আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি (আরবি: آية الكرسي আয়াত আল-কুরসি[ক], অর্থ: "সিংহাসনের স্তবক") হচ্ছে কুরআনের দ্বিতীয় সূরা আল-বাকারার ২৫৫তম আয়াত (২:২৫৫)। এই আয়াতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা ঘোষণা করা হয়েছে এবং কীভাবে কোনো কিছু বা কাউকেই আল্লাহর সাথে তুলনীয় বলে গণ্য করা হয় না তা উদ্ধৃত করা হয়েছে।[১][২]
আয়াতটি ইসলামি বিশ্বে ব্যাপকভাবে পঠিত ও মুখস্থ করা হয়। ইসলামি পণ্ডিতগণ একে ‘কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত’ বলে দাবি করে থাকেন[৩] মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যে, এটি পাঠ করলে অসংখ্য উপকার ও পুণ্য লাভ হয়। এছাড়াও দুষ্ট আত্মা বা জ্বিনকে দূর করতেও এই আয়াতটি ব্যবহৃত হয়।[৪]
মূলপাঠ ও অর্থ
আয়াতুল কুরসিতে ১০টি বাক্য রয়েছে।[৫]
মূলপাঠ (উচ্চারণসহ)
ٱللَّهُ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَیُّ ٱلۡقَیُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةࣱ وَلَا نَوۡمࣱۚ لَّهُۥ مَا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَمَا فِی ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِی یَشۡفَعُ عِندَهُۥۤ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ أَیۡدِیهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا یُحِیطُونَ بِشَیۡءࣲ مِّنۡ عِلۡمِهِۦۤ إِلَّا بِمَا شَاۤءَۚ وَسِعَ كُرۡسِیُّهُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا یَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِیُّ ٱلۡعَظِیمُ ٢٥٥
- আসিম ইবন আবি আল-নাজুদ থেকে হাফস
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ج
২৫৫ ’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু(ওয়া)
ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ج
’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্
لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ج
লা-তা’খুযুহু সিনাতুঁ ও্-ওয়ালা নাউম্(উঁ)
لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ قلے
লাহু-মা ফি স্-সামাওয়াতি ওয়ামা ফি ল্-’আর্দ্(ই)
مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ج
মাঁং যাল্-লাযি ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহু ’ইল্লা বি’ইয্নিহ্(ই)
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ صلے
ইয়া‘লামু মা বাইনা ’আইদিহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ج
ওয়ালা ইউ হি-তুনা বিশা’ই ইমমিন্ ‘ইল্মিহি ’ইল্-লা বিমা শা’(আ)
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ صلے
ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ু-হু স্-সামাওয়াতি ওয়াল্’আর্দ্(আ)
وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ج
ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফ্যুহুমা
وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ ٢٥٥
ওয়াহুওয়া ল্-‘আলিই-ইয়ু ল্-‘আজিম(উ)
- নাফি‘ আল-মাদানি থেকে ওয়ারশ
اَ۬للَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ص
২৫৩ ’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু(ওয়া)
اَ۬لۡحَىُّ اَ۬لۡقَيُّومُ ص٢٥٣
’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্(উ)
لَا تَاخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوۡمٌ ص
২৫৪ লা তাখুযুহু সিনাতুঁ ও্-ওয়ালা নাউম্(উঁ)
لَّهُۥ مَا فِى اِ۬لسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلَارۡضِ ص
লাহু মা ফি স্-সামাওয়াতি ওয়ামা ফি লার্দ্(ই)
مَن ذَا اَ۬لَّذِى يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ص
মাঁ যা ল্-লাযি ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহু ’ইল্লা বি’ইয্নিহ্(ই)
يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ ص
ইয়া‘লামু মা বাইনা ’আইদিহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ص
ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশা’ই ম্-মিন্ ‘ইল্মিহি ’ইল্-লা বিমা শা’(আ)
وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ اَ۬لسَّمَٰوَٰتِ وَٱلَارۡضَ ص
ওয়াসি‘আ কুর্সিই-ইয়ুহু স্-সামাওয়াতি ওয়ালার্দ্(আ)
وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَا ص
ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফ্যুহুমা
وَهُوَ اَ۬لۡعَلِىُّ اَ۬لۡعَظِيمُ ص٢٥٤
ওয়াহুওয়া ল্-‘আলিই-ইয়ু ল্-‘আযিম্(উ)
অর্থ
“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, [তিনি] চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী/সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না ও নিদ্রাও নয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু তাঁরই। কে [আছে এমন] যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাঁদের সামনে কী আছে ও পিছনে কী আছে তিনি [তা] জানেন এবং তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসি[খ] আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করেছে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করতে তাঁর কষ্ট হয় না। এবং তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বমহান।”
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
এই আয়াতের প্রথমেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য বা ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই। এরপর আল্লাহর গুণাবলি বর্ণনা হয়েছে। اَلْـحَيُّ শব্দের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, তিনি সর্বদা জীবিত (চিরঞ্জীব)। قَيُّوْمُ শব্দের অর্থ দুটি অর্থ, একটি হচ্ছে চিরস্থায়ী, আরেকটি হচ্ছে, সবকিছুর ধারক, অর্থাৎ তিনি নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। অতঃপর বলা হয়েছে তাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না, অর্থাৎ মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ তাকে ক্লান্ত করে না। পরের অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ আকাশ এবং পৃথিবীর সবকিছুর মালিক এবং তিনি যা কিছু করেন তাতে কারও আপত্তি করার অধিকার নেই। তাঁর অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও কারো নেই। বলা হয়েছে, আল্লাহ অগ্র-পশ্চাৎ যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে অবগত। অগ্র-পশ্চাৎ বলতে এ অর্থ হতে পারে যে, তাঁদের জন্মের পূর্বের ও জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলি আল্লাহ জানেন। অথবা এই অর্থও হতে পারে যে, 'অগ্র' বলতে মানুষের কাছে প্রকাশ্য, আর 'পশ্চাৎ' বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য বা গোপন। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন সে শুধু ততটুকুই পায়। পরের অংশে বলা হয়েছে তাঁর কুরসি তথা সিংহাসন এতই বড় যে, তা সমগ্র আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। এ দুটি বৃহৎ সৃষ্টি এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর জন্য সহজ। শেষ অংশে আল্লাহকে “সুউচ্চ সুমহান” বলা হয়েছে।[৬]
গুরুত্ব
হাদিস অনুসারে আয়াতুল কুরসিকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়।[৭][৮] আয়াতটিকে কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী আয়াত হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ কেউ যখন এটি পাঠ করে, তখন সে আল্লাহর মাহাত্ম্য নিশ্চিত করে বলে বিশ্বাস করা হয়। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই আয়াতটি পাঠ করবে সে জ্বিন ও শয়তানদের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে; এটি দৈনিক আদখার নামেও পরিচিত। জ্বিন ও শয়তান থেকে মুক্তি ও সুরক্ষার জন্য এটি ভূতের ঝাড়ফুঁকে ব্যবহৃত হয়।[৯] যেহেতু এটি বিশ্বাস করা হয় যে আয়াতটি আধ্যাত্মিক বা শারীরিক সুরক্ষা প্রদান করে, তাই প্রায়শই মুসলমানরা ভ্রমণে বের হওয়ার আগে ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি পাঠ করে।[১০][৭] আয়াতটি সারাদিনের জন্য খাবিস (জ্বিনদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন) থেকে সুরক্ষা এবং বেঁচে থাকার জন্যও ব্যবহৃত হয়।[১১] প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতটি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা হয়।[১২][১৩]
আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস
সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত
আল্লাহর মহান নাম সংবলিত আয়াত
বিনা বাধায় জান্নাত লাভ
শয়তান ও অনিষ্ট বিতাড়ণকারী আয়াত
আল্লাহর সবচেয়ে মহান সৃষ্টি
কুরআন মুখস্থকরণে সাহায্যকারী আয়াত
চিত্রশালা
- ইসলামি ক্যালিগ্রাফিতে আয়াতুল কুরসি
- ১৭ শতকে ভারতে খোদিত একটি পাথরের পেছনে আয়াতুল কুরসির বেশিরভাগ অংশ
আরও দেখুন
টীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- তাফসীরে আহসানুল বয়ান। [# "(২:২৫৫) আল-বাকারা এর অনুবাদ ও তাফসীর"]
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। www.hadithbd.com।