কামিং আউট

মূলত রূপক অর্থে নিজের যৌন অভিমুখিতার কথা জনসম্মুক্ষে স্বীকার করা বা আত্মপ্রকাশ করাকে বোঝায়

কামিং আউট অব দ্য ক্লোসেট , অথবা শুধুমাত্র কামিং আউট শব্দজোড়া এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মাঝে বহুল ব্যবহৃত। এই শব্দদ্বয় দিয়ে মূলত রূপক অর্থে নিজের যৌন অভিমুখিতার কথা জনসম্মুক্ষে স্বীকার করা বা আত্মপ্রকাশ করাকে বোঝায়। অবশ্য, এলজিবিটি সম্প্রদায় ছাড়াও কামিং আউট শব্দজোড়া ব্যবহৃত হয়। উদাহরনস্বরূপঃ নাস্তিকতা স্বীকার অর্থে।  নিরাপত্তাজনিত কারণে, "কামিং আউট অব দ্য ক্লোসেট" মানসিক প্রক্রিয়া বা ভ্রমনরূপে ব্যাখ্যা করা যায়।[১] সিদ্ধান্ত নেয়া অথবা ঝুঁকি নেয়া , একটি পরিকল্পনা, বক্তব্য তৈরি , ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, নিজস্বতা, ক্যারিয়ার ধ্বংস ইত্যাদি এই আত্মপ্রকাশের এর সাথে সম্পৃক্ত।[২] সামাজিক চাপে পড়ে এর ফলাফল কোন কোন ক্ষেত্রে তীব্র হতে পারে।[৩] লেখক স্টিভেন সীডম্যান বলেন, "বিংশ শতাব্দীর আমেরিকায় সমকামিতাকে ব্যক্তিগিত, সামাজিক ও রাজনৈতিক নাটক করে তুলেছে ক্লোসেটের এতটাই ক্ষমতা"[৪]

আমেরিকার লিঙ্গ তত্ত্ববিদ, জুডিথ বাটলার দাবী করেন, "কামিং আউট" প্রক্রিয়া একজন সমকামির স্বাধীনতা নিশ্চিত করে না। যদিও , এর মাধ্যমে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে চলার স্বাধীনতা বোধ করতে প্রে, তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তির আশেপাশের বিষমকামীদের আচরনের উপর। জুডিথ বাটলার তার এই আলোচনা ১৯৯১ সালে প্রকাশিত লিমিটেশন এন্ড জেন্ডার ইন্সাবরডিনেশনে উল্লেখ করেছেন। 

ইতিহাস

উনবিংশ শতাব্দীতে কার্ল হেনরিক উলরিখস "কামিং আউট" ধারনাকে স্বমুক্তি বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলে প্রবর্তন করেন।  

১৮৬৯ সালে, স্টোনওয়াল দাঙ্গার একশ বছর পূর্বে। জার্মানির সমকামি অধিকার এডভোকেট কার্ল হেনরিক উলরিখস সর্বপ্রথম স্বপরিচয় প্রদানকে সামাজিক ধারণা থেকে মুক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, সামাজিকভাবে সমকামিতাকে মেনে না নেয়ার অন্যতম কারণ হল নিজের যৌন অভিমুখিতাকে প্রকাশ না করা। তাই তিনি, সমকামিরা যেন সমলিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষনের ব্যাপার প্রকাশে এগিয়ে আসে সে ব্যাপারে জোর প্রচারণা চালান। ১৯০৬ সালে জার্মান-ইহুদী চিকিৎসক ইভান ব্লখ রচিত Das Sexualleben unserer Zeit in seinen Beziehungen zur modernen Kultur (আমাদের সময়ে যৌন জীবন ও আধুনিক সভ্যতার সাথে এর সম্পর্ক) বইতে বয়স্ক সমকামিরা নিজেদের পরিবারের কাছে স্বীয় যৌন অভিমুখিতা তুলে ধরে। ১৯১৪ সালে ম্যাগনাস হিরসফেল্ড তাঁর অন্যতম বড় কাজ "পুরুষ ও নারীর সমকামিতা" তে এই বিষয় নিয়ে পুনরায়  আলোচনা করেন।[৫]

সমকামি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা প্রথম কোন প্রখ্যাত আমেরিকান হলেন কবি রবার্ট ডানকান। ১৯৪৪ সালে পলিটিক্স নামের এক সাময়িকীতে নিজের নামে একটি নিবন্ধে সমকামিরা সংখ্যালঘু ও নির্যাতনের স্বীকার।[৬]

১৯৫১ সালে, ডোনাল্ড ওয়েবস্টার করি[৭][৮] তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা "আমেরিকায় সমকামি"তে প্রকাশ করেন, "সমাজ আমাকে একটি মুখোশ পড়ে থাকতে বাধ্য করেছে।"করি ছদ্মনামী হলেও তার স্বচ্ছ ও অকপট বাকভঙ্গি সমাজে একটি ধনাত্মক প্রভাব আনতে ভূমিকা রেখেছে।

সমাজভাষাবিজ্ঞান উৎস

বর্তমানে প্রচলিত "কামিং আউট" শব্দজোড়া বিংশ শতাব্দীতে সমকামিদের মধ্যে প্রচলিত কামিং আউট পার্টি থেকে এসেছে। এই পার্টি প্রকৃতপক্ষে উচ্চবিত্ত নারীর প্রাপ্তবয়স্ক প্রাপ্তিতে আয়োজন করা হত। ঐতিহাসিক জর্জ চউনসে দেখিয়েছেন, সমকামিরা যুদ্ধ (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) পূর্ববর্তী সময়ে কামিং আউট শব্দ জোড়া বর্তমানে আমরা যেটাকে গে ক্লোসেট থেকে বের হয়ে আসা বলি, সেটা বোঝাতো না বরং সমকামি বিশ্বে প্রবেশ করা অর্থে ব্যবহার হত।[৯]

ক্লোসেটেড

ক্লোসেটের মাঝে বাস বা "বীয়িং ইন ক্লোসেট" দ্বারা বোঝায় একজন ব্যক্তি নিজের যৌন অভিমুখিতা সম্পর্কে সচেতন। তবে সামাজিক ও ব্যক্তিগত কারণে তা প্রকাশ করে না। কখনো কখনো একজন ক্লোসেটেড এলজিবিটি হিসেবে নিজের পরিচয়কে অস্বীকার করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লোসেটে থাকার কারণ হল হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া এবং হেটেরোসেক্সিস, যা এলজিবিটি সম্প্রদায়কে একটি নির্দিষ্ট দল করে।

পরিচয় ইস্যু

আত্মপ্রকাশ বা "কামিং আউট" একটি প্রক্রিয়া বলে আখ্যায়িত হলেও একই সাথে ব্যক্তির সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণকে এবং যৌন পরিচয়কে তুলে ধরে। তাই আত্মপ্রকাশের প্রাথমিক ধাপকে নতুনভাবে জন্ম বা নতুন পরিচয়ে আবির্ভাব বলেও আখ্যায়িত করা হয়।[১০] অনেক এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মতে, বয়ঃসন্ধি কিংবা শিশুকাল থেকেই এই ধাপের শুরু হয়। এই সময়েই ব্যক্তি সমলিংগের প্রতি আকর্ষণ অনুভব শুরু করে। 

রূপান্তর লিঙ্গ ও রূপান্তরকামী সম্প্রদায়

আইনি দিক

বিশ্বের যে সমস্ত অঞ্চলে সমকামিতা দন্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেসকল অনচলে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে কামিং আউটের পরিণতি ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে,সামাজিকভাবে হেনস্থার শিকার হওয়া ছাড়াও আইনি দিক থেকেও শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিশর, ইরান, সিঙ্গাপুর এবং আফগানিস্তানসহ বিশ্বের ৭৬টি দেশে কামিং আউট  আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

এলজিবিটি নয় এরূপক্ষেত্রে ব্যবহার

রাজনৈতিক ভাবে বা অন্যান্য ক্ষেত্র বিশেষে "কামিং আউট" বা আত্মপ্রকাশ ভিন্নার্থে ব্যবহার হয়ে আসছে। "কামিং আউট" শব্দজোড়া দ্বারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন গোপন পরিচয় প্রকাশকে বোঝায়। সেটা হতে পারে "এসক্সুয়াল হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১১], "এলকোহলিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১২], "রক্ষণশীল হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১৩] , "প্রতিবন্ধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১৪], "আন্তঃলিঙ্গের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১৫],"যৌনকর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ"[১৬] ইত্যাদি। 

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ