রোম্যাঁ রোলাঁ

ফরাসি লেখক

রোম্যাঁ রোলাঁ (ফরাসি: Romain Rolland; ২৯ জানুয়ারি, ১৮৬৬ - ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৪) ছিলেন একজন ফরাসি নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও অধ্যাত্মবিদ। ১৯১৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।[১]শিল্পকলা ও সংগীত গবেষক রোলাঁ ১৯০৩ সালে সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ Vie de Beethoven (বেটোভেন-চরিত) প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে। এরপর ১৯০৬ সালে মাইকেলাঞ্জেলোর জীবনী ও ১৯১১ সালে তলস্তয়ের জীবনী রচনা করেছিলেন তিনি। জাঁ-ক্রিস্তফ তার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে দশ খণ্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থটির জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। রোলাঁ ছিলেন একজন ভারতপ্রেমিক ও ভারততত্ত্ববিদ। তিনি মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ পরমহংসস্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা করেছিলেন।[২]

রোম্যাঁ রোলাঁ
জন্ম(১৮৬৬-০১-২৯)২৯ জানুয়ারি ১৮৬৬
ক্লিভেন্সি, নিভার
মৃত্যু৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৪(1944-12-30) (বয়স ৭৮)
ভেজলে
পেশানাট্যকার, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও ঔপন্যাসিক
জাতীয়তাফরাসি
সময়কাল১৯০২–১৯৪৪
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
১৯১৫
জোসেফ স্ট্যালিনের সাথে রোম্যাঁ রোলাঁ, ১৯৩৫

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

রােম্যাঁ রােলাঁ ১৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি ফ্রান্সের ক্লিভেন্সি নামক ছােট শহরের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ধর্মযাজক। পিতা এমিলে রোলান্ড ছিলেন সরকারি কর্মচারী এবং মাতা অ্যান্টোইনেত্তে-মারি কৌরোট ছিলেন সঙ্গীতপ্রেমী এবং ধর্মপরায়না নারী। রোম্যা রোলাঁর শৈশব কেটেছে অতি স্বচ্ছলতার মধ্যে। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ফ্লামেসি কলেজে পড়াশুনা করেন। শিক্ষার সর্বস্তরেই ছিল তার গতি। পরে তিনি পড়াশোনার জন্য রোমে যান। প্রথম দিকে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসে ডিগ্রি লাভ করেন ও ইতিহাসের অধ্যাপক হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পঁচিশ বৎসর বয়সে প্যারিসে ফিরে এসে একাডেমি অব ফ্রান্স-এ শিল্প-ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। অধ্যাপক হিসাবে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সঙ্গীতের সঙ্গে সাহিত্য ও নাট্যশাস্ত্রের প্রতি ছিল তার অসীম আগ্রহ। সঙ্গীতের উপর উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তিনি প্যারিসের সবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। রোম্যাঁ রোলাঁই সম্ভবত প্রথম ইউরোপীয় যিনি সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গীতের অপূর্ব সমন্বয় সাধন করতে পেরেছিলেন।  

শান্তির বাণী প্রচারের প্রয়াসে

১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন ঘোরতর যুদ্ধবিরোধী রোম্যাঁ রোলাঁ সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সমিতিতে ছিলেন। যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিসমাপ্তি তাকে বেদনার্ত করে তুলেছিল। তিনি 'জুনাল দ্য জেনেভ’ পত্রিকায় বেশ কয়েকটি শক্তিশালী প্রবন্ধ লেখেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মনীষী, লেখক, শিল্পী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি শান্তিবাদী ইস্তাহার "Au-dessus de la melee" প্রকাশ করেন যাতে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়। তার এই উদ্যোগে ইংল্যান্ড ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেছিল। কিন্তু জার্মানিতে হিটলারের উত্থানে শান্তিবাদীদের প্রয়াস ব্যর্থ হয়। রোম্যাঁ রোলাঁ অনেক আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত আর একটি মহাযুদ্ধের সম্ভাবনার আভাস অনুমান করেছিলেন। তিনি সাহিত্য ও রাজনীতি এই দুই মাধ্যমের আশ্রয়ে শান্তির বাণী প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার শাণিত রচনাগুলি স্থান পায়- 'I will not rest' নামক গ্রন্থে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মহামিলনে

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রোম্যাঁ রোলাঁ গভীরভাবে আকৃষ্ট হন ভারতীয় দর্শনের প্রতি। মনে প্রাণে তিনি ব্যক্তিত্ববাদী মানবিকতায় পক্ষপাতী ছিলেনই। ভারতীয় দর্শন ধর্ম ও সংস্কৃতি জানতে প্রচুর বই পড়েন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভারতীয় দর্শন ও ভারতের আধ্যাত্মবাদের প্রতি তার অসীম আগ্রহ নিবিড় হয় পড়াশোনায় আর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরুর সাথে সাক্ষাতে। তিনি গুণী ব্যক্তিদের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাবান। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ছিল তাঁর অকৃত্রিম সৌহার্দ্য। রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে রোলাঁ ছিলেন পাশ্চাত্যে ভারতের আধ্যাত্মিক রাষ্ট্রদূত। আর স্বামী বিবেকানন্দর কারণেই তিনি ভারতের বেদান্ত দর্শনে প্রভাবিত হন। [৩] তাঁর রচনার মাধ্যমে ইউরোপের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছিল ভারতাত্মার শান্তির বাণী।

সাহিত্যকর্ম

১৯০২ খ্রিস্টাব্দে রোম্যাঁ রোলাঁর ৩৬ বৎসর বয়সে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি মাইকেলেঞ্জেলো, টলস্টয়, বিটোফেন, মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ জগদ্বরেণ্য ব্যক্তিত্বের জীবনী রচনা করেছেন। পিপল্স থিয়েটার তথা গণনাট্য সৃষ্টি বিষয়ে তিনি বিশেষ উৎসাহী ছিলেন এবং সেই উদ্দেশ্যে প্রায় কুড়িটি নাটক রচনা করেছিলেন।

রোম্যাঁ রোলাঁ ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ হতে দীর্ঘ আট বৎসর সময় নিয়ে দশ খণ্ডের মহাউপন্যাস - জাঁ ক্রিস্তফ রচনা সমাপ্ত করেন। এই বিশ্বখ্যাত গ্রন্থের জন্য ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবল পুরস্কার লাভ করেন। বইটিতে ইউরোপের সমস্ত শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীদের আত্মা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। তার মানস পুত্র জাঁ ক্রিস্তফের মধ্যে সঙ্গীতপ্রেমী রোলাঁর আত্মা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে। নিজস্ব পরিচয়, বৈশিষ্ট এবং শিল্পগুণে বইটি কালোত্তীর্ণ এবং বিশ্বসাহিত্যে স্থায়ী আসনে সমাসীন। নোবেলে সম্মানিত করার সময় সুইডিশ সোসাইটির ঘোষণা ছিল-“নিগূঢ় সত্যের প্রতি একাত্মতা এবং সহমর্মিতা যার সমন্বয়ে তিনি উপন্যাসের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান আদর্শের প্রতি সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রদান করা হল।”[৪]আর নোবেল কমিটি তার সম্পর্কে মন্তব্য করেন -

“অ্যাজ এ ট্রিবিউট টু দ্য লফটি আইডিয়ালিজম অফ হুজ লিটারেচার প্রোডাকশন অ্যান্ড টু দ্য সিমপ্যাথি অ্যান্ড লাভ অফ ট্রুথ, উইথ হুইচ হি হ্যাজ ডেসক্রাইবড ডিফারেন্ট টাইপস অফ হিউম্যান বিইংস্।”

[৫]

রোম্যাঁ রোলাঁ নোবেল পুরস্কারের অর্থ রেড় ক্রশ এবং ফ্রেন্চ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনকে দান করেন।

রোম্যাঁ রোলাঁর অন্যান্য বিখ্যাত রচনা হল-

  • ডন
  • মর্নিং দ্য মার্কেট প্লেস
  • দ্য হাউস
  • লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ
  • দ্য টাইম উইল কাম প্রভৃতি।

জীবনাবসান

রোম্যাঁ রোলাঁ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর ফ্রান্সের ভেজেলে শহরে ৭৮ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।

পাদটীকা

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ