ব্যাংক
ব্যাংক (প্রচলিত অপর বানান: ব্যাঙ্ক) হলো এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ মানুষের সঞ্চয় এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এই কর্মপ্রক্রিয়ায় ব্যাংক আমানত সরবরাহকারীকে সুদ প্রদান করে এবং ঋণ গ্রহণকারীর নিকট থেকে সুদ আদায় করে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজেই ব্যাবসায়ে বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করে।[১]
ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও ঋণ সেবার বাইরেও বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে যার মধ্যে প্রধান হলো দুই পক্ষের মধ্যে লেন-দেন সম্পন্ন করা। যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক ক্রেতা কর্তৃক বিক্রেতাকে পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিশ্চিত করে। এছাড়া ব্যাংক রাষ্টীয় সঞ্চয়েরও হেফাযতকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে।
আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংক একটি দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেননা অর্থনীতির বিকশের জন্য প্রয়োজন উৎপাদনখাতে বিনিয়োগ আর ব্যাংকের কাজ হলো উক্তরূপ বিনিয়োগের জন্য পুঁজি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা। তাই দেশের আর্থিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে রাষ্ট্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন করে যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা।
ইতিহাস
আধুনিক যুগের চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ব্যাংকিং পদ্ধতির উন্মেষ ঘটে মধ্যযুগ এবং রেনেসাঁর শুরুতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ হতে ৪০০ সাল পর্যন্ত প্রাচীন সিন্ধু, গ্রিক, রোমান, ব্যাবিলন ও চীন সভ্যতায় ব্যাংকের অস্তিত্বের ইতিহাস পাওয়া গিয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিক, বেবিলন ও মিশরীয় সভ্যতায় ব্যাংকিং কার্যাবলীর যথেষ্ট প্রমাণ লক্ষ্য করা যায়। সে সময়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়গুলোকে কেন্দ্র করে ব্যাংক ব্যবসায় গড়ে উঠে। এরূপ উপাসনালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যাংক ব্যবসায়কে বলা হতো 'উপাসনালয় ব্যাংকিং'। প্রাচীন কালে চীন দেশীয় সভ্যতায় ব্যাংকের ইতিহাস লক্ষণীয়। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালে চীন দেশে প্রতিষ্ঠিত 'শান্সী ব্যাংক' এর প্রমাণ।
ব্যাংকিং ইতিহাসের ৪০০ সাল হতে ১৪০০ সাল পর্যন্ত সময়কে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যযুগ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত সময় হতেই ব্যাংকের কার্যাবলী উন্নত হতে শুরু করে। উক্ত সময়ে ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে ইটালীয় প্রজাতন্ত্রগুলো ব্যবসায় বাণিজ্যের দিক থেকে খুব উন্নত ছিল।[২] খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে ইটালিয় রোম শহরে ইহুদী ব্যবসায়ী ও মহাজনগণ যৌথ উদ্যোগে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। ১১৫৭ সালে ভেনিস সরকারের প্রচেষ্টায় 'ব্যাংক অব ভেনিস' প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বিশ্বের প্রথম সংগঠিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।[৩]
আধুনিক যুগের চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ব্যাংকিং পদ্ধতির উন্মেষ ঘটে মধ্যযুগ এবং রেনেসাঁর শুরুতে ইটালীর উত্তরাঞ্চলের ধনী শহর বিশেষ করে ফ্লোরেন্স, ভেনিস এবং জেনোয়ায় ব্যাংকিং প্রথা শুরু হয়। বর্দি এবং পেরুজি পরিবার চতুর্দশ শতকে ফ্লোরেন্সের ব্যাংকিং জগতে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। তারা ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিল।[৪] এছাড়াও, অধিকাংশ জনপ্রিয় ইতালীয় ব্যাংকই ছিল 'মেডিসি ব্যাংকের' নিয়ন্ত্রণে। ১৩৯৭ সালে 'গিওভেন্নী মেডিসি' ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] শুরুর দিকে পরিচিত রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় ব্যাংক হিসেবে রয়েছে 'ব্যাংকো ডি স্যান জিওর্জিও' (ব্যাংক অব সেন্ট জর্জ)। ব্যাংকটি ১৪০৭ সালে ইটালীর জেনোয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়।[৬]
১৪০০ সাল থেকে ব্যাংক ব্যবস্থার আধুনিক যুগের সূচনা হয়। ১৪০১ সালে 'ব্যাংক অব বার্সিলোনা' প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্যাংকের কার্যাবলী বিস্তৃত হতে থাকে। এ ব্যাংককেই বিশ্বের সর্বপ্রথম আধুনিক ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিতকরা হয়। ১৪০৭ সালে 'ব্যাংক অব জেনোয়া' ১৬০৯ সালে 'ব্যাংক অব আমস্টার্ডাম', ১৬১৯ সালে 'ব্যাংক অব হামবুর্গ' প্রতিষ্ঠিত প্রথম সনদপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ১৬৫৬ সালে সুইডেনে 'ব্যাংক অব সুইডেন' প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরে ২৭ জুলাই, ১৬৯৪ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বের প্রথম আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়।[৭] সুইডেনের স্ভেরিজেস রিক্সব্যাংকের পর ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিশ্বের ৮ম প্রাচীন ব্যাংক।[৮] পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্যাংক হিসেবে মন্টে ডেই পাসচি ডি সিয়েনা চিহ্নিত হয়ে আছে। এর সদর দফতর ইতালির সিয়েনায়। ১৪৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি এখনও আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে আসছে।[৯] ১৭৩৪ সাল থেকে সিটি অব লন্ডনের থ্রেডনিডল স্ট্রিটে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সদর দফতর অবস্থিত। মুদ্রানীতি প্রণয়নসহ এটি সরকারের যাবতীয় ঋণ পরিশোধ, নোট তৈরি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ করছে।[১০][১১][১২][১৩]
ব্যুৎপত্তি
মধ্যযুগের ইংরেজি হিসেবে ব্যাংক (Bank) শব্দটি বিভিন্ন ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে শব্দটি কবে, কোথায় এবং কীভাবে উৎপত্তি হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংকিং ইতিহাসের কোনো সঠিক ও ধারাবাহিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হইনি। যতটুকু সংগ্রহ করা হয়েছিল তা অনেকটা অনুমান ভিত্তিক। অনেকে মনে করেন প্রাচীন লাতিন ব্যাংকিং, ব্যাংকা, ব্যাংকাস ইত্যাদি শব্দের আধুনিক রুপই হলো আজকের ব্যাংক শব্দটি।
ব্যাংক শব্দটি উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা প্রচলিত মতবাদ হচ্ছে, রেনেসাঁ যুগে ইটালীর লোম্বার্ডী (Lombardy) নামক স্থানে অবস্থিত বাজারের মধ্যে ইহুদী ব্যবসায়ীগণ লম্বা বেঞ্চ পেতে টাকা পয়সার লেন্দেন করত।[১৪] বেঞ্চের উপরিভাগ সবুজ টেবিলক্লথ দিয়ে ঢাকা থাকতো।[১৫][১৬] এ বেঞ্চকে ইটালীর ভাষায় ব্যাংকো (Banco) বলা হতো। টাকা পয়সা লেনদেনের কাজ যে বেঞ্চে বসে সম্পন্ন করা হতো তার বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম ছিল যথাঃ ব্যাংকো, ব্যাংকা, ব্যাংকাছ ইত্যাদি। এ শব্দগুলোর মধ্যে ব্যাংকো শব্দটিই সর্বাধিক প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে এ ব্যাংকো হতেই ব্যাংক শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। কোন ব্যবসায়ী তার পাওনাদারদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে জঙ্গণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে ব্যবসায়ীর বেঞ্চ ভেঙে ফেলত। এ বেঞ্চ ভাঙ্গা থেকে 'দেউলিয়া' শব্দের উৎপত্তি হয়। ব্যাংক ইংরেজি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ নদীর কূল, তীর বা কিনারা হলেও বর্তমানে ব্যাংককে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রকারভেদ
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক দেখা যায়। কাজের ধরন, পরিচালনা পদ্ধতি ও নীতিমালার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম ব্যাংক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল:
- বাণিজ্যিক ব্যাংক
- বিনিয়োগ ব্যাংক
- মার্চেন্ট ব্যাংক
- বিশেষায়িত ব্যাংক
- সমবায় ব্যাংক
- সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক
- কমিউনিটি উন্নয়ন ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- অফশোর ব্যাংক
ব্যাংকিং
সাধারণত ব্যাংকের কার্যাবলীকে ব্যাংকিং হিসেবে অবিহিত করা হয়। ব্যাংকসমূহ সময়ের সাথে সাথে গ্রাহক চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা বা পরিষেবা দিয়ে আসছে। সচরাচর ব্যাংক নিম্নোক্ত ব্যাংকিং সেবাসমূহ দিয়ে থাকেঃ
- খুচরা ব্যাংকিং-ব্যক্তি এবং ছোট ব্যবসায়ে প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবা;
- ব্যবসায় ব্যাংকিং- মাঝারী ব্যবসায়ে প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবা;
- কর্পোরেট ব্যাংকিং- বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবা;
- বিনিয়োগ ব্যাংকিং- আর্থিক বাজার সম্পর্কিত ব্যাংকিং কার্যক্রম।
বেসরকারী উদ্যোগে গঠিত ব্যাংকসমুহের ব্যাংকিং কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন করা, অন্যদিকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে জনগণকে ব্যাংকিং সেবা দেয়া।
মূলধন ও ঝুঁকি
ব্যাংকসমূহ তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকির মুখোমুখি হয়। ব্যাংকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করা। বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেক ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দ্বারা নির্ধারিত পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে।
গ্রাহক ঝুঁকি
বর্তমানে সময়ে ব্যাংকিং পরিষেবার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। এমতাবস্থায় শুধু ব্যাংক নয় ঝুঁকির মুখে রয়েছে ব্যাংক গ্রাহকরাও। এমন বহু মানুষ আছেন যারা ইন্টারনেটে ব্যাংকের সাহায্য প্রদানকারী নম্বর খোঁজেন, অনেকেই সময়ই তাদের সম্মুখে ফেক ওয়েবসাইটে চলে আসে এবং তাতে দেয়া জালি নম্বরে ফোন করে গ্রাহক প্রতারণার খবর মিডিয়াতে বহুবার সামনে এসেছে।[১৭][১৮] এছাড়াও, ব্যাংক অন্যান্য যেসকল ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
- ক্রেডিট বা ঋণ ঝুঁকি
- তারল্য ঝুঁকি
- বাজার ঝুঁকি
- পরিচালনাগত ঝুঁকি
- সুনামের ঝুঁকি
- সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি
অর্থনীতিতে ব্যাংক
ব্যাংকের অর্থনৈতিক কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে:[১৯][২০]
- টাকা বা মুদ্রা ইস্যু: একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ দেশের মুদ্রা বা টাকা ইস্যু ও প্রবর্তন করে।[২১] অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ গ্রাহকের আদেশে ব্যাংক নোট এবং চলতি হিসাবের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে। ব্যাংকের এই কার্যক্রম অর্থ হিসাবে কাজ করে, কারণ চেক হস্তান্তরযোগ্য একটি বিনিময় মাধ্যম যা চাহিদার ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য এবং নির্দিষ্ট মূল্য বহন করে। ফলে এগুলো মুদ্রার মতই কাজ করে। এগুলি কেবল ডেলিভারির মাধ্যমে, ব্যাঙ্কনোটের ক্ষেত্রে, অথবা চেক আঁকার মাধ্যমে যে অর্থদাতা ব্যাঙ্ক বা নগদ হতে পারে তা কার্যকরভাবে স্থানান্তরযোগ্য।
- পেমেন্ট নিষ্পত্তি: ব্যাংকসমূহ গ্রাহকদের পক্ষে অর্থ সংগ্রহকারী এবং প্রদানকারী উভয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থা যেমন-নিকাশ ঘর বা স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রাহকের পক্ষে অভ্যন্তরীণ অর্থ আদান-প্রদান এবং সুইফট ও অনন্যাও মাধ্যমে বৈদেশিক লেনদেন সম্পূর্ণ করে থাকে। ফলে, একদিকে এটি আদান ও প্রদানের মধ্যে সমন্বয় করতে সহায়তা করে এবং অন্যদিকে প্রদান ব্যবস্থার খরচও কমিয়ে দেয়।
- ঋণ মধ্যস্থতা: ব্যাংক মধ্যস্থতাকারী হিসাবে অর্থনীতির উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে সেগুলো অর্থনীতির ধাটতি অংশে বা ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে।
- ঋণের মান উন্নতি: ব্যাংক সাধারণ ভালো বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক বৈচিত্রতার নীতি অনুসরণ করে যাতে ঋণ বিভিন্ন শ্রেণিতে এবং মেয়াদে ভাগ হয়ে যায়। এতে ঋণ ফেরত না আসার ঝুঁকি কমে। এভাবে ব্যাংক ঋণের মান উন্নতিতে অবদান রাখে।
- অন্যান্য কার্যাবলী: উল্লেখিত কার্যাবলী ছারাও অর্থনীতিতে ব্যাংক কর্মসংস্থান তৈরি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ ভুমিকা পালন করে।
নিয়ন্ত্রণ ও প্রবিধান
বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি কর্তৃপক্ষ দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথমত, ব্যাংক পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। ব্যাংক পরিচালনায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা এবং সময়ে সময়ে আর্থিক কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত প্রবিধান ও বিভিন্ন নিয়ম কানুন কঠোরভাবে পরিপালন করতে হয়। অন্য যেকোনো শিল্প বা ব্যবসায়িক সত্তা থেকে ব্যাংকিং ব্যবসায় অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। কারন ব্যাংক সাধারণ জনগণের টাকায় ব্যবসা করে। ফলে, ব্যাংক শিথিল নিয়ন্ত্রণ বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চললে জনগণের টাকা ঝুঁকিতে পরবে। দেশভেদে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্তা চালু আছে।
একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে একটি ব্যাংক লাইসেঞ্চ পেতে হয়। লাইসেন্স পেতে নিন্মক্ত ধাপ অনুসরণ করতে হয়:
- ন্যূনতম মূলধন
- ন্যূনতম মূলধন অনুপাত
- ব্যাংকের মালিক, পরিচালক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য 'ফিট অ্যান্ড প্রপার' নীতিমালা পূরণ করা;
- ব্যাংকের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে যথেষ্ট বিচক্ষণ এবং যুক্তিযুক্ত হিসাবে অনুমোদন করা।
লাইসেন্স পরবর্তী ব্যাংকিং কার্যক্রম সাধারণত নিন্মক্ত আইন ও প্রবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়:
- ব্যাংক কোম্পানি আইন
- হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন
- ব্যাংকার্স বুক এভিডেন্স আইন
- বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন এবং
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারিকৃত বিভিন্ন নীতিমালা ইত্যাদি।
অন্যদিকে, ব্যাংক ও গ্রহকদের মধ্যে কার্যক্রম সাধারণত ব্যাংকিং আইন অনুসারে পরিচালিত হয়। এছাড়াও চুক্তি আইনের কিছু ধারাও এখানে কার্যকর হয়। ব্যাংকিং আইন অনুসারে ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্কের একটি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এখানে গ্রাহক বলতে যেকোনো ব্যেক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যে বা যারা ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে এবং পরিচালনা করে।
ব্যাংক শিল্পের চ্যালেঞ্জ
ব্যাংক শিল্পের নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঋণ খেলাপি, প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, পরিচালনাগত ঝুঁকি ইত্যাদি। পদ্ধতিগতভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে ঋণ খেলাপি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ব্যাংকিং খাতে আর্থিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেইসাথে আর্থিক খাতে প্রযুক্তিগত ঝুকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জালিয়াতি করে হ্যাকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে।
ব্যাংকিং শিল্পের বিশ্বায়ন
আধুনিক যুগে ব্যাংকিং শিল্পে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা প্রতিদিনই ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নতি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং পরিষেবা সরবারহ করছে। ব্যাংকিং শিল্পে যদিও এখনো অন্যান্য শিল্পের মত বিশ্বায়ন হয়নি, তবুও সময়ের সাথে সাথে ব্যাংকিং শিল্প বিশ্বায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।[২২]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- Guardian Datablog – World's Biggest Banks
- Banking, Banks, and Credit Unions from UCB Libraries GovPubs
- A Guide to the National Banking System ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০১৩ তারিখে (PDF). Office of the Comptroller of the Currency (OCC), Washington, D.C. Provides an overview of the national banking system of the USA, its regulation, and the OCC.