হয়গ্রীব উপনিষদ্‌

হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ বা হয়গ্রীবোপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: हयग्रीव उपनिषत्) হল একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি ১০৮টি উপনিষদের অন্যতম। হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং বিষ্ণুর অশ্বমস্তক-বিশিষ্ট অবতার হয়গ্রীবের প্রতি উৎসর্গিত।[১] এটি বিষ্ণু-উপাসক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ এবং অথর্ববেদের সঙ্গে যুক্ত।[২] যে হয়গ্রীব বেদের মূর্তস্বরূপ চিত্ত বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী, সেই হয়গ্রীবের পূজার মন্ত্রগুলি এই উপনিষদের প্রধান আলোচ্য।

হয়গ্রীব
হয়গ্রীব
দেবনাগরীहयग्रीव
নামের অর্থবিষ্ণুর অশ্বমস্তক-বিশিষ্ট অবতার হয়গ্রীব
রচয়িতাব্রহ্মা
উপনিষদের
ধরন
বৈষ্ণব
সম্পর্কিত বেদঅথর্ববেদ
অধ্যায়ের সংখ্যা
শ্লোকসংখ্যা২০

কথিত আছে, বিষ্ণুর বাহন গরুড় তিরুবন্তিপুরমে শ্রী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সন্ত ও গুরু বেদান্ত দেশিকাকে হয়গ্রীব মন্ত্রগুলি শিখিয়েছিলেন।[৩]

বিষয়বস্তু

হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এই উপনিষদে মোট শ্লোকের সংখ্যা ২০। ব্রহ্মা তার পুত্র ঋষি নারদকে শিক্ষা দিচ্ছেন - এই আকারে এই উপনিষদ্‌টি রচিত হয়েছে। গ্রন্থের শুরুতেই বিষ্ণুকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে বন্দনা করা হয়েছে এবং তার কাছে তার সকল ভক্তের কল্যাণকামনা করা হয়েছে। সকলের কল্যাণের জন্য ইন্দ্র, গরুড়, সূর্যবৃহস্পতিকেও বন্দনা করা হয়েছে।[৪][৫][৬]

নারদ তার পিতা ব্রহ্মাকে সকল পাপ নির্মূলকারী এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ বিতরণকারী ব্রহ্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন। ব্রহ্মা বলছেন, যে হয়গ্রীবের মন্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারে, সে শ্রুতি, স্মৃতি, ইতিহাসপুরাণ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং ধনবান হতে পারেন। এরপর ব্রহ্মা হয়গ্রীব পূজার বিভিন্ন মন্ত্র বর্ণনা করতে শুরু করেন।[৪][৫][৬]

প্রথম মন্ত্রে বিষ্ণুকে হয়গ্রীব রূপে জাগতিক বিশ্বের বাইরে অবস্থানকারী ও ত্রাণকর্তারূপে বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় মন্ত্রে হয়গ্রীবকে ঋক্‌, সাম, যজুর্বেদওঙ্কারের মূর্তি বলা হয়েছে। তাকে পৃথিবীতে বেদ-আনয়নকারী অশ্বমস্তক-বিশিষ্ট অবতার বলা হয়েছে। তৃতীয় মন্ত্রে বেদের মূর্তি হয়গ্রীবের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে তিনি যেন এই উপনিষদের পাঠকের কাছে বেদজ্ঞান প্রকাশ করেন এবং বলা হয়েছে এই দেবতার গুণকীর্তন করেন ওঙ্কার ও বেদসমূহ। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষির নাম হিসেবে ব্রহ্মা, অত্রি, রবি, সবিতা ও ভার্গবের নাম করা হয়েছে। এই মন্ত্রগুলির ছন্দ হল গায়ত্রী, ত্রিষ্টুভ ও অনুষ্টুভ এবং দেবতা হলেন হয়গ্রীব। বীজমন্ত্রটি হল হ্লৌঁ, শক্তি হল সোহম, কীলক হল হ্লুঁ, বিনিয়োগ হল ভোগ ও মোক্ষ। শেষে অ, উ ও ম এই তিন অক্ষরের সাহায্যে অঙ্গন্যাসের কথা বলা হয়েছে। এরপর ধ্যানমন্ত্রটি বর্ণিত হয়েছে। এই ধ্যানমন্ত্রের সাহায্যে পূজক দেবতার মূর্তিটি মনে মনে কল্পনা করতে পারেন। এই মন্ত্রে হয়গ্রীবকে চতুর্ভূজ বলা হয়েছে। তার চার হাতের তিনটিতে রয়েছে শঙ্খ, সুদর্শন চক্র ও গ্রন্থ এবং চতুর্থ হাতে রয়েছে মহামুদ্রা। ২৯-অক্ষরবিশিষ্ট মন্ত্র (ওঁ শ্রীঁ হ্লৌঁ ওঁ নমো ভগবতে হয়গ্রীবায় বিষ্ণবে মহ্যং মেধাং প্রজ্ঞাং প্রয়চ্চ স্বাহা) ও ২৮-অক্ষরবিশিষ্ট মন্ত্র (ওঁ শ্রীঁ হ্রীঁ ঐঁ ঐঁ ঐঁ ক্লীঁ ক্লীঁ সৌহ্‌ সৌহ্‌ হ্রীঁ ওঁ নমো ভগবতে হয়গ্রীবায় মহ্যং মেধাং প্রজ্ঞাং প্রয়চ্চ স্বাহা) - এই দুই মন্ত্রের কথা বলে প্রথম অধ্যায় শেষ হচ্ছে।[৪][৫][৬]

দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতে ব্রহ্মে হয়গ্রীবের বীজমন্ত্রটির কথা বলছেন। তিনি এই মন্ত্রটি প্রথমে শিবকে শিখিয়েছিলেন। শিব এই মন্ত্র সঙ্কর্ষণকে, সঙ্কর্ষণ নারদকে এবং নারদ ব্যাসকে শেখান। ব্যাসকে জগতকে এই মন্ত্র শিক্ষা দেন। হয়গ্রীবের বীজমন্ত্রটিকে এই উপনিষদে "মন্ত্ররাজ" বলা হয়েছে। এই মন্ত্র সূর্য ও অন্যান্য দেবতারা জপ করেন এবং এই মন্ত্রই হয়গ্রীবের বাণীমূর্তি। যিনি এই মন্ত্র জপ করেন, তিনি সর্বোচ্চ জ্ঞান এবং দিকপাল, রাজন্যবর্গ ও নাগের অধিপতি হন।[৪][৫][৬]

কথিত আছে অন্য একটি মন্ত্র অমৃতং কুরু কুরু স্বাহা (অনুগ্রহ করে আমাকে অমর করুন) জপকারীকে জ্ঞান, ধন ও অষ্ট সিদ্ধ প্রদান করে। আরও বলা হয়েছে হ্লৌঁ সকলসম্রাজ্ঞেন সিদ্ধিং কুরু কুরু স্বাহা এই সকল মন্ত্রগুলি জানতে সাহায্য করে। যারা এই মন্ত্রগুলি জপ করে, তাদের সব পাপ ধুয়ে যায় এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র হয়। জীবনে সে দেহের উপর কর্তত্ব করে এবং মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ করে। প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম, (জ্ঞানই ব্রহ্ম), তত্ত্বমসি (তুমিই সে), অয়মাত্মা ব্রহ্ম (আমার আত্মাই ব্রহ্ম) এবং অহং ব্রহ্মাস্মি (আমিই ব্রহ্ম) - এই চারটি বৈদিক মহাবাক্যের অর্থ সে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়। এরপর চারটি বৈদিক মন্ত্র পাঠ করা হয়। এগুলি হল : (১) যদ্‌ বাক্‌ বদন্তি, (২) গৌরিমিমায়া, (৩) ওষ্টাপিধান ও (৪) সা সর্পরীরাতিম[৪][৫][৬]

উপনিষদ্‌ গ্রন্থাবলির রীতি অনুসারে, হয়গ্রীব উপনিষদের শেষে এই গ্রন্থটির মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে। একাদশী তিথিতে এই উপনিষদ পাঠ করলে হয়গ্রীবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে জীবনের শেষে মোক্ষ লাভও হয়ে থাকে। গ্রন্থের শেষে একটি প্রার্থনায় বলা হয়েছে এই মন্ত্রগুলি ব্রহজ্ঞান এবং এই ভক্ত যেন হয়গ্রীব এবং এই মন্ত্রগুলিকে কখনও না ভুলে যান।[৪][৫][৬]

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন