ইনকা রন্ধনশৈলী

ইনকা রন্ধনশৈলীর উদ্ভব হয় ১৩ থেকে ১৬ শতক ইনকা সভ্যতাকালীন সময়ে। বিভিন্ন অঞ্চলে ইনকা সভ্যতার ছোঁয়া লাগায় খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র‍্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমাহার ঘটে যার অনেকগুলোই পেরুর বাইরে অজানা থেকে যায়। গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যাদির মধ্যে ছিলো কন্দ, মূল, শস্য ইত্যাদি। ভুট্টা ছিলো উচ্চবিত্তের খাবার কিন্তু খুব বেশি চাষ হতো না। মাংসের সাধারণ উৎস ছিলো গিনিপিগ এবং লামা। শূকনো মাছের ব্যবহার ছিলো।

প্যাচামাংকা, একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যেখানে হুয়াটিয়াতে খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে।

খাদ্যবস্তু

খাওয়ার উপযোগী কিছু কাঁদামাটি ব্যবহৃত হতো। যেমন আলু এবং অন্যান্য কন্দের জন্য সস হিসেবে পাসা ব্যবহৃত হতো। তবে এসব খাবার গরীব ও ধর্মাচারীগণ ব্যবহার করতো। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও ঝাল মরিচ ছিলো গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান।[১]

শাকসবজি

আন্দিজের অধিবাসীরা একশোর মত আলুর জাতের উন্নয়ন করেছে। যার অধিকাংশ এখনো বাকি বিশ্বের কাছে অপরিচিত।

ইংকা রাজ্য উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত, বিভিন্ন রকম আবহাওয়াগত পরিবেশ দ্বারা সমৃদ্ধ। পেরুতে পর্বত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎপাদন অঞ্চল গড়ে উঠেছে। ইনকাদের প্রধান খাবারের মধ্যে ছিলো খাওয়ার উপযোগী কন্দ এবং মূল যেমন আলু ও মিষ্টি আলু। মিষ্টি এবং তিতা জাতের ওকা পাওয়া যায়। মিষ্টি জাতটি কাঁচা খাওয়া হত কিংবা সংরক্ষণ করা হত এবং চিনির আগমনের পূর্বে মিষ্টিকারক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক উদ্ভিদ ইনকা খাবারের অংশ ছিলো এবং এগুলো ও শুকনো উভয় অবস্থাতেই খাওয়া হয়। নস্টক গণের কিছু স্বাদুপানির শৈবাল এবং নীল শৈবাল কাঁচা খাওয়া হতো কিংবা সংরক্ষণের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হতো। উপনিবেশ পরবর্তী সময়ে এটা চিনির সাথে ফুঁটিয়ে ডেজার্ট প্রস্তুত করা হতো। পেপিনো নামের চিত্তাকর্ষক এবং তৃষ্ণা নিবারণকারী ফল খেতো সাধারণ জনগোষ্ঠী কিন্তু প্যামপেয়ারড জনগণ পরিহার করতো ও সহজপাচ্য নয় বলে বিবেচনা করতো।[২]

মাংস

আল্টিপ্লানো জনগোষ্ঠী দুটো আধুনিক পেরুভীয় মাংসের খাবার জানতো। তারা লামা এবং আলপাকাকে গৃহপালিতে পরিণত করেছে। এই প্রানীগুলো থেকে পশম সংগ্রহ করা হতো এবং বৃহৎ ক্যারাভান টানার কাজে ব্যবহার করা হয়। লামাকে উচ্চ মূল্যায়িত করা হতো। রাজকীয় প্রতীক হিসেবে রাজার সামনে সামনে সর্বদা লাল কাপড়ে আবৃত সাদা লামা চলতো যার কানে সোনার দুল পরানো থাকতো। প্রানীদের গায়ের রঙ অনুসারে বিভিন্ন দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। প্রচুর পরিমাণে এসব প্রাণী উৎসর্গ করা হতো এবং রক্ত আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। কোন পশু মারা গেলে তার সব অংশ সংরক্ষণ করা হতো এবং ইনকাদের সামনে পুরো প্রাণীটি প্রদর্শন করতে হতো। অন্যথায় কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতো। পেরুভীয় উট থেকে তৈরী খাবার হচ্ছে শারকুই। হিমায়িত শুকনো মাংসের স্ট্রাইপ যা আধুনিক সময়ের জার্কির উৎস। সাধারণ লোকের মাংস ছিলো কুই, গিনী পিগ ইত্যাদি। ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এরা গৃহপালিত হয় এবং এদেরকে সহজে রাখা যেতো এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। গরম পাথর সাজিয়ে প্রায়শই গিনিপিগ রান্না করা হয়। নাড়িভুঁড়ি স্যুপের উপাদান হিসেবে আলুর সংগে ব্যবহার করা হতো কিংবা সস প্রস্তুত করা হতো।

ইনকারা বিভিন্ন বন্য প্রাণী শিকার খেলার মাধ্যমে ধরতো কিংবা হত্যা করতো যেমন ভিকুনা ও গুনাকো, সাদালেজের হরিণ, হুইমুল হরিণ এবং ভিস্কাচা, এক ধরনের চিনচিল্লা যা দঁড়ির ফাঁসের সাহায্যে ধরা হতো। শিকারের অধিকার নিয়ন্ত্রণ করতো রাজ্য যে কোন মাংস সংরক্ষণের জন্য রাজ্যের গুদামে পাঠানো হতো। রাজকীয় শিকারে শিকারি বাহিনী বড় পশুপালকে কাছাকাছি তাড়িয়ে আনতো। এক শিকারে পুমা, ভালুক, শিয়াল এবং হরিণসহ কয়েক হাজার প্রাণী শিকারের উল্লেখ পাওয়া গেছে। ইনকা সৈন্যবাহিনী এবং সাধারণ জনগণ শুকনো মাছের উপর নির্ভর করতো। পেরুর উপকূলে লিম্পেট, স্কেট, শাপলাপাতা এবং ছোট হাঙর ধরা পড়তো। সামুদ্রিক পাখি, পেঙ্গুইন, সাগরসিংহ, ডলফিন ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণীসহ বিভিন্ন প্রকার শামুক ঝিনুক খাওয়া হতো। অন্যান্য আমেরিকানদের মত ইনকারা ব্যাঙ, শুঁয়োপোকা, গোবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি খেতো। মেমাছির লার্ভা কাঁচা খাওয়া হতো এবং পিষে রুটি বানিয়ে সংরক্ষণ করা হতো।

খাদ্য প্রস্তুতি

রান্নার পাত্রে প্রায়শই গরম পাথর দেওয়া হতো। রান্নার জন্য হুয়াটিয়া নামে মাটির চুলা এবং পাইলা নামে মৃৎপাত্র ব্যবহৃত হতো।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ