মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীকরণ
মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীকরণ হল গ্রহ প্রযুক্তিবিদ্যার একটি অনুমানাত্মক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশের একটি বড়ো অংশকে মানুষের বাসযোগ্য করার জন্য মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠতল ও জলবায়ুকে সুচিন্তিতভাবে পরিবর্তিত করার চিন্তা করা হয়, যাতে ওই গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন অধিকতর নিরাপদ ও স্থিতিশীল হয়।
মানবজাতি সামনের শতকে নিজেদের অস্ত্বিত অন্য গ্রহসমূহে নিয়ে যাবার চিন্তা থেকেই মঙ্গল গ্রহকে পৃথিবীকরণের উদ্দ্যেশে নেমেছে।মানবজাতির চূড়ান্ত উন্নতির একটি ধাপ হবে মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীকরণ এর মধ্য দিয়ে । এর লক্ষ্যে নাসা , স্পেস এক্স, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র , সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেকগুলো দেশ এবং প্রতিষ্ঠান তাদের মহাকাশ যান মঙ্গলে পাঠিয়েছে।বিশ্বের বড় বড় দেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালইয়গুলোতেও রোবটিক্সবিদ্যা পড়ানো হচ্ছে এই লক্ষ্যে যে এই রোবট দিয়ে গবেষণা করে আরো দ্রুত মঙ্গলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।
পৃথিবীকরণের যে কয়েকটি ধারণা রয়েছে, তার মধ্যে কতকগুলির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ-সংক্রান্ত বাধা বিদ্যমান।[১] ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের পৃথিবীকরণ সম্ভবপর নয়।[২] বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি এবং তার ফলে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প বৃদ্ধির মাধ্যমে যে গ্রিনহাউস উষ্ণায়ন সম্ভব, তার দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহে যথেষ্ট পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নেই যা ফিরিয়ে এনে বাস্তবক্ষেত্রে গ্রহটির উষ্ণায়ন ঘটানো সম্ভব।[২]
প্রেরণা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সম্পদের চাহিদা এবং পৃথিবী ধ্বংস-সংক্রান্ত পরিস্থিতির বিকল্প হিসাবে পৃথিবীর বাইরে মঙ্গল, চাঁদ ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর উপর মানুষের বসতি স্থাপন করা প্রয়োজন। মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে সৌরজগতের শক্তি ও ভৌত উপাদান সংগ্রহ সহজ হবে।[৪]
অনেক দিক থেকেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলির তুলনায় মঙ্গল গ্রহের সঙ্গেই পৃথিবীর সাদৃশ্য বেশি। মনে করা হয়[৫] যে, অতীতে এই গ্রহের পরিবেশ আরও বেশি পরিমাণে পৃথিবী-সদৃশ ছিল। সেই সময় এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল অধিকতর ঘনীভূত ছিল এবং প্রচুর পরিমাণে জলও বিদ্যমান ছিল। বায়ুমণ্ডলের এই ঘনত্ব ও জল কোটি কোটি বছরের কালক্রমে বিলীন হয়ে যায়। সাদৃশ্য ও নৈকট্যের ভিত্তিতে সৌরজগতে পৃথিবীকরণের সম্ভাব্য প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে অন্যতম এই মঙ্গল গ্রহ।
পৃথিবীকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মঙ্গল গ্রহে যদি স্থানীয় জীবনের অস্তিত্ব থাকে এবং সে জীবন যদি অনুজীবীয় জীবনও হয়, তবে সেই জীবনের সম্ভাব্য স্থানচ্যুতি বা অবলুপ্তি।[৬][৭][৮][৯]
বাধা ও সীমাবদ্ধতা
মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ এই গ্রহের পৃথিবীকরণের সামনে বেশ কিছু বাধা উপস্থাপন করেছে এবং কয়েকটি প্রধান পরিবেশ-সংক্রান্ত কারণে এই গ্রহের পৃথিবীকরণের সুযোগও সীমাবদ্ধ হয়ে। পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলিকে অতিক্রম করতে পারলে তবেই এই গ্রহের পৃথিবীকরণ সম্ভব:
- হ্রাসপ্রাপ্ত আলোক মাত্রা (পৃথিবীর প্রায় ৫৯%),[১০]
- পৃষ্ঠভাগের অভিকর্ষজ টানের নিম্ন হার (পৃথিবীর ৩৮%),
- বিষাক্ত বায়ুমণ্ডল,
- বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর তুলনায় ১০০ গুণ কম (আর্মস্ট্রং সীমার অনেক নিচে),
- পৃষ্ঠভাগে আয়নায়িত সৌর ও মহাজাগতিক বিকিরণের আঘাত,[১১]
- গড় তাপমাত্রা −৬৩ °সে (২১০ K; −৮১ °ফা) (যেখানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৪ °সে (২৮৭ K; ৫৭ °ফা)),[১২]
- আণবিক অস্থিরতা – পরমাণুগুলির বন্ধন জৈব যৌগের মতো সংকট অণুতে ভেঙে পড়ে,
- তরল জলের অভাব,
- সর্বব্যাপী ধূলিঝড়,
- প্রাকৃতিক খাদ্য উৎসের অভাব,
- বিষাক্ত মাটি,[১৩][১৪]
- সৌর বায়ু প্রতিহত করতে সক্ষম সর্বব্যাপী চৌম্বক ক্ষেত্রের ঢালের অভাব।
নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও চাপ
মঙ্গল গ্রহে শ্বাসকার্য
মহাজাগতিক আবহাওয়ার প্রভাব প্রতিহতকরণ
সুবিধা
প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া ও কৌশল
অ্যামোনিয়া আমদানি
হাইড্রোকার্বন আমদানি
ফ্লুয়োরিন যৌগসমূহের ব্যবহার
কক্ষতলস্থ আয়নার ব্যবহার
অ্যালবেডো হ্রাসকরণ
অনুদানপ্রাপ্ত গবেষণা: ইকোপয়েসিস
বায়ুমণ্ডল রক্ষণ
এল১ কক্ষপথে চৌম্বক ঢাল
আরোও দেখুন
- জ্যোতিঃউদ্ভিদবিজ্ঞান
- মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন
- মঙ্গল গ্রহ অভিযান
- মার্স টু স্টে
- শুক্র গ্রহের পৃথিবীকরণ
- মঙ্গল গ্রহের জনবসতি
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ওয়েব্যাক মেশিনে NASA – Aerospace Scholars: Terraforming Mars (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৭ তারিখে আর্কাইভকৃত)
- Recent Arthur C Clarke interview mentions terraforming
- Red Colony
- Terraformers Society of Canada
- Research Paper: Technological Requirements for Terraforming Mars
- Peter Ahrens The Terraformation of Worlds