ইরানের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

ইরানের ইতিহাস হল সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর ইরানের ইতিহাস, যা পশ্চিমা বিশ্বে পারস্য নামে পরিচিত। বৃহত্তর ইরান পশ্চিমে আনাতোলিয়া, বসফরাসমিশর, পূর্বে প্রাচীন ভারতসির দরিয়া, উত্তরে পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণে ওমান উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইরান হল বিশ্বের প্রাচীনতম চলমান প্রধান সভ্যতার ভূমি, এতে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দের ঐতিহাসিক ও নগর বসতির সন্ধান পাওয়া যায়। ইরানীয় উচ্চভূমির দক্ষিণ পশ্চিম ও পশ্চিম ভাগ প্রাচীন নিকট প্রাচ্য, প্রারম্ভিক ব্রোঞ্জ যুগের এলাম ও পরবর্তীকালে বিভিন্ন জাতি, যেমন কাসিতে, মানায়েন ও গুতিয়ানদের সাথে মিলিত হয়েছে। গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল পারস্যদের "প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তি" বলে অভিহিত করেন।[১] মাদা জাতি খ্রিস্টপূর্ব ৮২৫ অব্দে ইরানকে জাতি ও সাম্রাজ্য হিসেবে একীভূত করে। মহান কুরুশের প্রতিষ্ঠিত হাখমানেশী সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হল প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের ব্যপ্তি ছিল বলকান থেকে উত্তর আফ্রিকামধ্য এশিয়া, যা তিনটি মহাদেশে বিস্তৃত ছিল এবং এর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পার্সা। এটি এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য এবং প্রথম বৈশ্বিক সাম্রাজ্য।[২] প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য ইতিহাসের একমাত্র সভ্যতা যেখানে বিশ্বের ৪০ ভাগ লোকের সম্পৃক্ততা ছিল; ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিশ্বের ১১২.৪ মিলিয়নের প্রায় ৪৯.৪ মিলিয়ন লোক এই সভ্যতার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।[৩] পরবর্তীকালে সেলুকসী, পার্থিয়ান ও সাসানীয় সাম্রাজ্য এই সাম্রাজ্যের স্থান দখল করে, যারা প্রায় ১,০০০ বছর ইরান শাসন করে এবং ইরানকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। পারস্যের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রোমান সাম্রাজ্য ও এর উত্তরসূরি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য

মুসলমানদের পারস্য বিজয়ের পর সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, যা ইরানের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। অষ্টম থেকে দশক শতকে ইরানে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে এবং জরথুস্ত্রবাদ ও এর অন্যান্য শাখার বিলুপ্তি দেখা যায়। তবে পূর্বতন পারস্য সভ্যতার অর্জনসমূহ হারিয়ে যায়নি এবং এর বেশিরভাগই নব্য ইসলামি রাজনীতি ও সভ্যতায় গৃহীত হয়।

প্রারম্ভিক সময়কালের সংস্কৃতি ও সাম্রাজ্যের ইতিহাস সমৃদ্ধ ইরান মধ্যযুগের শেষার্ধে ও আধুনিক যুগের শুরুতে তীব্র ভোগান্তির শিকার হয়। যাযাবর উপজাতিদের অনেকগুলো আক্রমনে দেশটিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় এবং পরবর্তীকালে এই উপজাতিদের প্রধান দেশটির শাসক হিসেবেও আবির্ভূত হয়।[৪]

প্রাক-ইতিহাস

পুরা প্রস্তরযুগীয়

ইরানের কাশাফ্রুদ ও গাঞ্জ পারে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়, ধারণা করা হয় তা মধ্য পুরা প্রস্তরযুগীয় ও ১০০,০০০ বছর পুরনো।[৫] নিয়ানডার্থালদের তৈরি মুস্তেরীয় পাথরের সরঞ্জামাদিও পাওয়া গেছে।[৬] নিয়ানডার্থালদের আরও সাংস্কৃতিক নিদর্শন পাওয়া গেছে যা মধ্য পুরা প্রস্তরযুগীয় বলে ধারণা করা হয়। এর বেশিরভাগই জাগ্রো অঞ্চলে পাওয়া গেছে এবং অবশিষ্ট মধ্য ইরানের কিছু স্থানে, যেমন কোবেহ, কুঞ্জি, বিসিতুন গুহা, তামতামা, ওয়ারওয়াসি ও ইয়েফতেহ গুহায় পাওয়া গেছে।[৭] ১৯৪৯ সালে কার্লেটন এস. কুন বিসিতুন গুহা থেকে নিয়ানডার্থাল সময়ের হাতের হাড় (রেডিয়াস) আবিষ্কার করেন।[৮]

নব্য প্রস্তরযুগীয়

পশ্চিম ইরানের জাগ্রোস পর্বতমালা অঞ্চলের আশেপাশে খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দে প্রারম্ভিক কৃষি সম্প্রদায়, যেমন চোঘা গোলান[৯][১০] এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮,০০০ অব্দে জনবসতি, যেমন চোঘা বোনুট[১১][১২] (এলামে শুরুর দিকের গ্রাম) বিস্তার লাভ করতে থাকে। একই সময়ে পশ্চিম ইরানের গাঞ্জ দারেতে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন মাটির তৈরি পাত্র, মানব সদৃশ মুর্তি ও প্রাণির টেরাকোটা নির্মিত হয়েছে। কেরমানশাহ প্রদেশের তেপে সারাব হতে ১০,০০০ বছর পুরনো মানুষ ও প্রাণির মুর্তি পাওয়া গেছে।[১৩]

ব্রোঞ্জ যুগ

সুসা ইরান ও বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জনবসতি। সি১৪ সময়কাল গণনা অনুসারে, ৪৩৯৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই শহর গঠিত হয়,[১৪] যা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা শুরুরও পূর্বে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের সাধারণ ধারণা এই যে সুসা ছিল সুমেরীয় শহর রাজ্য উরুকের বর্ধিত অংশ।[১৫][১৬] পরবর্তী ইতিহাসে সুসা এলামের রাজধানী হয়েছিল, যা ৪,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজ্য হিসেবে বিকাশ লাভ করেছিল।[১৪] এছাড়া ইরানীয় উচ্চভূমিতে ডজন খানেক প্রাগৈতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব চার সহস্রাব্দের প্রাচীন সংস্কৃতি ও জনবসতির নিদর্শন। ইরানীয় উচ্চভূমিতে সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে অন্যতম হল জিরোফট সংস্কৃতি, যা দক্ষিণ পশ্চিম ইরানের কেরমান প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।

প্রারম্ভিক লৌহ যুগ

ধ্রুপদী সময়কাল

মাদা ও হাখমানেশী সাম্রাজ্য (৬৫০-৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

পার্সেপোলিসের আপাদানায় একীভূত মাদা ও পারস্যের চিত্র।

৬৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আসিরীয় রাজা আসুরবানিপাল সুসা শহর অধিকৃত করে। এতে করে এই অঞ্চলে এলামিতের আধিপত্যের পতন ঘটে। ১৫০ বছরের অধিক সময় নিকটবর্তী উত্তর মেসোপটেমিয়ার আসিরীয় রাজারা পশ্চিম ইরানের মাদা জাতিকে পরাজিত করার চেষ্টা করছিল।[১৭] আসিরীয়দের চাপের ফলে পশ্চিম ইরানি উচ্চভূমির ছোট রাজ্যগুলো একত্রিত হয়ে আরও বড় ও কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।[১৮]

সেলিউকসী সাম্রাজ্য (৩১২-২৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

৩৩৪ থেকে ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান আলেকজান্ডার, আবেস্তায় আর্দা ভিরাজ নামাগ (ঘৃণ্য আলেকজান্ডার) নামে উল্লেখিত, তৃতীয় দারিয়ুসকে গ্রানিসাস, ইসাস ও গগামেলা যুদ্ধে পরাজিত করে এবং ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য সাম্রাজ্য জয় করে। তার মৃত্যুর কিছুদিন পরেই তার সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরে এবং আলেকজান্ডারের সেনাপতি প্রথম সেলেউকাস নাইকেটর ইরান, মেসোপটেমিয়া, ও পরে সিরিয়াআনাতোলিয়ার কর্তৃত্ব গ্রহণের চেষ্টা করেন।[১৯][২০] তার এই সাম্রাজ্য সেলেউকসী সাম্রাজ্য নামে পরিচিতি লাভ করে। ২৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে টলেমি কেরাউনস তাকে হত্যা করে।

পার্থিয়ান সাম্রাজ্য (২৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ-২২৪ খ্রিস্টাব্দ)

পার্থিয়ান সাম্রাজ্য ছিল আর্সাসি রাজবংশের অংশ, যারা পার্থিয়ার পার্নি বিজয়ের পর এবং খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে সেলুকসী সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে ইরানি উচ্চভূমিকে পুনরায় একত্রিত করে এবং শাসন করে এবং আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ থেকে ২২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেসোপটেমিয়া অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করে।[২১] পার্থিয়ান সাম্রাজ্য অচিরেই পূর্ব আরব অঞ্চলকে অধিকৃত করে।

সাসানীয় সাম্রাজ্য (২২৪-৬৫১ খ্রিস্টাব্দ)

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ