আনাসত্যাসিয়া ভেরটিন্সকায়া

রাশিয়ান অভিনেত্রী

আনাসত্যাসিয়া অ্যাল্যক্সন্দ্রোভনা ভেরটিন্সকায়া (রুশ: Анастаси́я Алекса́ндровна Верти́нская[১] জন্ম ১৯ ডিসেম্ভর ১৯৪৪, মস্কো, সোভিয়েত ইউনিয়ন), হচ্ছেন একজন সোভিয়েত এবং রুশ অভিনেত্রী, যিনি ৬০ এর দশকের শুরুতে স্কার্লেট সেইলস, এমফিবিয়ান ম্যান এবং হ্যামলেট(১৯৬৪) ইত্যাদি ছবিতে তার অভিনয় দিয়ে সবার নজড় কাড়েন।[২] নব্বই দশকে দেশের সিনেমার প্রতি তার স্বপ্নভঙ্গ এর ফলে তিনি দেশের বাইরে শিক্ষাদানের জন্য পাড়ি জমান এবং বার বছর ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ড এ অতিবাহিত করেন। ১৯৮৮ সালে ভেরটিন্সকায়াকে “রাশিয়ার জনগণের শিল্পী” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ২০০৫ সালে অর্ডার অব অনার এবং ২০১০ সালে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মাননা দেয়া হয়।

আনাসত্যাসিয়া ভেরটিন্সকায়া
জন্ম
আনাসত্যাসিয়া অ্যাল্যক্সন্দ্রোভনা ভেরটিন্সকায়া

(1944-12-19) ১৯ ডিসেম্বর ১৯৪৪ (বয়স ৭৯)
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৬১-২০০২
দাম্পত্য সঙ্গীনিকিতা ম্যালকভ(১৯৬৭-১৯৭০)
পুরস্কারপিপল আর্টিস্ট অব রাশিয়া(১৯৮৮)
অর্ডার অব হনার(২০০৫)
অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ(২০১০)
ওয়েবসাইটhttp://www.rusactors.ru/v/vertinck_a/

জীবনী

আনাসত্যাসিয়া ভেরটিন্সকায়া ১৯৪৪ সালের ১৯শে ডিসেম্ভর মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন, যখন তার পিতা জনপ্রিয় গায়ক-গীতিকার অ্যালেক্সান্ডার ভেরটিনস্কি ফিরেন হারবিন থেকে তার জিওরজিয়ান স্ত্রী, চিত্রশিল্পী এবং অভিনেত্রী লিডিয়া ভেরটিন্সকায়া এর সাথে।[২] আনাসত্যাসিয়া এবং তার বোন মারিয়ানা ভেরটিন্সকায়া(এক বছরের বড়) তাদের শৈশবের শুরুটা কাটান মস্কো মেট্রোপল হোটেল এ; ১৯৪৬ সালে তাদের পরিবারকে একটি ফ্লাট দেয়া হয় গোর্কি স্ট্রিট,১৪ তে।[৩] তাদের শৈশব সুখী ছিল, দুভাষী পরিবারে পরিবারে বড় হয়ে উঠা, আনাসত্যাসিয়া উপভোগ করেছেন তার পিতা-মাতার সঙ্গীদের বুদ্ধিজীবী চেতনার পরিবেশ এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আবহ।[৪] দুই বোনই পড়াশুনা করেছেন একটি সাধারণ ধরনের বিদ্যালয়ে, সংগীত এবং বিদেশী ভাষা শিক্ষাতে তাদের পিতামাতারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন শিক্ষাবিষয়কভাবেই।[৫]ভেরটিনস্কি কখন তার মেয়েদের অকৃতকার্যতার জন্য বকা দেননি, যার অসংখ্য কারণ ছিল পরবর্তিতে আনাসত্যাসিয়া মনে করেন, সেসময় তিনি পড়া লেখার বইয়ের চেয়ে বেশি তার বাবার বিশাল লাইব্রেরীর প্রতিই বেশি মনযোগী ছিলেন। অ্যালেক্সান্ডার নিজস্ব পন্থায় তার মেয়েদের সমস্যা সমাধান করতেন। “তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘তোমার এই অসদাচরণ এর খবর আমাকে অতিশয় ভোগায়’ এবং আমি সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করতাম আমার বদমেজাজটাকে ঢেকে রাখতে-যদি সেটা তাঁকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়”, ভেরটিন্সকায়া কয়েকযুগ পর মনে করলেন।

পেশাজীবন

আনাসত্যাসিয়া ভেরটিন্সকায়া তাঁর কৈশোরে ভাষাবিজ্ঞানী হবার চিন্তা করছিলেন, কিন্তু ১৯৬১ সালের একরাতেই সবকিছু বদলে যায়, তাঁর ষোল বছর বয়সে পরিচালক অ্যালেক্সান্ডার প্টুস্কি তাঁকে “স্কার্লেট সেইল” চলচিত্রে আঁচল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব রাখেন। আবেগপ্রবন কৈশোরপ্রেম এর নাটকধর্ম চলচিত্রটি অ্যালেক্সান্ডার গ্রিন এর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় এবং রাতারাতি সফলতা লাভ করে, আনাসত্যাসিয়ার নামডাক সারাদেশে শুরু হয়ে যায়। সিনেমাটিতে সোবিয়েত সিনেমার অনেক পরবর্তি তারকারাই ছিলেন যার মধ্যে বাসলি লানবয়, ইভান পারভারাজ, সার্জি মার্টিনসন এবং অলেগ আনোফ্রিভ ছিলেন, কিন্তু সমালোচকদের মতে ভেরটিন্সকায়ার গাঢ়তাই “স্কার্লেট সেইল” এর পক্ষে কাজ করেছে।.[৫] প্রথম বছরে ছবিটি প্রায় তেইশ মিলিয়ন লোক দেখেছে।[৬]১৯৬২ সালে ভেরটিন্সকায়া অভিনয় করেন “এমফিবিয়ান ম্যান” নামের ছবিতে যেটি নির্মিত হয় অ্যালেক্সান্ডার বেলায়েব এর একই নামের সায়েন্স-ফিকশন উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে। তিনি গুইতরেজ চরিত্রে অভিনয় করেন, একজন যুবতীর সাথে একজন উভচর মানুষের প্রেমের গল্প, ভেরটিন্সকায়া শুটিং এর সময় শরৎ এর শেষে পানির নিচে পারফর্ম করেছেন যেখানে কোন স্টান্টম্যান ছিলনা।[৬] ছবিটি সোবিয়েতের ১৯৬২ এর বক্স-অফিস ব্লকবাস্টার ছবি হয়। “ভেরটিন্সকায়া এখন একটা ব্রান্ড, মানুষ এখন সিনেমা দেখতে যায় শুধু তাঁকে দেখতে” নিকিতা ম্যালকভ বলেন(পরবর্তিতে ভেরটিন্সকায়ার স্বামী)।[৬] নাটকীয় ভাবে কিশোরী নায়িকার জীবন পরিবর্তন হয়। “সেদিন গুলোতে কোন দেহরক্ষী ছিলনা, আমি লেখাপড়ার জন্য ট্রামে চড়তাম, আমি আর সবার মত সারিবদ্ধভাবে দাড়াতাম। আমি যে শুধু পরিচিত না, তারা আমাকে স্পর্শ করার একটা উপায় খুজে পেল... এগুলো হচ্ছে সেইদিন যখন থেকে জনতার ভিড়ের ভয় বাড়তে লাগল...এই বিশাল যন্ত্রণা আমাকে সেইদিনগুলোতে পরিপূর্ণ করে দিল” তিনি পরবর্তিতে মনে করলেন।[৭]১৯৬২ সালে ভেরটিন্সকায়া “মস্কো পুস্কিন ড্রামা থিয়েটার” দলে যোগদান করেন। যারফলে তিনি ক্রমাগত সারদেশ ঘুরে বেড়ান জনপ্রিয় “থিয়েটার ব্রিগেডস” এর সাথে। ১৯৬৩ সালে তার বড় বোন মারিয়ানার বন্ধু লিডুমিলা মাক্সাকুভা এর সহযোগিতায় তিনি বরিস সুচুকিন থিয়েটার ইন্সটিউটে ভর্তি হন। তরুণ অভিনেত্রীর অভিনয় তার ভাষায় ছিল ‘বাতিকগ্রস্থের কাছাকাছি’। নিকিতা ম্যালকভ তার সাথেই পড়াশোনা করতেন তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে এবং ১৯৬৬ সালে বিয়ে করে, কিন্তু তিন বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।[৭]

রেনেতা ব্লুম এর সাথে কেভিআইএফএফ এ,১৯৬৪

১৯৬৪ সালে গ্রিগরি কস্টিনেভ এর ছবি হ্যামলেট এ অপেহেলিয়া চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি এনে দেয় এবং তার পেশাজীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়।[৪][৮]

অবসরগ্রহণ

১৯৮৯ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ভেরটিন্সকায়া এবং অ্যালেক্সান্ডার কালিয়াগিনকে আমন্ত্রণ জানায় থিয়েটার কারুকর্মের উপর তাদেরকে মাস্টার ক্লাস দিতে। তিনি পরবর্তি বার বছর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ড এ শিক্ষাদান এ অতিবাহিত করেন।[৯] আমি বুঝতে পারি যে একটি জীবনে একজন নিজেকে, নিজসত্তাকে সাত বার পুনরায় আবিষ্কার করতে পারে, অন্যথায় কেউ তার নিজসত্তাকে পুরোপুরি বুঝতে পারবে না। কেন আমি কাঁদব যে ভাল ভুমিকাগুলো আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে? তোমাকে শিখতে হবে দৃশ্যের বিপরীতে পিঠ ঘুরিয়ে দিতে যেটি তোমাকে মানায় না। পরবর্তিতে একটি ইন্টারভিউতে তিনি বর্ণনা করেন তার অব্যাহতিতে তিনি কি অনুভব করেছেন।[৯]

পরিচিতি

১৯৮১ সালে তাকে রাশিয়া সোবিয়েত ইউনিয়ন সম্রাজ্যের জনগণের শিল্পী আখ্যা দেয়া হয়। তিনি ২০০৫ সালে রুশ ফেডারেশন এর অর্ডার অব অনার সম্মাননা লাভ করেন এবং ২০১০ সালে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশীপ সম্মাননা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে তার ৬৫তম জন্মবার্ষিকিতে রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন উভয়েই তাদের ব্যক্তিগত পত্র পাঠান, এবং কথা বলেন তার “উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের”, অক্ষীয় জনপ্রিয়তার এবং “অনন্য, অসাধারণ, শক্তিশালী এবং গাঢ় ভূমিকার”[১০][১১]

পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬৭ সালে ভেরটিন্সকায়া বিয়ে করেন নিকিতা ম্যালকভকে, বর্তমানে পরিচিত রুশ ছবির পরিচালক এবং অভিনেতা। দেড় বছর পর তাদের ছেলে স্টিফেন জন্ম গ্রহণ করে এবং তিন বছরের সময় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তিতে ভেরটিন্সকায়াকে অভিনেতা মিখাইল কজাকভ এর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায়, তারপর রুশ রক তারকা অ্যালেক্সান্ডার গ্রাডস্কাই এর সাথে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল।[১২]

ফিল্মোগ্রাফি

  • স্কার্লেট সেইলস (১৯৬১)
  • এমফিবিয়ান ম্যান (১৯৬২)
  • হ্যামলেট (১৯৬৪)
  • ওয়ার এন্ড পিস (ফিল্ম সিরিজ) (১৯৬৬-৬৭)
  • আন্না কারেনিনা (১৯৬৭)
  • হোল্ড ইউর হ্যাড আপ (১৯৬৯)
  • কেইস অব পলিনিন (১৯৭০)
  • এ শ্যাডো (১৯৭২)
  • দা প্রিলিমিনারি ম্যান(১৯৭২)
  • ওয়ান এট ওয়ান’স অউন প্লেস (১৯৭২)
  • ডম্বে এন্ড সন (১৯৭৪)
  • নেইমলেস স্টার (১৯৭৮)
  • দা টুয়েলফথ নাইট (১৯৭৯)
  • দা গ্যাডফ্লাই (১৯৮০)
  • থ্যাফট (১৯৮২)
  • ডেইজ এন্ড ইয়ারস অব নিকোলাই বাতিগিন (১৯৮৭)
  • দা লাইভস অব ডন কুইক্সটস এন্ড সাঞ্চো (১৯৮৮)
  • নিউ এডবেঞ্চারস অব অ্যা ইয়াঙ্কি কিং আর্থার’স কোর্ট (১৯৮৮)
  • দা টেম্পেস্ট (১৯৮৮)
  • হাও ডার্ক দা নাইটস আর অন দা ব্ল্যাক সি (১৯৮৯)
  • টার্টুফি (১৯৮৯)
  • থ্রিস্ট অব প্যাশন (১৯৯১)
  • মাস্টার্স এন্ড মার্গারিটা (১৯৯৪)
  • টাউন মিউজিশিয়ানস অব ব্রিম্যান (২০০০)
  • কজেস বেল্লি (২০০২)

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ