সিণ্ডরেলা
" সিণ্ডরেলা ",[ক] বা " দ্য লিটল গ্লাস স্লিপার ", একটি লোককাহিনী, সারা বিশ্বে যার বিভিন্ন সংস্করন বর্তমান।[১][২] গল্পের মুখ্য চরিত্র একজন যুবতী মেয়ে, যে দীনহীন পরিস্থিতিতে বাস করে। বিয়ের পর হঠাৎ করেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, সে সিংহাসনে আরোহণ করে। প্রাচীন রোডোপিসের গল্প, গ্রীক ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবো ৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে যেটির পুনর্লিখন করেছিলেন, সেটি একটি গ্রীক ক্রীতদাসীকে নিয়ে লেখা গল্প যে মিশরের রাজাকে বিয়ে করেছিল। এই গল্পটিকেই সাধারণত সিণ্ডরেলা গল্পের প্রাচীনতম রূপ বলে মনে করা হয়।[১][২][৩]
গল্পের প্রথম সাহিত্যিক ইউরোপীয় সংস্করণটি ১৬৩৪ সালে ইতালিতে, গিয়ামবাটিস্তা ব্যাসিল তার পেন্টামেরনে প্রকাশ করেছিলেন। যে সংস্করণটি এখন ইংরেজি-ভাষী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা ১৬৯৭ সালে ফরাসী ভাষায় শার্ল পেরো তাঁর হিস্টোরেস ও কন্টেস ডু টেম্পস পাসে বইতে সেণ্ড্রিলন নামে প্রকাশ করেছিলেন এবং সেটি ইংরেজিতে সিণ্ডরেলা হিসাবে পরিচিত হয়েছিল।[৪] ১৮১২ সালে ব্রাদার্স গ্রিম তাদের লোককাহিনী সংকলন গ্রিমস ফেয়ারি টেলস-এ আরেকটি সংস্করণ অ্যাশেনপুটেল নামে প্রকাশ করেন।
প্রাচীন সংস্করণ
ইউরোপীয়
রোডোপিস
সিণ্ডরেলা গল্পের প্রাচীনতম পরিচিত মৌখিক সংস্করণটি হল রোডোপিসের প্রাচীন গ্রীক গল্প।[৩][৫] মিশরের নক্রেটিস উপনিবেশে বসবাসকারী একজন গ্রীক গণিকা এই গল্পের মুখ্য চরিত্র। গল্পটি প্রথম গ্রীক ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবো তার জিওগ্রাফিকা বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন। মিশরীয়র গল্প অনুসারে, যখন সে স্নান করছিল, তখন একটি ঈগল তার দাসীর কাছ থেকে তার একটি চপ্পল ছিনিয়ে নেয় এবং সেটি মেমফিসে নিয়ে যায়। মেমফিসের রাজা যখন উন্মুক্ত সভায় ন্যায়বিচার পরিচালনা করছিলেন, তখন ঈগল উপর থেকে চপ্পলটি তার কোলে নিক্ষেপ করে। রাজা সেই চপ্পলের সুন্দর আকৃতি দেখে আলোড়িত হন এবং সেই চপ্পলের অধিকারী মহিলার সন্ধানে সমস্ত রাজ্যে তার অনুচরদের পাঠান। যখন নক্রেটিস শহরে সেই মহিলাকে পাওয়া যায়, তখন তাকে মেমফিসে নিয়ে আসা হয় এবং সে রাজার স্ত্রী হয়।"[৬]
এই একই গল্প পরে রোমান কাহিনীকার এলিয়ান তার গ্রীক ভাষায় লিখিত মিসলেনিয়াস হিস্ট্রি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এলিয়ানের গল্পটি স্ট্র্যাবোর বলা গল্পের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, কিন্তু সেই গল্পে ফারাওর নাম ছিল সামেটিকাস।[খ][৭] এলিয়ানের বিবরণ ইঙ্গিত করে যে রোডোপিসের গল্প প্রাচীনকালে বিশেষ জনপ্রিয় ছিল।
স্ট্র্যাবোর লেখার প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে হেরোডোটাস তার হিস্ট্রিস গ্রন্থে রোডোপিস নামের একজন গণিকা সম্পর্কে একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি লিপিবদ্ধ করেছেন,[৮] :২৭ তিনি দাবী করেছিলেন যে রোডোপিস থ্রেস থেকে এসেছে, সে ছিল সামোসের দাসী এবং গল্পকার ঈশপের সহ-দাসী, তাকে ফারাও আমাসিসের সময়ে মিশরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে গীতিকার কবি সাফোর ভাই, যিনি মাইটিলিনের চ্যারাক্সাস নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি প্রচুর অর্থের বিনিমুয়ে তাকে মুক্ত করেন।[৮] :২৭–২৮[৯]
সিণ্ডরেলার চপ্পলের গল্পের সাথে রোডোপিসের জুতা-পরীক্ষার গল্পের সাদৃশ্যের কথা ১৯ শতকে এডগার টেলর[১০] এবং রেভারেন্ড সাবিন বারিং-গোল্ড লক্ষ করেছিলেন।[১১]
সাহিত্যিক সংস্করণ
এই গল্পের প্রথম ইউরোপীয় সংস্করণ ইতালির নেপলসের লেখক গিয়ামবাটিস্তা বেসিলে তাঁর পেন্টামেরনে (১৬৩৪) প্রকাশ করেছিলেন। গল্পটির পটভূমি নেপলস রাজ্যে রাখা হয়েছিল কারন সেই সময়ে এই অঞ্চল ছিল দক্ষিণ ইতালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজধানীগুলির মধ্যে একটি। গল্পটি নেওয়াপোলিটান উপভাষায় লেখা। এটি পরবর্তীতে বেসিলের অন্যান্য গল্পের সাথে, শার্ল পেরো তার হিস্টোরিস অউ কন্টেস ডু টেম্প্স পাসে (১৬৯৭) নামক বইতে[৪] এবং ব্রাদার্স গ্রিম তাদের লোককাহিনী সংকলন গ্রিমস ফেয়ারি টেলস (১৮১২)-এ পুনরায় বর্ণনা করেন।