বালকপ্রীতি

বালকপ্রীতি বলতে কিশোর বালকের প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের যৌন আকর্ষণ ও সম্পর্ক বোঝায়। পেডেরাস্টি (pederasty) শব্দটির উৎস নিহিত রয়েছে গ্রিক παῖς (pais; অর্থাৎ "শিশু, বালক") এবং ἐραστής (erastēs; "প্রেমিক") শব্দদুটির সমন্বয়ে সৃষ্ট (paiderastia) শব্দটির মধ্যে; যার অর্থ "বালকপ্রীতি" বা "বালককাম"("love of boys")।[১]

পেডেরাস্টি
প্রাচীন গ্রিস · Classical relationships · গ্রিক দর্শন
Historical relationships · রেনেসাঁ
আলবেনিয়া · Japan · মধ্যপ্রাচ্য · Shudo
Pederasty in film

ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নানান প্রথা, রীতিনীতি ও অভ্যাসের আকারে বালকপ্রীতি বিরাজমান ছিল এবং আছে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে বালকপ্রীতির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নানা আঙ্গিকে পরিবর্তিত হয়েছে। কখনও এই জাতীয় সম্পর্ককে শিক্ষামূলক সম্পর্ক মনে করা হয়েছে; আবার কখনও একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পরিব্যাপ্ত এথেনিয়ান পেডেরাস্টি ইউরোপের ইতিহাসে বালকপ্রেমের সর্বাপেক্ষা সুসংহত সাংস্কৃতিক রূপে বিরাজমান ছিল। তৎকালীন গ্রিসে সাংস্কৃতিক বিতর্কের অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল বালকপ্রীতির বিবিধ রূপ। এহেন বিতর্কে দেহকেন্দ্রিক বালকপ্রীতিকে পেডেরাস্টির কামোদ্দীপক অথচ আধ্যাত্মিক মধ্যপন্থী রূপগুলির সঙ্গে তুলনা করে উক্ত দ্বিতীয় প্রকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করা হত।

একুশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বে বালকপ্রীতি বলতে এর ঐতিহাসিক ধারণার পরিবর্তে সচরাচর সমকামীদের বালককাম বোঝায় — যে ক্ষেত্রে বালক বা কিশোরের বয়স আইনগতভাবে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের নিয়ামক হিসেবে গণ্য। নারী বা পুরুষ যে-ই উদ্যোগী হোক না কেন, আইনবিধৃত বয়সের নিচে কোনো বালক বা কিশোরের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন অধিকাংশ দেশেই দণ্ডযোগ্য অপরাধ এবং শিশু যৌন নিগ্রহের পর্যায়ভুক্ত। তবে দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক পরস্পরে আসক্ত হলে এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে আইনি বিধান অনুপস্থিত।

স্বরূপ

নৃতত্ত্ববিদগণ সমকামিতাকে তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল: বয়ঃকাঠামোগত সমকামিতা, সমদর্শী সমকামিতা এবং লিঙ্গকেন্দ্রিক সমকামিতা।[২][৩] পেডেরাস্টি পুরুষদের বয়ঃকাঠামোগত সমকামিতার প্রধান উদাহরণ।[২] জিওফ্রে গোরের প্রমুখ গবেষকগণ পেডেরাস্টিকে পেডোফিলিয়া বা শিশুকামিতার থেকে পৃথক করে বলেছেন, শিশুকামিতা একপ্রকার ‘চতুর্থ ধরনের মনোবৃত্তি’ এবং তা "লিখিত ইতিহাসের সকল সমাজ ব্যবস্থাতেই গভীর মানসিক অসুস্থতার পরিচায়ক" ("grossly pathological in all societies of which we have record.")। গোরেরের মতে, সমকামী পেডেরাস্টির মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল দুই সঙ্গীর বয়সের পার্থক্য। এই পার্থক্যে প্রজন্মের পার্থক্য হতে পারে, আবার একই বয়ঃশ্রেণীর দুই ভিন্নবয়সী ছেলের বয়সের পার্থক্যও হতে পারে। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি অধ্যয়ন করে তিনি দেখেছেন, পেডেরাস্টি একটি স্বল্পকালস্থায়ী সম্পর্কাবস্থা। এই অবস্থায় কোনো কিশোর বয়োজ্যেষ্ঠ এমন কোনো পুরুষের প্রণয়ীর ভূমিকা পালন করে। এই ভূমিকায় সেই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষটিই হন তার পরামর্শদাতা। কিশোরটি কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক বা মানসিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে না পৌঁছনো পর্যন্ত এই অবস্থা থাকে। তারপর সে নিজেই অপর কোনো কিশোরকে তার প্রণয়ী হিসাবে গ্রহণ করে। গোরের এই মডেলটিকে সামাজিকভাবে দৃশ্য বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ, এই সম্পর্কাবস্থায় সকল অথবা অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই কোনোপ্রকার মনস্তাত্ত্বিক অস্বস্তি বা মনোবিকলন দেখা দেয় না। তিনি আরও বলেছেন, প্রাচীন গ্রিসের মতো কোনো কোনো সমাজব্যবস্থায় পেডেরাস্টি ছিল শিল্পের মুখ্য বিষয়বস্তু এবং কোমল ও উচ্চমানের আবেগগুলির প্রধান উৎস।[৪]

বয়ঃপ্রাপ্তির অনুষ্ঠান, দৈহিক ও নৈতিক পুরুষত্বপ্রাপ্তি, শিক্ষা, সামরিক দক্ষতা ও রীতিনীতি বিকাশের ক্ষেত্রেও একসময় পেডেরাস্টির বিশেষ ভূমিকা থাকত। তবে এর পাশাপাশি কামলালসা চরিতার্থ করার জন্য ছেলেদের বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও এই জাতীয় ঘটনা ক্রীতদাসকরণ বা নপুংসককরণ অবধি গড়ায়। ধ্রুপদি যুগ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, নিকট প্রাচ্যমধ্য এশিয়া, সাম্রাজ্যবাদী চীন, প্রাক-আধুনিক জাপান, ইউরোপীয় নবজাগরণ ও আধুনিক যুগের কবিতা ও শিল্পের একটি চিরন্তন বিষয়বস্তু হল কিশোর বালকদের বিলীয়মান সৌন্দর্য।

গবেষকগণ পাশ্চাত্য সমবয়সী সমকামী সম্পর্কের ঘটনাগুলিকে পেডেরাস্টির ব্যতিক্রম মনে করেন। কারণ অন্যান্য সম্পর্কের তুলনায় এই জাতীয় সম্পর্ক ‘সমকামিতাকে কেবল একপ্রকার আচরণ হিসাবেই গ্রহণ করে না, বরং কোনো ব্যক্তির প্রকৃত সত্ত্বার সহজাত কোনো বিষয় বলে মনে করে।’ (‘assumes that homosexuality is not merely a behavior, but something innate to a person’s real being.’) [৫]

বয়ঃসীমা

কোনো কোনো আধুনিক বিশেষজ্ঞ পেডেরাস্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনিষ্ঠ সঙ্গীটির বয়ঃসীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন "সাধারণত বারো থেকে সতেরোর মধ্যে"।[৬] যদিও ইতিহাস বলে এই সীমারেখাটি ধ্রুব ছিল না। এক অর্থে কনিষ্ঠ সঙ্গীটি বয়স ও মনের অপরিপক্কতা ছিল এই সম্পর্কের এক জরুরি শর্ত। তবে সদ্যযুবক ও পঁচিশ বছরের কম বয়সীরাও এই শ্রেণীভুক্ত ছিলেন।[৭]

প্রাচীন গ্রিসে পেডেরাস্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনিষ্ঠ সঙ্গীটির বয়স হত বারো থেকে সতেরো বা আঠারো বছরের মধ্যে।[৮] রেনেসাঁ ইতালিতে এই ছেলেদের বয়ঃসীমা ছিল চোদ্দো থেকে উনিশ বছর।[৯] আবার জাপানে কনিষ্ঠ সঙ্গীটির বয়স হত এগারো থেকে উনিশ বছরের মধ্যে।[১০]

সামাজিক শ্রেণীগত অবস্থান

এথেন্সে, জন্ম-স্বাধীন বালকদের সঙ্গে পেডেরাস্টিক সম্পর্ক স্থাপন ক্রীতদাসদের কাছে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ ছিল। মধ্যযুগীয় ইসলামি সভ্যতায় পেডেরাস্টিক সম্পর্ক "উচ্চবিত্ত মহলে এতটাই সহজভাবে গ্রহণ করা হত যে তার অস্তিত্বকে লুকাবার চেষ্টা প্রায় করাই হত না।"[১১]

ইতিহাস

পুরুষ ও বালক; কাটো সিমের হার্মিস ও অ্যাফ্রোদিতির মন্দিরে প্রাপ্ত ক্রিটীয় এক্স-ভোটো; ব্রোঞ্জ, খ্রিষ্টপূর্ব ৬৭০-৬৫০ অব্দ

প্রাচীনকালে পেডেরাস্টি ছিল এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনীয় যেখানে অল্পবয়সী বালকেরা বয়জ্যেষ্ঠদের নিকট নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাঠ নিত।[১২] তবে এর পাশাপাশি যৌন প্রবৃত্তি হিসাবেও পেডেরাস্টির প্রচলন ছিল। প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসে প্রথম এই জাতীয় সম্পর্কের কথা জানা যায়। যদিও ক্রিটের কিছু অনুষ্ঠান উপকরণ দেখে ধারণা করা হয় যে ১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ পরবর্তী মিনোয়ান সভ্যতায় এই প্রথা সুপরিচিত ছিল।[১৩] প্লেটোর মতে,[১৪] প্রাচীন গ্রিসে পেডেরাস্টি বলতে বোঝাত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে তার নিকটাত্মীয় নয় এমন কোনো কিশোর বালকের (যৌন অথবা অযৌন) সম্পর্ক। অধিকাংশ গ্রিকই যুগপৎ নারী ও বালকদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক রাখতেন বলে জানা যায়।[১৫] তবে এই রীতির ব্যতিক্রমও ছিল; কেউ কেউ নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই করতেন না, আবার কেউ কেউ বালকের সঙ্গে সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করতেন। প্রাচীন রোমে অল্পবয়সী বালকদের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনের প্রথাটি সামাজিকভাবে সুপ্রচলিত ছিল না। বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষেরা হয় নিজেদের সামাজিক প্রতিপত্তির জোরে তাদের সামাজিক অধস্তনদের দিয়ে নিজেদের যৌনলালসা চরিতার্থ করতেন, নয়তো জন্ম-স্বাধীন বালকদের সঙ্গে স্থাপন করতেন অবৈধ সম্পর্ক।[১৬]

রোমান সম্রাট হ্যাড্রিয়নের প্রেমিক অ্যান্টোনিয়াস (১১০-১৩০ খ্রিস্টাব্দ); ইনি মিশরীয় দেবতার স্তরে উন্নীত হয়েছিলেন।

অপর দুই প্রাচীন জাতি থ্রেসিয়ান [১৭] ও কেল্টদের মধ্যেও এই জাতীয় সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্লুটার্কের মতে, প্রাচীন পারসিকদের মধ্যেও পেডেরাস্টি প্রথা প্রচলিত ছিল। সেক্সটাস এমপিরিকাসের একটি মন্তব্য থেকে জানা যায়, পারসিকদের আইনে এই প্রথা "অনুমোদিত" ছিল।[১৮] যদিও হেরোডোটাসের মতে পারসিকরা বালকসংগম (παισὶ μίσγονται) শিখেছিলেন গ্রিকদের থেকেই।[১৯] জন অ্যাবিংটন সাইমন্ডস মনে করেন, উক্ত শব্দটি ব্যবহার করে আসলে হেরোডোটাস পারসিক পেডেরাস্টিক সম্পর্কপ্রথাটিকে "কদভ্যাস" বলে উল্লেখ করতে চেয়েছেন।[২০] কারণ, গ্রিক পেডেরাস্টি পারসিক প্রথাটির তুলনায় ছিল অনেক সংযত ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধসম্পন্ন। যদিও হেরোডোটাসের মতের বিরোধিতা করে প্লুটার্ক জানিয়েছেন যে গ্রিক রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই পারসিক সমাজে অল্পবয়সী বালকদের নপুংসককরণের প্রথাটি প্রচলিত ছিল।[২১]

পেডেরাস্টির অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গেই যে সব সভ্যতায় এই প্রথা প্রচলিত তার ভিতরে ও বাইরে এর দেহসর্বস্ব দিকটির বিরোধিতাও করা হয়ে থাকে। জেনোফোন [২২] প্রমুখের মতে, খোদ গ্রিসেরই কোনো কোনো শহরে পেডেরাস্টি নিষিদ্ধ ছিল; আবার স্পার্টা প্রভৃতি শহরে পেডেরাস্টির অযৌন রূপটিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে প্লেটোও তার রচনায় প্রিয় বালকদের সঙ্গে যৌনসংগমের নিন্দা করে শেষ পর্যন্ত তার বিরোধিতা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রশংসা করেছেন সেই সব আত্মসংযত প্রেমিকদের যারা তাদের সম্পর্কে দৈহিক সম্পর্কে পর্যবসিত হতে দেয় না।[২৩]

ইহুদিখ্রিষ্টধর্মে সডোমির একাধিক সংজ্ঞা প্রচলিত আছে। কিন্তু এই দুই ধর্মে পুরুষে-পুরুষে পায়ুকাম সহ এই জাতীয় সকল অভ্যাসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলাম ও বাহাই ধর্মেও এই প্রথা নিষিদ্ধ।

ইউস্তেচ লে সুর অঙ্কিত "গ্যানিমিড-হরণ", ১৬৫০ খ্রি., ল্যুভর সংগ্রহালয়, প্যারিস

পায়ুকামিতার এই সার্বিক নিষিদ্ধকরণের মধ্যে পেডেরাস্টিকেও নির্দিষ্টভাবে নিশানা করা হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রচারক ক্লিমেন্ট অফ আলেকজান্দ্রিয়া গ্রিক ধর্ম এবং হেরাক্লিস, অ্যাপোলো, পসেইডন, লাইয়াস, ও জিউস প্রমুখ পুরাণের চরিত্রগুলির নিকৃষ্টতা প্রমাণের জন্য দিব্য পেডেরাস্টির উদাহরণগুলি ব্যবহার করেন: "তোমাদের দেবতারা বালকদেরও সম্ভোগ করতে ছাড়েননি। একজন হাইলাসকে ভালবাসতেন তো আর একজন ভালবাসতেন হায়াসিনথাসকে, একজন ভালবাসতেন ক্রিসিপাসকে তো অপরজনের প্রিয় ছিলেন গ্যানিমিড। আর এঁদেরই পূজা করতে হয় তোমাদের স্ত্রীদের।"[২৪] প্রাচীন দণ্ডবিধিতে পেডেরাস্টির অভিযোগে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার রীতিও প্রচলিত ছিল। ভিসিগথ রাজা চিন্ডাসুইনথের দণ্ডবিধি অনুসারে, এক্ষেত্রে দুই প্রণয়ীকেই "অবিলম্বে পুরুষত্বহীন করে ডায়োসিসের বিশপের হাতে তুলে দেওয়া হত। তারপর তাদের বিচার হত এবং তাদের রেখে দেওয়া হত এক নির্জন কারাকক্ষের অন্তরালে।"[২৫] শাস্তি সংস্কার অর্থাৎ স্যাক্রামেন্ট অফ পানিশমেন্ট পরবর্তী আত্মনিগ্রহের সঙ্গে এই শাস্তির যোগ ছিল। রোমে প্রথম থিওডোসিয়াসের সময়কাল (৩৯০ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে পেডেরাস্টির শাস্তি হিসেবে খুঁটিতে বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়া হত। তবে গোপনে এই প্রথার অস্তিত্ব থেকেই যায়। মধ্যপ্রাচ্যে একটি আদিযুগীয় খ্রিষ্টান প্রবাদবাক্যটির জন্ম হয় তা থেকেই: সুরা আর বালক থাকতে, সন্ন্যাসীদের প্রলোভিত হওয়ার জন্য শয়তানের প্রয়োজন নেই।[২৬]

মুরিশ স্পেনের পেডেরাস্টি প্রথা ছিল উল্লেখযোগ্য।[২৭] রেনেসাঁর যুগে টাসকেনি ও উত্তর ইতালিতেই এই প্রথা প্রচলিত ছিল।[২৮][২৯] মধ্যযুগীয় ও জারশাসিত রাশিয়াতেও পেডেরাস্টি প্রথার লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়।[৩০]

মেইজি পুনঃস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত প্রাক-আধুনিক জাপানেও এই প্রথার প্রচলন ছিল।[৩১]

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও কিশোর বালকের পারস্পরিক যৌন সম্পর্কটি নিয়ে যথাযথ গবেষণা হয়নি। এই কারণে অনেক সময়ই পেডেরাস্টিকে পেডোফিলিয়া বা শিশুকামিতা সঙ্গে এক করে ফেলা হয়। তবে এই ধরনের সম্পর্ক নৈতিকতা, কার্যকরিতা, যুবকল্যাণ, ও পিতামাতার কর্তৃত্ব সংক্রান্ত ইস্যুগুলিরও জন্ম দেয়। কনিষ্ঠ সঙ্গীটির অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে এখানে আইনসংক্রান্ত ইস্যুটিও উঠে আসে। তবে প্রাচীন দার্শনিক, জাপানি সামুরাই ও আধুনিক লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের মতো কোনো কোনো ব্যক্তি সমকামী পেডেরাস্টিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন। কোনো কোনো সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয়, শিক্ষাসংক্রান্ত উৎসাহদান, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিকাশে প্রেমই সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম এবং পুরুষ-বালক সম্পর্ক নারীঘটিত সম্পর্কের অপেক্ষাও শ্রেয়স্কর।

ব্যুৎপত্তি ও ব্যবহার

তথাকথিত ওয়ারেন কাপে অঙ্কিত চিত্রে বালক-পুরুষ যৌনক্রিয়া, রোমান শিল্পকলা, খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী, জেরুজালেমের নিকট প্রাপ্ত বলে কথিত

পেডেরাস্টি শব্দটির ব্যুৎপত্তি παίδ- (বালক[৩২] বা শিশু শব্দের গ্রিক প্রতিশব্দ) এবং ἐραστής (প্রেমিক শব্দের গ্রিক প্রতিশব্দ) শব্দদুটির সন্ধির ফলে। ধ্রুপদি গ্রিক ভাষায় লেখা প্লেটোর দ্য সিম্পোসিয়াম গ্রন্থ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে সরাসরি উত্তরকালীন লাতিন pæderasta শব্দটি সরাসরি কৃতঋণ শব্দ হিসাবে গৃহীত হয় (লাতিন প্রতিবর্ণীকরণে “αί” হল “ae”)। পুরুষ-বালক যৌনসম্পর্ক অর্থে pæderastie শব্দটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হয় রেনেসাঁ পর্বে (উদাহরণ: স্যামুয়েল পারচাসের পিলগ্রিমেজ)। ধ্রুপদি অর্থটি ছাড়াও শব্দটি সঙ্গীদের প্রকৃতি নির্বিশেষে পায়ুসংগমের প্রতিশব্দ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি যৌন গবেষণাগ্রন্থে পুরুষদের "নিজ স্ত্রীর সহিত পেডেরাস্টি"-কে "নারীর পায়ুতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানো" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল।[৩৩]

পেডেরাস্টি কথাটির সাধারণ সংজ্ঞায় প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষের সঙ্গে অল্পবয়সী বালকের যৌন বা দেহসর্বস্ব সম্পর্কের কথাই বলা হয়। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি-র সংজ্ঞা অনুসারে পেডেরাস্টি হল: "Homosexual relations between a man and a boy; homosexual anal intercourse, usually with a boy or younger man as the passive partner." (এক পুরুষ ও এক বালকের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক; সমকামী পায়ুসংগম, সাধারণত [যৌনক্রিয়ায়] অপ্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনকারী একজন বালক বা অল্পবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে।) [৩৪] আবার কনসাইস অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুসারে পেডেরাস্টি হল: "Sexual intercourse between a man and a boy." (পুরুষ ও বালকদের মধ্যে যৌনসংগম)।[৩৫] পেডেরাস্ট অর্থাৎ পেডেরাস্টিতে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কোনো কোনো গ্রন্থে দেহসর্বস্ব রূপটির প্রতিই অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ মেরিয়াম-ওয়েবস্টার (অনলাইন সংস্করণ) অনুসারে পেডেরাস্ট হল: "one who practices anal intercourse especially with a boy" (পায়ুসংগম অভ্যাসকারী, বিশেষত কোনো বালকের সঙ্গে)।[৩৬] অন্যান্য অভিধানে অবশ্য পেডেরাস্টির সাধারণ অর্থটিই দেওয়া হয়েছে। যথা: "homosexual relations between men and boys" (পুরুষ ও বালকদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক) [৩৭] অথবা "homosexual relations, especially between a male adult and a boy or young man." (সমকামী সম্পর্ক, বিশেষত একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং একজন বালক বা অল্পবয়সী যুবকের মধ্যে) [৩৮]। পেডেরাস্টিকে পায়ুসংগমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রসঙ্গে যৌনতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ফ্র্যাঙ্কোর এই প্রবণতাকে "প্রচলিত, তবে ভ্রান্ত" বলে উল্লেখ করেছেন।[৩৯] অন্যদিকে হিবার্লি এটিকে "মূল শব্দের অর্থবিভ্রান্তি এবং এর ঐতিহাসিক প্রয়োগ সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে প্রসূত একটি আধুনিক শব্দ" বলে উল্লেখ করেছেন।[৪০]

সিম্পোসিয়াম দৃশ্যে গ্রিক সমপ্রেম; সমাধিচিত্র, ৪৭৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ; পেস্তুম সংগ্রহালয়, ইতালি

গবেষণামূলক এবং সমাজতাত্ত্বিক সূত্রগুলি থেকে এই শব্দটির আরও প্রসারিত একটি সংজ্ঞা পাওয়া যায়: দি এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার অ্যান্ড কুয়্যার স্টাডিজ গ্রন্থে পেডেরাস্টির সংজ্ঞায় লেখা হয়েছে: "The erotic relationship between an adult male and a youth, generally one between the ages of twelve and seventeen, in which the older partner is attracted to the younger one who returns his affection." (একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে সাধারণত বারো থেকে সতেরো বছর বয়সী কিশোরের কামসম্পর্ক, এই সম্পর্কে বয়োজ্যেষ্ঠ সঙ্গীটি কনিষ্ঠ সঙ্গীটির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কনিষ্ঠ সঙ্গীটি তার ভালবাসা গ্রহণ করে।) [৬] দি এনসাইক্লোপিডিয়া অফ হোমোসেক্সুয়ালিটি অনুসারে, " Pederasty is the erotic relationship between an adult male and a boy, generally one between the ages of twelve and seventeen, in which the older partner is attracted to the younger one who returns his affection, whether or not the liaison leads to overt sexual contact." (পেডেরাস্টি হল একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং সাধারণভাবে বারো থেকে সতেরো বছর বয়সী কোনো কিশোরের মধ্যে কামসম্পর্ক। এই সম্পর্কে বয়োজ্যেষ্ঠ সঙ্গীটি কনিষ্ঠ সঙ্গীটির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কনিষ্ঠ সঙ্গীটিও তার ভালবাসা গ্রহণ করে; এই সম্পর্কের সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক থাকতেও পারে, আবার নাও পারে।) [৪১]

আরও দেখুন

পাদটীকা


🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ