বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা এবং তত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে অনুসন্ধান, জ্ঞানার্জন এবং অতীতের জ্ঞান সংশোধন বা একাঙ্গীকরণ সম্পর্কিত কার্যপদ্ধতিকে বোঝায়।[১] “বৈজ্ঞানিক” হতে হলে একটি অনুসন্ধানী প্রক্রিয়াকে অবশ্যই পর্যবেক্ষণযোগ্য, অভিজ্ঞতাভিত্তিক এবং নির্ণয়যোগ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করতে হবে যার উপর যুক্তি প্রয়োগ করা যাবে।[২] একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মধ্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে তথ্য আহরণ ও অনুকল্পের প্রণয়ন-পরীক্ষণ অন্তর্ভুক্ত।[৩]

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে প্রায়ই একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করা হয়

যদিও অনুসন্ধানের অঙ্গনের বৈচিত্র্যের কারণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য থাকতে পারে, কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে অন্যসব জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া থেকে আলাদা করে। বিজ্ঞানীরা কোন অবভাসকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করেন এবং গবেষণার মাধ্যমে এসব প্রকল্পে যাচাই করেন। গবেষণামূলক পদক্ষেপগুলোর পুনরাবৃত্তি আবশ্যক, নইলে পরীক্ষণের ফলাফল ও সিদ্ধান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। প্রয়োজনমতে যেকোন তত্ত্ব একাধিক প্রকল্পকে একই সুতোয় গাঁথতে পারে। এর ফলে আরও নতুন নতুন সব প্রকল্পের অবতারণা ঘটতে পারে এবং প্রকল্পের বিভিন্ন দল প্রাসঙ্গিকতা লাভ করতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একে নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে এবং গবেষণার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখতে হবে যাতে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের যেকোন বিশেষজ্ঞ গবেষণাটিকে মূল্যায়ন করতে পারেন। এতে করে অন্য বিজ্ঞানীরা একই পরীক্ষাটি বারবার করে একই ফলাফল লাভ করে আলোচ্য প্রকল্পটির সত্যতা নির্ণয় করতে পারেন।

ভূমিকা

ইবনে আল-হাইথাম (Alhazen), ৯৬৫–১০৩৯, বসরা.
"আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তি ও তার বর্তমান সাফল্যের পেছনে রয়েছে গ্যালিলিও গ্যালিলির(১৫৬৪-১৬৪২) দ্বারা উদ্ভাবিত এক নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি" —মরিস ক্লাইন[৪]
ইয়োহানেস কেপলার (১৫৭১–১৬৩০)

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রণয়নে ইবনে আল-হাসানের(৯৬৫-১০৩৯) মত পথদ্রষ্টাদের সময় থেকেই সত্যান্বেষণের প্রতি জোড় দেওয়া হয়েছে,

সত্যকে তার নিজের কারণেই অনুসন্ধান করা হয়। যারা কোনো কিছুকে তার নিজের কারণে অনুসন্ধান করে, তার অন্য কিছুতে আগ্রহ বোধ করে না। সত্য দুর্লভ, এটি লাভ করার রাস্তাও বন্ধুর।

[৫]

আলো কীভাবে স্বচ্ছ বস্তুর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়? আলো স্বচ্ছ বস্তুর ভেতর দিয়ে কেবল সরল রেখাতেই প্রবাহিত হয়…. আমরা একে বিশদভাবে “বুক অব অপটিক্স” এ বর্ণনা করেছি। আমরা এখন এর প্রমাণের দিকে দৃষ্টিপাত করি: আলো যখন অন্ধকার কক্ষে রন্ধ্রসমূহ দিয়ে প্রবেশ করে তখন পরিষ্কার বোঝা যায় যে আলো সরল রেখায় ভ্রমণ করে….. এই আলোকে কক্ষের বায়ূমন্ডলের ধূলিকণার মাধ্যমে পরিষ্কার পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

[৬]

বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করার পর আল-হাসান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে আলো স্বচ্ছ বস্তুর ভেতর দিয়ে সরল রেখায় পরিভ্রমণ করে। একটি সরল রৈখিক কাঠিকে আলোক রেখার পাশে রেখে তিনি এই ব্যাপারটি প্রদর্শন করেন।[৭]

কমপক্ষে এক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রুপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুশীলন করা হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা বেশ কষ্টকর। উইলিয়াম হিওয়েল(১৭৯৪-১৮৬৬) তার হিস্ট্রী অব ইনডাকটিভ সায়েন্স(১৮৩৭) এবং ফিলোসফি অব ইনডাকটিভ সায়েন্স(১৮৪০) গ্রন্থে মত প্রকাশ করেন যে আবিষ্কার, বিচক্ষণতা এবং মেধা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রত্যেকটি পদক্ষেপে প্রয়োজনীয়। শুধু মাত্র অভিজ্ঞতার উপর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে দাঁড়া করানো যথেষ্ট না[৮] বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য আরও অনেক কিছু দরকার, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে আমাদের কল্পনাশক্তিও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজে লাগতে পারে।

বিংশ শতাব্দীতে উইলিয়াম হিওয়েলের মতের উপর ভিত্তি করে একটি হাইপোথেটিকো-ডিডাকটিভ মডেল দাঁড় করানো হয়,

. আপনার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করুন: সমস্যাটিকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং পূর্বের ব্যাখ্যাগুলোকে পর্যালোচনা করুন। সমস্যাটি যদি নতুন হয়, তবে দ্বিতীয় ধাপ দেখুন।
. ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুন: নতুন কিছু জানতে না পারলে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করুন।
. ব্যাখ্যা থেকে ভবিষ্যদ্বানী করুন: দ্বিতীয় ধাপটি যদি সত্য হয়, তবে এর পরিণতিতে কি হবে?
. পরীক্ষা: প্রত্যেকটি পরিণতির বিপরীত প্রভাব খুজে বের করার চেষ্টা করুন, এভাবেই আপনার ব্যাখ্যাটি প্রমাণিত হবে। তৃতীয় ধাপকে দ্বিতীয় ধাপের প্রমাণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করাটা একটি যৌক্তিক হেত্বাভাস, যাকে বলে affirming the consequent

এই মডেলটাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ভিত্তি। এক হাজার বছর আগে আল-হাসান প্রথম ও চতুর্থ ধাপের গুরুত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। গ্যালিলিও(১৬৩৮) তার Two New Sciences গ্রন্থে চতুর্থ ধাপের গুরুত্ব দেখিয়েছিলেন। এই মডেলে একটি সম্ভাব্য অনুক্রম হতে পারে ১, ২, ৩, ৪। যদি এর ফলফাফল বহাল থাকে এবং এখনও ভুল প্রমাণিত না হয়, তবে ৩, ৪, ১ অনুক্রম অনুসরণ করা যায়। এর ফলাফল যদি কে ভুল প্রমাণ করে, তবে আমাদেরকে একটি নতুন উদ্ভাবন করতে হবে, সেখান থেকে একটি নতুন কে অবরোহন এবং অবশেষে আবার এর জন্য খোঁজ করতে হবে।

এখানে দ্রষ্টব্য যে এই পদ্ধতি কে চিরকালের জন্য সত্য প্রমাণিত করতে পারে না, এটি শুধু কে মিথা-প্রতিপাদন করতে পারে।[৯](আইন্সটাইন এটাই বুঝিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, “কোন পরিমাণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কখনও আমাকে সঠিক প্রমাণ করতে পারবে না, শুধু একটি পরীক্ষাই আমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারবে”) কার্ল হেমপেল(১৯০৫-১৯৯৭) মনে করেন যে এই মডেলটি অসম্পূর্ণ: এর প্রণয়ন নিজেই আরোহী যুক্তির ফলে হতে পারে। এর ফলে পূর্ববর্তীয় পর্যবেক্ষণের সত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রকৃতিগতভাবেই হবে পরিসংখ্যানসংক্রান্ত[১০] এবং এটি তখন এটি বেইজীয় বিশ্লেষণ(Bayesian analysis) দাবি করবে। এই অনিশ্চয়তার নিরসনে বিজ্ঞানীদেরকে একটি মীমাংসাসূচক পরীক্ষা প্রণয়ন করতে হবে যাতে এটি অপেক্ষাকৃত সম্ভাব্য প্রকল্পকে প্রতিপাদন করতে পারে।

বিংশ শতাব্দীতে লুদভিক ফ্লেক(১৮৯৬-১৯৬১) এবং অন্যরা আবিষ্কার করেন যে আমাদেরকে আমাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে, এবং আমাদেরকে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট হতে হবে।[১১]

ডিএনএর উদাহরণ

ডিএনএর গঠনের আবিষ্কারকে উদাহরণ ধরে নিচে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল,:

সায়েন্স সাময়িকীর স্পন্সর করা “দি কীস্টোনস অব সায়েন্স” প্রকল্প সাময়িকীটি থেকে বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ নির্বাচন করে সেগুলোতে টীকা যোগ করে প্রদর্শন করেছিল নিবন্ধগুলোর বিভিন্ন অংশগুলো কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি বজিয়ে রেখেছিল।"Microbial Genes in the Human Genome: Lateral Transfer or Gene Loss?" নামক নিবন্ধটি[১২] একটি উদাহরণ।

  • ডিএনএর বৈশিষ্ট্যায়ন: জিনের গুরুত্ব যদিও প্রতিষ্ঠিত ছিল, ১৯৫০ এর আগ পর্যন্ত্য এর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল।
  • ডিএনএর প্রকল্প: ক্রিক এবং ওয়াটসন একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেন যে জিনের একটি ভৌত ভিত্তি আছে এবং এটির গঠন সর্পিল।[১৩]
  • ডিএনএর ভবিষ্যদ্বানী: টোবাকো মোজাইক ভাইরাস সম্পর্কে পূর্বের কর্ম হতে ওয়াটসন সর্পিল গঠন নিয়ে ক্রিকের প্রস্তাবনার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন।[১৪] তাই তিনি ৫১তম চিত্রের X-আকৃতির গুরুত্ব অবলোকন করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
  • ডিএনএর পরীক্ষণ: ওয়াটসন ৫১তম চিত্রটি দেখেন।

ডিএনএর পুনরাবৃত্তি নিয়ে "Evaluations and iterations" অংশে আরও উদাহরণ চিত্রায়িত করা হয়েছে।[১৫]

সত্য এবং বিশ্বাস

নিচের চিত্রের সাথে তুলনা করুন

বিশ্বাস পর্যবেক্ষণকে প্রভাবিত করতে পারে; কোন বিশেষ বিশ্বাস ধারণকারী ব্যক্তির কাছে পর্যবেক্ষণের ফলাফলকে তার বিশ্বাসের নিশ্চিত প্রমাণ মনে হতে পারে, যদিও একজন দ্বিতীয় পর্যবেক্ষকের কাছে তা মনে হবে না। গবেষকেরাও স্বীকার করেন যে প্রথম পর্যবেক্ষণটি অযথাযথ হতে পারে এবং এর জন্য দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন অনুভূত হয়।[১৬]

জোসেফ নীডহ্যাম তার সায়েন্স এন্ড সিভিলাইজেশন ইন চায়না গ্রন্থে পার্শ্বের চিত্রটিকে পর্যবেক্ষণের উদাহরণ হিসেবে উত্থাপিত করেন[১৭]: চিত্রটিতে দৌড়ানোর সময়ে ঘোড়ার পদসমূহকে ছড়ানো দেখানো হয়েছে, অথচ Eadweard Muybridge এর স্থিরচিত্রে বিপরীতটাই দেখা যাচ্ছে। দৌড়ানোর সময়ে যে মুহুর্তে ঘোড়ার খুঁড় মাটিকে স্পর্শ করে না, সেই মুহুর্তে তার পাগুলো কাছাকাছি অবস্থান করে, তারা ছড়িয়ে থাকে না। পূর্বের চিত্রগুলো ঘোড়ার দৌড় প্রক্রিয়াকে ভুলভাবে চিত্রায়িত করেছে(এটি পর্যবেক্ষকের পক্ষপাতদুষ্টতার উদাহরণ)।

এটি লূডভিক ফ্লেকের সাবধানবাণীকেই প্রমাণিত করে যে মানুষ তাই দেখে যা সে দেখতে চায় যতক্ষণ না পর্যন্ত্য তার ভুল ধরিয়ে দেওয়া হয়; আমাদের বিশ্বাস আমাদের পর্যবেক্ষণকে প্রভাবিত করে। একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল একটি প্রকল্পকে, যা কিনা বাস্তবতা সম্পর্কে যেকোন প্রস্তাবনা, পুনরাবৃত্তি করার যোগ্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা। এই প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটির সাথে পর্যবেক্ষণের সংঘাতের সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহৃত মৌলিক পদ্ধতিকে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করা যায়। বৈজ্ঞানিক সমাজ এবং বিজ্ঞানের দার্শনিকরা নিম্মের পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শ্রেণীকরণের ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেছেন। এই কার্যবিধির সংগঠন এবং উপাদানগুলো সামাজিক বিজ্ঞান থেকে প্রকৃতি-বিজ্ঞানেই বেশি লক্ষণীয়। নিম্মের উপাদানগুলোর iteration[১৮],[১৯], recursion[২০], interleavings এবং orderings এর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির[২১] চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান[২২],[২৩] গঠন করে:

  • বৈশিষ্ট্যায়ন(পর্যবেক্ষণ[২৪], সংজ্ঞা এবং আলোচ্য বস্তুর পরিমাপন)
  • প্রকল্প[২৫][২৬] (পর্যবেক্ষণের তাত্ত্বিক অথবা প্রাকল্পিক ব্যাখ্যা এবং আলোচ্য বস্তুর পরিমাপন)[২৭]
  • ভবিষ্যদ্বানী(যুক্তি প্রয়োগ, যেমন প্রকল্প অথবা তত্ত্ব থেকে যৌক্তিক অবরোহন[২৮])
  • পরীক্ষণ[২৯](উপরের সবগুলোর যাচাইকরণ)

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রত্যেকটি উপাদানকে “পিয়ার রিভিউ” বা বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এগুলো বিজ্ঞানীদের যাবতীয় কার্যক্রম নয়, বরং এগুলো পরীক্ষণভিত্তিক বিজ্ঞানের(যেমন পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি) কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই উপাদানগুলোকে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।[৩০]

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোন প্রণালী নয়: এর জন্য বুদ্ধি, কল্পনা এবং সৃজনশীলতা আবশ্যক।[৩১] এটি একই সাথে একটি চলমান প্রক্রিয়া, এই পদ্ধতি সবসময় অধিক উপকারী এবং নির্ভুল নকশা-কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করছে। উদাহরণস্বরুপ, আইন্সটাইন বিশেষ এবং সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রণয়ন করে নিউটনের কোন তত্ত্বকে বাতিল করেননি। বস্তুত, বিশাল বড়, অকল্পনীয় রকম ছোট এবং প্রচন্ড গতিময় বস্তুসমূহকে আইন্সটাইনের সমীকরণ থেকে বাদ দিলে(যা নিউটনের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব ছিল না) নিউটনের সমীকরণ ঠিকই বলবৎ থাকে। আইন্সটাইনের কাজ আসলে নিউটনের তত্ত্বগুলোর সম্প্রসারণ এবং সংস্কার ছাড়া কিছুই না, আমরা একারণে নিউটনের তত্ত্বের সত্যতা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে পারি।

উপরের চারটি উপাদানের উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে আরেকভাবে বর্ণনা করা যায়:[৩২]

  1. প্রশ্ন উত্থাপন করতে হবে
  2. তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে(পর্যবেক্ষণ)
  3. প্রকল্প(hypothesis) প্রণয়ন করতে হবে
  4. পরীক্ষা-নীরিক্ষা পরিচালনা করতে হবে এবং উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে
  5. উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হবে
  6. সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। এই সিদ্ধান্তই পরে নতুন প্রকল্পের সূচনা হিসেবে কাজ করবে।
  7. ফলাফল প্রকাশ করতে হবে
  8. পুনঃপরীক্ষা করতে হবে(সাধারণত অন্য বিজ্ঞানীরা এই কাজটি করে থাকেন)

এই কর্মবিন্যাস যদিও একটি সাধারণ প্রকল্প নীরিক্ষণ প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করে[৩৩], বিজ্ঞানের বিভিন্ন দার্শনিক, ইতিহাসবেত্তা এবং সমাজবিজ্ঞানী(যেমন পল ফায়রাবেন্ড) দাবি করেন যে এরুপ বর্ণনার সাথে বাস্তবে বিজ্ঞান চর্চার বিস্তর ফারাক রয়েছে।

একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আবশ্যকীয় কিছু উপাদান হল ক্রিয়া, পর্যবেক্ষণ, মডেল এবং উপযোগীতা বৃত্তি(utility function) যা দিয়ে মডেলকে মূল্যায়ন করা হয়।[৩৪]

  • ক্রিয়া- যে সিস্টেমকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, তার উপর কিছু কাজ করা হয়
  • পর্যবেক্ষণ- সিস্টেমের উপর কৃত ক্রিয়ার প্রভাব লক্ষ্ করা হয়
  • মডেল- কোন বিশেষ মুহুর্তে কোন ফ্যাক্ট, প্রকল্প, তত্ত্ব অথবা অবভাসকে(phenomenon) মডেল ধরা হয়
  • উপযোগীতা বৃত্তি- একটি মডেল কত ভালভাবে ব্যাখ্যা, ভবিষ্যদ্বানী ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং মডেলটি ব্যবহার করতে কি কি করা লাগতে পারে, এটি তাই ইঙ্গিত করে। একটি বৈজ্ঞানিক উপযোগীতা বৃত্তির অন্যতম উপাদান হল মডেলটির খন্ডনযোগ্যতা। আরেকটা হল মডেলটির সারল্য, এ ক্ষেত্রে “অক্কামের ক্ষুর” নীতিটি দ্রষ্টব্য।

বৈশিষ্ট্যায়ন

অনুসন্ধানের বস্তুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করাটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন সাধু এলমোর আগুনকে প্রকৃতিগতভাবে বৈদ্যুতিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, কিন্তু একে প্রমাণ করতে বিপুল পরিমাণে পরীক্ষা পরিচালনা ও তত্ত্ব প্রণয়নের দরকার পড়েছিল। পর্যবেক্ষণকে নির্ভুল রাখার জন্য গণনার কাজকে সাবধানতার সাথে সম্পাদন করা উচিত। এই সুনিপুণ গণনার কাজই অনেক সময় আলকেমির মত অপবিজ্ঞানকে জীববিজ্ঞান কিংবা রসায়নের মত বিজ্ঞান হতে পৃথক করে। বৈজ্ঞানিক উপাত্তুগুলকে সাধারণত সারণিবদ্ধ করা হয়, ছকের মধ্যে উপস্থাপন করা হয় এবং পরিকল্পনা করা হয়(mapping), এরপর এগুলোকে সংশ্লেষ ও নির্ভরণ করা হয়। গণনার কাজগুলো গবেষণাগারের মত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা যেতে পারে, আবার তারকারাজি অথবা জনগোষ্ঠীর মত অনিয়ন্ত্রিত এবং অনভিগম্য বস্তুর উপরও করা হতে পারে। গণনার কাজের জন্য প্রায়ই তাপমানযন্ত্র, বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র এবং ভোল্ট পরিমাপের যন্ত্রের মত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে এবং বিজ্ঞানের বেশ কিছু শাখার অগ্রগতির পেছনে এসব যন্ত্রের উদ্ভাবনেরও ভূমিকা থাকে।

“একটি অথবা দু’টি পর্যবেক্ষণের পরই নির্দিষ্ট করে কিছু বলার অভ্যাস আমার নেই”- আঁন্দ্রে ভেসালিয়াস(১৫৪৬)

[৩৫]

অনিশ্চয়তা

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উপাত্ত পরিমাপের পাশাপাশি এই উপাত্তগুলোর সঠিক হওয়ায় অনিশ্চয়তাও পরিমাপ করা হয়। একটি সংখ্যাকে(quantity) বারবার পরিমাপ করেই এই অনিশ্চয়তা নির্ণয় করা হয়। একটি সংখ্যাকে পরিমাপ করার জন্য অন্য যেসব সংখ্যাকে পরিমাপ করা হয়, সেসব সংখ্যার নিজস্ব অনিশ্চয়তা দিয়েও উদ্ভূত সংখ্যার অনিশ্চয়তা নির্ণয় করা যায়। একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন রাষ্ট্রের নাগরিকের সংখ্যাতেও অনিশ্চয়তা থাকতে পারে কারণ যে পদ্ধতিতে এই সংখ্যা পরিমাপ করা হয়েছে সেই পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

সংজ্ঞায়ন

একটি বৈজ্ঞানিক সংখ্যাকে তার পরিমাপের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন, কোন তড়িৎ-রাসায়নিক যন্ত্রের বিদ্যুৎবহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ রুপার আস্তরণ ঘটে, তার উপর ভিত্তি করেই আমপিয়ারে পরিমাপ করা বিদ্যুৎপ্রবাহকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এরকম সংজ্ঞাকে বলে কার্যপদ্ধতিমূলক সংজ্ঞা(operational definition)। কোন মানদন্ডের সাথে তুলনার মাধ্যমেই কার্যপদ্ধতিমূলক সংজ্ঞাকে নির্ধারণ করা হয়: ভরের কার্যপদ্ধতিমূলক সংজ্ঞা আসলে একতি বিশেষ বস্তুর সাপেক্ষে নির্ধারিত করা হয় এবং এই বস্তুটি হল ফ্রান্সে এক গবেষণাগারে সংরক্ষিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম। একতি শব্দের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও সাধারণ ব্যবহারের মাঝে বিস্তর ফারাক থাকে। যেমন, দৈনন্দিন জীবনে “ভর” ও “ওজন”কে পরস্পরপরিবর্তনীয়ভাবে ব্যবহার করা হলেও গতিবিদ্যায় এগুলোর স্বতন্ত্র্য অর্থ আছে। বৈজ্ঞানিক সংখ্যাগুলো তাদের পরিমাপের একক দ্বারা বৈশিষ্ট্যায়িত হয়।

কিছু ধোঁয়াটে পরিভাষাকে পরিষ্কার করে সংজ্ঞায়িত করার উদ্দেশ্যেও অনেক সময় নতুন নতুন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। যেমন, আইন্সটাই তাঁর আপেক্ষিকতার উপর প্রথম গবেষণাপত্র শুরুই করেছিলেন সাইমুলট্যানীটি ও দৈর্ঘ্য পরিমাপনকে সংজ্ঞায়িত করে। আইজাক নিউটন এই কাজগুলোকে অবহেলা করেছিলেন, “আমি স্থান, কাল, মহাশূণ্য ও গতিকে সংজ্ঞায়িত করছি না কারণ এগুলোর অর্থ সবাই জানে”। আইন্সটাইনের গবেষণাপত্র পরে প্রদর্শন করে যে পরম সময় ও গতি নিরপেক্ষ দৈর্ঘ্যের পরিমাপ প্রায় সঠিক ছিল। ফ্রান্সিস ক্রিক হুশিয়ার করে দিয়েছেন যে কোন বিষয়কে বৈশিষ্ট্যায়ন করার সময় তাকে ভালমত বোঝার আগেই সংজ্ঞায়িত করাটা বিপত্তিকর হতে পারে।[৩৬] চেতনা নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি স্বাধীন চিন্তা থেকে মানুষের দৃষ্টিব্যবস্থায় সচেতনতার উপর মনোযোগ দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন। তিনি তার সাবধানতার উদাহরণ হিসেবে পেশ করেন- জিন। ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের আগে জিন সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান খুবই দুর্বল ছিল; ডিএনএর গঠন নিয়ে গবেষণা করার আগে জিনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গেলে কাজের কাজ কিছু হত না।

বৈশিষ্ট্যায়নের উদাহরণ

ডিএনএর বৈশিষ্ট্যায়ন

ডিএনএর গঠনের আবিষ্কারের ইতিহাস হল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানগুলোর একটি ধ্রুপদী দৃষ্টান্ত: ১৯৫০ সালে মানুষ গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণা থেকে জানতে পেরেছিল যে জিনগত উত্তরাধিকারকে গণিতের ভাষায় প্রকাশ করা যায়। কিন্তু জিনের নির্মাণকৌশল অপরিষ্কার ছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাগের গবেষণাগারে গবেষকরা লবণের স্ফটিক থেকে শুরু করে আরও জটিল বস্তুর রঞ্জনরশ্মির অপবর্তনমূলক চিত্র(X-ray Diffraction) তৈরী করেছিল। যুগ যুগ ধরে অনেক কষ্টসাধ্য তথ্যের সন্নিবেশনের মাধ্যমে গবেষকেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে রাসায়নিক গঠন থেকে শুরু করে ডিএনএর ভৌতিক গঠনও বৈশিষ্ট্যায়িত করা সম্ভব, এবং এক্ষেত্রে বাহন হিসেবে কাজ করবে রঞ্জন রশ্মি

বুধগ্রহের অয়নচলন
অনুসূরের অয়নচলন

বৈশিষ্ট্যায়ন উপাদানটির জন্য বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন, যার জন্য শত অব্দিও লাগতে পারে। পৃথিবীর গতিকে সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য কালদানীয়, ভারতীয়, গ্রীক, আরব ও পারস্য দেশের জ্যোতির্বিদদের সহস্র বছর ধরে পরিশ্রম করতে হয়েছিল। নিউটন পরে এগুলোকে তার গতিসূত্র সমূহের ফলাফল হিসেবে দেখাতে পেরেছিলেন। কিন্তু বুধগ্রহের কক্ষপথের অনুসূর(perihelion) এমন এক প্রকার অয়নচলন প্রদর্শন করে যা নিউটনের গতিসূত্র ব্যাখ্যা করতে পারে না।বুধগ্রহের অয়নচলনের ক্ষেত্রে নিউটোনীয় তত্ত্ব ও অ্পেক্ষিকতাবাদী তত্ত্বের পার্থক্যকে(প্রতি শতাব্দে প্রায় ৪৩ চাপ-সেকেন্ড) আইন্সটাইন তার সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে দেখেছিলেন।

প্রকল্প প্রণয়ন

প্রকল্প হল একটি অবভাসের জন্য প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা, অথবা বিভিন্ন অবভাসের মধ্যে সম্ভাব্য পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশকারী প্রস্তাবনা।সাধারণত প্রকল্পগুলো গাণিতিক মডেলের রুপ ধারণ করে, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। বিজ্ঞানীরা যেকোন উপায়ে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেন- তারা তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে পারেন, অন্য বিষয়ের ধারণা ব্যবহার করতে পারেন, আরোহণ, বেইজীয় অনুমিতি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক বিজ্ঞানীর দৃষ্টান্ত দেখা যায় যাঁরা কোন “আকস্মিক অনুপ্রেরণা” অথবা স্রেফ অনুমানের কারণেই তাদের প্রস্তাবনাকে ভুল প্রমাণ করতে উদ্যত হয়েছেন। উইলিয়াম গ্লেন বলেন,

শুধুমাত্র সত্যতা অথবা পূর্বের কোন ধারণাকে প্রতিস্থাপিত করা কিংবা পরিষ্কার করার মধ্যে একটি সফল প্রকল্পের কোন কৃতিত্ব থাকে না, বরং গবেষণাকর্মকে অনুপ্রাণীত করা এবং অন্ধকারকে দূর করাটাই একটি প্রকল্পের সাফল্য।

[৩৭]

বিজ্ঞানের জগতে একটি তত্ত্বের সৌন্দর্য্য হল তার সরলতা এবং ফ্যাক্টের সাথে তার সৌহার্দ্যতা। অক্কামের ক্ষুর ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সারল্য নির্ধারণ করা হয়।

ডিএনএ প্রকল্প

লাইনাস পাউলিং প্রস্তাব করেন যে ডিএনএর গঠন আসলে একটি “ট্রিপল হেলিক্স”।[৩৮] ফ্রান্সিস ক্রিক এবং জেমস ডি. ওয়াটসন এই সম্ভাবনাকে বিবেচনা করেছিলেন কিন্তু পরে বাতিল করে দেন। তারা যখন পাউলিংয়ের প্রকল্প শুনেছিলেন, পর্যবেক্ষিত উপাত্তুর আলোকে তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে পাউলিংয়ের ধারণা ভুল৪৫ এবং পাউলিং খুব শীঘ্রই তার ভুল বুঝতে পারবেন। এর ফলে ডিএনএর সঠিক গঠনটি আবিষ্কার করার জন্য একটি অনুক্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, তবে পাউলিং এ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

প্রকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বানী করা

যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে, বিশেষ করে অবরোহী যুক্তির মাধ্যমে যেকোন ব্যবহার্য প্রকল্প থেকে কিছু অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। গবেষণাগারে কোন বিশেষ পরিস্থিতে অনুষ্ঠিত একতি পরীক্ষার ফলাফল কি হতে পারে অথবা প্রকৃতিতে আমরা কি দেখতে পারি, তা একটি প্রকল্প থেকেই আমরা জানতে পারব। ভবিষ্যদ্বানীটি প্রকৃতিতে পরিসংখ্যাননির্ভরও হতে পারে এবং শুধুই সম্ভাবনার কথাও বলতে পারে।

এক্ষেত্রে ফলাফলটি অবশই অজানা থাকতে হবে। তবেই কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রকল্পটির সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। ফলাফলটি যদি আগে থেকেই জানা থাকে, তবে একে বিবেচনা করেই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা উচিত ছিল।

প্রকল্পটির ভবিষ্যদ্বানি যদি বর্তমানে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাই করা অসম্ভব হয়, তবে আপাতত প্রকল্পটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে সংঘাতময় হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তির আগমনের জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে।

ডিএনএ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বানী

জ়েমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক সহ অনেকেই অনুমান করেন যে ডিএনএর গঠন সর্পিল। যদি তাই হয়, তবে ডিএনএর রঞ্জন রশ্মি অপবর্তনের নকশা অবশ্যই “x” আকৃতির হবে।[৩৯][৪০] এই ভবিষ্যদ্বানীটি কখরান, ক্রিক এবং ভান্দের কর্ম(এবং স্বাধীনভাবে স্টোক্সের গবেষণা) হতে উদ্ভূত হয়েছিল।১৮ কখরান-ক্রিক-ভান্দ-স্টোক্সের উপপাদ্য এই “x” আকৃতির অপবর্তনের নকশার একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছিল।

তাদের প্রথম গবেষণাপত্রে ওয়াটসন-ক্রিক এও বলেছিলেন যে দ্বৈত সর্পিল গঠন ডিএনএর অনুলিপি তৈরীর প্রক্রিয়াকে সরল করে তুলে।

সাধারণ আপেক্ষিকতা
আইন্সটাইনের ভবিষ্যদ্বানী (১৯০৭): মহাকর্ষ ক্ষেত্রে আলো বেঁকে যায়

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব স্থান-কাল সম্পর্কে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বানী করেছিল, যেমন একটি মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কাছাকাছি আলো বেঁকে যায় এবং এই বেঁকে যাওয়ার হার নির্ভর করে মহাকর্ষ ক্ষেত্রের শক্তির উপর। ১৯১৯ সালে সূর্যগ্রহণের সময় আরথার এডিংটন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বানীকে সত্য প্রমাণ করেন।[৪১]

পরীক্ষণ

ভবিষ্যদ্বানী করার পর সেগুলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল যদি ভবিষ্যদ্বানীর বিরোধিতা করে, তবে প্রকল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং এই বিরোধিতার ব্যাখ্যা খুজে বের করতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল যদি ভবিষ্যদ্বানীর সাথে মিলে যায়, তবে প্রকল্পটির সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এবং এর উপর আরও পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে। “এক্সপেরিমেন্টাল কন্ট্রোল” হল এমন এক পদ্ধতি যা দিয়ে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত ভুল কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন পরিবেশে পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করে দেখে নেওয়া হয় কি কি বদলেছে এবং কি কি বদলায়নি। এর পরে “মিলের পদ্ধতি” ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাকটরটিকে শণাক্ত করা হয়। এই কাজের জন্য আরেকটি বিকল্প পদ্ধতি হল “ফ্যাকটর বিশ্লেষণ”।

পরীক্ষণের ধরন ভবিষ্যদ্বানীর উপর নির্ভর করে। এটি গবেষণাগারে পরিচালিত হতে পারে, “ডাবল-ব্লাইন্ড” পরীক্ষা হতে পারে(এটি এমন এক পরীক্ষা পদ্ধতি যেটি সাধারণত মানুষের উপর করা হয় এবং পরীক্ষক ও পরীক্ষার্থির ব্যক্তিক ধ্যান-ধারণাকে পরীক্ষার ফলাফলের নৈর্ব্যক্তিকতাকে প্রভাবিত করা থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে) আবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননও হতে পারে। এমনকি নিউ ইয়র্ক থেকে পারীতে একটি উড়োজাহাজকে উড়িয়ে নেওয়াও উড়োজাহাজটি নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত বায়ুগতি বিষয়ক প্রকল্পগুলোর পরীক্ষণ হতে পারে।

পরীক্ষণকারীদেরকে অবশ্যই মুক্তভাবে চিন্তা করা ও দায়বদ্ধতা মেনে চলতে হবে। পরীক্ষণের ফলাফলের উপর প্রতিবেদন তৈরী করা এবং পরীক্ষণ পদ্ধতির শুদ্ধতা ও কার্যকারীতার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার জন্য বিস্তারিত হিসাব রাখা লাগবে। এই হিসাবগুলো পুনঃর্পরীক্ষণের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। হিপ্পারকোসের(খ্রীষ্টপূর্ব ১৯০-১২০) পৃথিবীর অয়নচলনের পরিমাণ নির্ধারণে প্রক্রিয়ায় এই সংস্কৃতির কিছু রেশ দেখতে পাওয়া যায়, জাবির ইবন হাইয়ান(৭২১-৮১৫ খ্রীষ্টাব্দ), আল-বাত্তানী(৮৫৩-৯২৯ খ্রীষ্টাব্দ) এবং আল-হাসানের(৯৬৫-১০৩৯ খ্রীষ্টাব্দ) মত আরব বিজ্ঞানীরা প্রথম নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পরিচালনা করেন।

ডিএনএর গঠণের পরীক্ষণ

ওয়াটসন এবং ক্রিক ডিএনএর গঠন নিয়ে তাদের প্রাথমিক(এবং ত্রুটিযুক্ত) প্রস্তাবনাটি কিংস কলেজ থেকে আগত রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন, মরিস উইলকিন্স এবং রেইমন্ড গসলিংয়ের দলটির কাছে পেশ করেন। জলের পরিমাণ সম্পর্কিত ত্রুটিগুলো ফ্রাংক্লিন সাথে সাথেই শণাক্ত করে ফেলেন। পরে ওয়াটসন ফ্রাংক্লিনের করা রঞ্জন রশ্মির অপবর্তনের একটি চিত্রে “X” আকৃতি দেখে ডিএনএর গঠনকে সর্পিল ঘোষণা করেন।[৪২] অবশেষে ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএর গঠনের একটি সঠিক চিত্র দাঁড়া করান।

মূল্যায়ন ও উন্নয়ন

বৈজ্ঞানিক কর্ম-কাঠামোয় একটি কর্মের পুনরাবৃত্তি করা খুবই স্বাভাবিক। যেকোন পর্যায়ে কোন নতুন বিবেচনার কারণে একজন বৈজ্ঞানিক পূর্বের কোন কর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন। একটি কৌতূহোলদ্দীপক প্রকল্প প্রণয়নে ব্যর্থ হলে অথবা প্রকল্পটি কোন যাচাইযোগ্য ভবিষ্যদ্বানী করতে না পারলে একজন বিজ্ঞানী তার গবেষণার বিষয় অথবা প্রকল্পটাকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন।

অন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা প্রক্রিয়ায় যেকোন সময় প্রবেশ করতে পারেন, আবার উক্ত বিষয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণাও শুরু করতে পারেন। তারা বৈশিষ্ট্যায়নটাকে গ্রহণ করে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করতে পারেন, আবার প্রস্তাবিত কোন প্রকল্পকে অবলম্বন করে তাদের ভবিষ্যদ্বানী অনুমান করতে পারেন। প্রায়ই পরীক্ষাগুলো প্রকল্প-প্রস্তাবনাকারী ভিন্ন অন্য কোন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বৈশিষ্ট্যায়নটাও অন্য কারও পরিচালিত পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে করা হয়। পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলগুলোও প্রকল্পে রুপান্তরিত হতে পারে যা তার পুনঃর্পরীক্ষণযোগ্যতা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করতে পারবে।

নিশ্চিত প্রমাণ

বিজ্ঞান একটি সামাজিক উদ্যোগ, প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক কর্ম বিজ্ঞানী সমাজে সাধারণত গৃহীত হয়। এখানে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে তত্ত্ব ও পরীক্ষণের ফলাফলকে অবশ্যই বিজ্ঞানী সমাজের অন্য সদস্যদের দ্বারা পুনরুৎপাদিত হতে হবে। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানী প্রাণ দিয়েছেন; ১৭৫২ সালে করা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ঘুড়ি উড্ডয়নের পরীক্ষাটি ১৭৫৩ সালে পুনরায় পরিচালনা করতে গিয়ে জর্গ উইলহেলম রিখম্যান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৪৩]

অপবিজ্ঞান ও জাল উপাত্তর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এর মত সরকারি গবেষণা অনুদানের প্রতিষ্ঠান এবং নেচারসায়েন্স এর মত প্রোথিতযশা সাময়িকীগুলো একটি নীতি প্রণয়ন করেছে যে গবেষকদেরকে তাদের উপাত্তগুলোকে অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখতে হবে যাতে অন্য গবেষকেরা সেসব উপাত্ত তাদের গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারেন এবং পূর্বের গবেষণাকে সম্প্রসারিত করতে পারেন। বৈজ্ঞানিক তথ্য সংরক্ষণ বিশ্ব তথ্য সংস্থায় করা হয়ে থাকে।

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মডেল

ধ্রুপদী মডেল

আরিস্তোতলই প্রথম একটি ধ্রুপদী মডেল দাঁড় করাতে সাহায্য করেন।[৪৪] তিনিই প্রথম approximate এবং exact যুক্তিবৃত্তির মাঝে পার্থক্য করেন, abductive যুক্তি, আরোহী যুক্তি এবং অবরোহী যুক্তি ব্যাখ্যা করেন এবং উপমার সাহায্যে যুক্তি প্রয়োগ নিয়েও চিন্তা করেন।

প্রায়োগিক মডেল

১৮৭৭ সালে চার্লস স্যান্ডার্স পার্স অনুসন্ধানকে এভাবে বৈশিষ্ট্যায়ন করেন যে এটি আসলে সত্যের অন্বেষণ না, বরং আকস্মিক কোন ঘটনা বা মতবিরোধ থেকে জন্ম নেওয়া সন্দেহ থেকে একটি উদ্বেগমুক্ত বিশ্বাসে উপনীত হওয়া, এমন একটি বিশ্বাস যাকে ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।[৪৫] তিনি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে এরই একটি বিস্তৃত রুপ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি সংশয় মীমাংসার চারটি পদ্ধতির রুপরেখা অঙ্কন করেন, কম কার্যকরী থেকে অধিক কার্যকরীতে যা বিন্যস্ত:-

  1. নাছোড়বান্দার মত নিজের সিদ্ধান্তে অটোল থাকা, বিপরীত মতকে উপেক্ষা করা যেন সত্য প্রকৃতিগতভাবেই একটি ব্যক্তিগত বিষয়।
  2. বলপ্রয়োগ করে মতপার্থক্যের সুরাহা করা
  3. বিরাজমান বৈজ্ঞানিক প্যারাডিমের ভেতরে চিন্তাভাবনা সীমিত রাখা
  4. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি- যা নিজেকে ভ্রমপ্রবণ মনে করে, নিজেকে যাচাই করে এবং নিজের ভুল বের করে তা সংশোধন করে উন্নতির সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

পার্স মনে করতেন যে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রণালীবদ্ধভাবে বিচার করবার প্রক্রিয়া অন্তঃর্জ্ঞান, প্রথা এবং ভাবানুভূতি থেকে নিকৃষ্ট, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুধু তত্ত্বীয় গবেষণার জন্যই প্রযোজ্য।[৪৬] বস্তুত, তত্ত্বীয় গবেষণায় ব্যবহারিক বিষয়াদি টেনে আনা উচিত না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাফল্য হল এটি এমন কিছু সুনিশ্চিত বিশ্বাসে উপনীত হতে সাহায্য করে যার উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায়। মানুষ যে স্বতঃসিদ্ধ কারণ না, বরং অনিশ্চয়তা এড়াতেই সত্যের সন্ধান করে- এই ধারণাকে উপজীব্য করে পার্স দেখিয়েছেন যে এসব অনিশ্চয়তাগুলোই মানুষকে সত্যের পথে চালিত করে, মানুষ তখন সত্যকে এমন একটি অভিমত হিসেবে দেখে যার প্রয়োগ অভিমতটির লক্ষ্যের প্রতিই তাদের পরিচালিত করবে, তাদেরকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করবে না।[৪৭]

পার্স মনে করেন যুক্তিবাদী অনুসন্ধান শুধু যে সত্য এবং বাস্তবতার ধারণা উপর নির্ভর করে তা না, এগুলোকে আকৃতিও প্রদান করে। যুক্তি প্রয়োগ করা মানেই ধরে নেওয়া যে সত্য আবিষ্কারযোগ্য এবং আমাদের বিচিত্র অভিমত হতে স্বতন্ত্র্য। তিনি সত্যকে প্রস্তাবনা ও প্রস্তাবনার বিষয়ের মাঝে ঐক্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার দৃষ্টিতে সত্য কোন নির্দিষ্ট সমাজের ঐকমত্য নয় যাতে করে অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের জরিপে রুপান্তরিত হয়, সত্য এমন কিছু যা বৈজ্ঞানিক বিচারবুদ্ধি অবধারিতভাবে আবিষ্কার করতে পারবে। কেউ হয়ত আগে আবিষ্কার করবে এবং কেউ হয়ত পরে আবিষ্কার করবে, সবাই হয়ত ভিন্ন ভিন্ন কোণ হতে অনুসন্ধান শুরু করবে, কিন্তু সবাই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।[৪৮]

গণনাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী

প্রায়োগিক যুক্তি এবং কমপিউটার বিজ্ঞানের বিভিন্ন উপশাখা, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্র শিক্ষণ(Machine learning), গণনাভিত্তিক শিক্ষণ তত্ত্ব(Machine learning theory), অনুমানসিদ্ধ পরিসংখ্যান(inferential statistics) ও জ্ঞানের উপস্থাপনা(Knowledge representation), বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সাথে সংশ্লিষ্ট অনুমিতিগুলোর জন্য গণনাভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক ও পরিসংখ্যানভিত্তিক কাঠামো গঠন করা নিয়ে কাজ করে। তারা প্রকল্প প্রণয়ন, যৌক্তিক অবরোহন ও প্রায়োগিক পরীক্ষণের ক্ষেত্রে তারা বিশেষভাবে অবদান রাখে। এমন কিছু ব্যবহার আলগরিদমীয় তথ্যতত্ত্বে ব্যবহৃত জটিলতার পরিমাপকে উপজীব্য করে অভিজ্ঞতার সম্ভাবনা বণ্টন হতে ভবিষ্যদ্বানী করতে পারার ক্ষমতা গঠন করে।

বৈজ্ঞানিক সমাজ এবং মিথস্ক্রীয়া

বেশিরভাগ সময়ই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুধু একজন ব্যক্তি দ্বারা প্রয়োগ হয়, একসাথে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে। এই সমস্টিগত কর্মকে বৈজ্ঞানিক সমাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে অভিহিত করা যায়। এরকম পরিবেশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শুদ্ধতা বজিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

পিয়ার রিভিউ মূল্যায়ন

বিজ্ঞান সাময়িকীগুলো পিয়ার রিভিউ নামক একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে যেখানে সাময়িকীর সম্পাদকমন্ডলী বৈজ্ঞানিকের গবেষণাপত্রটি একই বিষয়ে কর্মরত এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞের(সাধারণত তাদের নাম অপ্রকাশিত থাকে) নিকট মূল্যায়নের জন্য পেশ করেন। বিচারকমন্ডলী গবেষণাপত্রটি বাতিল করে দিতে পারেন, সংশোধন করে প্রকাশ করার সুপারিশ করতে পারেন এবং এমনকি, ভিন্ন কোন সাময়িকীতে প্রকাশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন। এর ফলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে অপবিজ্ঞান ও জালিয়াতি থেকে মুক্ত রাখা যায় এবং বড় ধরনের ত্রুটি এড়ানোর পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের উন্নয়নও সাধন করা যায়।

দলিল রচনা এবং প্রতিলিপি তৈয়ারকরণ

মাঝে মাঝে গবেষকগণ পরীক্ষণের সময় পদ্ধতিগত ভুল করতে পারেন, নানা কারণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হতে বিচ্যুত হতে পারে, অথবা কদাচিৎ ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফলকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এই সমস্যাগুলো এড়ানোর জন্য অন্য বিজ্ঞানীরা একই পরীক্ষাটি বারবার পরিচালিত করে একই ফলাফলটির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করেন যাতে করে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

উপাত্ত সংরক্ষণ

এর ফলে বিজ্ঞানীদেরকে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত সংরক্ষণ করে রাখতে হয়, অবশ্যই এক্ষেত্রে সরকারি দাতা সংস্থা ও বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোর নীতি মেনে চলতে হয়। পরীক্ষা পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ, উপাত্ত, পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বিশ্লেষণ, উৎস সংকেত(source code) ইত্যাদি সংরক্ষণ করে পদ্ধতির শুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয় এবং পুনঃপরীক্ষার কাজ সহজ করা হয়।এই তথ্যগুলো প্রকল্পটি যাচাই করার জন্য নতুন পরীক্ষা পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে এবং প্রকৌশলীদেরকেও কোন নতুন আবিষ্কারের সম্ভাব্য প্রায়োগিক ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণা করতে সাহায্য করতে পারে।

উপাত্ত ভাগাভাগি

একটি গবেষণাকে পুনঃপরিচালনা করার আগে বাড়তি উপাত্তর প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে গবেষক তথ্যগুলো ভাগাভাগি করতে বাধ্য থাকবেন। গবেষক বাড়তি উপাত্ত প্রকাশ করতে নারাজ হলে গবেষণাপত্র প্রকাশকারী সাময়িকী কিংবা দাতা সংস্থার কাছে আপিল করা যেতে পারে।

সীমাবদ্ধতা

একজন বিজ্ঞানীর পক্ষে যেহেতু পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত সবকিছু নথিভুক্ত করা সম্ভব না, তাই শুধু প্রাসঙ্গিক বিষয়াদিই প্রকাশ করা হয়। এর ফলে পরে আপাতঃদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক কোন তথ্য চাইলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, হাইন্‌রিশ হের্ৎস ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত কক্ষের আয়তন প্রকাশ করেননি, কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে যে এর ফলে পরীক্ষার ফলাফলের বিচ্যুতিটি খুবই কম। সমস্যা হল যে প্রকাশের জন্য পরীক্ষার পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিরুপণের জন্য তত্ত্বের কিছুকে অংশকে সত্য ধরে অগ্রসর হতে হয়। একারণে পর্যবেক্ষণগুলোকে মাঝেমাঝে “তত্ত্ব ভারাক্রান্ত” হিসেবে অভিহিত করা হয়।

চর্চার মাত্রাগুলো

সমসাময়ীক পশ্চিমা বিজ্ঞান চর্চায় প্রাথমিক সীমাবদ্ধতাগুলো হল:-

  • প্রকাশনা, অর্থাৎ, পিয়ার রিভিউ
  • সম্পদ(মূলত অনুদান)

তবে এই সীমাবদ্ধতাগুলো একেবারেই সাম্প্রতিক, অতীতে অনুদান ও প্রকাশনা হুব একটা বড় সমস্যা ছিল না। যে সব কর্ম এই মাত্রাগুলো অতিক্রম করে, সেগুলো সহজে অনুদান পাবে না এবং প্রকাশনার মুখও দেখবে না। সাময়িকীগুলো সাধারণত “সুস্থ বিজ্ঞান চর্চা” এর বাইরে বেশি কিছু দাবি করে না এবং পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই চর্চা অক্ষুণ্ন রাখা হয়। মৌলিকতা, গুরুত্ব এবং কৌতূহোলদ্দীপকতা বেশি জরুরী- উদাহরণ হিসেবে নেচার এর লেখক নির্দেশনাটি দ্রষ্টব্য।

এই সীমাবদ্ধতাগুলোর সমালোচকরা বলেন যে এগুলোর সংজ্ঞা মোটেই সুনির্দিষ্ট নয়, এগুলো খুব সহজেই আদর্শিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে পারে, যে এগুলো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার চেয়ে নিরুৎসাহিত করে।

বিজ্ঞানের দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির যুক্তির ভিত্তি, বিজ্ঞান ও অবিজ্ঞানের পার্থক্য এবং বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত নীতির উপর বিজ্ঞানের দর্শন দৃষ্টিপাত করে। দর্শন থেকে কিছু অনুমিতি বিজ্ঞানের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে-

  1. বাস্তবতা ব্যক্তিনিরপেক্ষ এবং নিয়মিত রীতিমাফিক
  2. মানুষের পক্ষে বাস্তবতাকে সঠিকভাবে অবলোকন করা সম্ভব
  3. বাস্তব জগতের ঘটনাগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা সম্ভব।

প্রকৃতিবাদ থেকে নেওয়া এই অনুমিতিগুলোই বিজ্ঞানের শক্তি। যৌক্তিক ইতিবাদী, অভিজ্ঞতাবাদী এবং মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্যতাবাদী তত্ত্ব বিজ্ঞানের যুক্তির একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি করেছে, এবং সেগুলো সমালোচিতও হয়েছে।

ইমর লাকাতস এবং টমাস কুন পর্যবেক্ষণের “তত্ত্ব ভারাক্রান্ত” প্রকৃতি নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। কুন(১৯৬১) বলেছেন যে একটি তত্ত্বকে মাথায় রেখেই একজন বিজ্ঞানী কিছু প্রায়োগিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য পরীক্ষা পরিচালনা কাজ সম্পাদন করে থাকেন এবং এই তত্ত্ব থেকে পরিমাপে যাওয়ার রাস্তায় কখনওই পশ্চাৎগমন করা যায় না। অর্থাৎ, তত্ত্বের প্রকৃতিই নির্ধারণ করে তাকে কীভাবে পরীক্ষা করতে হবে।

পল ফায়রাবেন্ড অস্বীকার করেন যে বিজ্ঞান একটি পদ্ধতিভিত্তিক প্রক্রিয়া। তার এগেইন্সট মেথড বইয়ে তিনি দাবি করেন যে কোন বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধিত হয়নি। তিনি মনে করেন যে যতই কোন বিশেষ পদ্ধতির কথা বলা হোক না কেন, সফল বিজ্ঞান সবসময়ই সেই পদ্ধতি লঙ্ঘন করে এগিয়েছে।

১৯৫৮ সালে রসায়নবিদ এবং দার্শনিক মাইকেল পোলানি(১৮৯১-১৯৭৬) তার পারসোনাল নলেজ বইতে দাবি করেন যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মোটেই বস্তুনিষ্ঠ না এবং এটি মোটেই নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞানের জন্ম দেয় না। তিনি এই জনপ্রিয় ধারণাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রকৃতি সম্পর্কে বিভ্রান্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন যে বিজ্ঞানীরা ব্যক্তিগত অনুরাগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জ্ঞানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং গবেষণা করার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নির্বাচন করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য একটি মুক্ত কাঠামো প্রয়োজনীয়- স্বতঃসিদ্ধ উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান চর্চা করাটা পিয়ার রিভিউ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টির জন্য পূর্বাবশ্যক।

বিজ্ঞানের উত্তরাধুনিক সমালোচনাগুলো নিজেরাই প্রচন্ড বিতর্কিত। এই বিতর্কের প্রধান কারণ হল উত্তরাধুনিক ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মূল্যবোধ ও অনুমিতির মাঝে সংঘাত। যেখানে উত্তরাধুনিকরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে স্রেফ একটি সাধারণ “ডিসকোর্স” হিসেবে দেখেন(এক্ষেত্রে শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে) এবং দাবি করেন যে এটি কোন মৌলিক সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে না, বৈজ্ঞানিক সমাজে বাস্তববাদীরা ঠিক উল্টোটাই দাবি করেন। উত্তরাধুনিকদের যুক্তি৮ খন্ডন করে এবং বিজ্ঞানকে সত্য অন্বেষণের একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে ঘোষণা করে অনেক বিজ্ঞানী লেখালেখি করেছেন।[৪৯]

ইতিহাস

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপক্রম বিজ্ঞানের ইতিহাস হতে অবিচ্ছেদ্য। প্রাচীন মিশরীয় দলিলাদি জ্যোতির্বিজ্ঞান[৫০], গণিত[৫১] ও ঔষধশাস্ত্রে[৫২] অভিজ্ঞতাবাদী পদ্ধতি বর্ণনা করে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থেলিস প্রাকৃতিক অবভাসের অতিপ্রাকৃতিক, ধর্মীয় ও পৌরাণিক ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেন, তিনি দাবি করেন যে প্রত্যেকটি ঘটনারই একটি প্রাকৃতিক কারণ থাকে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য প্লাতো দ্বারা অবরোধী যুক্তির(deductive reasoning) সূচনাটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরিস্ততলের হাতেই খুব সম্ভবত অভিজ্ঞতাবাদের জন্ম হয়েছিল, তিনি বিশ্বাস করতেন যে আরোহণের(induction) মাধ্যমে সর্বজনীন সত্য লাভ করা সম্ভব।

পরীক্ষাভিত্তিক ও পরিমাপভিত্তিক কর্মপদ্ধতি আরব অঞ্চলের মুসলমান বিজ্ঞানীদের কর্মেই প্রথম পরিলক্ষিত হয় যা তারা বিভিন্ন প্রতিযোগী প্রকল্পের মাঝে পার্থক্যকরণের জন্য ব্যবহার করেন, আল-হাসানের “বুক অব অপটিক্স”(১০২১) এ বর্ণিত তার পরীক্ষাগুলোর মধ্যে এর নিদর্শন দেখা যায়।[৫৩] সপ্তদশ ও অষ্টদশ শতকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উদয় ঘটে। ফ্রান্সিস বেকন তার নোভাম অরগানাম গ্রন্থে, যা আরিস্তোতলের অরগানন এর অভিসম্বন্ধ, সহানুমান(syllogism) নামক এক পুরনো দার্শনিক প্রক্রিয়ার উন্নয়নের লক্ষ্যে এক নতুন ধরনের যুক্তির অবতারণা করেন। এরপর ১৬৩৭ সালে রনে দেকার্ত তার ডিসকোর্স অন মেথড গ্রন্থে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পথপ্রদর্শক নীতিগুলোর অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করেন। আল-হাসান, বেকন এবং দেকার্তের লেখালেখির পাশাপাশি জন স্টুয়ার্ট মিলের কর্মকেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ঐতিহাসিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হয়।[৫৪]

ঊনবিংশ শতাব্দীর অগ্রভাগে চার্লস স্যান্ডার্স পার্স এমন একটি ছক প্রস্তাব করেন যা বর্তমানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পার্স বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগতিকে ত্বরাম্বিত করেন। হাউ টু মেইক আওয়ার আইডিয়াস ক্লিয়ার (১৮৭৮) গ্রন্থে পার্স একটি নৈর্ব্যক্তিভাবে যাচাইযোগ্য পদ্ধতি প্রস্তাব করেন যার মাধ্যমে অনুমিত জ্ঞানের সত্যতা পরীক্ষা করা যাবে আরোহণ ও অবরোহনকে ভিত্তি করে। এভাবে তিনি অবরোহন ও আরোহণকে প্রতিযোগী থেকে সহযোগীতে রুপান্তরিত করেন(অষ্টদশ শতকের মধ্যভাগে হিউমের সময় হতে অবরোহন ও আরোহণকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হত)। পার্স প্রকল্প পরীক্ষার পদ্ধতিও প্রস্তাব করেন যা এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে।

কার্ল পপার প্রমাণ[৫৫] ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির[৫৬] অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। পপার মনে করেন জ্ঞান অন্বেষণের জগতে শুধু একটি পদ্ধতিই আছে - প্রচেষ্টা ও ত্রুটি সংশোধন (ট্রায়াল অ্যান্ড এরর Trial and Error)। বিজ্ঞান, গণিত, দর্শন, শিল্প প্রভৃতি মানব মনের সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রাণের বিবর্তনও এই পদ্ধতি মেনে চলে। ১৯৩০ এর দিকে তিনি যুক্তি দেখান যে প্রায়োগিক তত্ত্বগুলোকে অবশ্যই মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য হতে হবে এবং আরোহী যুক্তি বলে আসলে কিছু নেই। পপারের মতে বিজ্ঞানের সব অনুমিতি আসলে প্রকৃতিগতভাবে অবরোহী।

গণিতের সাথে সম্পর্ক

পর্যবেক্ষণীয় বস্তু ও অবভাসের বিপরীতে বিভিন্ন মডেল প্রণয়ন, তুলনা ও বিশ্লেষণ করাই বিজ্ঞান। একটি মডেল সিমুলেশন হতে পারে, এক ঝাঁক প্রস্তাবিত পদক্ষেপের সমষ্টি হতে পারে আবার রাসায়নিক অথবা গাণিতিক সূত্রও হতে পারে। বিজ্ঞানের সাথে গণিতের সাদৃশ্য এখানে যে গবেষকরা আবিষ্কারের প্রত্যেকটি পর্যায়ে জানা ও অজানা এর মাঝে পার্থক্য করতে পারেন। এই দু’টো শৃঙ্খলেই মডেলগুলোর অভ্যন্তরীন সঙ্গতি থাকতে হবে এবং সেগুলোকে অবশ্যই মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য হতে হবে। গণিতে একটি অপ্রমাণিত বিবৃতিকে অনুমান বলা হয়, কিন্তু একবার প্রমাণিত হলে এটি খুব উচ্চ আসনে আসীন হয় এবং কিছু গণিতবিদ এদের প্রতি নিজেদেরকে আজীবন নিবেদিত রাখেন।[৫৭]

গণিত ও বিজ্ঞান একে অপরকে অনুপ্রাণিতও করতে পারে।[৫৮] যেমন, সময়ের কলাকৌশলগত ধারণাটি বিজ্ঞানে জন্ম নিয়েছিল, আর সময়হীনতা হল গণিতের একটি বৈশিষ্ট্য।

তথাপি গণিত ও বাস্তবতার(অতএব বিজ্ঞান, অন্তত যতটুকু পর্যন্তা তা বাস্তবতাকে বর্ণনা করে) মাঝে যোগসূত্রটা এখনও ধূসর। একজন নোবেল জয়ী পদার্থবিদের দৃষ্টিভঙ্গী হিসেবে ইউজিন উইগনারের অভিসন্দর্ভ দ্যা আনরিজনেবল এফেকটিভনেস অব ম্যাথমেটিক্স ইন দ্যা ন্যাচারাল সায়েন্সেসটি দ্রষ্টব্য। বস্তুত, গ্রেগোরী চৈতিনের মত নামকরা গণিতবিদ মনে করেন যে গণিত আসলে চর্চাকারীর বিশেষ দুর্বলতা এবং মানুষের সীমাবদ্ধতার(যার মাঝে সংস্কৃতিও অন্তর্ভুক্ত) ফল, যার সাথে বিজ্ঞান নিয়ে উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনার সাদৃশ্য রয়েছে।

সমস্যা সমাধান[৫৯], গাণিতিক প্রমাণের নির্মাণ ও আবিস্করণবিদ্যা(heuristic)[৬০][৬১] নিয়ে জর্জ পলিয়ার গবেষণা প্রদর্শন করে যে গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাঝে সুবিস্তর ফারাক থাকলেও পদ্ধতিগত কিছু পদক্ষেপের পুনঃব্যবহারের ক্ষেত্রে এ দু’টোর মাঝে মিল রয়েছে।

গাণিতিক পদ্ধতিবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
1উপলদ্ধিঅভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ হতে বৈশিষ্ট্যায়ন
2বিশ্লেষণপ্রকল্প: একটি প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা
3সংশ্লেষণঅবরোহন: প্রকল্প হতে ভবিষ্যদ্বানী
4পর্যালোচনাপরীক্ষণ এবং যাচাইকরণ

পলিয়ার মতে, কোন কিছু উপলদ্ধি করা মানে আসলে অপরিচিত সংজ্ঞাগুলোকে আপনার নিজের ভাষায় রকাশ করা, গাণিতিক চিত্র ব্যবহার করা এবং আমাদের জানা ও অজানা বিষয়াদি নিয়ে প্রশ্ন করা; বিশ্লেষণ মানে হল আবিস্করণীবিদ্যার পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা প্রণয়ন করা, লক্ষ্য হতে পশ্চাতে গিয়ে কাজ করা এবং প্রস্তাবনাটিকে প্রমাণ করার পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করা; সংশ্লেষণ হল প্রমাণটির ইউক্লিডীয় পর্যায়ভিত্তিক ব্যাখ্যা৭৯, পর্যালোচনা হল ফলাফলটি ও ফলাফলটিতে উপনীতি হওয়ার পথটিকে পুনঃর্বিবেচনা করা এবং পুনঃপরীক্ষা করা।

কার্ল ফ্রিডরিশ গাউসকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি কীভাবে তার উপপাদ্যগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন,

প্রণালীবদ্ধ, বোধগম্য পরীক্ষণের মাধ্যমে[৬২]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ