নানঝাও রাজ্য

নানঝাও রাজ্য (ঐতিহ্যগত চীনা: 南詔, সরলীকৃত চীনা: 南诏, পিনয়িন: Nánzhào, তিব্বতি: ལྗང་ཡུལ) অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে দক্ষিণ চীন অঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজতন্ত্র।

শুরুর ইতিহাস

ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষে ইর হ্রদের তীরবর্তী উর্বর জমিতে ছয়টি শক্তিশালী উপজাতি বসবাস করত। এই উপজাতিগুলি ছিল মেংশে (蒙舍), মেংসুই (浪穹), ল্যাংকিওং (浪穹), দেংতান (邆賧), শিলাং (施浪) এবং ইয়ুয়েক্সি (越析)। এই সমস্ত উপজাতিগুলির গোষ্ঠীপতিদের একত্রে লিউ ঝাও (六詔) বা ছয় রাজা বলা হত। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে মেংশেরা দক্ষিণে বসবাস করত বলে তাদের গোষ্ঠীপতিকে নানঝাও বা দক্ষিণের রাজা বলা হত। [১]

ট্যাং সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য

৬৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মেংশের গোষ্ঠীপতি জিনুলুও (細奴邏) ইর হ্রদের তীরে দামেংগুও (大蒙國) নামে একটি রাজ্য স্থাপন করেন এবং কিজিয়াওয়াং (奇嘉王) উপাধি ধারণ করেন। জিনুলুও ট্যাং রাজবংশকে কর প্রদান করতেন। ৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাং রাজবংশের আনুকুল্যে মেংশের গোষ্ঠীপতি পিলুওগে (皮羅閣) এই ছয়টি গোষ্ঠীকে একত্র করে মেংশে থেকে ইয়াংজুমিয়ে (陽苴咩) নামক স্থানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। ৭৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাং সম্রাট তাকে মেং গুইয়ি (蒙歸義) নাম এবং ওয়াং (王) উপাধি দান করেন। পিলুওগে ও তার পুত্র গেলুওফেং (閣羅鳳) উত্তরে ও পশ্চিমে তাদের রাজ্য সম্প্রসারণ করে সুয়ান (爨), জুনচুয়ান (尋傳), পুজি (朴子) এবং ওয়াংজুজি (望苴子) গোষ্ঠীদের এলাকা দখল করে নেন। [১]

তিব্বতের প্রতি আনুগত্য

নানঝাও রাজ্যের এই দ্রুত প্রসারণ ট্যাং সাম্রাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত ইয়াওঝৌ (姚州) বিভাগে বিপত্তি বাড়িয়ে তোলে। এর প্রতিরোধের জন্য জিয়ান্নানের (劍南) সামরিক অধ্যক্ষ জিয়ান্যু ঝংটং এবং ইউনানের শাসক ঝাং চিয়ান টুয়ো (張虔陀) নানঝাও রাজ্যের রাজাদের স্বশাসনের ক্ষমতা হ্রাসের চেষ্টা করেন। এরফলে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গেলুওফেং ইয়াওঝৌ আক্রমণ করে ঝাং চিয়ান টুয়োকে হত্যা করে ট্যাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছেদ করেন এবং তিব্বত সাম্রাজ্যের আনুগত্য স্বীকার করেন। ৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত সম্রাট খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সান তাকে ত্সানপো-চুং উপাধি দান করেন। [১]

ট্যাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ

৭৫১, ৭৫৪ ও ৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাং সাম্রাজ্য নানঝাও রাজ্যের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠালে তারা পরাজিত হয়। তিব্বত সাম্রাজ্য এই যুদ্ধগুলিতে সৈন্যপ্রদান করে নানঝাও রাজ্যকে সহায়তা করে।[২][৩]:২৫০ এই সময় টালাসের যুদ্ধে পরাজয় এবং আন লুশান বিদ্রোহ ট্যাং সাম্রাজ্যকে আরো দুর্বল করে তুললে তারা দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে নানঝাও রাজ্যের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠাতে ব্যর্থ হয়।[১]

সম্প্রসারণ

ট্যাং সাম্রাজ্যের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানঝাও রাজ্য দ্রুত উত্তরে ও পূর্বে তাদের এলাকা বৃদ্ধি করে সিচুয়ান ও গুইঝৌ অঞ্চল দখল করে নেয়। রাজা ইয়িমৌজুনের (異牟尋) রাজত্বে এই নানঝাও রাজ্যের সর্বাধিক সম্প্রসারণ হয়। ৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাং সাম্রাজ্য সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠলে জিচুয়ান (西川) অঞ্চলের শাসক ওয়েই গাও (韋皋) নানঝাও আক্রমণ করেন। সেই সময় নানঝাও তাদের সেনা তিব্বতীদের সমর অভিযানে সহায়তায় পাঠিয়েছিল বলে প্রতিরক্ষায় দুর্বল অবস্থায় ছিল। এতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ইয়িমৌজুন তিব্বত সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পুনরায় ট্যাং সাম্রাজ্যের আনুগত্য স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এতেও তারা রাজ্য সম্প্রসারণ বন্ধ করেননি। ৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে নানঝাও ট্যাং সাম্রাজ্যের চেংদু (成都) এলাকা দখল করে নেয়।[১]

প্রশাসন

চীনের তৎকালীন অন্যান্য রাজ্যের মতো নানঝাও রাজ্যের প্রসাসনিক ব্যবস্থা ছয়টি মন্ত্রকে (六曹) বিভক্ত ছিল। এগুলি হল যুদ্ধ (বিংকাও 兵曹), রাজস্ব (হুকাও 戶曹), আচার অনুষ্ঠান (কেকাও 客曹), বিচার (ফাকাও 法曹), লোকবল (শিকাও 士曹) এবং শস্যাগার (কাংকাও 倉曹)। এই মন্ত্রকগুলি অশ্ব (চিটুও 乞托), গবাদিপশু (লুটুও 祿托) ও শস্য (জুটুও 巨托) এই তিনটি সংস্থা (三托) এবং সৈন্য (মুশুয়াং 幕爽), গৃহস্থ নিবন্ধীকরণ (কংশুয়ান 琮爽), আচার (কিশুয়াং 慈爽), শাস্তি (ফাশুয়াং 罰爽), কর্মচারী (চুয়ানশুয়াং 勸爽), কর্ম (জুয়েশুয়াং 厥爽), অর্থ (ওয়ানশুয়াং 萬爽), অতিথি (য়িনশুয়াং 引爽) ও ব্যবসা (হেশুয়াং 禾爽) এই নয়টি দরবারে (九爽) বিভক্ত ছিল।রাজ্যের সর্বোচ্চ মন্ত্রীত্বের পদটির নাম ছিল (চিংপিংগুয়ান 清平官)। প্রদেসগুলির শাসনক্ষমতা দেখাশোনা করত জিয়েদুশি (節度) নামক কর্মচারী এবং দুদু (都督) বিভাগগুলি দেখাশোনা করতেন।[১]

অবলুপ্তি ও পরবর্তী ঘটনা

৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে নানঝাওয়ের রাজা লোংশুনকে হত্যা করা হয়। ৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ঝেং মাইসি (鄭買嗣) নামক এক মন্ত্রী রাজপরিবারের সকলকে হত্যা করে দা চাংহে (大長和) নামক নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। মাত্র ২৫ বছর রাজত্ব করার পর ৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঝাও শানঝেং (趙善政) দা তিয়াংজিয়াং (大天興) নামক নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। কিন্তু তিন বছর পরেই ইয়াং গানঝেন (楊干真) মাত্র সাত বছরের জন্য দা য়িনিং (大義寧) নামক নতুন রাজ্য তৈরী করে শাসন করেন। ৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে টংহাইয়ের সামরিক উপদেষ্টা দুয়ান সিপিং (段思平) দালি রাজ্য (大理) তৈরী করেন।

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ