বিক্রয়লব্ধ আয়

অর্থশাস্ত্রহিসাববিজ্ঞানের আলোচনায় বিক্রয়লব্ধ আয় বলতে সাধারণত কোনও প্রদত্ত হিসাবরক্ষণ সময়সীমার মধ্যে কোনও মুনাফা-প্রত্যাশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রয় করে বা ক্রেতাদেরকে সেবা প্রদান করে যে অর্থ অর্জন করে, সেই অর্জিত অর্থকে (receipts) বোঝানো হয়, যার ফলে ব্যবসাটিতে ধনাত্মক নগদ অর্থপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, ব্যবসার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসার মালিক বা মালিকদের মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পায়। এইভাবে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থকে সমুদয় বিক্রয়লব্ধ আয় (Total revenue) বলে। প্রতি একক পরিমাণ পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের ফলে প্রাপ্ত অর্থকে গড় বিক্রয়লব্ধ আয় (Aerage revenue) বলে। বিক্রয়কৃত পণ্যের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পেলে প্রতি একক পরিমাণ অতিরিক্ত পণ্য বিক্রয়ের ফলে সমুদয় বিক্রয়লব্ধ আয় যতটুকু বৃদ্ধি পায়, তাকে প্রান্তিক বিক্রয়লব্ধ আয় (Marginal revenue) বলে। সাধারণত যে মুহূর্তে পণ্য বিক্রয় করা হয় বা সেবা প্রদান করা হয়, সেই মুহূর্তেই বিক্রয়লব্ধ আয় অর্জিত হয়েছে বলে হিসাব করা হয়, ক্রেতার পরিশোধকৃত অর্থ প্রকৃতপক্ষে যে মুহূর্তে বিক্রেতার হাতে আসে, সেই মুহূর্তটিতে নয়।[১][২][৩]

বিক্রয়লব্ধ আয়কে ইংরেজি পরিভাষায় "রেভিনিউ" (Revenue), "সেলস রেভিনিউ" (Sales revenue) বা "টার্নওভার" (Turnover) নামে ডাকা হতে পারে। আন্তর্জাতিক হিসাবরক্ষণ মান (International Accounting Standard) অনুযায়ী কেবল পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদান করেই নয়, বরং সুদ, কৃতিস্বত্ব বা মেধাস্বত্ব সূত্রে প্রাপ্য অর্থ (রয়্যালটি) এবং অংশীদারের প্রাপ্ত লভ্যাংশও বিক্রয়লব্ধ আয় হিসেবে গণ্য হতে পারে।[৪][৫]

নীট আয় (মুনাফা বা ক্ষতি) বলতে সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট হিসাবরক্ষণ সময়সীমার মধ্যে কোনও পণ্য বা সেবা থেকে মোট বিক্রয়লব্ধ আয় থেকে ঐ পণ্য বা সেবার সাথে সম্পর্কিত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য খরচকৃত মোট ব্যয় বিয়োগ করে প্রাপ্ত অর্থকে বোঝায়। হিসাববিজ্ঞানে উদ্বৃত্ত বিবরণীতে বিক্রয়লব্ধ আয় হল মালিকানা স্বত্বের একটি উপবিভাগ। বিক্রয়লব্ধ আয় বৃদ্ধি পেলে মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পায়। সাধারণত আয় বিবৃতির সবচেয়ে উপরের সারিতে বিক্রয়লব্ধ আয়টি লেখা হয়, এটিকে কথ্য ভাষায় "সর্বপ্রথম সারি" বা "উপরের সারি" (Top line) নামেও ডাকা হয়। এর বিপরীতে নীট আয় (স্থূল বিক্রয়লব্ধ আয় থেকে মোট ব্যয়ের বিয়োগফল) আয় বিবৃতির সবচেয়ে নিচের সারিটিতে লেখা হয়, তাই সেটিকে "সর্বশেষ সারি" বা "শেষের সারি" (Bottom line) বলে। কোনও দেশের সরকারের আয়ের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে যে আয় করে, তাকে রাজস্ব (Government revenue) বলে। কোনও সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কোনও দাতব্য সংগঠন দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহবাবদ যে আয় করে, তাকে তহবিল সংগ্রহবাবদ আয় (Fundraising revenue) বলে।

আরও আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রয়লব্ধ আয় বলতে কোনও বিশেষ মান হিসাবরক্ষণ রেওয়াজ কিংবা কোনও সরকার বা সরকারি সংস্থা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়মাবলীর উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর আয়ের কলন বা প্রাক্কলনকে বোঝায়। যে দুইটি হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি বেশি প্রচলিত, যথা নগদভিত্তিক হিসাবরক্ষণ ও বকেয়াভিত্তিক হিসাবরক্ষণ, সেগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়াতে বিক্রয়লব্ধ আয় পরিমাপ করা হয়। যেসমস্ত বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা কর্পোরেশন সবার জন্য উন্মুক্ত বাজারে মালিকানার অংশপত্র (শেয়ার) বিক্রি করে, তাদেরকে আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণভাবে স্বীকৃত হিসাবরক্ষণ মূলনীতিসমূহ বা আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন আদর্শ অনুযায়ী তাদের বিক্রয়লব্ধ আয়ের প্রতিবেদন রচনা করতে হয়। দু তরফা দাখিল পদ্ধতিতে বিক্রয়লব্ধ আয়ের হিসাবগুলি হল সাধারণ খতিয়ান হিসাব যেগুলির সারাংশ কিছু সময় অন্তর অন্তর "বিক্রয়লব্ধ আয়" শিরোনামে আয় বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিক্রয়লব্ধ আয়ের হিসাবের নামে আয়ের প্রকৃতির বর্ণনা দেওয়া থাকে, যেমন "মেরামতি সেবা বাবদ আয়", "ভাড়া বাবদ আয়", "বিক্রয়", ইত্যাদি।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ