ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ

ঔষধের প্রস্তুতি, সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পেশাদার ব্যক্তি

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ বলতে স্বাস্থ্যখাতের সেইসব পেশাদার ব্যক্তিদেরকে বোঝায় যারা ঔষধের যাচাইকরণ, সূত্রায়ন, প্রস্তুতি, বৈশিষ্ট্য, সংরক্ষণ, মানবদেহে ঔষধের প্রয়োগ, প্রভাব ও আন্তঃক্রিয়া, ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এবং কীভাবে ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর সর্বোচ্চ লাভ হয়, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ন্যূনতম হয় এবং দেহের অন্যান্য পদার্থের সাথে ঔষধের ক্ষতিকর আন্তঃক্রিয়া এড়ানো যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।[১][২] এছাড়া তারা সমাজের প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেন। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা ঔষধের প্রাণরাসায়নিক কার্যপদ্ধতি ও প্রভাব, ঔষধের ব্যবহার, নিরাময় বা আরোগ্যমূলক ভূমিকা, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য ঔষধীয় আন্তঃক্রিয়া ও এ সংক্রান্ত নজরদারি-যোগ্য চলরাশিগুলি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। একই সাথে তারা শারীরস্থান, শারীরবৃত্ত ও রোগ-শারীরবৃত্ত সম্পর্কেও অধ্যয়ন করেন। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা এই বিশেষায়িত জ্ঞান রোগী, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের কাছে জ্ঞাপন ও ব্যাখ্যা করেন। দেশভেদে পেশাদারী সনদ লাভের জন্য অন্যান্য আবশ্যকীয় শর্তের পাশাপাশি ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদেরকে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেট উপাধি অর্জন করতে হয়।

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ
একজন ব্যক্তি ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদের সাথে পরামর্শ করছেন।
পেশা
নামফার্মাসিস্ট, ফার্মাসি ডাক্তার।
পেশার ধরন
পেশাদার
প্রায়োগিক ক্ষেত্র
স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, রসায়ন
বিবরণ
যোগ্যতানৈতিকতা, ঔষধ বিষয়ক বিজ্ঞানকলা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, সমালোচনামূলক চিন্তা
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি (ডক্টর অফ ফার্মেসি), ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর উপাধি (মাস্টার অফ ফার্মেসি), ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানে স্নাতক উপাধি (ব্যাচেলর অফ ফার্মেসি)
কর্মক্ষেত্র
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
সম্পর্কিত পেশা
চিকিৎসক, ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার কারিগর, বিষক্রিয়াবিদ, রসায়নবিদ, অন্যান্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদেরা প্রায়শই স্থানীয় লোকালয়ের ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ পদে নিযুক্ত থাকেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে খুচরা ঔষধ বিক্রয় সংশ্লিষ্ট ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ, প্রথম সারির ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ বা বিতরণকারী ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। আবার তারা হাসপাতালের ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ পদেও নিযুক্ত হতে পারেন, যেখানে তারা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশিত ঔষধের সঠিক ব্যবহার এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।[৩][৪] বেশিরভাগ দেশে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ পেশাটি পেশাদারি প্রবিধানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পেশাচর্চা বিষয়ক আইনি সীমার উপর নির্ভর করে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা কিছু নির্দিষ্ট আইনি এক্তিয়ারভুক্ত এলাকাতে স্বয়ং নিজেই নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের (যেমন টিকা) ব্যবস্থাপত্র লেখা ও প্রয়োগ করার অধিকার রাখতে পারেন; সেক্ষেত্রে তাদেরকে "ব্যবস্থাপত্র প্রদানকারী ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ" বলে। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা আরও বহু বিভিন্ন পরিবেশে পেশাচর্চা করতে পারেন, যাদের মধ্যে ঔষধশিল্প, পাইকারি ঔষধ বিক্রয়, গবেষণা, উচ্চশিক্ষায়তন, ঔষধসূত্র-সংহিতা ব্যবস্থাপনা, সামরিক বাহিনী ও সরকারি প্রশাসন উল্লেখ্য।

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদেরকে ইংরেজি পরিভাষায় "ফার্মাসিস্ট", "কেমিস্ট" বা "ড্রাগিস্ট" নামে ডাকা হতে পারে।

কাজের প্রকৃতি

ঐতিহাসিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী হিসাবে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদের মৌলিক ভূমিকা ছিল রোগীদের জন্য ব্যবস্থাপত্রে লেখা ঔষধের জন্য চিকিৎসকদের কাছে ঔষধ সরবরাহ করা। আধুনিক কালে এসে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ঔষধ নির্বাচন, ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ, ঔষধের আন্তঃক্রিয়া ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন। এভাবে তারা ঔষধের ব্যবস্থাপত্র প্রদানকারী এবং রোগীর মধ্যে একজন প্রশিক্ষিত মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেন।[৫] ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা ঔষধের নিরাপদ এবং কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য রোগীদের স্বাস্থ্য এবং অগ্রগতি নিরীক্ষণ করেন। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা ঔষধ মিশ্রণের কাজও করতে পারেন, তবে বর্তমানে বেশিরভাগ ঔষধই ঔষধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের দ্বারা আদর্শ মাত্রা ও আদর্শ প্রয়োগযোগ্য রূপে উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিছু নির্দিষ্ট আইনি এক্তিয়ারভুক্ত এলাকাতে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদের স্বাধীনভাবে কিংবা কোনও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকের সহযোগিতার ভিত্তিতে (সহযোগিতামূলক বৃত্তি চুক্তি নামক একটি কার্যবিধিতে সম্মত হয়ে) ঔষধের ব্যবস্থাপত্র লেখার কর্তৃত্ব থাকতে পারে।

ঔষধভিত্তিক চিকিৎসার সংখ্যাবৃদ্ধি, বৃদ্ধ কিন্তু অধিকতর সচেতন এবং অধিকতর আগ্রহী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অন্যান্য এলাকায় ঘাটতির কারণে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদের রোগীভিত্তিক পরামর্শদান দক্ষতার চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করা হয়। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকাগুলি পালন করছেন তার মধ্যে একটি হল ঔষধীয় সেবা। ঔষধীয় সেবায় রোগী, রোগের অবস্থা, ঔষধ ও সেগুলির প্রতিটির ব্যবস্থাপনার সরাসরি দায়িত্ব গ্রহণ করা বোঝায়, যার উদ্দেশ্য চিকিৎসার ফলাফল উন্নত করা। ঔষধীয় সেবার অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে যার মধ্যে কয়েকটি হল: ঔষধজনিত চিকিৎসা ত্রুটির সংখ্যা হ্রাস, ঔষধসেবনের বিধিবিধানের প্রতি রোগীর সম্মতি বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য হৃৎবাহ রোগের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগাবস্থার উন্নততর ব্যবস্থাপনা, ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ এবং চিকিৎসা সেবার দীর্ঘমেয়াদী খরচ হ্রাস।

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা প্রায়শই রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্নসমূহের জন্য প্রথম যোগাযোগ বিন্দু হিসেবে কাজ করেন। সুতরাং রোগীদের ঔষধ ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন ও রোগীদের চিকিৎসকদের কাছে অর্পণ বা দিকনির্দেশনা করার ব্যাপারে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ভূমিকাগুলির কয়েকটি নিচে দেওয়া হল:

  • রোগীভিতিক ঔষধ ব্যবস্থাপনা, যার মধ্যে ঔষধসেবনবিধি পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত।
  • অনির্ণীত বা নির্ণীত রোগাবস্থাবিশিষ্ট রোগীদের মূল্যায়ন করা এবং রোগীভিত্তিক ঔষধ ব্যবস্থাপনার চাহিদাগুলি নিরূপণ করা।
  • রোগগুলির অবস্থা বিশেষ পর্যবেক্ষণ, যেমন বৃক্ক (কিডনি) এবং যকৃতের বৈকল্য থাকলে ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ করা।
  • ঔষধ মিশ্রিতকরণ।
  • ঔষধীয় তথ্য প্রদান।
  • সাধারণ অসুস্থতা এবং রোগের রাজ্যগুলির পরামর্শ এবং চিকিত্সা সহ রোগীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শ প্রদান করা
  • ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার কারিগর এবং অন্যান্য কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা।
  • ব্যবস্থাপত্র সাপেক্ষে লভ্য ঔষধ বিতরণের তত্ত্বাবধান
  • ব্যবস্থাপত্র ছাড়া লভ্য ঔষধের বিধান এবং পরামর্শ প্রদান
  • রোগীদের এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য ঔষধের সর্বোত্তম ব্যবহারের উপর শিক্ষা এবং কাউন্সেলিং (যেমন, সঠিক ব্যবহার, মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ পরিহার)
  • প্রয়োজন হলে অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের রেফারেল
  • ঔষধসঞ্চারীয় মূল্যায়ন
  • টিকাদান পরিচালনা করে জনস্বাস্থ্যের প্রসার করা
  • ঔষধের সূত্রায়ন
  • ঔষধ নির্মাণের জন্য রোগীভিত্তিক পরীক্ষণ নকশা করা
  • নিরাপদ ঔষধ নীতির বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয়, রাজ্য বা স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে কাজ করা
  • সাহায্যকারী লেবেলসহ সমস্ত ওষুধের লেবেলের সঠিকতা নিশ্চিত করা
  • সংকটকালীন সেবার রোগীদের জন্য আন্তঃপেশাদারি সেবা দলের সদস্য
  • উপসর্গ মূল্যায়ন সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বাস্থ্য উদ্বেগের জন্য ঔষধের বিধান এবং জীবনযাত্রার পরামর্শের দিকে পরিচালিত করে (যেমন মাথা ঠান্ডা, বা ধূমপান বন্ধ করা)
  • ধাপযুক্ত মাত্রায়ন যোগান (যেমন আফিমসদৃশ ঔষধের প্রতিস্থাপন চিকিৎসা)

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ