এভারি-ম্যাকলয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষা
এভারি-ম্যাকলয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষা হচ্ছে একটি প্রমাণের স্বার্থে ১৯৪৪ পরিচালিত পরীক্ষা যার ভিত্তিতে অসওয়াল্ড অ্যাভারি, কলিন ম্যাকলয়েড এবং ম্যাকলাইন ম্যাককার্টি সিদ্ধান্তে আসেন যে ডিএনএ-ই হচ্ছে সেই বস্তু যা ব্যাকটেরিয়াল স্থানান্তর (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পারস্পরিক আদান-প্রদান) ঘটায়। তারা এই সত্য উদ্ঘাটন করেন সেই সময়ে যখন সর্বত্র প্রচলিত ছিল যে প্রোটিন সমূহ জেনেটিক তথ্য আদান-প্রদান করে ( ‘’প্রোটিন’’ শব্দটির অর্থই হচ্ছে ‘’প্রাথমিক’’)। ১৯২৮ সালে গ্রিফফিথের গবেষণায় বর্ণিত হয়: মৃত স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়ার বিপদজনক নমুনার (স্ট্রেইন) টাইপ ৩-এস প্রকরণকে যখন জীবন্ত কিন্তু বিপদজনক নয় এমন নমুনার টাইপ ২-আর নিউমোককসাই একত্রে ইঞ্জেক্ট করলে পরিণতিতে টাইপ ৩-এস নিউমোককসাই-এর ভয়াবহ বিষক্রিয়া দেখা যায়। এর ভিত্তিতে ১৯৩০ এর দিকে এবং ১৯৪০ এর শুরুর দিকে ‘’স্থানান্তরের মূলনীতি’’ শুদ্ধিকরণ ও বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য রকফেলার ইন্সটিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চের গবেষণার চূড়ান্ত পরিণতি অ্যাভারি-ম্যাকলয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষা । জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনে ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় তাঁরা "স্টাডিজ অন দ্য কেমিক্যাল নেচার অফ দ্য সাবস্ট্যান্স ইন্ডিউসিং ট্রান্সফরমেশন অফ নিউমোকক্কাল টাইপসঃ ইন্ডাকশন অফ ট্রান্সফরমেশন বাই এ ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড ফ্র্যাকশন ফ্রম নিউমোকক্কাস টাইপ ৩" (নিউমোকক্কালের বিভিন্ন ধরণে স্থানান্তর সাধনকারী বস্তুর রাসায়নিক প্রকৃতির উপর গবেষণাঃ নিউমোককসাই টাইপ ৩ থেকে বিচ্ছিন্ন ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড ভগ্নাংশ দ্বারা স্থানান্তর আবেশ) শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন যে সর্বজন স্বীকৃত প্রোটিন নয় বরং ডিএনএ-ই ব্যাকটেরিয়ায় বংশগতির জন্য দায়ী যা উচ্চতর জীবে জিন এবং ভাইরাস এর সমতুল্য।[১][২]
পটভূমি
সেরোলজিকাল টাইপিং-এর উন্নতির সাথে সাথে মেডিকেল গবেষকগণ ব্যাকটেরিয়াকে ভিন্ন স্ট্রেইন (জীববিজ্ঞান) অথবা প্রকরণে বিভক্ত করতে সক্ষম হন। যখন একজন ব্যক্তি বা পরীক্ষণীয় প্রাণীতে (উদাহরণস্বরূপ ইঁদুর) একটি নির্দিষ্ট নমুনা প্রয়োগ করা হয় তখন একটি প্রতিরক্ষা জনিত সাড়ার উদ্ভব হয়, অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা বিশেষভাবে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিজেন গুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। ঐ অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ রক্তরস পৃথক করে কালচারড ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়ায় প্রয়োগ করা যায়। এই অ্যান্টিবডি গুলো অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রকৃত নমুনার সাথে প্রতিক্রিয়ার অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দেয়। ফ্রেড নিউফেল্ড নামে একজন জার্মান ব্যাকটেরিয়াবিদ নিউমোকক্কাল প্রকরণ ও সেরোলজিকাল টাইপিং আবিষ্কার করেন; ফ্রেডেরিক গ্রিফফিথের পর্যবেক্ষণের আগ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াবিদগণ বিশ্বাস করতেন যে প্রকরণগুলো নির্দিষ্ট ছিল এবং এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে যাওয়ার সময় অপরিবর্তিত থাকত।[৩]
১৯২৮ সালে গ্রিফফিথের পর্যবেক্ষণ থেকে[৪] জানা যায় যে নিউমোকক্কাল ব্যাকটেরিয়ার কিছু "স্থানান্তর মূলনীতি" তাদের প্রকরণ বদলাতে পারে। গ্রিফফিথ, একজন ব্রিটিশ মেডিকেল অফিসার, বছরের পর বছর নিউমোনিয়া প্রতিকারে সেরোলজিকাল টাইপিং প্রয়োগ করেন, এই রোগটি বিংশ শতাব্দীতে একটি বারবার সংঘটিত হওয়া একটি প্রাণঘাতী রোগ ছিল। তিনি আবিষ্কার করেন যে বিভিন্ন ধরন— কিছু বিপদজনক এবং কিছু বিপদজনক নয়— এগুলো প্রায়ই নিউমোনিয়ার ক্লিনিকাল কেসে উপস্থিত থাকত এবং এর ফলে তিনি ধারণা করেন যে একটি প্রকরণ অন্য প্রকরণে রূপান্তরিত হয়ে যায় (একই কেসে একাধিক নমুনা থাকার পরিবর্তে)। এই সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য তিনি বিপদজনক মৃত ব্যাকটেরিয়া এবং অবিপদজনক জীবিত ব্যাকটেরিয়া একটি ইঁদুরে প্রয়োগ (ইঞ্জেক্ট) করে ভয়াবহ বিষক্রিয়া পান ( যা সাধারণত জীবিত বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে) এবং এরূপ ইঁদুর থেকে পরবর্তীতে বিপদজনক ব্যাকটেরিয়া পৃথক করা যেত।[৫]
গ্রিফফিথের গবেষণার ফলাফল খুব তাড়াতাড়ি জানা গিয়েছিল, প্রথমে কচ ইন্সটিটিউটের ফ্রেড নিউফেল্ড[৬] এবং পরবর্তীতে রকফেলার ইন্সটিটিউটের মার্টিন হেনরী ডাওসনের মাধ্যমে।[৭] পরবর্তী বছর গুলোতে রকফেলার ইন্সটিটিউটের গবেষকগণ ক্রমান্বয়ে ট্রান্সফরমেশন সংক্রান্ত গবেষণা চালিয়ে যান। রিচার্ড এইচ.পি. শিয়ার সাথে ডাওসন ব্যাকটেরিয়া রূপান্তরের ইন ভিট্রো (গ্রিফফিথের ইন ভিভো পদ্ধতির বদলে) পদ্ধতির বদলে।[৮] ১৯৩০ সালে ডাওসন প্রস্থান করলে জেমস এল্লোওয়ে গ্রিফফিথের অনুসন্ধান পর্যবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যান, যার ফলে ১৯৩৩ সালে রূপান্তর নীতিতে জলীয় দ্রবণ নিষ্কাশনের সিদ্ধান্ত নেন। কলিন ম্যাকলয়েড ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত এসমস্ত দ্রবণ বিশুদ্ধিকরণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৪০ সাল পর্যন্ত কাজ চলতে থাকে এবং ম্যাকলিন ম্যাককার্টি কাজ শেষ করেন।[৯][১০]
গবেষণামূলক কাজ
নিউমোকক্কাস চেনা যায় মসৃণ দল দ্বারা এবং এর একটি পলিস্যাকারাইড ক্যাপসুল আছে যা অ্যান্টিবডি গঠনে সাহায্য করে, প্রতিরক্ষার ধরন অনুসারে এদের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।[১]
এভেরির বিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে তাপ প্রদান এবং সেলাইনে দ্রবীভূত উপাদান থেকে নিষ্কাশন করে ব্যাকটেরিয়া নিধন করা। পরবর্তীতে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করে প্রোটিন ঝরানো হয় এবং এনজাইম ব্যবহার করে পলিস্যাকারাইড ক্যাপসুল জলীয় বিশ্লেষণ করা হয়। কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি দ্বারা সৃষ্ট একটি প্রতিরোধক্ষম ধারা ব্যবহার করে ক্যাপসুলের পরিপূর্ণ বিনাশ নিশ্চিত করা হয়। এরপর সক্রিয় অংশটি অ্যালকোহল ফ্র্যাকশনেশনের মাধ্যমে বের করা হয় যার ফলে আঁশময় সুত্র তৈরি হয় যা নাড়ন কাঁঠি দ্বারা পৃথক করা যায়।[১]
রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ঐ সক্রিয় অংশের কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের বিন্যাস ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠনের অনুরূপ। আরএনএ, প্রোটিন বা অন্য কোন কোষের সামান্য অংশ নয় বরং ডিএনএ-ই যে রূপান্তরের জন্য দায়ী তা প্রমাণ করতে এভারি এবং তার সহকর্মীগণ বেশকিছু প্রাণরাসায়নিক পরীক্ষা করেন। তারা দেখেন যে ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন এবং রাইবোনিউক্লিয়েজ ( যেসমস্ত এনজাইম যারা আরএনএ বা প্রোটিন ভেঙে ফেলে) কোন প্রভাব না ফেললেও এক ধরনের ‘’ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওপলিমারেজ’’ এনজাইম ( অশোধিত, বিভিন্ন প্রাণী থেকে প্রাপ্ত এবং ডিএনএ ভাঙতে সক্ষম) নির্যাসের রূপান্তরের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।[১]
পরবর্তীতে সমালোচনা এবং চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পরিচালিত গবেষণার মধ্যে ছিল ১৯৪৮ সালে মজেস কুনিটজ কর্তৃক একটি ডিএনএ পলিমারেজ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়েজ ১) এর বিশুদ্ধিকরণ এবং কেলাসন, রোলিন হচকিজের সুনির্দিষ্ট গবেষণায় উঠে আসে যে বিশুদ্ধ ডিএনএ থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেনের আপাত উৎস গ্লাইসিন, যা নিউক্লিওটাইড ক্ষারক অ্যাডেনিনের ভাঙনের ফলে সৃষ্টি হয়। হচকিজ অনুমান করেন যে প্রোটিনের অজানা দূষণ সর্বোচ্চ ০.০২%।[১১][১২]
স্বীকৃতি এবং প্রভাব
এভারি-ম্যাক্লয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষার ফল খুব তাড়াতাড়ি জানাজানি হয়ে যায়। যাইহোক, এই পরীক্ষার ফলাফল মেনে নিতে যথেষ্ট অনীহা দেখা যায়। ফোবিয়াস লেভেনির প্রভাবশালী "ট্যাঁটরানিউক্লিওটাইড হাইপোথিসিস" অনুযায়ী ডিএনএ চারটি নিউক্লিওটাইড ক্ষারকের পুনরাবৃত্তি হয়ে গঠিত যাদের খুব সামান্যই জৈব বৈচিত্র্য আছে, যার ফলে ডিএনএ-কে মনে করা হত ক্রোমোজোমের গাঠনিক উপাদান। আর জিন, ক্রোমোজোমের প্রোটিন থেকে তৈরি বলে ধরে নেয়া হত।[১৩][১৪] ১৯৩৫ সালে ওয়েন্ডেল স্ট্যানলি টোবাকো মোজাইক ভাইরাস কেলাসন করলে এই চিন্তাধারা শক্তিশালী হয়।[১৫] ভাইরাস, জিন এবং জিনের মধ্যে মিল ও একই ধারণা শক্তিশালী করে। অসংখ্য জীববিজ্ঞানী জিনকে একধরনের ‘’সুপার এনজাইম’’ মনে করতেন, স্ট্যানলির মতে ভাইরাস ছিল প্রোটিন এবং এগুলো অসংখ্য এনজাইমের সাথে স্বতঃপ্রভাবনে ভূমিকা রাখে।[১৬] এছাড়া, কিছু জীববিদ ভাবতেন যে জিনের সাথে সম্পর্ক ছিল ব্যাকটেরিয়ার, যেহেতু তাঁরা ক্রোমোজোম এবং যৌন প্রজনন সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখতেন না। এমনকি অসংখ্য জিনতত্ত্ববিদ যারা সাধারণ ভাবে ফায গ্রুপ নামে পরিচিত ছিল এবং যারা পরবর্তীতে ১৯৫০ এর দিকে মলিকিউলার বায়োলজি নামক নতুন শাখায় প্রভাব রাখেন, তারাও জিনের উপাদান হিসেবে ডিএনএ এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন ( এবং এভারি ও তাঁর সহকর্মীদের ‘’বিশৃঙ্খল’’ প্রাণরাসায়নিক পদ্ধতি এড়িয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন)। কিছু জীববিদ, এমনকি তাদের সহচারী রকফেলার ইন্সটিটিউটের ফেলো অ্যালফ্রেড মিরস্কি রূপান্তরে বিশুদ্ধ ডিএনএ এর অবদান সংক্রান্ত এভারির অনুসন্ধান চ্যালেঞ্জ করে প্রোটিন দূষকই রূপান্তরে ভূমিকা রেখেছিল।[১৩][১৪] কিছু ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তর ঘটলেও তা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ায় ঘটানো সম্ভব হয় নি (কোন তুলনামুলকভাবে উন্নত জীবেও নয়) এবং এর তাৎপর্য প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু মেডিসিনে সীমাবদ্ধ ছিল বলে ধরে নেয়া হয়।[১৩][১৭]
এভারি-ম্যাকলয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীগণ বলেছেন ১৯৪০ থেকে ১৯৫০ এর শুরুর দিকে এটি খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। গান্থার স্টেন্ট অনুমান করেন যে এই পরীক্ষণ অবহেলিত ছিল এবং দেরীতে স্বীকৃতি পেয়েছিল, যেমন ছিল জিনতত্ত্ব জাগরণের বহু দশক পূর্বে গ্রেগর মেন্ডেলের কাজ। অন্যরা যেমন- জোশুয়া লেদেরবার্গ এবং লেজলি সি. ডান এর প্রাথমিক তাৎপর্য সত্যায়িত করে পরীক্ষণটিকে মলিকিউলার জেনেটিক্সের সূচনা বলে ঘোষণা করেন।[১৮]
অল্প কিছু অণুজীববিদ এবং জিনতত্ত্ববিদ ১৯৪৪ এর পূর্বেই জিনের গাঠনিক ও রাসায়নিক প্রকৃতির উপর আগ্রহ দেখালেও এভারি-ম্যাক্লয়েড-ম্যাককার্টি পরীক্ষণ বিষয়টিতে নতুন ও বিস্তৃত ধারণা নিয়ে আসেন। যদিও মূল পত্রটি জেনেটিকের কথা সরাসরি উল্লেখ করেনি, এভারি ও অন্যান্য জিনতত্ত্ববিদ গণ জানতেন যে এভারি জিনকেই বিশুদ্ধ ডিএনএ হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রাণরসায়নবিদ এরুইন চারগাফ, জিনতত্ত্ববিদ এইচ. জে. মুলার এই পরীক্ষার ফলাফলের প্রশংসা করেছিলেন যেহেতু তা ডিএনএ-এর জীবগত পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে এবং উচ্চতর জীবে একই ভূমিকা রাখতে পারলে জিনতত্ত্বের প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল রূপান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে তার অবদানের জন্য ১৯৪৫ সালে রয়াল সোসাইটি এভারিকে কপলি মেডেল প্রদান করে।[১৯]
১৯৪৪ থেকে ১৯৫৪ এর মধ্যে গবেষণা পত্রটি ২৩৯ বার (বছর বছর উদ্ধৃতি বেড়েই চলেছিল) উদ্ধৃত হয়েছিল বিভিন্ন কাগজে যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল অণুজীববিজ্ঞান, ইমিউনোরসায়ন প্রাণরসায়ন সংক্রান্ত। মিরস্কির সমালোচনার জবাব দিতে ম্যাককার্টি ও রকফেলার ইন্সটিটিউটের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ অধিকতর গবেষণা চালিয়ে যান যার ফলে পরীক্ষণটি অণুজীববিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রাখে যার ফলে তা ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য স্থানান্তর ও যৌন প্রজননকারী জীবের জিনের মিল উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটে।[১৭] ফরাসি অণুজীববিদ আন্ড্রে বইভিন এভারির ব্যাকটেরিয়াল রূপান্তর সংক্রান্ত অনুসন্ধান এস্কিরিকিয়া কোলিতে সম্প্রসারণের দাবী করেন,[২০] যদিও অন্যান্য গবেষকগণ এবিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন নি। [১৭] ১৯৪৬ সালে জোশুয়া লেদেরবার্গ এবং এডওয়ার্ড ট্যাটাম ‘’ই. কোলি’’র মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল কনজুগেশন উপস্থাপন করেন এবং দেখান যে ব্যাকটেরিয়ায় জিনতত্ত্বের প্রয়োগ দেখা যায় যদিও এভারির রূপান্তর সংক্রান্ত নির্দিষ্ট পদ্ধতিটি সার্বজনীন ছিল না।[২১] এভারির কাজ মরিস উইলকিন্সের ডিএনএ গবেষণায় এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির ব্যবহার চলমান রাখে। মরিসের গবেষণার বিষয় জৈব কণা হলেও তার অর্থ যোগানদাতারা তাকে কতগুলো সম্পূর্ণ কোষ বানাতে চাপ দিচ্ছিলেন।[১৭]
পরবর্তী বছরগুলোতে তার গবেষণা কর্ম বেশকিছু পত্রে উল্লেখ হলেও এবং ইতিবাচক সাড়া পেলেও বিজ্ঞান সম্প্রদায়ের একটি বিরাট অংশ এভারির গবেষণা কর্ম অবহেলা করে। অসংখ্য বিজ্ঞানী গবেষণাটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেও পরীক্ষণটি মূলধারার জিন সংক্রান্ত গবেষণায় প্রভাব রাখতে সক্ষম হয় নি। কেননা এ সংক্রান্ত ক্লাসিকাল গবেষণা অর্থাৎ বংশগতিতে জিনের আচরণ জিনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের উপর প্রাধান্য পায়। এইচ.জে. মুলার আগ্রহী হলেও তিনি জিনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে গাঠনিক বৈশিষ্ট্যে বেশি জোর দেন এবং ফায গ্রুপের বাকি সদস্যরাও একই পথ অনুসরণ করে। নোবেল ফাউন্ডেশন ও এভারির কাজ অবহেলা করে এবং পরবর্তীতে এভারিকে নোবেল পুরস্কার প্রদান না করার ব্যর্থতায় জনসম্মুখে দুঃখ প্রকাশ করে।[২২]
১৯৫২ সালে হারসেই-চেজ পরীক্ষার পর জিনতত্ত্ববিদ গণ ডিএনএ-কে জেনেটিক উপাদান ভাবতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং আলফ্রেড হারসেই ফায গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।[২৩][২৪] এরুইন চারগাফ দেখান যে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে ডিএনএ এর ক্ষারক এর বিন্যাস ভিন্ন হয়(ট্যাটরা নিউক্লিওটাইড অনুকল্প বিরোধী),[২৫] এবং ১৯৫২ সালে রোলিন হচকিজ, চারগাফের গবেষণা এবং এভারির রূপান্তর তত্ত্বে প্রোটিনের অনুপস্থিতি সংক্রান্ত প্রমাণমূলক গবেষণার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। [২৬] এরপর, ব্যাকটেরিয়াল জেনেটিক দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে এবং জীববিজ্ঞানীগণ ব্যাকটেরিয়া এবং উচ্চতর জীবে একই দৃষ্টিতে বংশগতির পর্যবেক্ষণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[২৩][২৪] হারসেই এবং চেজ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে প্রমাণ করেন যে ব্যাকটেরিওফায আক্রমণ করলে ব্যাকটেরিয়ায় প্রোটিন নয় বরং ডিএনএ প্রবেশ করে[২৭] এবং শীঘ্রই মেনে নেয়া হয় যে ডিএনএ-ই ঐ উপাদান। তাদের পরীক্ষাটি খুব সুনির্দিষ্ট না হলেও (তারা দেখেন যে ডিএনএ-এর সাথে প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোষে প্রবেশ করে) তা একই রকম প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। ফায গ্রুপের বর্ধমান নেটওয়ার্ক এবং পরবর্তী বছর গুলোতে ওয়াটসন এবং ক্রিকের প্রস্তাবিত (ওয়াটসনও ফায গ্রুপের একজন সদস্য ছিলেন) ডিএনএ মডেলের জনপ্রিয়তা এই পরীক্ষার প্রভাব বৃদ্ধি করে। যাইহোক, দুইটি পরীক্ষাই প্রমাণ করে যে ডিএনএ-ই জেনেটিক উপাদান।[২৩][২৪]
তথ্যসূত্র
উৎস
- Deichmann, UTE (২০০৪)। "Early responses to Avery et al.'s paper on DNA as hereditary material"। Historical Studies in the Physical and Biological Sciences। 34: 207–32। ডিওআই:10.1525/hsps.2004.34.2.207।
- Fruton, Joseph S. (১৯৯৯)। Proteins, enzymes, genes: the interplay of chemistry and biology। New Haven, Conn: Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-07608-8।
- Matthew Cobb; Morange, Michel (১৯৯৮)। A history of molecular biology। Cambridge: Harvard University Press। আইএসবিএন 0-674-00169-9।
- Lehrer, Steven (২০০৬)। Explorers of the Body: Dramatic Breakthroughs in Medicine from Ancient Times to Modern Science। United States: iUniverse। আইএসবিএন 0-595-40731-5।
আরও পড়ুন
- Lederberg J (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। "The transformation of genetics by DNA: an anniversary celebration of Avery, MacLeod and McCarty (1944)"। Genetics। 136 (2): 423–6। পিএমআইডি 8150273। পিএমসি 1205797 ।
- McCarty, Maclyn (১৯৮৬)। The transforming principle: discovering that genes are made of DNA। New York: Norton। আইএসবিএন 0-393-30450-7।
- Stegenga, Jacob (২০১১)। "The chemical characterization of the gene: vicissitudes of evidential assessment"। History and Philosophy of the Life Sciences। 33 (1): 105–127। পিএমআইডি 21789957।
বহিঃসংযোগ
- DNA: The Search for the Genetic Material Avery, MacLeod and McCarty's Experiment for the Advanced Science Hobbyist.
- Profiles in Science: The Oswald T. Avery Collection