সৌদি আরবের একত্রীকরণ
সৌদি আরবের একত্রীকরণ ছিল আল সৌদ কর্তৃক পরিচালিত একটি সামরিক ও রাজনৈতিক অভিযান। সৌদ পরিবার এতে আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চলের বিভিন্ন গোত্র, শেখ শাসনাধীন এলাকা, আমিরাত ও রাজ্যকে জয় করে নেয়। ১৯০২ থেকে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই একত্রীকরণ সম্পন্ন হয় এবং এর মাধ্যমে আধুনিক সৌদি আরব জন্মলাভ করে। এতে নেতৃত্ব দেন আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ। সৌদি আরবকে কখনো কখনো তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র বলে উল্লেখ করা হয়। এর পূর্বে প্রথম ও দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। তবে সেগুলো পরবর্তীতে ভেঙে যায়।
সৌদি আরবের একত্রীকরণ | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বর্তমান সৌদি রাষ্ট্র (সৌদি আরব) | ||||||||
| ||||||||
বিবাদমান পক্ষ | ||||||||
হেজাজ রাজতন্ত্র | উসমানীয় সাম্রাজ্য জাবাল শামার আমিরাত | |||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | ||||||||
হুসাইন বিন আলি আলি বিন হুসাইন | আহমেদ তৌফিক পাশা ফখরুদ্দিন পাশা আবদুল আজিজ বিন মিতাব | |||||||
শক্তি | ||||||||
৩৮,০০০[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] | ৭৭,০০০[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] | ২৩,০০[১][যাচাই প্রয়োজন] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | ||||||||
অজ্ঞাত | অজ্ঞাত | |||||||
৮০০০ এরও অধিক[a][২] |
দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের পতনের পর ১৮৯৩ সাল থেকে সৌদ পরিবার উসমানীয় ইরাকে নির্বাসিত ছিল। এসময় আল রশিদদের অধীনে জাবাল শামার আমিরাত বৃদ্ধি পায়। ১৯০২ সালে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ রিয়াদ পুনর্দখল করেন। এটি আল সৌদ রাজবংশের প্রাক্তন রাজধানী ছিল। ১৯১৩ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে তিনি বাকি নজদ, হাসা, জাবাল শামার আমিরাত, আসির ও হেজাজ (ইসলামের পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা এসময় হেজাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল) জয় করতে অগ্রসর হন। ১৯২৭ সালে এসময় বিজিত অঞ্চল নিয়ে নজদ ও হেজাজ রাজতন্ত্র গঠিত হয়। পরবর্তীতে তা আল হাসা ও কাতিফের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯৩২ সালে সৌদি আরব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
পটভূমি
মুহাম্মদ বিন সৌদ ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের মধ্যে দিরিয়ায় সমঝোতার পর আল সৌদ প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এসময় উৎপত্তিলাভ করা মতাদর্শকে পরবর্তীতে ওয়াহাবিবাদ বলে উল্লেখ করা হয়। মধ্য আরবের নজদ অঞ্চলে গঠিত প্রথম সৌদি রাষ্ট্র উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চল জয় করে নেয়। ১৮০২ সালে মক্কায় তাদের হস্তগত হয়।[৩]
মক্কা হাতছাড়া হওয়ায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের সম্মানের প্রতি আঘাত ছিল। ১৫১৭ সাল থেকে তারা এই শহরের নিয়ন্ত্রণ করছিল। ফলে উসমানীয়রা আল সৌদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। মক্কা পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব মিশরের উসমানীয় শাসক মুহাম্মদ আলি পাশার হাতে অর্পণ করা হয়। তিনি হেজাজে সেনা প্রেরণ করে মক্কা পুনরায় অধিকার করে নেয়। তার ছেলে ইবরাহিম পাশা উসমানীয় সেনাদের নিয়ে নজদের কেন্দ্রস্থলের দিকে এগিয়ে যান। নজদ অভিযানে একের পর এক শহর জয় করে নেয়া হয়। সৌদি রাজধানী দিরিয়া পৌছার পর কয়েকমাস যাবত তা অবরোধ করে রাখা হয়। ১৮১৮ সালের শীতকালে শহর আত্মসমর্পণ করেন। তিনি আল সৌদ ও ইবনে আবদুল ওয়াহাবের গোত্রের অধিকাংশ সদস্যকে মিশর ও উসমানীয় রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে প্রেরন করেন। তিনি দিরিয়া ধ্বংস করে দেয়ার আদেশ দেন। এসময়কার সৌদি নেতা আবদুল্লাহ বিন সৌদকে কনস্টান্টিনোপলে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।[৪]
বেঁচে যাওয়া আল সৌদ সদস্যরা পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তারা দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহর রিয়াদ দখলের সময় থেকে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধ পর্যন্ত সময়কাল দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের মেয়াদ ধরা হয়। প্রথম রাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিতীয় রাষ্ট্রকে তুলনামূলক কম আঞ্চলিক সম্প্রসারণ ও ধর্মীয় উদ্দীপনার বলে ধরা হয়। এছাড়া এসময় অস্থিতিশীল অবস্থায় বিরাজ করে কারণ জাবাল শামার আমিরাতের আল রশিদরা প্রতি পক্ষে আল সৌদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। সৌদি নেতা আবদুর রহমান ইবনে ফয়সাল ১৮৯৩ সালে উসমানীয় ইরাকে আশ্রয় নেন।[৫]
ইতিহাস
সৌদিদের রিয়াদ দখল
১৯০১ সালে ইবনে সৌদ কুয়েতের আমিরকে লোক ও রসদ নিয়ে রিয়াদ আক্রমণে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ জানান।[৬] এসময় কুয়েত রশিদিদের সাথে কিছু লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল তাই আমির তার অনুরোধে সাড়া দেন। ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হয়। ১৯০২ সালের জানুয়ারিতে ইবনে সৌদ ও তার সেনারা রিয়াদ পৌছান। সেনাসংখ্যা কম হওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন যে মাসমাক দুর্গ দখল ও রিয়াদের প্রধান আজলানকে হত্যা করাই শহর জয়ের একমাত্র মাধ্যম হতে পারে। ইবনে সৌদের সেনারা দুর্গ দখল করে ও আজলানকে হত্যা করা হয়। রাতের মধ্যে শহর তাদের হস্তগত হয়। এরপর ইবনে সৌদ বাকি আরব উপদ্বীপ একত্রিত করার কাজে অগ্রসর হন এবং আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠা করেন।[৭][৮]
সৌদি-রশিদি যুদ্ধ
সৌদি-রশিদি যুদ্ধ নতুন প্রতিষ্ঠালাভকারী সৌদি নজদ সালতানাত ও রশিদিদের অধীন জাবাল শামার আমিরাতের মধ্যে সংঘটিত হয়। কাসিম অঞ্চল সৌদিরা জয় করার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।[৯]
আল হাসা ও কাতিফ
১৯১৩ সালে ইবনে সৌদ আল হাসা ও কাতিফকে রিয়াদ আমিরাতের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।[১০]
কুয়েত-নজদ যুদ্ধ
ইবনে সৌদ কুয়েতকে তার রাষ্ট্রের অংশ করতে চাওয়ায় কুয়েত-নজদ যুদ্ধ শুরু হয়।[১১][১২] ইবনে সৌদ দাবি করেন কুয়েত তার আওতাধীন।[১২] এ যুদ্ধে শতাধিক কুয়েতি মৃত্যুবরণ করে। ১৯১৯-১৯২০ সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।
যুদ্ধচলাকালীন সময় ইবনে সৌদ ১৯২৩ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর ধরে কুয়েতের উপর বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করেন।[১১][১৩] কুয়েতের উপর অর্থনৈতিক ও সামরিক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল যাতে যত বেশি সম্ভব কুয়েতের অঞ্চল আয়ত্ত্বে আনা যায়।[১১] উকাইর সম্মেলনে কুয়েত ও নজদের সীমানা নির্ধারিত হয়।[১১] এই সম্মেলনে কুয়েতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।[১১] কুয়েতের অঞ্চলের দুইতৃতীয়াংশ দেয়ার জন্য ইবনে সৌদ স্যার পারসি কক্সকে দাবি জানান।[১১] উকাইরের ফলে কুয়েতের অর্ধেকের বেশি অংশ হাতছাড়া হয়।[১১] সম্মেলনের পরও কুয়েতের উপর সৌদি অর্থনৈতিক অবরোধ ও সামরিক আক্রমণ চলেছিল।[১১]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকার তাদের গুপ্তচর ক্যাপ্টেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পাঠায়। এর ফলে দারিনের চুক্তি সম্পাদিত হয়। জারাবের যুদ্ধে শেক্সপিয়ারের মৃত্যুর পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদের প্রতিপক্ষ হেজাজের নেতা হুসাইন বিন আলিকে সমর্থন দেয়া শুরু করে। লর্ড কিচনার হুসাইন বিন আলিকে অনুরোধ জানান যাতে তিনি সংঘর্ষে সহায়তা করেন। হুসাইন এর বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দাবি করেন। হেনরি ম্যাকমাহন ও হুসাইন বিন আলির মধ্যে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনা হুসাইন-ম্যাকমাহন চুক্তি বলে পরিচিত। দারিনের চুক্তি আল সৌদের শাসনভুক্ত অঞ্চলসমূহ ব্রিটিশ প্রটেক্টরেটে পরিণত হয়। ইবনে সৌদ পুনরায় আল রশিদের সাথে লড়াইয়ে আগ্রহী ছিলেন। আল রশিদরা উসমানীয়দের মিত্র ছিল। রশিদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইবনে সৌদকে মাসিক ভাতা দেয়া হত।
প্রথম নজদ-হেজাজ যুদ্ধ
প্রথম সৌদি-হাশিমি যুদ্ধ বা আল খুরমা বিতর্ক ১৯১৮-১৯১৯ সালে সংঘটিত হয়। এর দুই পক্ষ ছিল নজদ আমিরাতের আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ এবং হেজাজ রাজতন্ত্রের হাশিমিরা। এটি আরব উপদ্বীপে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়।[১৪] যুদ্ধে হাশিমিরা পরাজিত হয় এবং আল খুরমা সৌদি ও তাদের মিত্র ইখওয়ানদের হস্তগত হয়। এসময় হাশিমি রাজ্যের ধ্বংস রোধের জন্য ব্রিটিশরা হস্তক্ষেপ করে। ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং তা ১৯২৪ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে।
হাইল বিজয়
হাইল বিজয়কে দ্বিতীয় সৌদি-রশিদি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। এই যুদ্ধের এক পক্ষে ছিল সৌদি ও তাদের মিত্র ইখওয়ান এবং অন্য পক্ষে ছিল শেষ রশিদি শাসকের অধীন হাইল আমিরাত। ১৯২১ সালের ২ নভেম্বর জাবাল শামার সম্পূর্ণরূপে সৌদিদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং তা নজদ সালতানাতের সাথে একীভূত করা হয়।
ইখওয়ান আক্রমণ
ট্রান্সজর্ডান আক্রমণ
ইখওয়ান ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত টান্সজর্ডানে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালায়। এসকল আক্রমণ নজদের শাসক ইবনে সৌদ কর্তৃক আদেশপ্রাপ্ত ছিল না। তবে তিনি ইখওয়ানকে থামার আদেশও দেননি। হেজাজ বিজয়ের পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। এসময় ইখওয়ানের হামলাগুলো নিয়ে ইবনে সৌদের বিপরীত প্রতিক্রিয়ার ফলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের জন্ম হয় এবং তা ১৯২৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।
১৯২০ এর দশকের প্রথম দিকে ট্রান্সজর্ডানে ইখওয়ান আক্রমণ আমির আবদুল্লাহর অবস্থান হুমকির মুখে ফেলে দেয়।[১৫] নিজ ক্ষমতায় এসকল আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তিনি অসমর্থ ছিলেন তাই ব্রিটিশরা আম্মানের কাছে মারকায় অল্পসংখ্যক যুদ্ধবিমানসহ একটি সামরিক ঘাঁটি চালাতে থাকে।[১৫]
ইরাকে আক্রমণ
১৯২১ সালে ইখওয়ান দক্ষিণ ইরাক আক্রমণ করে এবং শিয়াদের গ্রামগুলোতে হামলা চালায়। এতে প্রায় ৭০০ ইরাকি শিয়া নিহত হয়।
দ্বিতীয় নজদ-হেজাজ যুদ্ধ
১৯২৪ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে সৌদিরা হাশিমি শাসিত হেজাজ রাজতন্ত্র জয় করে নেয়। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বর জেদ্দার পতনের মাধ্যমে অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে জয়কৃত অঞ্চল সৌদি শাসনের অধীনে নজদ ও হেজাজ রাজতন্ত্রে একীভূত করে নেয়া হয়।
ইখওয়ান বিদ্রোহ
১৯২০ এর দশকে সৌদি সম্প্রসারণ ধীর হয়ে পড়ে। ইখওয়ানের কেউ কেউ আরো সম্প্রসারণের দাবি জানায়। তারা বিশেষ করে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল যেমন ট্রান্সজর্ডানে সম্প্রসারণ চাইছিল। ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে ইখওয়ান ট্রান্সজর্ডান আক্রমণ চালিয়েছিল। মধ্য আরবের কিছু এলাকা যা তখনও সৌদি-ইখওয়ান বাহিনীর হাতে আসেনি তাদের সাথে ব্রিটিশদের চুক্তি ছিল। ফলে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা অনুভব করেন। ইখওয়ানদের ধারণা ছিল ওয়াহাবিভিন্ন মতাবলম্বীরা ইসলাম বহির্ভূত। মুতায়র গোত্রের ফয়সাল আল দাউয়িশ এবং উতাইবা গোত্র ও ইখওয়ানদের নেতা সুলতান বিন বাজাদ ইবনে সৌদের বিরুদ্ধে শিথিলনীতির প্রয়োগের অভিযোগ আরোপ করেন।
এর ফলে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। সাবিলার যুদ্ধে ইখওয়ানদের পরাজয়ের মাধ্যমে এই বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ১৯২৯ সালে জাবাল শামারে আরো কিছু লড়াই সংঘটিত হয়। ১৯৩০ সালে শেষ বিরোধী পক্ষের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিদ্রোহ সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়। বেঁচে যাওয়াদের কারাগারে পাঠানো হয়।
সৌদি আরব ঘোষণা
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আল সৌদের শাসনাধীন অঞ্চলকে সৌদি আরব হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[১৬]
পরবর্তী অবস্থা
আসির একীভূতকরণ
বর্তমান সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চল আসির ১৮৭১ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত উসমানীয় শাসনের অধীনে ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এর আমির হাসান ইবনে আলি আল আইদ স্বাধীনভাবে শাসন করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তার সাথে মুহাম্মদ ইবনে আলি আল ইদ্রিসির সংঘর্ষ বাধে। এরপর সৌদি অভিভাবকত্বের অধীনে স্বল্পস্থায়ী ইদ্রিসি আমিরাতের জন্ম হয়।[১৭] ১৯৩০ সালে একটি চুক্তির পর এই অঞ্চল সরাসরি ইবনে সৌদের নিয়ন্ত্রণে আসে[১৬] এবং ১৯৩৪ সালে একে সৌদি আরবের অংশ করে নেয়া হয়।
সৌদি-ইয়েমেনি যুদ্ধ
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভাঙনের পর ইয়েমেনে মুহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া হামিদউদ্দিন ও তার বংশধরদের অধীনে একটি জায়েদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়েমেনিরা আসিরের অংশ দাবি করে এবং ১৯৩৩ সালে সৌদিদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এই সংঘর্ষকে কেউ কেউ আরব নিয়ে ব্রিটিশ ও ইতালীয় নীতির প্রতিদ্বন্দ্বীতার ফলাফল হিসেবে দেখেন। সৌদিরা ইয়েমেনি বন্দর আল হুদায়দা পর্যন্ত পৌছে যায়। পরবর্তীতে তাইফে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তা একইসাথে মক্কা, সানা, দামেস্ক ও কায়রোতে প্রকাশিত হয়।
ইখওয়ান আন্দোলন
ঠিক কী কারণে ইখওয়ানদের উত্থান ঘটেছিল তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম বিতর্কিত হলেও সৌদি আরবের সৃষ্টিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।[১৮]
আরও দেখুন
- সৌদি আরবের ভূগোল
- সৌদি আরব-সংযুক্ত আরব আমিরাত সীমান্ত সমস্যা
- সৌদি-কুয়েতি নিরপেক্ষ এলাকা
- সৌদি-ইরাকি নিরপেক্ষ এলাকা
- সাইকস-পিকট চুক্তি
পাদটীকা
সৌদি আরবের একত্রীকরণের লড়াইয়ে হতাহতের সংখ্যা ১,৯৮৯-৮৯৮৯ এর বেশি:
- রিয়াদের যুদ্ধ (১৯০২) – ৩৭ জন নিহত।
- দিলামের যুদ্ধ (১৯০৩) – ৪১০ জন নিহত।
- সৌদি-রশিদি যুদ্ধ (১৯০৩-১৯০৭) – ২,৩০০ জনের বেশি নিহত।
- আল হাসা ও কাতিফের একীভূতকরণ (১৯১৩) - অজ্ঞাত।
- জারাবের যুদ্ধ (১৯১৫)
- কানজানের যুদ্ধ (১৯১৫)
- প্রথম নজদ-হেজাজ যুদ্ধ (১৯১৮-১৯১৯) – ১,৩৯২ জন নিহত।[২]
- ১৯২১ সালে ইরাকে ইখওয়ান আক্রমণ - ৭০০ জন নিহত।
- কুয়েত-নজদ সীমান্ত যুদ্ধ (১৯২১) – ২০০ জনের বেশি নিহত।[২]
- হাইল বিজয় (১৯২১) - অজ্ঞাত।
- ট্রান্সজর্ডানে ইখওয়ান আক্রমণ (১৯২২–১৯২৪) – ৫০০-১,৫০০ জন নিহত।
- সৌদিদের হেজাজ বিজয় (১৯২৪–১৯২৫) – ৪৫০ জনের বেশি নিহত।[২]
- ইখওয়ান বিদ্রোহ (১৯২৭–১৯৩০) – ২,০০০ জন নিহত।[২]
তথ্যসূত্র
- Almana, Mohammed (১৯৮২)। Arabia Unified: A Portrait of Ibn Saud। London: Hutchinson Benham। আইএসবিএন 0-09-147290-3।
- Commins, David (২০০৬)। The Wahhabi Mission and Saudi Arabia। London, New York: I.B. Tauris। আইএসবিএন 978-1-84511-080-2।
- Helms, Christine Moss (১৯৮১)। The Cohesion of Saudi Arabia। Baltimore: The Johns Hopkins University Press।
- Kohn, Hans (অক্টোবর ১৯৩৪)। "The Unification of Arabia"। Foreign Affairs। 13 (1): 91–103।
- Lacey, Robert (২০০৯)। Inside the Kingdom: Kings, Clerics, Modernists, Terrorists, and the Struggle for Saudi Arabia। New York: Viking। আইএসবিএন 978-0-670-02118-5।
- Lacey, Robert (১৯৮২)। The Kingdom। New York: Harcourt Brace Jovanovich। আইএসবিএন 0-15-147260-2।
- Al-Rasheed, Madawi (২০১০)। A History of Saudi Arabia (2nd সংস্করণ)। New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-74754-6।
- Troeller, Gary (১৯৭৬)। The Birth of Saudi Arabia: Britain and the Rise of the House of Sa'ud। London: Routledge। আইএসবিএন 0-7146-3062-4।
- Vassiliev, Alexei (১৯৯৮)। The History of Saudi Arabia। London: Saqi। আইএসবিএন 0-86356-935-8।
বহিঃসংযোগ
- Hous of Saud, a 2005 documentary by PBS' Frontline. Website includes interviews and an excerpt containing the chapter on the Ikhwan.