে।[২০০] মোটের উপর হাইড্রোজেনের জীবনচক্রের উপর নির্গমন নির্ভর করে এটি কীভাবে উৎপন্ন হয়েছে তার উপর। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সমস্ত হাইড্রোজেন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয়।[২০১][২০২] প্রধান পদ্ধতি হল স্টিম মিথেন রিফর্মিং (steam methane reforming), যেখানে বাষ্প এবং মিথেনের (প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান) মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় এক টন হাইড্রোজেন উৎপাদন করলে ৬.৬-৯.৩ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়।[২০৩] যদিও কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (CCS) দ্বারা এই নির্গমনের একটি বড় অংশ অপসারণ করা যেতে পারে, প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের সময় উৎপন্ন নির্গমন (vented এবং fugitive methane সহ) এর কারণে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে হাইড্রোজেনের মোট কার্বন ফুটপ্রিন্ট যাচাই করা কঠিন।[২০৪]

টেকসইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে জলের অণুকে বিভক্ত করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতে পারে, এভাবে টেকসই হাইড্রোজেন তৈরি করা যায়। যাইহোক, এই ইলেক্ট্রোলাইসিস (electrolysis) প্রক্রিয়া বর্তমানে সি.সি.এস ছাড়াই মিথেন থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করার চেয়ে আর্থিকভাবে আরও ব্যয়বহুল এবং শক্তি রূপান্তরের দক্ষতা এতে সহজাতভাবে কম।[২০৫] অতিরিক্ত পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ থাকলে হাইড্রোজেন তৈরি করা যেতে পারে, তারপর তা সংরক্ষণ করা জেতে পারে এবং তাপ উৎপাদনের জন্য বা পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।[২০৬] এটাকে তরল জ্বালানিতেও রূপান্তর করা যেতে পারে যেমন গ্রিন অ্যামোনিয়া এবং গ্রিন মিথানল।[২০৭] হাইড্রোজেন ইলেক্ট্রোলাইজার-এ উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ থেকে বড় আকারে হাইড্রোজেন উৎপাদন আরও বেশি ব্যয়-দক্ষ হতে পারে।[২০৮]

হাইড্রোজেন জ্বালানি ইস্পাত, সিমেন্ট, কাচ এবং রাসায়নিক শিল্প উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অত্যধিক তাপ উৎপাদন করতে পারে, এইভাবে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি শিল্পের কার্বনমুক্তকরণে অবদান রাখবে, যেমন ইস্পাত তৈরির জন্য বৈদ্যুতিক আর্ক ফার্নেস।[২০৯] ইস্পাত তৈরিতে, হাইড্রোজেন স্বচ্ছ শক্তির বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং একই সাথে কোক-উদ্ভূত কার্বনের প্রতিস্থাপন হিসেবে নিম্ন-কার্বন অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে।[২১০] পরিবহনকে কার্বনমুক্ত করতে ব্যবহৃত হাইড্রোজেন জাহাজ চলাচল, বিমান চলাচল এবং কিছুটা কম পরিমাণে ভারী পণ্যবাহী যানবাহনে তার সবচেয়ে বড় কার্যক্রম খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[২১১] যাত্রীবাহী গাড়িসহ হালকা যানবাহনের জন্য, হাইড্রোজেন অন্যান্য বিকল্প জ্বালানি যানবাহনের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে, বিশেষ করে ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের দ্রুত গ্রহণযোগ্যতার তুলনায়, এবং সম্ভবত ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে না।[২১২]

শক্তি বাহক হিসেবে হাইড্রোজেনের অসুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেনের বিস্ফোরক প্রকৃতির কারণে উচ্চ সঞ্চয় এবং বিতরণ ব্যয়, অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় হাইড্রোজেনের বড় আয়তন এবং পাইপকে ভঙ্গুর করে তোলার প্রবণতা।[২১৩]

শক্তি ব্যবহার প্রযুক্তি

পরিবহন

উপযোগী সাইকেল চালানোর অবকাঠামো, যেমন ভ্যানকুভারের এই বাইক লেনটি, টেকসই পরিবহনকে উৎসাহিত করে।[২১৪]

পরিবহন খাত বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৪% এর জন্য দায়ী।[২১৫] তবে পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করে তোলার অনেক উপায় রয়েছে। গণপরিবহন সাধারণত যাত্রী প্রতি ব্যক্তিগত যানবাহনের চেয়ে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে কারণ ট্রেন ও বাস একসাথে অনেক বেশি যাত্রী বহন করতে পারে।[২১৬][২১৭] ছোট দূরত্বের ফ্লাইটগুলোকে উচ্চগতির রেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে, যা আরও বেশি দক্ষ, বিশেষ করে যখন বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়।[২১৮][২১৯] শহরে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর মতো মোটরবিহীন যাতায়াতকে উৎসাহিত করা পরিবহনকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে।[২২০][২২১]

গাড়ির শক্তির দক্ষতা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে,[২২২] তবে বৈদ্যুতিক যানবাহনে স্থানান্তর পরিবহনকে কার্বনমুক্ত করা এবং বায়ু দূষণ কমানোর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।[২২৩] ট্র্যাফিক-সম্পর্কিত বায়ু দূষণের একটি বড় অংশ রাস্তার ধুলাবালি এবং টায়ার ও ব্রেক প্যাড ক্ষয় থেকে সৃষ্ট কণা দিয়ে গঠিত।[২২৪] এইসব উৎস থেকে দূষণ যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করা যায় না শুধুমাত্র বৈদ্যুতিকীকরণের মাধ্যমে; এর জন্য যানবাহন হালকা করা এবং সেগুলি কম চালানোর মতো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।[২২৫] হালকা যানবাহন বিশেষভাবে ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বনমুক্ত করার একটি প্রধান অংশ। বিশ্বের CO2 নির্গমনের ২৫% এখনও পরিবহন খাত থেকে উৎপন্ন হয়।[২২৬]

দূরপাল্লার মালবাহী পরিবহন এবং বিমান চলাচল হল এমন খাত যাদের বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া বেশ কঠিন, মূলত দীর্ঘ-দূরত্বের ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারির ওজন, ব্যাটারি রিচার্জ করার সময় এবং সীমিত ব্যাটারির লাইফস্প্যানের কারণে।[২২৭][২২৮] যেখানে উপলব্ধ, জাহাজ এবং রেলের মাধ্যমে মালবাহী পরিবহন সাধারণত বিমান এবং সড়ক পথের চেয়ে বেশি টেকসই।[২২৯] লরির মতো বড় যানবাহনের জন্য হাইড্রোজেন যানবাহন একটি বিকল্প হতে পারে।[২৩০] সমুদ্রপথে চালিত জাহাজ এবং বিমানে নির্গমন কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কৌশল এখনও তাদের উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে অ্যামোনিয়া (হাইড্রোজেন থেকে উত্পাদিত) সমুদ্রপথের চালিত জাহাজের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক জ্বালানি।[২৩১] যদি জ্বালানি উৎপাদনের সময় নির্গমনগুলিকে সংগ্রহ (capture) করে রাখা যায় যায়, তবে বিমানের জৈব জ্বালানি জৈবশক্তির একটি ভালো ব্যবহার হতে পারে।[২৩২]

ভবন এবং রান্না

প্যাসিভ কুলিং বৈশিষ্ট্য, যেমন ইরানের এই উইন্ডক্যাচার টাওয়ারগুলি, কোনো শক্তি ব্যবহার না করেই ভবনের ভেতরে শীতল বাতাস নিয়ে আসে।[২৩৩]
রান্নার ক্ষেত্রে, ইলেকট্রিক ইন্ডাকশন স্টোভ (চুলা) হল সবচেয়ে শক্তি-সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ বিকল্পগুলোর মধ্যে একটি।[২৩৪][২৩৫]

বিশ্বব্যাপী শক্তি ব্যবহারের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ব্যবহার হয় ভবন নির্মাণ ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণে।[২৩৬] ভবন গরম করার জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বায়োমাস পোড়ানোর বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে হিট পাম্প বা ইলেকট্রিক হিটারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ, ভূতাত্ত্বিক শক্তি, কেন্দ্রীয় সৌর হিটিং, বর্জ্য তাপের পুনঃব্যবহার এবং মৌসুমি তাপীয় শক্তি সংগ্রহ করে রাখা।[২৩৭][২৩৮][২৩৯] হিট পাম্প একটি মাত্র যন্ত্রের মাধ্যমে তাপ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়।[২৪০] আইইএ (IEA) অনুমান করে যে, হিট পাম্প বিশ্বব্যাপী ৯০% এরও বেশি ভবনের স্থান ও পানি গরম করার চাহিদা পূরণ করতে পারে।[২৪১]

ভবন গরম করার একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায় হল ডিস্ট্রিক্ট হিটিং, যেখানে একটি কেন্দ্রীয় জায়গায় তাপ উৎপন্ন করা হয় এবং তারপর তা অনেকগুলো ভবনে ইনসুলেটেড পাইপের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, বেশিরভাগ ডিস্ট্রিক্ট হিটিং সিস্টেম জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে, তবে আধুনিক এবং কোল্ড ডিস্ট্রিক্ট হিটিং সিস্টেমগুলি নবায়নযোগ্য শক্তির উচ্চ পরিমাণ ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।[২৪২][২৪৩]

ভবনের শীতলীকরণকে আরও দক্ষ করে তোলা যেতে পারে প্যাসিভ বিল্ডিং ডিজাইনের মাধ্যমে, আর্বান হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট কমানোর পরিকল্পনা, এবং ডিস্ট্রিক্ট কুলিং সিস্টেম যা পাইপের ঠাণ্ডা পানির সাহায্যে একাধিক ভবনকে শীতল রাখে।[২৪৪][২৪৫] এয়ার কন্ডিশনিং-এ বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং গরিব পরিবারের জন্য তা সবসময় সাশ্রয়ী নয়।[২৪৬] কিছু এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট এখনও রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করে যা গ্রিনহাউস গ্যাস, কারণ কিছু দেশ পরিবেশ বান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করার কিগালি সংশোধনী অনুমোদন করেনি।[২৪৭]

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যেখানে মানুষ শক্তির অভাবে ভোগে, সেখানে রান্নার জন্য প্রায়শই কাঠ বা গোবরের মতো দূষণকারী জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এই জ্বালানি দিয়ে রান্নার বিষয়টি সাধারণত টেকসই নয়, কারণ এগুলো ক্ষতিকারক ধোঁয়া ত্যাগ করে এবং কাঠ সংগ্রহ করার ফলে বন ধ্বংসের দিকে যেতে পারে।[২৪৮] পরিষ্কার রান্নার সুবিধা সর্বজনীনভাবে গ্রহণ করা, যা ধনী দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই সর্বব্যাপী,[২৩৪] স্বাস্থ্যের নাটকীয় উন্নতি করবে এবং জলবায়ুর উপর ন্যূনতম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।[২৪৯][২৫০] তুলনামূলক পরিষ্কার রান্নার সুবিধা (যেমন যেসব চুলা ঘরের ভিতরে কম কালি তৈরি করে) সাধারণত শক্তির উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এই দুটোই অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে) বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কিছু প্রেক্ষাপটে বায়োগ্যাস সিস্টেম একটি আশাব্যঞ্জক বিকল্প।[২৩৪] যেসব উন্নত চুলা বায়োমাসকে ঐতিহ্যবাহী চুলার তুলনায় বেশি দক্ষতার সাথে পোড়াতে পারে, সেগুলো পরিষ্কার রান্নার ব্যবস্থায় রুপান্তর করতে সমস্যা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হতে পারে।[২৫১]

শিল্পক্ষেত্র

শিল্প খাত বিশ্বের মোট ব্যবহৃত শক্তির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ব্যবহার করে। এই শক্তির অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় তাপ উৎপাদন, শুকানো, এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ (রেফ্রিজারেশন) প্রক্রিয়ায়। ২০১৭ সালে শিল্পে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ ছিল ১৪.৫%। এখানে জৈবশক্তি থেকে নিম্ন-তাপমাত্রার তাপ এবং বিদ্যুৎ প্রধান অবদান রাখে। উচ্চ-তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় এমন শিল্প কার্যক্রমে ( যেমন, ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এখনও সীমিত।[২৫২]

বেশকিছু শিল্প প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন দূর করতে এমন কিছু প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণের প্রয়োজন হবে যা এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি বা বড় আকারে ব্যবহার করা হয়নি।[২৫৩] উদাহরণস্বরূপ, ইস্পাত তৈরিতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশ কঠিন, কারণ এখানে ঐতিহ্যগতভাবে কয়লা থেকে প্রাপ্ত কোক ব্যবহার করা হয়। কোক অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করতে এবং ইস্পাতের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[২৫৪] প্লাস্টিক, সিমেন্ট ও সার উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তি খরচ করে এবং এসব ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন কমানোর সম্ভাবনা সীমিত।[২৫৫] বৃত্তাকার অর্থনীতি (সারকুলার ইকোনমি) এইসব শিল্পকে আরও টেকসই করে তুলতে পারে। কারণ, বৃত্তাকার অর্থনীতিতে পণ্য পুনর্ব্যবহারে গুরত্ব দেওয়া হয় যেখানে নতুন কাঁচামাল সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার তুলনায় কম শক্তি ব্যয় হয়।[২৫৬]

সরকারি নীতিমালা

"নতুন শক্তি প্রযুক্তিকে বাজারে আনতে প্রায়শই কয়েক দশক সময় লাগতে পারে, কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের তাগিদ বোঝায় যে অগ্রগতি অনেক দ্রুত হতে হবে। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে নতুন প্রযুক্তিকে বাজারে আনতে এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় কমাতে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (২০২১)[২৫৭]

সু-পরিকল্পিত সরকারি নীতিমালা জ্বালানি ব্যবস্থার রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে পারে, যা একইসাথে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে, বায়ুর মান উন্নত করতে, এবং অনেক ক্ষেত্রে জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে ও আর্থিক বোঝা হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।[২৫৮]

  • পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ: ১৯৭০-এর দশক থেকে জ্বালানির টেকসই ব্যবহারকে উন্নীত করার জন্য পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করা হয়ে আসছে।[২৫৯] কয়েকটি দেশের সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ করার এবং নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি অনুসন্ধান বন্ধ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। গভর্নমেন্ট নতুন গাড়িগুলিকে শূন্য-নির্গমনের (zero emissions) করতে, বা নতুন ভবনগুলিকে গ্যাসের পরিবর্তে বিদ্যুৎ দ্বারা উত্তপ্ত করার বিধিও জারি করতে পারে।[২৬০] অনেক দেশে নবায়নযোগ্য পোর্টফোলিও মানগুলি ইউটিলিটিগুলিকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশ দেয়।[২৬১][২৬২]
  • অবকাঠামো উন্নয়ন: দীর্ঘ-দূরত্বের বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন, স্মার্ট গ্রিড এবং হাইড্রোজেন পাইপলাইনের মতো অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারগুলি জ্বালানি ব্যবস্থার রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে।[২৬৩] পরিবহনে, উপযুক্ত অবকাঠামো এবং উৎসাহ ভ্রমণকে আরও দক্ষ এবং গাড়ি-নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে।[২৫৮] শহুরে পরিকল্পনা যা বৈরিভাবে ছড়িয়ে পড়াকে (sprawl) নিরুৎসাহিত করে, স্থানীয় পরিবহন ও ভবনে জ্বালানি ব্যবহার কমাতে ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।[২৫৮] সৌর ও লিথিয়াম ব্যাটারির মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিকাশে সরকারি-অর্থায়িত গবেষণা, সংগ্রহ এবং উদ্দীপনা নীতিমালা ঐতিহাসিকভাবে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে।[২৬৪] ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো নিঃসরণ শক্তি ব্যবস্থার জন্য IEA-এর পরিকল্পনায়, নতুন প্রযুক্তির একটি পরিসরকে বিক্ষোভ পর্যায়ে আনতে এবং নিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য জন তহবিল দ্রুত সংগঠিত করা হচ্ছে।[২৬৫]
    বেশ কয়েকটি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমস্ত নতুন গাড়িকে শূন্য-নির্গমন যানবাহনে পরিণত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।[২৬০]
  • কার্বন মূল্য নির্ধারণ: কার্বন প্রাইসিং (যেমন CO2 নির্গমনের উপর কর) শিল্প ও ভোক্তাদের নির্গমন হ্রাস করার জন্য একটি উদ্দীপনা প্রদান করে, একইসাথে তাদের কিভাবে এটা করতে হবে তা চয়ন করার সুযোগও দেয়। উদাহরণস্বরূপ, তারা স্বল্প-নির্গমন জ্বালানি উৎসে স্থানান্তর করতে পারে, জ্বালানি দক্ষতা উন্নত করতে পারে, বা জ্বালানি-নির্ভর পণ্য এবং পরিষেবার ব্যবহার কমাতে পারে।[২৬৬] কার্বন মূল্য নির্ধারণ কিছু এলাকায় শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে জ্বালানি-নির্দিষ্ট নীতিগুলি রাজনৈতিকভাবে নিরাপদ হতে থাকে।[২৬৭][২৬৮] বেশিরভাগ গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫°C এ সীমাবদ্ধ করতে, কার্বন মূল্য নির্ধারণকে কঠোর জ্বালানি-নির্দিষ্ট নীতি দ্বারা পরিপূরণ করতে হবে।[২৬৯] ২০১৯ পর্যন্ত, বেশিরভাগ অঞ্চলে কার্বনের মূল্য প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই কম।[২৭০] কার্বন ট্যাক্স আয়ের একটি উৎস প্রদান করে যা অন্যান্য কর কমাতে[২৭১] বা নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলিকে উচ্চ জ্বালানি খরচ বহন করতে সহায়তা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[২৭২] কিছু সরকার, যেমন ইইউ এবং যুক্তরাজ্য, কার্বন সীমান্ত সমন্বয়ের ব্যবহার অনুসন্ধান করছে।[২৭৩] এগুলো কম কঠোর জলবায়ু নীতিবিশিষ্ট দেশ থেকে আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করে, যাতে অভ্যন্তরীণ কার্বন মূল্যের অধীন শিল্পগুলো প্রতিযোগিতামূলক থাকে।[২৭৪][২৭৫]
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: প্যারিস চুক্তির জলবায়ু লক্ষ্য পূরণের জন্য যে নীতি সংস্কারের সূচনা করা হয়েছে, সেগুলির আকার ও গতি ২০২০ পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।[২৭৬][২৭৭] অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করার জন্য এবং দরিদ্র দেশগুলিকে সম্পূর্ণ জ্বালানির অ্যাক্সেসের একটি টেকসই পথ তৈরিতে সহায়তা করার জন্য আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন।[২৭৮]
  • দেশগুলো কর্মসংস্থান তৈরির জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমর্থন করতে পারে।[২৭৯] আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুমান করে যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় অর্থনীতির বেশিরভাগ খাতে নেট ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।[২৮০] এটি ভবিষ্যদ্বাণী করে যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, ভবনের জ্বালানি-দক্ষতা উন্নয়ন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনে রূপান্তরের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৪ মিলিয়ন নতুন চাকরি তৈরি হবে। খনন ও জীবাশ্ম জ্বালানির মতো খাতে ৬ মিলিয়ন চাকরি হারিয়ে যাবে।[২৮১] জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের উপর নির্ভরশীল শ্রমিক এবং অঞ্চলের জন্য একটি ন্যায্য রূপান্তর (just transition) নিশ্চিত করে সরকারগুলো টেকসই জ্বালানিতে রূপান্তরকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আরও সম্ভাব্য করে তুলতে পারে, যাতে তাদের বিকল্প অর্থনৈতিক সুযোগ থাকে।[১৬৮]

অর্থায়ন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বৈদ্যুতিক পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনে বিনিয়োগ করা খুবই জরুরি।[২৮২]

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় নতুন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ জরুরি।[২৮৩] জলবায়ু বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা (IPCC) অনুমান করে ১.৫°C তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমায় রাখতে হলে, ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক ২.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা দরকার। গবেষণাগুলো নির্দেশ করে এই খরচ আসলে বিশ্ব জিডিপি এর মাত্র ২.৫%, যা জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর ফলে যে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যাবে তার তুলনায় নগণ্য।[২৮৪] তবে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০৫০ সাল নাগাদ পরিবেশবান্ধব জ্বালানী উৎপাদন ও এর দক্ষ ব্যবহারে বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছয়গুণ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।[২৮৫] স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে, যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী নন, সেখানে এই সমস্যা আরও প্রকট।[২৮৬]

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়নের পরিমাণ ২০১৬ সালে ছিল ৬৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[২৮৭] এর বড় অংশ এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ থেকে। সরকারি বিনিয়োগ যেমন টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং জ্বালানী সাশ্রয়ে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগও এর উল্লেখযোগ্য অংশ।[২৮৮] প্যারিস চুক্তিতে উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বছরে অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছিলো। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা এখনও পূরণ হয়নি, আর স্বচ্ছতার অভাবে এই অগ্রগতির সঠিক হিসাব করাও সম্ভব হয়নি।[২৮৯][২৯০] শক্তি-নির্ভর শিল্পখাতগুলো, যেমন রাসায়নিক, সার, মৃৎশিল্প, ইস্পাত ইত্যাদিতে যদি গবেষণা ও উন্নয়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ করা যায়, তবে শিল্পকারখানাগুলোতে মোট জ্বালানী ব্যবহারের ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত কমানো যেতে পারে।[২৯১][২৯২]

জ্বালানী উৎপাদনে সরকারি ভর্তুকি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি বড় অন্তরায়।[২৯৩][২৯৪] সরাসরি ভর্তুকির পরিমাণ ২০১৭ সালে ছিল ৩১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু বায়ুদূষণের মতো পরোক্ষ খরচ হিসাব করলে, এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।[২৯৫] এই ভর্তুকি বাতিলের ফলে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ ২৮% হ্রাস এবং বায়ুদূষণজনিত মৃত্যু ৪৬% কমানো সম্ভব।[২৯৬] ইতিবাচক ব্যাপার হলো, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর জন্য বরাদ্দ অর্থ তেমন প্রভাবিত হয়নি। মহামারীর পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় 'সবুজ অর্থনীতি' তৈরির উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।[২৯৭][২৯৮]

তথ্যসূত্র

উৎস

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ