হ্যারি পটার (চলচ্চিত্র ধারাবাহিক)
হ্যারি পটার চলচ্চিত্র সিরিজটি ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাউলিং রচিত সাত খন্ডের হ্যারি পটার উপন্যাস সিরিজের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত। সিরিজে বইয়ের সংখ্যা সাতটি হলেও, চলচ্চিত্র সংখ্যা আটটি। কারণ, সর্বশেষ বইটির কাহিনী অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং জটিল হওয়ায় বইটি অবলম্বনে দুই পর্বের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।[৫][৬]
হ্যারি পটার চলচ্চিত্র | |
---|---|
পরিচালক | ক্রিস কলম্বাস (১-২) আলফানসো কোয়ারন (৩) মাইক নিউয়েল (৪) ডেভিড ইয়েটস (৫-৭) |
প্রযোজক | ডেভিড হেয়ম্যান ক্রিস কলম্বাস (৩) মার্ক র্যাডক্লিফ (৩) ডেভিড ব্যারন (৫-৭) জে কে রাউলিং[১][২] (৭) |
রচয়িতা | চিত্রনাট্য স্টিভ ক্লোভস (১-৪, ৬-৭) মাইকেল গোল্ডেনবার্গ (৫) উপন্যাস জে কে রাউলিং |
শ্রেষ্ঠাংশে | ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ রুপার্ট গ্রিন্ট এমা ওয়াটসন রিচার্ড হ্যারিস ম্যাগি স্মিথ রোবি কলট্রেন অ্যালান রিকম্যান জন হার্ট ইয়ান হার্ট কেনেথ ব্রানাফ রিচার্ড গ্রিফিথস ফায়োনা শ্য মাইকেল গ্যামবন ডেভিড থেউলিস গ্যারি ওল্ডম্যান টিমথি স্পল র্যালফ ফাইনেস ইমেল্ডা স্টনটন হেলেনা বনহাম কার্টার মিরান্ডা রিচার্ডসন জিম ব্রডবেন্ট বিল নাইয়ি রবার্ট হার্ডি রবার্ট প্যাটিনসন মার্ক উইলিয়ামস জুলি ওয়াল্টার্স ওয়ারউইক ডেভিস ডেভিড ব্র্যাডলি ব্রেন্ডন গ্লিসন |
সুরকার | জন উইলিয়ামস (১-৩) প্যাট্রিক ডয়েল (৪) নিকোলাস হুপার (৫,৬) আলেকজান্ডার ডেসপ্লেট[৩] (৭) থিমস: জন উইলিয়ামস অর্কেস্ট্র্যাটরঃ কনরাড পোপ (১-৩, ৭) |
চিত্রগ্রাহক | জন সিল (১) রজার প্র্যাট (২, ৪) মাইকেল সেরেসিন (৩) স্লাভোমির ইদজিয়াক (৫) ব্রুনো ডেলবনেল (৬) এডোয়ার্ডো সিয়েরা (৭) |
সম্পাদক | রিচার্ড ফ্রান্সিস-ব্রুস (১) পিটার অনেস (২) স্টিভেন ওয়েইজবার্গ (৩) মাইক অডসলি (৪) মার্ক ডে (৫-৭)মার্ক ডে |
প্রযোজনা কোম্পানি | হেয়ডে ফিল্মস |
পরিবেশক | ওয়ার্নার্স ব্রাদার্স |
মুক্তি | ৪ নভেম্বর ২০০১ (১) ৩ নভেম্বর ২০০২ (২) ৩১ মে ২০০৪ (৩) ১৮ নভেম্বর ২০০৫ (৪) ১১ জুলাই ২০০৭ (৫) ১৫ জুলাই ২০০৯ (৬) ১৯ নভেম্বর ২০১০ (৭, পর্ব-১) ১৫ জুলাই ২০১১ (৭, পর্ব-২) |
স্থিতিকাল | ১০৪৯ মিনিট[৪] |
দেশ | যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $১,২৮০,০০০,০০০ |
আয় | $৬,৩৪৩,৮৬৫,৮৪২ |
হ্যারি পটার সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো বিপণন করেছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স পিকচার্স এবং প্রযোজনা করেছেন ডেভিড হেয়ম্যান। এছাড়া সবগুলো চলচ্চিত্রে প্রধান তিন চরিত্র হ্যারি পটার, রন উইজলি এবং হারমায়োনি গ্রেঞ্জার এর ভূমিকায় অভিনয় করেছে তিন উদীয়মান তারকা, ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ, রুপার্ট গ্রিন্ট এবং এমা ওয়াটসন। হ্যারি পটার সিরিজটি বর্তমানে সারাবিশ্বের তরুণদের একটি আইকনে পরিণত হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই সিরিজটি সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র সিরিজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত হ্যারি পটার প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে এবং সর্বোচ্চ আয়কারী ৩০ টি চলচ্চিত্রের তালিকায় হ্যারি পটার সিরিজের প্রত্যেকটি ছবি রয়েছে।[৭]
সিরিজের সর্বশেষ চলচ্চিত্র হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস দুই পর্বে নির্মিত হয়েছে, যার প্রথম পর্বটি ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বটি ২০১১ সালের ১৫ জুলাই মুক্তি পেয়েছে । এর মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তুমুল জনপ্রিয় হ্যারি পটার সিরিজের।
কাহিনী বিন্যাস
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন (২০০১)
হ্যারি পটার একজন অনাথ বালক যে তার মায়ামমতাহীন খালা খালুর কাছে বড় হয়েছে। এগার বছর বয়সে, হঠাৎ রুবিয়াস হ্যাগ্রিড নামের একজন আধা দানব তাকে জানায় যে সে একজন জাদুকর। হ্যারি জানতে পারে তার বয়স যখন এক ছিল, তখন সেই সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কালো জাদুকর লর্ড ভলডেমর্ট তার বাবা মাকে হত্যা করে। ভলডেমর্ট হ্যারিকেও হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু কোন এক রহস্যময় কারণে হ্যারি বেঁচে যায় এবং ভলডেমর্টের পতন ঘটে। ফলে জাদুকরদের বিশ্বে হ্যারি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। এদিকে হ্যারি হগওয়ার্টস জাদুশিক্ষা স্কুলে ভর্তি হয এবং নতুন নতুন জাদু শিখতে থাকে। সে রন উইজলি ও হারমায়োনি গ্রেঞ্জার এর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সেই বছরে হ্যারি ও তার বন্ধুরা স্কুলে সংরক্ষিত রহস্যময় পরশপাথরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে এবং পাথরটিকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ সিক্রেটস (২০০২)
হ্যারি, রন ও হারমায়োনি হগওয়ার্টসে তাদের দ্বিতীয় বর্ষে ফিরে আসে। গত বছরের তুলনায় এই বছরটি তাদের জন্য আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। একজন নাম না জানা মানুষ (হ্যেয়ার অফ সলিদারিন ) স্কুলে লুক্কায়িত চেম্বার অফ সিক্রেটস দিতীয়বার খুলে দেয়, যার ফলে হগওয়ার্টসের ছাত্রছাত্রী এবং ভূতেরা পাথরে (petrified )পরিণত হতে থাকে। এসময় হ্যারিকে অবশ্যই স্লিদারিনের ভয়ঙ্কর উত্তরাধিকারীকে মোকাবেলা করতে হবে এবং একটি রহস্যময় ডায়েরিকে ধ্বংস করতে হবে কেননা এই ডায়েরিটিই সকল অশুভ কার্যকলাপের উৎস।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অফ আজকাবান (২০০৪)
হগওয়ার্টসে হ্যারি পটারের তৃতীয় বর্ষে, হ্যারি ও তার বন্ধুরা পুনরায় স্কুলে ফিরে আসে। রেমাস লুপিন হগওয়ার্টসে কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বিষয়ে নতুন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এদিকে কুখ্যাত খুনী সিরিয়াস ব্ল্যাক আজকাবান জেল ভেঙ্গে পালিয়ে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্ল্যাকের হাত থেকে হগওয়ার্টসকে রক্ষার জন্য জাদু মন্ত্রণালয় ভয়ঙ্কর ও অশুভ ডিমেন্টরদের নিয়োগ দিয়েছে স্কুল পাহারা দেয়ার জন্য। একসময় হ্যারি তার অতীত সম্পর্কে অনেক অজানা কাহিনী জানতে পারে এবং আরো জানতে পারে, কে এই সিরিয়াস ব্ল্যাক, কি তার আসল পরিচয়।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অফ ফায়ার (২০০৫)
হগওয়ার্টসে হ্যারির চতুর্থ বর্ষে পুনরায় উত্থান ঘটে অশুভ আত্মা ভলডেমর্টের। তার ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়ে হ্যারিকে মুখোমুখি হতে হয় এক নির্মম অগ্নিপরীক্ষার। ছলে বলে কৌশলে হ্যারিকে ব্যবহার করে ভলডেমর্ট পুনরায় তার দেহ ফিরে পায়। এদিকে অশুভ শক্তির উত্থানের বলিতে পরিণত হয় সেডরিক ডিগরি। সর্বত্র কালো জাদুর এক বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। ভলডেমর্টের নেতৃত্বে পুনরায় সুসংঘটিত হয় ডেথ ইটাররা।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স (২০০৭)
হগওয়ার্টসে হ্যারির পঞ্চম বর্ষ শুরু হয় অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার মধ্য দিয়ে। সর্বত্র অবিশ্বাস-আতঙ্কের ছাপ। এদিকে ভলডেমর্ট প্রস্তুত এক নতুন মিশন নিয়ে। ভলডেমর্টকে দমনের উদ্দেশ্যে ডাম্বলডোর পুনর্গঠন করেন একটি পুরনো সংগঠন, অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স। হ্যারিও তার বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলে ডাম্বলডোরের আর্মি নামের ছাত্র সংগঠন। অন্যদিকে জাদু মন্ত্রনালয়ে রক্ষিত একটি গোপন প্রফেসি নিজের হাতে আনার জান্য ভলডেমর্ট পুনরায় ফাঁদ পাতে, যে ফাঁদে ধরা দেয় হ্যারি, নিজেকে এবং বন্ধুদেরকে ঠেলে দেয় এক অনিশ্চিত বিপদের দিকে।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স (২০০৯)
হগওয়ার্টসে হ্যারির ষষ্ঠ বর্ষে ভলডেমর্ট তার ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে থাকে। এদিকে নতুন পোশন শিক্ষক হিসেবে হগওয়ার্টসে যোগ দেন হোরেস স্লাগহর্ন। হ্যারি ও ডাম্বলডোর একত্রে ভলডেমর্টকে পরাজিত করার পন্থা খুঁজতে থাকে। এবং স্লাগহর্নের মেমোরির সহায়তায় একসময় তা পেয়েও যায়। তারা জানতে পারে ভলডেমর্টের অমরত্বের চাবিকাঠি হরক্রাক্স সম্পর্কে। ভলডেমর্টকে হত্যা করতে হলে প্রথমে এই হরক্রাক্সগুলকে ধ্বংস করতে হবে।
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস
পর্ব-১ (২০১০)
হ্যারি, রন ও হারমায়োনির সামনে এখন কেবলমাত্র একটা পথই খোলা, ভলডেমর্টের অমরত্বের চাবিকাঠি হরক্রাক্সগুলো খুঁজে বের করা ও ধ্বংস করা। ভলডেমর্টের উত্থান এবং ক্ষমতা দখল যদিও তাদের লক্ষ্যের একমাত্র প্রতিবন্ধক, তাদেরকে প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হবে নির্মম বাস্তবতার। তাদের দীর্ঘ অভিযানের প্রতিটি পদে পদেই আছে বিপদের হাতছানি, ডেথ ইটার, স্ন্যাচার এবং ইনফেরি। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই তাদেরকে তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই দীর্ঘ অভিযানে তাদের আরো মুখোমুখি হতে হবে রহস্যময় ডেথলি হ্যালোসের, যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পর্ব-২ (২০১১)
একটি হরক্রাক্স ধ্বংস এবং ডেথলি হ্যালোসের তাৎপর্য আবিষ্কারের পর, হ্যারি, রন ও হারমায়োনি পুনরায় হরক্রাক্স খোঁজার কাজে নিজেদের নিয়োগ করে। এদিকে ভলডেমর্ট লাভ করেছে অসামান্য ক্ষমতাধর এবং শক্তিশালী এক জাদুদন্ড, দ্য এল্ডার ওয়ান্ড। জাদুবিশ্বের কেউই তার হাত থেকে নিরাপদ নয়। ভলডেমর্ট ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে কুক্ষীগত করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায় হগওয়ার্টসে। আর অন্যদিকে হ্যারির নেতৃত্বে সংঘটিত হয় আলোর পথের জাদুকর, ডাইনী এবং অন্যান্য জাদুর প্রাণীরা। তাদের লক্ষ্য একটাই, জাদু এবং মাগলবিশ্বকে ভলডেমর্টের অশুভ ছায়া থেকে মুক্ত করা।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- Growing Up with Harry Potter ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে - photo essay by Time magazine