মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য
মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য (১ ডিসেম্বর ১৮৫৮ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪)[১] ছিলেন বাঙালি হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও এক দানশীল ব্যক্তিত্ব। [২] তবে নিজের উপার্জিত অর্থে দেশ ও দশের সেবায় ব্যয় করে যে আদর্শ স্থাপন করেছেন তা অনন্য।
মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ | (বয়স ৮৫)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবসায়ী |
পরিচিতির কারণ | সমাজসেবক |
দাম্পত্য সঙ্গী | হরসুন্দরী ভট্টাচার্য |
পিতা-মাতা | ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত (পিতা) রামমালা দেবী (মাতা) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
মহেশ ভট্টাচার্যের জন্ম বৃটিশ ভারতের তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ত্রিপুরার অন্তর্গত (বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার) বিটঘরে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১ লা ডিসেম্বর (১৭ ই অগ্রহায়ণ, ১২৬৫ বঙ্গাব্দ)। তার পিতা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত সুপণ্ডিত ছিলেন এবং মাতা রামমালা দেবী দেব দ্বিজে ভক্তিপরায়ণ নারী ছিলেন। পিতা-মাতার সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ তার জীবনে প্রভাব বিস্তার করেছিল বেশি। ছয় বৎসর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ ঘটে। দারিদ্রের কারণে তাই প্রথাগত শিক্ষায় বেশিদূর এগোতে পারেন নি। তবে পিতার আদর্শ সম্বল করে মানব জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে নিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবন সাধনায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, জনগণের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
কর্মজীবন
নিঃসম্বল অবস্থায় ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্বল্পমূল্যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান এম ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোম্পানি গড়ে তোলেন। [৩] পরে কুমিল্লা ও ঢাকাতে এর শাখা খোলেন এবং বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হন।
কিন্তু নিজে কৃচ্ছ্রসাধন করে জীবন কাটিয়ে মহেশচন্দ্র জনহিতকর কাজে লিপ্ত ছিলেন। বৈষয়িক উন্নতির চেয়ে জ্ঞানচর্চার উন্নতিকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে নিজের আয়ের বড় অংশ নিয়মিত ব্যয় করে গেছেন প্রজন্মের শিক্ষা বিস্তারের পেছনে।
পিতার স্মৃতিতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে গরিব ছাত্রের জন্য কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন "ঈশ্বর পাঠশালা"। ১৯১২ এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা শহরের শাকতলায় মায়ের নামে স্থাপন করেন "রামমালা গ্রন্থাগার" ও "রামমালা হস্টেল"। অবিভক্ত ভারতে এই গ্রন্থাগার অজানা ইতিহাসের উজ্জ্বল নিদর্শনের সাক্ষী হয়ে আছে।[৪] নারী শিক্ষার জন্য ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তার আনুকূল্যে কুমিল্লায় স্থাপিত হয় নিবেদিতা গার্লস স্কুল ও নিবেদিতা ছাত্রী নিবাস। নিজ গ্রামে শুরু করেন শিক্ষা সংসদ। ভারতের বারাণসীর কাশীধামে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর পাঠশালা টোল।
পানীয়জলের অভাব দূর করতে সেসময় নিজ গ্রামে বহু পুষ্করিণী খনন করিয়েছিলেন। যখন তীর্থভ্রমণে বৈদ্যনাথধাম গেলেন, দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রতিদিন চারশত-পাঁচশত মানুষের আহার্য্যের ব্যবস্থা করেন। শীতকালে গরীব মানুষের জন্য শীত বস্ত্র প্রদানের ব্যবস্থা করতেন। ভ্রমণেচ্ছুক যাত্রীদের চার-পাঁচ দিন থাকার জন্য ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কালীঘাট হস্টেলের ব্যবস্থা করেন। বারাণসীতে স্ত্রী হরসুন্দরীর নামে এক ধর্মশালা প্রতিষ্ঠা করেন। মহেন্দ্রলাল সরকার, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয় কুমার দত্ত এবং বটকৃষ্ণ পাল প্রমুখ বাংলার পুণ্যলোক ব্যক্তিত্বের মত মহেশচন্দ্র তার ব্যবসায় অর্জিত অর্থের বড় অংশ গরিবদের চিকিৎসায়, বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণে এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রদানে নিঃস্বার্থভাবে দান করতেন।
গ্রন্থতালিকা
মহেশচন্দ্র স্বল্প মূল্যে হোমিওপাথিক ওষুধ বিক্রয়ের পাশাপাশি শিক্ষিত অপেশাদার ব্যক্তিকেও হোমিওপ্যাথিতে আকৃষ্ট করতে হোমিও চিকিৎসা সংক্রান্ত পুস্তক তথা ফার্মাকোপিয়া বাংলা, ভারতীয় অন্য ভাষায় ও ইংরেজীতে প্রকাশ করেন। তিনি বাংলায় যে চারটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন সেগুলি হল -
- ‘’পারিবারিক চিকিৎসা’’
- ‘’স্ত্রীরোগ চিকিৎসা’’
- ‘’হোমিওপ্যাথিক ওলাওঠা চিকিৎসা’’
- ‘’পারিবারিক ভেষজতত্ত্ব’’
"আত্মকথা" (মাই লাইফ) নামে এক আত্মজীবনীও রচনা করেছিলেন তিনি। [৫]
সম্মান
তার পারিবারিক সংস্থা এম ভট্টাচার্য এন্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়ায় (পশ্চিমবঙ্গ) তার স্মরণে 'মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [৬] বাংলাদেশে তার জন্মভূমিতে 'বিটঘর দানবীর মহেশ চন্দ্র বিদ্যাপীঠ' কলেজ হিসাবে উন্নীত হয়েছে।
মৃত্যু
মহেশ ভট্টাচার্য ৮৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ ভারতের বারাণসীতে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন।