মান্দোপপ

মান্দোপপ বা মান্দাপপ (ইংরেজি: Mandopop বা Mandapop) বলতে ম্যান্ডারিন ভাষার জনপ্রিয় সঙ্গীতকে বোঝায়। ১৯৩০-এর দশকের সাংহাই-এর জ্যাজ-প্রভাবিত জনপ্রিয় সঙ্গীত থেকে এই ধারাটির উৎপত্তি হয়েছে যা শিদাইকু নামে পরিচিত। পরবর্তীতে জাপানের এনকা, হংকংয়ের ক্যান্টোপপ, তাইওয়ানের হোক্কিয়েন পপ দ্বারা এটি প্রভাবিত হয়েছে। নামের পপ শব্দাংশটি ইংরেজি ভাষার পপুলার শব্দ থেকে এসেছে। তাই সাধারণভাবে এটি ম্যান্ডারিন ভাষার জনপ্রিয় সমস্ত সঙ্গীতকে নির্দেশ করে। ১৯৮০ এর দশকে ক্যান্টোপপ (ক্যান্টোনিজ ভাষার জনপ্রিয় সঙ্গীত নির্দেশে ব্যবহৃত) শব্দটি জনপ্রিয় হওয়ার পর ম্যান্ডারিন ভাষার জনপ্রিয় সঙ্গীত নির্দেশের জন্য মান্দোপপ শব্দটি সৃষ্ট হয়।

মান্দোপপ
প্রথাগত চীনা華語流行音樂
সরলীকৃত চীনা华语流行音乐

এটির উৎপত্তি চীনের সাংহাই অঞ্চলে হলেও হংকং, তাইপে ও বেইজিং এ এটি বিকাশ লাভ করেছে। মান্দোপপ চীনের মূল অংশ ছাড়াও হংকং, মাকাও, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামে জনপ্রিয়।

ইতিহাস

চীনে রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রির শুরু

চীনা সঙ্গীত অঙ্গন যাত্রা শুরু করে গ্রামোফোন আবিষ্কারের পর থেকে। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চে চীনের সাংহাইতে সর্বপ্রাচীন গ্রামোফোন রেকর্ড ধারণ করা হয়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে লাবাসাঁত নামের একজন ফরাসি ব্যক্তি 'পাথে রেকর্ডস' নামের একটি রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তৎকালীন চীনের প্রধান রেকর্ডিং কোম্পানি।[১] এটি প্রথমদিকে শুধু 'পেকিং অপেরা সঙ্গীত' রেকর্ড করতো কিন্তু পরে ম্যান্ডারিন ভাষার অন্যান্য জনপ্রিয় সঙ্গীত ধারণ করা শুরু করে। এরপর অনেক বিদেশী এবং চীনের নিজস্ব রেকর্ডিং কোম্পানি গড়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চীনে বিভিন্ন উপভাষা প্রচলিত ছিলো। সাংহাই অঞ্চলের মানুষ সাংহাইনীয় উপভাষায় কথা বললেও ১৯২০ দশকের পর থেকে পপ সঙ্গীত সাধারণত ম্যান্ডারিন ভাষায় ধারণ করা হতো। কারণ ম্যান্ডারিনকে তখন আধুনিক শিক্ষিত সমাজের ভাষা মনে করা হতো।[২] ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত চীনা প্রজাতন্ত্র যখন শিক্ষাক্ষেত্রে ম্যান্ডারিন ভাষা শিক্ষা চালু করে তখন ভাষাগত একীভূতকরণ আরও বেগবান হয়।[৩] '৩০ এর দশকে নানজিং সরকার চলচ্চিত্রে উপভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কারণে সবাক চলচ্চিত্রে শুধু ম্যান্ডারিন ভাষার ব্যবহার শুরু হয়।[৪] ফলশ্রুতিতে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সব গান ম্যান্ডারিন ভাষায় ধারণ করা হত।

জো শুয়ান, প্রাক-সাংহাই সময়কার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কন্ঠশিল্পী।

১৯২০ এর দশক: সাংহাইতে শিদাকুর উদ্ভব

১৯২০ এর দশকে ম্যান্ডারিন ভাষার জনপ্রিয় সঙ্গীত শিদাকু (時代曲 - সময়ের সঙ্গীত বা জনপ্রিয় সঙ্গীত) নামে পরিচিত ছিলো। এটি পরবর্তীকালীন চীনা পপ সঙ্গীতের উৎসস্বরূপ।[৫][৬] লি জিনহুইকে চীনা জনপ্রিয় সঙ্গীতের জনক বিবেচনা করা হয়। তিনি '২০ এর দশকে এ ধারার প্রবর্তন করেন।[৭] আমেরিকান জ্যাজ সঙ্গীতশিল্পী বাক ক্লেটনও তার সাথে কাজ করেছেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে লি জনপ্রিয় গান "The Drizzle" ("毛毛雨") রচনা করেন, যা তার কন্যা লি মিংহুই রেকর্ড করেন। অনেকেই এটিকে প্রথম চীনা পপ গান বিবেচনা করেন।[৮][৯][১০] জ্যাজ এবং চীনা লোকসঙ্গীতের সংমিশ্রণে তৈরি এই গানে প্রথমদিককার শিদাকু সঙ্গীতের ধারা খুঁজে পাওয়া যায়।[১১][১২] পরবর্তী দশকগুলিতে পশ্চিমা বিভিন্ন জনপ্রিয় সঙ্গীতধারা চীনের সঙ্গীতে প্রভাব বিস্তার করে। ফলে পশ্চিমা ও চীনা এই দুইয়ের সংমিশ্রণে শিদাকু নামের এ ধারা গড়ে ওঠে।

১৯৩০-১৯৪০: মহান সাত কন্ঠশিল্পীর যুগ

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চীনের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।[১৩]চীনা চলচ্চিত্রশিল্প এই নবধারার সুবিধা ব্যবহার করে। ফলে চলচ্চিত্রশিল্পে কণ্ঠশিল্পীদের পদচারণা শুরু হয়। ১৯৩০ এর দশকের এমন জনপ্রিয় কন্ঠ ও চলচ্চিত্রশিল্পী হলেন জো শুয়ান, গোং চিশিয়া এবং পাই হোং। পরবর্তীতে ইয়াও লী, পাই গুয়াং, লি শিয়াংলান ও উ ইংইন জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই সাতজন একত্রে সেই যুগের মহান সাত কন্ঠশিল্পী নামে পরিচিত। এছাড়া এ যুগের আরও কিছু বিখ্যাত শিল্পী হলেন লি লিহুয়া, জাং লু।

১৯৫০-১৯৬০: হংকং যুগ

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পিআরসি সরকার জনপ্রিয় সঙ্গীতকে হলুদ সঙ্গীত(এক ধরনের পর্নোগ্রাফি) আখ্যা দেয়। [১৪] কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থায় জনপ্রিয় সঙ্গীত দমিত হয়ে বিপ্লবী সঙ্গীত প্রসার লাভ করে। 'চীনা রেকর্ড কর্পোরেশন' হয়ে ওঠে চীনের একমাত্র রেকর্ডিং কোম্পানি যা বহুদিন যাবৎ শুধু মিনইউয়ে(জাতীয় সঙ্গীত) ও বিপ্লবী সঙ্গীতই সঙ্গীত রেকর্ড করে।[১৫]

১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পাথে রেকর্ডস তাদের কার্যক্রম সাংহাই থেকে হংকং এ স্থানান্তরিত করে এবং ১৯৬০ দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাংহাই ধাচের সঙ্গীত হংকংয়েও জনপ্রিয়তা ধরে রাখে। যদিও নতুন এ ধারা শিদাকু থেকে উদ্ভুত, সাংহাইয়ের গীতিকাররা হংকংয়ে স্থানান্তরিত হননি। নতুন এ ধারায় ফিলিপিনো শিল্পীদের আধিক্য থাকায় ম্যান্ডারিন পপ সঙ্গীত এর মূল সাংহাই ধারা থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া ভালো গীতিকারের অপ্রতুলতা থাকায় এ সময়কার গানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইংরেজি ও ইন্দোনেশীয় ভাষার বিভিন্ন গান থেকে রুপান্তরিত।

১৯৭০-১৯৮০: তাইওয়ানীয় মান্দোপপের জাগরণ

১৯৭০ দশকে তাইপে শহর মান্দোপপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।[১৬] তাইওয়ানের সফল চলচ্চিত্র শিল্প এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলো। তাছাড়া হংকং ভিত্তিক শিল্পীরা যেমন তেরেসা তেংও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

চীনে দেং শিয়াফিং ক্ষমতায় আসার পর তেরেসা তেং চীনে আসেন। ফলে হংকং ও তাইওয়ানের পরিবর্তিত ধারা চীনে প্রবেশের সুযোগ পায়।[১৭][১৮]

আধুনিককালে মূল চীনে প্রচলিত বিভিন্ন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা যেমন Super Boy, Super Girl, The voice of China, Chinese Idol, The X Factor: Zhongguo Zui Qiang Yin ইত্যাদি চীনে মান্দোপপের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। তাইওয়ানে প্রচলিত এমন কিছু প্রতিযোগিতা হচ্ছে One Million Star, Super Idol[১৯]১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে চীনের সঙ্গীতাঙ্গন রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হওয়ার পর গুয়াংজো, সাংহাই, বেইজিংএ স্থানীয় শিল্পীদের মাধ্যমে বিভিন্ন আঞ্চলিক রেকর্ডিং কোম্পানি স্থাপিত হয়।[২০]

১৯৯০ এর দশক

চীনের অসংখ্য শিল্পী হংকং ও তাইওয়ানে গান রেকর্ডিং শুরু করে।[২১][২২]

এ সময়ে হংকংয়ের অসংখ্য ক্যান্টোপপ শিল্পী মান্দোপপে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ সময়ের অন্যতম বেস্ট-সেলিং অ্যালবাম হচ্ছে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জ্যাকি চিয়াংয়ের The Goodbye Kiss যা তাইওয়ানে ১ মিলিয়নের উপরে এবং পুরো এশিয়ায় ৪ মিলিয়নের উপর বিক্রি হয়।[২৩][২৪]

২০০০-২০১০: মূল চীনে মান্দোপপের প্রসার

২০০০ এর দশকে তাইওয়ানে পপ আইডল সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মূল চীনেও শিল্পী, ব্যান্ড ও আইডল সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। চীনের ক্রমবর্ধমান চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক শিল্পের কারণেও মান্দোপপের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

সম্প্রতি তাইওয়ানে বয়ব্যান্ড ও গার্লব্যান্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন, S.H.E, Fahrenheit। চীনে জনপ্রিয় এমন কিছু ব্যান্ড হচ্ছে Top Combine, TFBOYS, Nine Percent, NEX7, UNINE, R1SE, INTO1, THE9, Rocket Girls এবং Oner

পুরষ্কারসমুহ

  • বেইজিং পপুলার মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডস[২৫]
  • সিসিটিভি-এমটিভি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • চাইনিজ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • চাইনিজ টপ টেন মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস[২৬]
  • ফোর স্টেশনস জয়েন্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (হংকং)
  • এইচআইটিও রেডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (তাইওয়ান)
  • জেড সলিড গোল্ড টেন মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (হংকং)
  • এম মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • মেট্রো রেডিও ম্যান্ডারিন মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (হংকং)
  • আরটিএইচকে টপ টেন গোল্ড সংস অ্যাওয়ার্ডস (হংকং)
  • সিঙ্গাপুর হিট অ্যাওয়ার্ডস (সিঙ্গাপুর)
  • টপ চাইনিজ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • আলটিমেট সং চার্ট অ্যাওয়ার্ডস (হংকং)
  • ভি চার্ট অ্যাওয়ার্ডস (চীন)
  • গ্লোবাল মিউজিক অ্যাওয়ার্ড[২৭][২৮]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ