স্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাব
স্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাব বলতে তামাকের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর এর যে ক্ষতিকর কাজ রয়েছে সেগুলোকে বুঝায়। প্রাথমিকভাবে গবেষণা মূলত তামাক ধূমপান বিষয়ের উপর করা হয়েছে।[১][২] ১৯৫০ সালে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের একটি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।[৩] এর ঠিক চার বছর পর ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করা হয় যেটি চল্লিশ হাজার ডাক্তারের কুড়ি বছর ধরে করা গবেষণার ফলাফল। সেখানে ধূমপানের সাথে ফুসফুসের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় যার উপর ভিত্তি করে সরকার ঘোষণা করে যে ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।[৪][৫]
যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক এর মধ্যে শীর্ষে। [৬] যত লোক তামাক ব্যবহার করে তার প্রায় অর্ধেক এর ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে।[৭] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ লোক তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে মারা যায় (সর্বমোট মৃত্যুর প্রায় ১০%) যার প্রায় ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার।[৭][৮] বিংশ শতাব্দীতে তামাক প্রায় দশ কোটি ব্যক্তির মৃত্যু ঘটিয়েছে।[৭] একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) সেন্টারও এটাকে সারাবিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।[৯]
তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ), ও ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগ করতে পারে। এর প্রভাব নির্ভর করে একজন ব্যক্তি দৈনিক কতটি ও কয় বছর ধরে ধূমপান করে তার উপর। অল্পবয়স থেকে এবং অধিক তামাকের ঘনত্বসম্পন্ন সিগারেট খাওয়ার ফলে ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে। পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তামাকজাত ধোঁয়া ও পরোক্ষ ধূমপানও সকল বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।[১০] গর্ভবতী নারীদের উপর তামাকের ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটার হার বেশি। এছাড়া গর্ভস্থ ভ্রূণেরও অনেক ক্ষতি করে যেমন অকালে শিশুর জন্ম হওয়া (প্রিম্যাচুর বার্থ), জন্মের সময় নবজাতকের ওজন আদর্শ ওজনের তুলনায় কম হওয়া (LBW) ও সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম (SIDS) এর হার ১.৪-৩% বেড়ে যায়। [১১] অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ উত্থানে অক্ষমতার সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার হার ৮৫% বেশি।[১২][১৩]
কিছুকিছু দেশ তামাকের ব্যবহার ও বিক্রয় কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। এছাড়া তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সতর্কীকরণ বার্তা লেখার নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অধিকন্তু তামাকের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে এর মূল্য বৃদ্ধির প্রয়াস চালানো হচ্ছে যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাজে আসবে বলে মনে করা হয়।[৭]সিগারেটে প্রায় ৬৯টির বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যারা মানব শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।[৭]তামাকে নিকোটিন নামে আরেকটি উপাদান আছে যা আসক্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী। ধূমপান করলে নিকোটিন শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। অনুন্নত দেশগুলোতে যে সিগারেট বিক্রয় করা হয় তাতে তামাকজাত উপাদান অনেক বেশি থাকে ফলে ঐসব অঞ্চলে ধূমপানজনিত ক্ষতি বা রোগসমূহ অনেক বেশি।[১৪]
স্বাস্থ্যের উপর ধূমপানের প্রভাব
ধূমপানের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস। এতে হার্ট অ্যাটাক, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, এমফাইসিমা, ও ক্যান্সার বিশেষত ফুসফুস, ল্যারিংস, মুখগহ্বর ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়। [১৬]দীর্ঘকাল ধূমপানের ফলে সার্বিক গড়ায়ু অধূমপায়ীদের তুলনায় ১০ বছর থেকে [৫] ১৭.৯ বছর পর্যন্ত হ্রাস পায়।[১৭][১৮] দীর্ঘকালব্যাপী ধূমপায়ী পুরুষদের প্রায় অর্ধাংশ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে।[১৯] ধূমপানের সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের একটি বড় ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। পুরুষ ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে সারাজীবনে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৭.২% যেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ১১.৬%। অধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক কম যেমন পুরুষের ক্ষেত্রে ১.৩% মহিলার ক্ষেত্রে ১.৪%[২০] ঐতিহাসিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ফুসফুস ক্যান্সারকে বিরল একটি রোগ হিসেবে মনে করা হত এবং এমনও বলা হত যে কোনো কোনো চিকিৎসক তার পেশাগত জীবনে হয়ত এই রোগীর দেখায় পাবেন না।যুদ্ধপরবর্তী সময়ে সিগারেট ধূমপানের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং ফুসফুস ক্যান্সার ধীরে ধীরে মহামারী রূপ নিতে শুরু করে।[২১][২২]
একজন ব্যক্তির রোগে আক্রান্ত ঝুঁকি সেই ব্যক্তি কতদিন ধরে ও দৈনিক কতটি ধূমপান করে তার সাথে সরাসরি সমানুপাতিক। তবে কেউ যদি ধূমপান পরিত্যাগ করে তবে ঝুঁকি ক্রমশ কমে আসে কারণ মানব শরীর ধূমপানজনিত ক্ষতি ধীরে ধীরে মেরামত করে নিতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করার একবছর পরে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যারা ধূমপান চালিয়ে যায় তাদের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে যায়। [২৩]
সকল ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি সমান নয়। ঝুঁকি নির্ভর করে কতটুকু তামাক সেবন করা হচ্ছে তার উপর। যারা বেশি ধূমপান করবে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তথাকথিত লাইট সিগারেট ঝুঁকি কমাতে সহায়ক নয়।[২৪]
মৃত্যু
প্রতিবছর শুধু ধূমপানের কারণে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।[২৫]এটি প্রতিরোধ যোগ্য অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ।[২৬] এক গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ ও মহিলা ধূমপায়ী গড়ে তাদের জীবনের যথাক্রমে ১৩.২ ও ১৪.৫ বছর হারান।[২৭]অপর এক গবেষণায় ৬.৮ বছরের কথা বলা হচ্ছে।[২৮]বলা হয়ে থাকে একটি সিগারেট গড়ে প্রায় এগারো মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়।[২৯][৩০][৩১]সারাজীবন ধরে ধূমপানকারীর মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকজন ধূমপানের ক্ষতির কারণে মারা যায়।[৫] অধূমপায়ীর তুলনায় একজন ধূমপায়ীর ৬০ বা ৭০ বছর বয়সের পূর্বে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তিনগুণ।[৫][৩২][৩৩]আমেরিকাতে প্রতি পাঁচ জনে একজন ধূমপানের স্বীকার।[৩৪] এবং প্রতিবছর প্রায় ৪,৪৩,০০০ জন অকালে প্রাণ হারান।[৩৫][৩৬]
২০১৫ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিগারেট সেবনের ফলে মোট মৃত্যুর ১৭% ক্ষেত্রে ধূমপান দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠিত রোগসমূহ ছাড়াও এর অন্যান্য ক্ষতির প্রভাবে মারা যায়।[৩৭]
ক্যান্সার
তামাক ব্যবহারের প্রাথমিক ঝুঁকি হলো বিভিন্নরকম ক্যান্সার, বিশেষত ফুসফুস ক্যান্সার।[৩৮] কিডনির ক্যান্সার[৩৯] ল্যারিংসের ক্যান্সার,[৪০][৪১] মূত্রথলির ক্যান্সার,[৪২] খাদ্যনালীর ক্যান্সার,[৪৩]অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার,[৪৪] ও পাকস্থলী ক্যান্সার।[৪৫] নারীর জরায়ু ক্যান্সারের সাথে তামাক ও পরোক্ষ ধূমপানের একটা সম্পর্ক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[৪৬]মায়েলয়েড লিউকেমিয়ার সাথে ধূমপানের অল্পবিস্তর সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৪৭] এছাড়া এর সাথে আরো অনেক ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে যেমন স্কোয়ামাস সেল সাইনোন্যাজাল ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, পিত্তাশয় ক্যান্সার, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ক্যান্সার, ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার ও শিশুদের বিভিন্ন ক্যান্সার।[৪৫] তামাকের সাথে স্তন ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি।[৪৮]
একজন পুরুষ ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে ৮৫ বছরের পূর্বে ফুসফুস ক্যান্সারে মৃত্যুর সম্ভাবনা ২২.১% একজন নারী ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে তা ১১.৯%। অধূমপায়ীর ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা যথাক্রমে ১.১% ও ০.৮% প্রায়।[৪৯]
ফুসফুসীয়
ধূমপানের কারণে এর মধ্যস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন কার্বন মনোক্সাইড, সাইয়ানাইড প্রভৃতির সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকার ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফুসফুসের অ্যালভিওলাই এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে এমফাইসিমা নামক রোগ হয়।[৫০] অ্যাক্রলিন নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহে ভূমিকা রাখে।[৫১]
কার্ডিওভাস্কুলার রোগ
ধূমপান হার্ট ও রক্তনালীতে তাৎক্ষণিক কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সিগারেটের ধোঁয়ায় যে কার্বন মনোক্সাইড থাকে তা রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে ধূমপানের এক মিনিটের মধ্যে হার্টের স্পন্দন বাড়তে শুরু করে এবং প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে হার্ট রেট প্রায় দশ শতাংশ বেড়ে যায়।[৫২]
এছাড়া ধূমপানের ফলে হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক,[৫৩] অ্যাথেরোসক্লেরোসিস ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।[৫৪]তামাকের কিছু কিছু উপাদান রক্তনালীকে সরু করে দেয় ফলে ব্লকেজ এর সম্ভাবনা বাড়ে যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে চল্লিশ বছরের কম বয়সী ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেড়ে যায়।[৫৫]আমেরিকান বায়োলজিস্টদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেটের ধোঁয়া কার্ডিয়াক পেশির কোষ বিভাজনকে প্রভাবিত করে এবং হার্টের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়।[৫৬]ধূমপানের ফলে বার্জার'স ডিজিজ হতে পারে। এই রোগে হাত ও পায়ের ধমনি ও শিরায় প্রদাহ হয় এবং থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বেধে যায় ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়ে ঘা বা ক্ষত তৈরি হতে পারে।[৫৭]
বৃক্কীয়
ধূমপান কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়াও আরো অনেক ক্ষতি করে থাকে। অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের ক্রনিক ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।[৫৮]ধূমপায়ীরা দ্রুত ডায়াবেটিক নেফ্রপ্যাথিতে আক্রান্ত হয়।[৫৯]
ইনফ্লুয়েঞ্জা
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীরা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয় বেশি এবং রোগের তীব্রতাও অনেক বেশি হয়।[৬০][৬১][৬২] বিশেষ করে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি।[৬৩]
মুখগহ্বর
মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো তামাক। এছাড়াও মুখের আরো অনেক রোগ রয়েছে যা কেবল তামাক সেবীদেরই হয়। ফুসফুস ক্যান্সার, ল্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার, খাদ্যনালীয় ক্যান্সার প্রভৃতির প্রধান কারণ তামাক।[৬৪][৬৫][৬৬][৬৭][৬৮]ধূমপায়ীদের পেরিওডন্টাইটিস বা দাঁতের চতুষ্পার্শ্বস্থ প্রদাহ বেশি হয়।[৬৯] দাঁতের রং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তামাকের বড় ভূমিকা রয়েছে।[৭০][৭১]তামাক সেবীদের হ্যালিটোসিস বা মুখে দুর্গন্ধ হয়।[৭২] দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার হার ২[৭৩] থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়।[৭৪][৭৫] এছাড়া লিউকোপ্লাকিয়া নামক আরেক ধরনের জটিলতা হতে পারে যাতে মুখগহ্বরের মিউকাস ঝিল্লিতে সাদা প্লাক দেখা দেয়[৭৬]
সংক্রমণ
দৈনিক বিশ বা এর অধিক সিগারেট সেবনে সংক্রমণের সম্ভাবনা দুই থেকে চারগুণ বেড়ে যায়, বিশেষত ফুসফুস সংক্রমণ।[৭৭][৭৮] চলতি ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে নিউমোকক্কাল সংক্রমেণর সম্ভাবনা চারগুণ বাড়ে।[৭৯]
ধূমপানের ফলে শ্বসনতন্ত্রের গাঠনিক পরিবর্তন ও ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটে ফলে সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।[৮০]
এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে ধূমপান করলে কাপসি সারকোমার ঝুঁকি বাড়ে।[৮১][৮২]
যৌন অক্ষমতা
অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীরা যৌন অক্ষমতায় ভুগার হার ৮৫ শতাংশ বেশি।[৮৩]এবং এটি লিঙ্গ উত্থান অক্ষমতার (Erectile dysfunction) প্রধান কারণ।[১২][৮৩] ধূমপানের ফলে অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হয়ে রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার ফলে এরকম হয়।[৮৪]
বন্ধ্যত্ব
ধূমপান ডিম্বাশয়ের জন্য ক্ষতিকর এবং বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ। সিগারেটের নিকোটিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরিতে বিঘ্ন ঘটায়। এই হরমোনটি ডিম্বাশয়ে ফলিকল উৎপাদন ও ডিম্বপাত নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ধূমপান জরায়ু ও ভ্রূণের আরো অনেক ক্ষতি করে। এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে ধূমপানের সময়কাল ও পরিমাণের উপর।[৮৫] কিছু ক্ষতি অপূরণীয় তবে ধূমপান ত্যাগ করলে অনেক ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।[৮৬][৮৭] ধূমপায়িনী নারীর বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৬০% বেশি।[৮৮]
তাৎক্ষণিক প্রভাব
ধূমপানকারীদের মতে ধূমপানের ফলে মানসিক প্রশান্তি, ক্ষিপ্রতা, ও তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে অধূমপায়ীর তুলনায় একজন ধূমপায়ী বেশি মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। একদম নতুন ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে প্রথমে বমিভাব, মাথা ঝিমঝিম, রক্তচাপ ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।[৮৯]
মানসিক চাপ
ধূমপায়ীরা অপেক্ষাকৃত বেশি মানসিক চাপে ভুগেন।[৯০] কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপায়ীর মানসিক চাপ আস্তে আস্তে বাড়ে এবং ধূমপান পরিত্যাগ করার পর তা ক্রমশ হ্রাস পায়।[৯১][৯২][৯৩]
সামাজিক ও আচরণগত
মেডিকেল গবেষকগণ দেখতে পেয়েছেন যে ধূমপান বিবাহ বিচ্ছেদের একটি নিয়ামক।[৯৪]অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রায় ৫৩% বেশি।[৯৫]
মস্তিষ্কের উপর প্রভাব
তামাক মানুষের মস্তিষ্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের স্মৃতিশক্তি ও বোধশক্তি দুটিই কমে যেতে পারে। তামাক আলঝাইমার্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায় বলে অনেকে মনে করে যদিও এ ব্যাপারে বেশ বিতর্ক আছে। [৯৬] তামাককে ডিমেনশিয়া রোগের জন্যও দায়ী করা হয়।[৯৭] কিশোর বয়সীদের স্মৃতিশক্তি ও বোধশক্তি কমিয়ে দেয়।[৯৮] এমনকি মস্তিষ্ক ছোট হয়েও যেতে পারে(cerebral atrophy).[৯৯][১০০]যারা কখনওই ধূমপান করে নি তাদের তুলনায় সাবেক ও বর্তমান ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে পারকিনসন'স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম লক্ষ করা যায়।[১০১][১০২] তবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীগণ নিশ্চিত নন। তবে একদল গবেষক বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, নিকোটিন মস্তিষ্কের ডোপামিনার্জিক সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে যা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তামাকের অন্যান্য উপাদানগুলো মনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ নামক এনজাইমকে নিবৃত করে যা ডোপামিনের ভাঙনের জন্য দায়ী।[১০৩]অনেক ক্ষেত্রে নিকোটিন মস্তিষ্কে ক্যাফেইনের মতো কাজ করে। ধূমপান মনোযোগ বাড়াতে পারে বলে অনেকে দাবি করেন।[১০৪]অধিকাংশ ধূমপায়ীকে হঠাৎ ধূমপান থেকে বিরত রাখলে কিছু উপসর্গ দেখা দেয় যেমন: অস্থিরতা, স্নায়ুবিক দৌর্বল্য, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, হার্টবিট দ্রুত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।[১০৫]
গর্ভাবস্থা
বেশকিছু গবেষণায় দেখা যায় যে তামাকের সাথে গর্ভপাতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ায়।[১০৬]গর্ভবতী মা ধূমপান করলে বা পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হলে কম ওজনবিশিষ্ট শিশুর জন্ম হতে পারে।[১০৭]শিশু গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পরে তামাকের সংস্পর্শে আসলে তার আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।[১০৮]
ঔষধ
ধূমপান কিছু লিভার এনজাইম লেভেল বাড়ায় যেগুলো ওষুধ বিপাকের জন্য দায়ী। এর ফলে উক্ত এনজাইমগুলো দ্রুত ওষুধের বিপাক ঘটায় যার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে আসে। [১০৯][১১০]
অন্যান্য ক্ষতি
ধূমপানের ফলে ক্ষুধা কমে যায়[১১১] তামাক AZGP1 এর উপর কাজ করে যা লিপিডের ভাঙন ত্বরান্বিত করে এবং ওজন কমায়।[১১২] সারাবিশ্বে আগুনজনিত মৃত্যুর ১০% ধূমপান থেকে হয়।[১১৩] ধূমপানের ফলে ক্রন'স ডিজিজের উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।[১১৪][১১৫][১১৬][১১৭] ধূমপায়ীরা রেডন ও অ্যাসবেসটস এর সংস্পর্শে এলে ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধূমপায়ীর তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়। [১১৮][১১৯]ধূমপানের ফলে অস্থি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে[১২০] এবং অস্ত্রোপচারের পর ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হয় ও নানান জটিলতা দেখা দেয়।[১২১]
উপকারিতা
ক্ষতি ছাড়া ধূমপানের কোনো উপকার নেই।ধূমপান ছাড়ুন আজই।জীবন সুন্দর।সুন্দর জীবনের সমাপ্তি তাড়াতাড়ি না হোক।[১২২] [১২৩]
কার্যপদ্ধতি
রাসায়নিক ক্যান্সার সৃষ্টকারী পদার্থ
ধোঁয়া বা যেকোনো আংশিক পোড়া জৈবযৌগতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ (কার্সিনোজেন) থাকে।
ধূমপানের সম্ভাব্য পরিণতি যেমন ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশিত হতে প্রায় কুড়ি বছর সময় লাগে।ঐতিহাসিকভাবে নারীকুল ব্যাপকহারে ধূমপান করা আরম্ভ করে পুরুষদের অনেক পরে, এজন্য তাদের ক্ষেত্রে ধূমপানজনিত মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেতে অনেক সময় নেয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়া শুরু করে ১৯৭৫ সালের দিকে যা কিনা গড়ে ধূমপান করা কমিয়ে ফেলার কুড়ি বছর পর। নারীদের ক্ষেত্রেও গড় ধূমপানের হার কমতে শুরু করে ১৯৭৫ সালের দিকে[১২৫]কিন্তু ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত তাদের ক্ষেত্রে ফুসফস ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার হ্রাস পায়নি।[১২৬]ধূমপানে কিছু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পাইরোলাইটিক যৌগ থাকে যা ডিএনএ(DNA) এর সাথে যুক্ত হয়ে জেনেটিক মিউটেশন করে। বিশেষত শক্তিশালী কার্সিনোজেন যেমন পলিসাইক্লিক অ্যারোমাটিক হাইড্রোকার্বন যা মিউটাজেনিক ইপক্সাইডে পরিণত হয়ে আরো বিষাক্ত হয়ে উঠে। বেনজোপাইরিন হলো প্রথম পলিসাইক্লিক অ্যারোমাটিক হাইড্রোকার্বন যা ধূমপানে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসাবে চিহ্নিত হয়। এটি ইপক্সাইডে পরিণত হয়ে কোষের নিউক্লিয়ার ডিএনএ এর সাথে স্থায়ীভাবে বন্ধন তৈরি করে ফলে কোষটি হয় মৃত্যুবরণ করে অথবা মিউটেশন হয়।যদি মিউটেশন হওয়া কোষটি অ্যাপোপটোসিস বা প্রোগ্রামড সেল ডেথ এর মাধ্যমে ধ্বংস না হয় তাহলে সেটি ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়।একইভাবে অ্যাক্রোলিন নামক আরেকটি যৌগ একই পদ্ধতিতে ক্যান্সার করতে পারে, তবে এটি সরাসরি কাজ করতে পারে।[১২৭]সিগারেটে ১৯টির বেশি রাসায়নিক পদার্থ আছে যারা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।[১২৮] নিম্নে কিছু শক্তিশালী কার্সিনোজেন নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- পলিসাইক্লিক অ্যারোমাটিক হাইড্রোকার্বন হলো আলকাতরা যৌগ যা পাইরোলাইসি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। এদের কিছুকিছু যৌগ স্বাভাবিক অবস্থাতেই বিষাক্ত, আবার কিছু যৌগ লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এরা পানিবিদ্বেষী হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত হয় না তাই সহজে শরীর থেকে নির্গত হয় না। এটাকে পানিতে দ্রবণীয় করার জন্য লিভার সাইটোক্রোম পি-৪৫০ নামক একধরনের এনজাইম তৈরি করে যা উক্ত যৌগে একটি অতিরিক্ত অক্সিজেন যোগ করে মিউটাজেনিক ইপক্সাইডে পরিণত করে যা কিছুটা বেশি দ্রবণীয় আবার বেশি সক্রিয়।
[১২৯] বেনজোপাইরিন দ্বারা সৃষ্ট কার্সিনোজেনেসিটি অনেকটা তেজস্ক্রিয়তার মত।[১৩০]
- অ্যাক্রোলিন হলো একটি পাইরোলাইসিস উৎপাদ যা সিগারেটে প্রচুর থাকে।
এটি সিগারেটের ধোঁয়াকে ঝাঁঝাল করে, এর জ্বালা সৃষ্টিকারী ও ল্যাক্রিমেটরি বা অশ্রু উৎপাদক প্রভাব রয়েছে।PAH এর উৎপাদের মতো অ্যাক্রোলিন ইলেক্ট্রোফিলিক অ্যালকাইলেটিং এজেন্ট এবং স্থায়ীভাবে DNA বেজ গুয়ানিন এর সাথে বন্ধন তৈরি করে।অ্যাক্রোলিন-গুয়ানিন অ্যাডাক্ট DNA কপিং এর সময় মিউটেশনকে প্রভাবিত করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে, তবে এর কোনো মেটাবলিক অ্যাক্টিভেশন এর প্রয়োজন নাই। সিগারেটে PAH এর তুলনায় অ্যাক্রোলিন ১০০০ গুণ বেশি থাকে যা একই সাথে মিউটাজেন ও কার্সিনোজেন হিসাবে কাজ করে।
- নাইট্রোস্যামাইন হলো কতক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ যা সিগারেটের ধোঁয়ায় পাওয়া যায় তবে স্বাভাবিক কাঁচা তামাক পাতায় পাওয়া যায় না। এই যৌগগুলো ফ্লু-কিওরড তামাক পাতায় পাওয়া যায় যা কিউরিং প্রক্রিয়ার সময় আনকিওরড তামাক পাতায় প্রাপ্ত নিকোটিন ও অন্যান্য যৌগ এবং সকল দহন গ্যাসে প্রাপ্ত বিভিন্ন নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়।[১৩১][১৩২]
রেডিওঅ্যাকটিভ কার্সিনোজেন
রাসায়নিক ও অতেজস্ক্রিয় কার্সিনোজেনের পাশাপাশি তামাকে কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সীসা-২১০(210Pb) ও পলোনিয়াম-২১০(210Po) দুটি আইসোটোপ সিগারেট ধোঁয়াতে বিদ্যমান। সিগারেটে পলোনিয়াম-২১০ এর পরিমান হলো ০.০২৬৩-০.০৩৬ pCi (০.৯৭–১.৩৩mBq),[১৩৩][১৩৪] ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ(NCAR) এর এক গবেষণায় দেখা যায় তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো ব্রংকিয়াল শাখার হটস্পটে জমা হয় যেখানে তামাকে অবস্থিত আলকাতরা জমা হয়। আলকাতরা সহজে দ্রবীভূত না হওয়ার কারণে তেজস্ক্রিয় যৌগসমূহের প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার হওয়ার পূর্বে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। ঘরের ভিতরে এইগুলো পরোক্ষভাবে অধূমপায়ীদের ক্ষতি করতে পারে। আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো সিগারেটে টান দেওয়ার চেয়ে বরং স্বাভাবিক নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এর ধোঁয়া ফুসফুসে গেলে ক্ষতি বেশি হয় কারণ স্বাভাবিক নিঃশ্বাসে যত গভীরভাবে বাতাস টেনে নেয়া হয় সিগারেট খাওয়ার সময় এত গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া হয় না, ফলে স্বাভাবিক নিঃশ্বাসে ক্ষতিকর পদার্থ ফুসফুসের গভীর পর্যন্ত যেতে পারে এবং বেশি ক্ষতি করতে পারে। এইজন্য প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর তুলনায় পরোক্ষ ধূমপায়ীর ক্ষতি বেশি হয়। গবেষণায় আরো দেখা যায় যারা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রায় ৮০-১০০ rads হয়।[১৩৫][১৩৬][১৩৭]
দৈনিক গড়ে ১.৫ প্যাক ধূমপান বছরে প্রায় ৬০-১৬০ mSv মাত্রার তেজস্ক্রিয়তার সমান।[১৩৮][১৩৯]
যেটাকে একটি পারমাণবিক চুল্লির কাছাকাছি এলাকায় বসবাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।(প্রতিবছর ০.০০০১mSv)[১৪০][১৪১] অথবা প্রতিবছর ৩.০ mSv যা আমেরিকানদের গড় মাত্রা।[১৪১][১৪২][১৪৩][১৪৪]
অপরপক্ষে ১৯৯৯ সালে জার্নাল অব ক্যান্সার ইন্সটিটিউট একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে, সেখানে দাবি করা হয় যে, সিগারেটের ধোঁয়ায় যে পরিমান তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম থাকে তা ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত না।[১৪৫]
২০১১ সালে Hecht দাবি করেন যে, সিগারেটের ধোঁয়ায় 201Po এর পরিমাণ এতই কম যে তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট না।[১৪৬]
নিকোটিন
নিকোটিন সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যে পাওয়া যায় যা উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে এবং তামাকের প্রতি আসক্তি তৈরিতে ভুমিকা রাখে।তামাক সেবনের পর অধিকাংশ নিকোটিন পাইরোলাইজড হয় এবং অল্প পরিমাণ থেকে যায় যা মৃদু দৈহিক নির্ভরশীলতা ও মৃদু থেকে শক্তিশালী মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরির জন্য যথেষ্ট। শরীরে ঠিক কী পরিমাণ নিকোটিন শোষিত হবে তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন, তামাকের ধরন, তামাক নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে কি না বা ফিল্টার ব্যবহার করা হচ্ছে কি না।এছাড়া সিগারেটের ধোঁয়ার অ্যাসিটালডিহাইড থেকে হারমেন(একটি মনো-অ্যামায়িন অক্সিডেজ ইনহিবিটর) তৈরি হয় যা আসক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[১৪৭]নিকোটিনের উদ্দীপনার ফলে মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস অ্যাকামবেন্স থেকে ডোপামিন ক্ষরণ হয় যা আসক্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।Henningfield ও Benowitz গবেষণা করে বলেন, নিকোটিন গাঁজা, ক্যাফেইন, ইথানল, কোকেন ও হেরোইনের চাইতে বেশি আসক্তিকর। তবে নিকোটিনের তুলনায় উপর্যুক্ত পদার্থগুলোর উইথড্রয়াল ইফেক্ট অনেক বেশি।[১৪৮][১৪৯]বর্তমানে যতজন ক্যানাডিয়ান ধূমপান করেন তার অর্ধেকই ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেছেন।[১৫০]ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার ও'লাফলিনের মতে ধূমপান শুরুর পর আসক্তি সৃষ্টি হতে কমপক্ষে পাঁচ মাস সময় লাগে।[১৫১]ইনজেকশনের পর নিঃশ্বাসের সাথে ধোঁয়া গ্রহণ দ্বিতীয় একটি সহজ মাধ্যম যার দ্বারা খুব দ্রুত ও সহজে কোন যৌগকে রক্তে পৌঁছানো যায়। এর মাধ্যমে কোনোপদার্থকে দশ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কে প্রেরণ করা যায়। এইজন্য অধিকাংশ ধূমপায়ী মনে করে যে তারা ধূমপান ত্যাগ করতে পারবে না। তবে যারা ধূমপান ত্যাগের চেষ্টা করে এবং একটানা তিন মাস নিকোটিন ছাড়া থাকতে পারে তারা বাকি জীবন ধূমপান ছাড়া থাকতে পারবে বলে মনে করা হয়।[১৫২]যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করে তাদের ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিশেষত অল্পবয়সী তরুণদের এই প্রবণতা বেশি থাকে।[১৫৩] সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রতীয়মান যে, নিকোটিন অন্যান্য আসক্তিকর ড্রাগস যেমন কোকেন, হেরোইন ইত্যাদির মতো মস্তিষ্কের মেজোলিম্বিক পাথওয়েতে ডোপামিন লেভেল বাড়িয়ে দেয় ফলে নিকোটিন গ্রহণ একটি আনন্দময় প্রভাব ফেলে যা পুনরায় নিকোটিন গ্রহণে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।[১৫৪]আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, ডোপামিন রিসেপ্টরের সক্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি রিয়াকশন টাইম ও স্মৃতিশক্তির সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়।[১৫৫]উল্ল্যেখ্য, যদিও তামাক আসক্তির জন্য নিকোটিনকে দায়ী করা হয় তথাপি দেখা গেছে নিকোটিন এককভাবে প্রয়োগ করা হলে ততটা আসক্তিকর নয়।[১৫৬]
ধূমপানের ধরন
পরোক্ষ ধূমপান
পরোক্ষ ধূমপান বলতে সিগারেট, পাইপ বা চুরুটের পুড়ন্ত প্রান্ত থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ধূমপায়ীর ফুসফুস থেকে নির্গত ধোঁয়াকে বুঝায়। এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে চলে যায়, বাতাসে অনেকক্ষণ ভেসে বেড়ায় ও নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে যেমন ক্যান্সার, শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ, ও হাঁপানি।[১৫৭]যেসকল ব্যক্তি গৃহে ও কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা ২৫-৩০% ও ফুসফুস ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২০-৩০% বাড়ে। পরোক্ষ ধূমপানের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৩৮,০০০ লোক মারা যায় যার মধ্যে ৩,৪০০ জন ফুসফুস ক্যান্সারে মারা যান।[১৫৮]
চর্বণযোগ্য তামাক
চর্বণযোগ্য তামাক ক্যান্সার করতে পারে বিশেষত মুখ ও কণ্ঠনালির ক্যান্সার।[১৫৯]
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার-এর কিছু বিজ্ঞানীদের মতে ধূমপান বন্ধ করার প্রোগ্রাম হিসাবে ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা কম হবে বলে মনে করা হয় যদিও তাদের এই দাবির পক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি।"[১৫৯]ওরাল ও স্পিট টোবাকো লিউকোপ্লাকিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় যা মুখের ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা। [১৬০]
চুরুট
অন্যান্য ধূমপানের মতো চুরুটের ক্ষেত্রেও অনেক স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে যা এর মাত্রার উপর নির্ভর করে।[১৬১]যারা দৈনিক ১-২ চুরুট সেবন করে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কম।[১৬২] যারা অনিয়মিতভাবে চুরুট ব্যবহার করে তাদের ঝুঁকির মাত্রা অজানা[১৬৩] এবং পরিমাপ করাও কঠিন।তবে নির্ভরযোগ্য মত হলো স্বাস্থ্যঝুঁকি চুরুট সেবনের পরিমাণের সমানুপাতিক। [১৬৪]চুরুট সেবন ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।[১৬৫]
হুঁকা
তামাক ব্যবহারকারীদের একটি সাধারণ বিশ্বাস হলো সিগারেটের তুলনায় হুঁকায় ক্ষতি কম।[১৬৬]হুঁকায় থাকা অতিরিক্ত আদ্রতা থাকায় ধোঁয়া অপেক্ষাকৃত কম জ্বালা সৃষ্টি করে যার ফলে এটি কম ক্ষতিকর বলে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ক উদ্বেগ কমে যায়।[১৬৭]মায়োক্লিনিকসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকগণ দাবি করেন যে হুঁকা সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর।[১৬৮][১৬৯]বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণাতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।[১৭০]প্রত্যেকটি সেশনে গড়ে ৪০ মিনিট ধরে হুঁকা সেবন করা হয় এবং ৫০ থেকে ২০০ বার টানা হয় যাতে ০.১৫-০.৫০ লিটার ধোঁয়া ভিতরে প্রবেশ করে।[১৭১][১৭২]একঘণ্টার এক সেশনে যে পরিমাণ ধূমপান করা হয় তা একটি সিগারেটের তুলনায় ১০০-২০০ গুণ বেশি।[১৭১][১৭৩]জার্নাল অব পেরিওডন্টোলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় সাধারণ ধূমপায়ীর তুলনায় হুঁকা ব্যবহারকারীর মাড়ির সমস্যা ৩.৮ গুণ এবং অধূমপায়ীর তুলনায় ৫ গুণবেশি হয়।[১৭৪]মার্কিন পত্রিকা ইউএসএ টুডেপ্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী হুঁকা ব্যবহারকারীর ফুসফুস ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধূমপায়ীর তুলনায় পাঁচগুণ বেশি।[১৭৫]
গুল
এটি একটি সুগন্ধি পাউডার যা গাল ও মাড়ির মাঝখানে রাখা হয়। যারা প্রথম ব্যবহার করে তাদের মাথা ঘোরা ও বমিভাব হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মধ্যে নিঃশ্বাসে দুর্ঘন্ধ, দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়া ও মুখের ক্যান্সারের সম্ভাবনা অন্যতম। [১৭৬]
প্রতিরোধ
চিকিৎসকের দ্বারাশিশু ও কিশোরদেরকে শিক্ষা ও উপদেশ করে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।[১৭৭]
ব্যবহার
যদিও তামাক ধূমপান ছাড়াও অন্যভাবে সেবন করা যায় যেমন চিবিয়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুধু ধূমপানকেই পরিসংখ্যানের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে।[১]তামাকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধূমপানকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।[২]
২০০০ সালে ১২২ কোটি লোক ধূমপান করতো, ২০১০ সালে ১৪৫ কোটি ও ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৯০ কোটি ধূমপায়ী হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।[১৭৮]
২০০২ সাল পর্যন্তসারাবিশ্বে ২০% অল্পবয়সী কিশোর-কিশোরী(১৩-১৫) ধূমপান করে। দৈনিক প্রায় আশি হাজার থেকে এক লাখ শিশু ধূমপান আসক্তির স্বীকার হচ্ছে যার প্রায় অর্ধেকই এশিয়াতে বাস করে।[১৭৯]
WHO এর মতে ধূমপানজনিত ক্ষতি ও অকাল মৃত্যু গরীবদেরই বেশি হয়। ১২২ কোটি লোকের মধ্যে ১০০ কোটিই উন্নয়নশীল দেশে বাস করে।[১৮০]২০০২ সালের হিসাব মতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রতিবছর ৩.৪% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।[১৭৯]WHO ২০০৪ সালে হিসাব করেছিলো যে সারাবিশ্বে ৫৮.৮ মিলিয়ন লোক মারা যায়।[১৮১]:৮যার মধ্যে ৫৪ লাখ ধূমপানজনিত কারণে[১৮১]:২৩ এবং ২০০৭ সালে তা ৪৯ লাখে নেমে আসে।[১৮২]২০০২ সালে ৭০% মৃত্যুই ঘটেছিল উন্নয়নশীল দেশে।[১৮২]অল্পবয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই প্রবণতা অনেক বেশি। এর জন্য অনেকে কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনকে দায়ী করেন কারণ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা এরকম বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাছাড়া ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না।কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন বাবদ ১২ বিলিওন ডলার খরচ করে থাকে।[১৪]জনগণকে ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সরকার প্রকাশ্য ধূমপানের উপর অনেক কড়াকড়ি আরোপ করে। আমেরিকায় প্রো-চিল্ড্রেন অ্যাক্ট ২০০১ নামে এরকম একটি আইন পাশ হয়েছিল।[১৮৩]২০১১ সালের ২৩শে মে নিউ ইয়র্ক শহরে সকল পার্ক, সৈকত ও রাস্তার পাশের মলগুলোতে ধূমপান নিষিদ্ধ করে।[১৮৪]
ইতিহাস
স্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাব সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। Gideon Lincecum নামক একজন আমেরিকান প্রকৃতিবিজ্ঞানী ও বোটানিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক উনিশ শতকের প্রথমদিকে তামাক সম্পর্কে লিখেছিলেন, "অনেক প্রবীণ চিকিৎসক এই বিষাক্ত গাছকে ঔষধ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন, এবং এর দ্বারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে.... এটি অত্যন্ত ভয়ানক বস্তু এবং আপনি ইচ্ছা করলে ব্যবহার করুন, এটি সর্বদা মূল্যবান শক্তিকে কমিয়ে দিবে ঠিক ততটা পরিমাণে যতটা পরিমাণ ব্যবহৃত হবে- এটা হতে পারে খুব ধীরে ধীরে, কিন্তু হবেই তা একদম নিশ্চিত।"[১৮৫]
উনিশ শতকের শেষ দিকে সিগারেট তৈরির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হওয়ার পর স্বল্প খরচে ব্যাপকহারে সিগারেট উৎপাদন শুরু হয়।তারপর এটি সমাজের অভিজাত ও কেতাদুরস্ত লোকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। ১৯১২ সালে, আমেরিকান চিকিৎসক ড. আইজাক অ্যাডলার প্রথমবারের মতো ধূমপানের সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের সম্পর্কের কথা বলেন।[১৮৬]১৯২৪ সালে অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশার রিডার'স ডাইজেস্ট পত্রিকায় ধূমপান বিরোধী একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন, সেখানে তিনি তামাক সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন তা হলো.."তামাক পুরাশরীরের স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়এবং এর মূল্যবান ক্ষমতা ও প্রতিরোধ শক্তিকে খর্ব করে... এটা নার্কোটিক পয়জন এর মতো কাজ করে, আফিমের মতো, এবং অ্যালকোহলের মতো, যদিও সাধারণত অল্প পরিমাণে।"[১৮৭]১৯২৯ সালে, ড্রেসডেন, জার্মানিরবিজ্ঞানী ফ্রিৎস লিকিন্টএকটি পরিসংখ্যানিক প্রমাণপত্র প্রকাশ করেন যার মাধ্যমে তিনি ফুসফুস ক্যান্সার ও তামাকের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন।[১৮৮]প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ফুসফুস ক্যান্সারকে বিরল একটি রোগ হিসেবে ভাবা হতো, এমনও হয়েছে যে অনেক চিকিৎসক তাঁর পেশাগত জীবনে একবারের জন্যেও এই রোগীর দেখা পাননি।[২১][১৮৯]
১৯৫০ সালে, রিচার্ড ডল ও অস্টিন ব্র্যাoডফোর্ড হিল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালেএকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এবং সেখানে ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের সম্পর্ক দেখান।[৩] এর ঠিক চার বছর পর, ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামে একটি গবেষণা প্রকাশ হয় যেখানে এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়।[৪]ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি ২০০১ সাল পর্যন্ত করা হয়। প্রতি দশ বছর পরপর ফলাফল প্রকাশ করা
হতো, সর্বশেষ ফলাফল প্রকাশ করা ২০০৪ সালে।[৫]
গবেষণা
১৯৩০ সালে জার্মান বিজ্ঞানীগণ দেখান যে সিগারেট ফুসফুস ক্যান্সার করতে পারে।[১৯০]১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ মানুষের জীবনকাল ও ধূমপানের মধ্যে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক খুঁজে পান। ১৯৫০ সালে পাঁচটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যার প্রত্যেকটিতে ফুসফুস ক্যান্সারের সাথে ধূমপানের শক্তিশালী সম্পর্ক দেখানো হয়।[১৯১] এই গবেষণার ফলগুলো ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালেস্মোকিং অ্যান্ড কার্সিনোমা অব লাংশিরোনামে প্রকাশিত হয়।। উক্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, যারা অত্যধিক পরিমাণে ধূমপান করে তাদের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের তুলনায় পঞ্চাশগুণ বেশি।[১৯১]ধূমপায়ী বলতে যারা দৈনিক ধূমপান করে তাদের বুঝানো হয়েছে এবং ধূমপান সংক্রান্ত সকল গবেষণায় এই ক্যাটাগরিকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। যারা দৈনিক ধূমপান করেনা তাদেরকে অকেশনাল স্মোকার হিসেবে ধরা হয়। ২০০৬ সালে ইউরোপীয় গবেষণায় দেখা যায় এই ধরনের ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের তুলনায় ১.২৪ গুণ বেশি।[১৯২]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
গ্রন্থতালিকা
- "WHO REPORT on the global TOBACCO epidemic" (PDF)। World Health Organization। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-০১।
- "The Global Burden of Disease 2004 Update" (PDF)। World Health Organization। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-০১।
- "Chapter 1: Introduction and Approach to Causal Inference" (পিডিএফ)। 2004 Surgeon General's Report—The Health Consequences of Smoking (PDF)। Washington DC: Department of Health and Human Services, Centers for Disease Control and Prevention, National Center for Chronic Disease Prevention and Health Promotion, Office on Smoking and Health। ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৪।
- "The health consequences of involuntary exposure to tobacco smoke: a report of the Surgeon General" (PDF)। Atlanta, U.S.: U.S. Department of Health and Human Services, Centers for Disease Control and Prevention, National Center for Chronic Disease Prevention and Health Promotion, Office on Smoking and Health। ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৫।
- "Cancer Facts and Figures 2004: Basic Cancer Facts"। American Cancer Society। ২০০৯-০২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২১।
- Lichtenstein P, Holm NV, Verkasalo PK, Iliadou A, Kaprio J, Koskenvuo M, Pukkala E, Skytthe A, Hemminki K (জুলাই ২০০০)। "Environmental and heritable factors in the causation of cancer--analyses of cohorts of twins from Sweden, Denmark, and Finland"। The New England Journal of Medicine। 343 (2): 78–85। ডিওআই:10.1056/NEJM200007133430201। পিএমআইডি 10891514।
- Montesano R, Hall J (অক্টো ২০০১)। "Environmental causes of human cancers"। European Journal of Cancer। 37 Suppl 8: S67–87। ডিওআই:10.1016/S0959-8049(01)00266-0। পিএমআইডি 11602374।