সেনগোকু যুগ

সেনগোকু যুগ (戦国時代? সেন্‌গোকু জিদাই, অর্থ: 'গৃহযুদ্ধের যুগ') বলতে জাপানের ইতিহাসে কমবেশি ১৪৬৭ খ্রিঃ থেকে ১৬০৩ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়। এই সময়ের বৈশিষ্ট ছিল অবিরাম সামাজিক আলোড়ন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও সামরিক সংঘর্ষ। জাপানি ঐতিহাসিকরা এই সাদৃশ্যের কথা মাথায় রেখেই চীনের যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের যুগের অনুকরণে এই যুগের নামকরণ করেন, যদিও অন্য কোনওভাবে চীন ও জাপানের যুগ দুটির সম্পর্ক নেই।[১] তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের অধীনে ১৬০৩ খ্রিঃ সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার একত্রীকরণ ঘটার মাধ্যমে এই যুগ সমাপ্ত হয়।[২][৩]

বর্ণনা

এই সময়ে জাপানের সম্রাট খাতায় কলমে রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তার প্রকৃত ক্ষমতা ছিল না। সম্রাটের নামে রাজ্য চালাতেন শোগুন পদবিশিষ্ট এক অভিজাত, যাঁর পদাধিকার কমবেশি বর্তমান সামরিক জেনারালিসিমো পদটির অনুরূপ ছিল। সেন্‌গোকু যুগের ঠিক আগের পর্যায়ে ক্রমশ স্থানীয় সামন্তপ্রভু বা দাইমিয়োরা নিজেদের হাতে অধিকতর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেললে শোগুন দুর্বল ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে থাকেন। সমকালীন আশিকাগা শোগুনতন্ত্র পূর্ববর্তী কামাকুরা শোগুনতন্ত্রের কাঠামো বজায় রেখে একই রকম যোদ্ধানির্ভর সরকার ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলত, যা ১২৩২ খ্রিঃ হোওজোও পরিবার প্রতিষ্ঠিত জোওয়েই কোড থেকে চলে আসছিল।[৪] কিন্তু অনেক দাইমিয়ো সেন্‌গোকু যুগের সূচনায় এই কোড মেনে চলতে অস্বীকার করেন, বিশেষত যাঁদের অধিষ্ঠান ছিল রাজধানী হেইআন-ক্যো নগর থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে। এই সামন্তপ্রভুদের অনেকে অধিকতর ভূমি দখল ও প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে নির্বিচার যুদ্ধবিগ্রহে অবতীর্ণ হন। একই সময়ে চীনের সাথে বাণিজ্য বেড়ে ওঠে এবং বাণিজ্যকেন্দ্রিক নগর ও বাজার গড়ে ওঠার ফলে মুদ্রার প্রচলন বৃদ্ধি পায়। এই স্বাচ্ছন্দ্য ও কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পে উন্নতির ফলেও বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক স্তর নির্বিশেষে অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এর অনেক আগে, চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষের পর ঋণ ও করভারে জর্জরিত কৃষকরা সশস্ত্র বিদ্রোহে নামত।

১৪৬৭ থেকে ১৪৭৭ খ্রিঃ অবধি স্থায়ী এই ধরনেরই এক সংঘাত পরিণতি পায় ওওনিন যুদ্ধে, যাকে ক্ষেত্রবিশেষে ঐতিহাসিকরা সেন্‌গোকু যুগের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। হোসোকাওয়া পরিবারের "পূর্ব" সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্রবর্গ য়ামানা পরিবারের "পশ্চিম" বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রাজধানী কিয়োতো ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে এগারো বছর ধরে যুদ্ধ চলে, যার শেষে সমগ্র নগর প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কিয়োতোর সংঘর্ষ তারপর পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।[৫]

তিন যুদ্ধবাজ সেনাপতি ওদা নোবুনাগা, তোয়োতোমি হিদেয়োশি এবং তোকুগাওয়া ইএআসুর পারস্পরিক অম্লমধুর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। এই তিন সেনাপতি ক্রমে জাপানকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন। ১৬১৫ খ্রিঃ ওসাকা অবরোধের তোকুগাওয়া ইয়েআসু বিজয় ঘোষণার মাধ্যমে তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে জাপান প্রায় আড়াই শতাব্দীব্যাপী শান্তির যুগে প্রবেশ করে।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ