কালো ডানা চিল
কাটুয়া চিল বা কালো ডানা চিল (ইংরেজি: Black-winged Kite; বৈজ্ঞানিক নাম: Elanus caeruleus) এসিপিট্রিডে পরিবারভূক্ত চিল প্রজাতির ছোট্ট শিকারী পাখি। উন্মুক্ত তৃণভূমিতেই এদের অবস্থানজনিত কারণে এরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ইউরেশীয় এবং আফ্রিকান প্রজাতির সংমিশ্রণে কখনো কখনো অস্ট্রেলিয়ার কালো কাঁধওয়ালা চিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সাদা লেজওয়ালা চিলের ন্যায় বৃহৎ প্রজাতির চিলের সঙ্করায়ণ ঘটেছে।
কালো ডানা চিল | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Accipitriformes |
পরিবার: | Accipitridae |
গণ: | Elanus |
প্রজাতি: | E. caeruleus |
দ্বিপদী নাম | |
Elanus caeruleus দেসফনটেইনস, ১৭৮৯ | |
প্রতিশব্দ | |
Elanus melanopterus |
বিবরণ
লম্বা পাখাবিশিষ্ট এ পাখিটির ডানায় ধূসর অথবা সাদা রঙের সাথে কালোর সুন্দর মিশেল ঘটেছে। লম্বা বাজপাখীর ন্যায় শিকারের প্রাক্কালে পাখার বিস্তরণের পাশাপাশি লেজেরও বিস্তৃতি ঘটে থাকে। উড়ন্ত অবস্থায় খাটো এবং বর্গাকৃতি লেজ দৃশ্যমান হয় এবং মিলভাস গণভূক্ত অন্যান্য চিলের মতো আকা-বাঁকাভাবে চলাফেরা করে না। প্রায়শঃই রাস্তার ধারের বৈদ্যুতিক তারে বসে এর পাখা ও লেজে ঝাঁকুনি দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়। পুরুষ ও স্ত্রীজাতীয় চিলের পালকগুলো একই ধরনের থাকে।[২]
এদের বৃহৎ সম্মুখেদিকের চক্ষুর অবস্থান এবং কোমলাকৃতি পালকগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে পেঁচার বেশ মিল রয়েছে।[৩]
আবাসস্থল
কালো ডানা চিল এমন এক ধরনের প্রজাতির চিল যেগুলো সাধারণতঃ উন্মুক্ত ভূমি এবং অর্ধ-মরুময় আফ্রিকা মহাদেশের উপ-সাহারাভূক্ত এলাকা এবং উষ্ণমণ্ডলীয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। এছাড়াও, ইউরোপের স্পেন এবং পর্তুগালেও এদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইউরোপের দক্ষিণাংশ এবং সম্ভবতঃ পশ্চিম এশিয়ায় এ পাখিটির আবাস উপযোগী পরিবেশ বিদ্যমান।[৪][৫][৬]
বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণে কালো ডানা চিলের উপ-প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। স্পেন, আফ্রিকা এবং আরবের উপ-প্রজাতিগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। উপ-প্রজাতি ভোসিফেরাস দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা গেছে। সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও এবং ফিলিপাইনে উপ-প্রজাতি হাইপোলিউকাস দেখা যায়। কিন্তু ওয়াজিনসিস নিউ গিনিতে সংরক্ষিত পাখি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুমাত্রানাস উপ-প্রজাতিটি সবসময় স্বীকৃত নয়। সাদা লেজওয়ালা চিল এবং কালো কাঁধওয়ালা চিল এ প্রজাতির চিলের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এদের স্বতন্ত্র প্রজাতির মর্যাদা দেয়া হয়েছে।[৭][৮]
সমভূমিতে এদেরকে দেখা গেলেও অনেক উঁচু এলাকা হিসেবে স্বীকৃত সিকিমের ৩৬৫০ মিটার উঁচুতেও এদের আবাসস্থল রয়েছে।[৯] ২৬৭০ মিটার উঁচুতে দোদ্দাবেত্তা, নীলগিড়ি[১০] এবং ২০২০ মিটার উঁচু এলাকা নাগাল্যান্ডেও এ পাখিটি দেখা যায়।[১১]
পশ্চিম ঘাটের কিছু এলাকায় শীতকালীন পরিযায়ী পাখি হিসেবেও এ পাখিকে দেখা গেলে বলে কেউ কেউ বলে থাকেন।[২]
বংশবিস্তার
অবস্থানভেদে কালো ডানা চিল বছরের বিভিন্ন সময়ে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। কিন্তু ভারতে এদের বাসাগুলো বছরের সমসময়ই দেখা মেললেও এপ্রিল এবং মে মাসে ডিম পাড়তে দেখা যায় না। আওয়াজ সহকারে পাখি জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। একবার জুটি গড়লেই সাধারণতঃ তা দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জন করে।[১২]
এদের বাসা সাধারণতঃ ঢিলেঢালা প্রকৃতির হয় এবং স্ত্রীজাতীয় কালো ডানা চিল গড়পড়তা ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখিটি অত্যন্ত যত্নসহকারে বাসা তৈরীর চেষ্টা চালায়। ফ্যাকাসে সাদা রঙের ডিমে ঘন লালচে রঙের ছিটে থাকে। উভয় পাখিই ডিম ফোটানো পর্যন্ত পালাক্রমে তা দেয়। ছানা জন্মানোর পর পুরুষটি অধিক সময় বাইরে কাটায়।[২] সাধারণতঃ বাচ্চাদের খাদ্যের যোগান দেয় স্ত্রীপ্রজাতিটি। কখনোবা স্ত্রী পাখিটি ছানাদের জন্যেও খাদ্য সংগ্রহে নিয়োজিত থাকে। বাসার কাছাকাছি এলাকা থেকে শিকার করে। প্রায় ৮০ দিন ছানাগুলো তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এরপরই অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো নিজেরাই খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং শূন্যে ভেসে বেড়ায়।[১৩]
এদের শিকারের তালিকায় রয়েছে ঘাসফড়িং, ঝিঝিজাতীয় পোকা এবং অন্যান্য বৃহদাকৃতির পোকা, টিকটিকি ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী। আঘাতপ্রাপ্ত পাখি, ছোট ছোট সাপ এবং ব্যাঙ শিকার করতেও দেখা যায়।[২] উড়ন্ত অবস্থায় কদাচিৎ এদেরকে শিকার করতে দেখা যায়।[১৪] পাখার পালকের ঝাপটায় এর শিকার করে এবং খাবার খায়। কিন্তু মাটিতে বসেও এরা শিকার করে থাকে।[১৫] আফ্রিকার দক্ষিণাংশে রাস্তার ধারে অবস্থানজনিত কারণে কখনোবা যানবাহনের ধাক্কায় মরে যেতে দেখা যায়।[১৬]
এ প্রজাতির পাখি দলবদ্ধ হয়ে থাকতে ভালবাসে। ১৫ থেকে ৩৫টি পাখি খুবই বড় বৃক্ষের পাতাযুক্ত আবরিত স্থানে একত্রে থাকে। ইউরোপে এ সংখ্যা বেশি হয়।[১৭])[১৮] এরা খুবই নীরব থাকে এবং নমনীয় শব্দে মত বিনিময় করে।[২] তবে প্রজনন মৌসুমে এদের ডাকার ভঙ্গীমা ভিন্নতর ও ঔচ্চস্বরে হয়ে থাকে।[১৯][২০]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
আরও পড়ুন
- Hume, AO (1872) On the breeding of Elanus Melanopterus. Stray Feathers 1(1):21-26
- Hodgson, BH (1837) On the structure and habits of the Elanus melanopterus. Madras Jour. Lit. Sc. 6, 75-78.
- Goriup, P. D. 1981. Observations on a pair of Black-winged Kites (Elanus cueruleus) in eastern Portugal. Arq. Mus. Bocage, ser. B, 1:65-79.
- Naoroji, Rishad (1986) Communal gathering of Blackwinged Kites (Elanus caeruleus vociferus). J. Bombay Nat. Hist. Soc. 83(Supp):200-201.
- Harris T & C. Walters (1982) Chromosomal sexing of the Black Shouldered Kite (Elanus caeruleus) (Aves: Accipitridae). Genetica 60(1):19-20 1982 ডিওআই:10.1007/BF00121451
- Parejo, D. Aviles, J. M. Ferrero, J. J. Rivera, D. Casas, J. M. (২০০১)। "Communal roosting and diet of black-shouldered kites (Elanus caeruleus) wintering in southwestern Spain"। J. Raptor Research। 35 (2): 162–164।
বহিঃসংযোগ
- (Black-winged Kite = ) Black-shouldered Kite - Species text in The Atlas of Southern African Birds
- Photographs, videos and calls ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে