পোল্যান্ডের ইতিহাস
পোল্যান্ডের ইতিহাস মধ্যযুগীয় উপজাতি, খ্রিষ্টধর্ম দীক্ষিতকরণ ও রাজতন্ত্র থেকে শুরু করে পোলীয় স্বর্ণযুগ, বিস্তার লাভ ও ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ হয়ে ওঠা, পতন ও বিভাজন, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, কমিউনিজম ও গণতন্ত্রের পুনরুত্থান পর্যন্ত এক হাজারের অধিক বছর পর্যন্ত বিস্তৃত।
পোলীয় ইতিহাসের আদি প্রমাণ পাওয়া যায় লৌহ যুগে, যখন বর্তমান পোল্যান্ড ভূখণ্ডে কেল্টীয়, সিথীয়, জার্মানিক সম্প্রদায়, সার্মাতি জাতি, স্লাভ ও বাল্ট-সহ বিভিন্ন উপজাতি বসতি স্থাপন করে। তবে পোলীয় জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে কাছাকাছি পূর্বপুরুষ হল পশ্চিম স্লাভিক লেচিত জাতি, যারা প্রারম্ভিক আধুনিক যুগে পোলীয় ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।[১] লেচিতিক পশ্চিম পোলান জাতি এই অঞ্চলে কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং উত্তর-মধ্য ইউরোপীয় সমতল ভূমির নামকরণ করে পোল্যান্ড।
প্রাক-ইতিহাস ও প্রত্ন-ইতিহাস
কমপক্ষে ৬০০,০০০ বছর পূর্বে[২] প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্ন-ঐতিহাসিক সময়ে বর্তমান সময়ের পোল্যান্ড এলাকায় হোমো গণের সদস্যরা বসবাস করত। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর সাথে এই এলাকাটিই প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ যুগে বিভিন্ন পর্যায়ে বিকশিত হয়।[৩] নব্য প্রস্তর যুগে সরলীকৃত তৈজসপত্রের সংস্কৃতির সূচনা হয় এবং এই সংস্কৃতির বাহকগণ খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০০ অব্দের শুরুতে দানিউব নদীর অববাহিকা থেকে অভিবাসিত হয়। এই সংস্কৃতি বর্তমান পোলীয় ভূখণ্ডে কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতির থেকে ভিন্ন। পরবর্তী কালে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪০০ থেকে ২০০০ অব্দের মধ্যে স্থানীয় মধ্য প্রস্তর যুগ-উত্তর জনগণ কৃষিকাজের বিকাশ ঘটায়।[৪]
পিয়াস্ত যুগ (১০ম শতাব্দী - ১৩৮৫)
পোল্যান্ড পিয়াস্ত রাজবংশের একটি রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পিয়াস্ত রাজবংশ ১০ম থেকে ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত এই দেশে শাসন করেছিল। ঐতিহাসিক নথি অনুসারে পোলীয় রাজ্যের সূত্রপাত হয় ডিউক প্রথম মিয়েৎস্কোর শাসনের মধ্য দিয়ে। প্রথম মিয়েৎস্কোর শাসনকাল শুরু হয়েছিল ৯৬৩ সালের পূর্বে এবং ৯৯২ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত তার শাসনকাল জারি থাকে। মিয়েৎস্কো ৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বোহিমিয়ার যুবরাজ্ঞী দুব্রাভকার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা লাভ করেন।[৫] এই ঘটনাটি 'পোল্যান্ডের অপ্সুদীক্ষা' নামে পরিচিত এবং এই সময়কে পোল্যান্ড রাজ্যের প্রতীকী সূত্রপাত হিসেবে গণ্য করা হয়।[৬] মিয়েৎস্কো লেচিতিক আদিবাসীদের ভূখণ্ড একত্রীতকরণের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন যা এই নতুন দেশের অস্তিত্বের মৌলিক কার্যাবলির একটি ছিল। পোল্যান্ডের অবির্ভাবের পর একাধিক শাসক এই অঞ্চলে শাসন করেন যারা এই অঞ্চলের জনগণকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেন, শক্তিশালী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, এবং ভিন্ন পোলীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলেন যা বৃহত্তর ইউরোপীয় সংস্কৃতির সাথে অঙ্গীভূত হয়।[৭]
জাগিয়েলোনীয় রাজবংশ (১৩৮৫-১৫৭২)
১৩৮৬ খ্রিষ্টাব্দে লিথুয়ানিয়ার মহা ডিউক জোগাইলা ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হন এবং পোল্যান্ডের রানি জাদভিগাকে বিয়ে করেন। এর ফলে তিনি পোল্যান্ডের রাজা হন,[৮] এবং ১৪৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জাগিয়েলোর ভ্লাদিস্লাভ নামে পোল্যান্ড শাসন করেন। তার এই বিয়ের ফলে জাগিয়েলোনীয় রাজবংশের অধীনে পোলীয়-লিথুয়ানীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আনুষ্ঠানিক ঐক্যের সূত্রপাত হয় ১৩৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ক্রেভোর ঐক্যের মধ্য দিয়ে, যেখানে জোগাইলা ও জাদভিদার বিয়ের সমঝোতা হয়।[৮] পোলীয়-লিথুয়ানীয় ঐক্যের ফলে লিথুয়ানিয়ার মহা ডিউক শাসিত রুথেনিয়ার বিশাল এলাকা পোল্যান্ডের অধীনে আসে এবং দুই দেশের জন্যই তা সুবিধা এনে দেয়। যার ফলে তারা একত্রে পরবর্তী চার শতাব্দী ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক সত্তা পরিচালনা করেন। ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে রানি জাদভিগার মৃত্যুর পর তার স্বামী পোল্যান্ড রাজ্যের একক স্বত্ত্বাধিকারী হয়ে ওঠেন।[৮][৯]
বিভক্ত পোল্যান্ড (১৭৯৫-১৯১৮)
১৭৯৫ থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে সার্বভৌম পোলীয় রাজ্য বিদ্যমান ছিল না, তবে ১৯শ শতাব্দীতে পোলীয় স্বাধীনতার বিষয়টি সুসংহত ছিল। বিভক্ত দলগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বিদ্রোহ ও সশস্ত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। বিভাজনের পর প্রথম সামরিক প্রচেষ্টার ভিত্তি ছিল বিপ্লব পরবর্তী ফ্রান্সের সাথে পোলীয় এমিগ্রেদের মৈত্রী। ইয়ান হেনরিক দাব্রোভ্স্কি'র পোলীয় সেনা সংঘ ১৭৯৭ থেকে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পোল্যান্ডের বাইরে বিভিন্ন ফরাসি আক্রমনে অংশগ্রহণ করে এই আশায় যে তাদের অবদানের পুরস্কার হিসেবে পোলীয় ভূখণ্ড স্বাধীন করে দেওয়া হবে।[১০] দাব্রোভ্স্কির কাজের প্রশংসা স্বরূপ ইয়ুজেফ ভিবিৎস্কি ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পোলীয় জাতীয় সঙ্গীত "পোল্যান্ড ইজ নট ইয়েট লস্ট" বা দাব্রোভ্স্কির মাৎসুর্কা রচনা করেন।[১১]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
টেমপ্লেট:পোল্যান্ড বিষয়াবলি