মমি

মানুষ বা প্রাণী যার চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করা হয়েছে

মমি হলো একটি মৃতদেহ যা জীবের শরীরের নরম কোষসমষ্টিকে জলবায়ু (বায়ুর অভাব অথবা অনাবৃষ্টি অথবা মৌসুমীয় অবস্থা) এবং ইচ্ছাকৃত কারণ (বিশেষ দাফন প্রথাগুলো) থেকে রক্ষা করে। অন্যভাবে বলা যায়, মমি হলো একটি মৃতদেহ যা মানবিক প্রযুক্তির মধ্যে অথবা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস এবং হ্ময়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।মমি হল ওষুধে মাখানো কাপড়ে জড়ানো মৃতদেহ।

মমি
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা একটি মমি
জয়পুরের অ্যালবার্ট হল মিউজিয়ামে মমি

মমি শব্দের উৎপত্তি

মমি শব্দটি মধ্যে যুগের লাতিন শব্দ mumia থেকে এসেছে, যা আরবী শব্দ মুমিয়া (مومياء) এবং পারস্য ফার্সি ভাষা মোম (موم) থেকে আনা হয়েছে[১] যার অর্থ হলো বিটুমিন।

ইতিহাস

Xinjiang Uygur Autonomous Region Museum Urumqi Xinjiang China 新疆 乌鲁木齐 新疆维吾尔自治区博物馆 - panoramio (2)
Spirit Cave Mummy

স্পিরিট কেভ মমি হল উত্তর আমেরিকার নেভাডার স্পিরিট গুহায় আবিষ্কৃত প্রাচীনতম মানব মমি যা প্রায় ৯৪০০ বছর পুরানো।[২] চিলি এবং দক্ষিণ পেরুর চিনচরোদের মমি প্রায় ৭,০০০ বছরের পুরনো এবং প্রাচীন মিশরের মমিদের তুলনায় দুই হাজার বছরের পুরনো।[৩] চিনচরোদের মমি তৈরির প্রক্রিয়াটি খ্রিস্ট-পূর্ব ১৮০০ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে তাদের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।[৪]

মিশরে প্রাপ্ত প্রথমদিকের মমিটি ৫০০০ বছর আগেকার। চীনে তারিম অববাহিকায় আবিষ্কৃত মমিগুলিকে তারিম মমি বলা হয়।বর্তমান জিনজিয়াং অঞ্চলের একটি কবরস্থান থেকে ৪০০০ বছরেরও বেশি পুরানো ২০০ টিরও বেশি তারিম মমি খনন করা হয়েছিল। [৫] ইউরোপের প্রাচীনতম প্রাকৃতিক মমিটি অস্ট্রিয়ান-ইতালীয় সীমান্তের ওটজতাল আল্পসে আবিষ্কৃত হয়েছিল, মমিটি একটি ৫৩০০ বছর বয়সী পুরুষের। ফিলিপাইনের ফায়ার মমি, কাবায়ান মমি, বেঙ্গুয়েট মমি বা ইবালোই মমি নামেও পরিচিত যা ৪০০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল [৬]


মমি তৈরির পদ্ধতি

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রাচীন মিশরীয়রা মমি তৈরির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বের করেন। কয়েকটি ধাপে এই মমি বানানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতো।প্রথমে মৃতব্যক্তির নাকের মাঝে ছিদ্র করে মাথার ঘিলু ও মগজ বের করা হতো। এ ক্ষেত্রে লোহা জাতীয় জিনিসের সহায়তা নেয়া হতো। তারপর মৃতদেহের পেটের বাম পাশে কেটে ভেতরের নাড়িভুড়ি বের করে ফেলা হতো। এরপর শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন: ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলি ইত্যাদি বের করা হতো। এসব অঙ্গ বের করার পর আবার পেট সেলাই করে দেয়া হতো। এক্ষেত্রে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করতো। কারণ পেট সেলাই করতে গিয়ে যদি পেটের ভেতর বাতাস ঢুকে যায়, তাহলে মৃতদেহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো। অতঃপর মৃতদেহ ও বের করা অঙ্গগুলোতে লবণ মেখে শুকানো হতো। যখন সব ভালোভাবে শুকিয়ে যেতো, তখন গামলা গাইন গাছের পদার্থ ও বিভিন্ন প্রকার মসলা মেখে রেখে দেওয়া হতো। চল্লিশ দিন পর লিনেনের কাপড় দ্বারা পুরো শরীর পেঁচিয়ে ফেলা হতো। এরপর তারা মমিগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখতো।[৪]

আধুনিক মমি

জেরেমী বেন্থাম মৃত্যুর পর তার মমিকৃত হবার আকাঙ্ক্ষা ছিল।

জেরেমী বেন্থাম

১৮৩০-এর দশকে, উপযোগবাদবাদের প্রতিষ্ঠাতা জেরেমী বেন্থাম, তার মৃত্যুর পরবর্তীকালের জন্য যে নির্দেশাবলী দিয়ে গিয়েছিলেন তদনুসারে তার মৃত্যুর পরে শবটি আধুনিক কালের একটি মমি তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল। তিনি চেয়েছিলেন যে তার শবটি উদাহরণ হিসাবে প্রদর্শিত হবে কীভাবে "অজ্ঞতায় শবব্যবচ্ছেদে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়"; একবার এভাবে প্রদর্শন এবং বক্তব্যের পর, তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে তার কঙ্কাল সহ তার শরীরের অংশগুলি ( তার মাথার খুলি ছাড়া, যেটি ভুলভাবে সংরক্ষিত করাছিল তার পায়ে নিচের অংশে, যতক্ষণ না চুরির কারণে অন্যত্র সংরক্ষিত করা হয়) সহ, সংরক্ষণ করা হয়[৭] সাধারণত তিনি যে পোশাক পড়তেন তার সাথে এবং তার ভাষায় "একটি আরামকেদারা সাধারণত যাতে আমি বসতাম, যখন মনোভাবটি এমন যে আমি বসে আছি চিন্তা মগ্ন হয়ে।" তার শরীরটি একটি মোমের মাথা সমেত লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে উন্মুক্ত প্রদর্শন করা হয়, কারণ বেন্থহামের অনুরোধে মাথাটি তৈরি করার সমস্যাগুলির কারণে প্রস্তুত হয় নি।

ভ্লাদিমির লেনিন

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, নিকোলাই ফুডোরোভিচ ফুডোরভের বিবৃতি অনুসারে মহাজাগতিকবাদের রাশিয়ান আন্দোলনটি, মৃত ব্যক্তির বিজ্ঞানসম্মত পুনরুজ্জীবনের কল্পনা করে। ধারণাটি এত জনপ্রিয় ছিল যে, ভ্লাদিমির লেনিনের মৃত্যুর পর, লিওনিড কাসাসিন এবং আলেকজান্ডার বোগদানভ ভবিষ্যতে তাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তার শরীর ও মস্তিষ্ককে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন। [৮] প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিদেশে কেনা হয়েছিল, কিন্তু বিভিন্ন কারণের জন্য পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করা হয়নি। [৮] এর পরিবর্তে মস্কোতে লেনিন সমাধিসৌধের স্থায়ী প্রদর্শনীতে তার শরীরের সুগন্ধি বস্তু দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়, যেখানে এটি আজকের দিনেও প্রদর্শিত আছে। সমাধিসৌধটি আলেক্সি শ্যাশেভের দ্বারা জোসের পিরামিড এবং সাইরাসের সমাধির অনুকরণে নকশাকৃত।

গটফ্রেড নিকচে

১৯ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলার গটফ্রেড নিকচে নামে একজন জার্মান বংশোদ্ভূত চিকিৎসক লা গুয়ারার কাছে বনভূমিতে তার গবেষণাগারে মমি বানানোর পরীক্ষা করেন। তিনি শবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি অপসারণ না করে একটি সুবাসিত সংরক্ষণকারী তরল দ্বারা (অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের সংমিশ্রনের উপর ভিত্তি করে) শবকে মমিকৃত করার পদ্ধতি বিকশিত করেছিলেন। তার প্রস্তুত করা তরলের সূত্র কখনো প্রকাশ হয় নি এবং আবিষ্কার করা হয় নি। কয়েক ডজন মমি ওই তরলটি (তার এবং তার পরিবারের সহ) দিয়ে তৈরি হয়েছিল যেগুলি শিল্পবিনষ্টকারী এবং লুটেরাদের দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয়েছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ